ইয়াবা সেবনে মৃত্যুর ঝুঁকি
ইয়াবা
থাই শব্দ হলেও মাদকাসক্তদের কাছে এটি ইয়াবা নামেই বেশি পরিচিত।
তরুণ-তরুণীরা একে বলেন, ‘ক্রেজি মেডিসিন’, ‘হিটলার চকলেট’। আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এর লেনদেন হয় ‘বাবা’ নামে। ড্রাগ অ্যান্ড ক্রাইমের
প্রতিবেদন অনুযায়ী মাদকাসক্তদের ৬৮ ভাগই এখন ইয়াবাসেবী। এদের মধ্যে ৩০ ভাগই
নারী। ইয়াবা আসক্তদের সিংহভাগই তরুণ-তরুণী। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থী থেকে
শুরু করে উচ্চবিত্ত, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতা, চিকিৎসকও রয়েছে
তালিকায়। সূত্র বলছে, বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার ইয়াবা ঢুকছে সীমান্ত
দিয়ে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাময়িক আনন্দ আর উত্তেজনার জন্য ইয়াবা সেবন করছে
তরুণ-তরুণীরা। এটি সাময়িক আনন্দ ও উত্তেজনা তৈরি করে সাময়িক হলেও ভুলিয়ে
দেয় জীবনের সব যন্ত্রণা, আসক্তরা বাস করতে থাকে স্বপ্নের জগতে। দীর্ঘদিন
আসক্তির ফলে শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়তে থাকে, মেজাজ হয় খিটখিটে, বাড়ে নাড়ির
গতি, রক্তচাপ, হেপাটাইটিস বি, সি ও এইডসের মতো জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয়ে
শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রমের ব্যত্যয় ঘটিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
মাদকবিরোধী গবেষক নিরাময় কেন্দ্র নবজাগরণের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক সচিব
ভুঁইয়া শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ইয়াবা সেবনকারীদের এক ধরনের শারীরিক ও
মানসিক নির্ভরশীলতা তৈরি করে। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে ইয়াবা সেবনের
পরিমাণ। তিনি বলেন, এই ট্যাবলেট সাময়িক আনন্দ ও উত্তেজনা তৈরি করলেও
পরবর্তীতে আসক্ত ব্যক্তি নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। পরিকল্পিতভাবে দেশের
মেধাবী প্রজন্ম ধ্বংস করতেই ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে ইয়াবা। তবে তিনি মনে করেন,
পরিবার উদ্যোগী হলে এবং সঠিক কাউন্সিলিং ও চিকিৎসা করা গেলে আসক্ত
ব্যক্তিকে নেশা থেকে ফেরানো সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,
ইয়াবা তৈরির মূল উপাদান মেথঅ্যামফিটামিন। এক সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি
সর্দি ও নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার এবং ওজন কমানোর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হতো ইয়াবা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ক্লান্তি দূর করতে হিটলার চকলেট নামে সেনাদের
মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল এই মেথঅ্যামফিটামিন। পরবর্তীতে দীর্ঘযাত্রার
গাড়িচালক ও দৌড়বিদরা এটির ব্যবহার শুরু করেন।
ধীরে ধীরে এর কুফল ও
দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া উদঘাটিত হওয়ায় বিশ্বব্যাপী এর ব্যবহার
নিষিদ্ধ করা হয়। তারপর বিশ্বের কয়েকটি দেশে এর উৎপাদন চলতে থাকে।
মেথঅ্যামফিটামিনের সঙ্গে ক্যাফেইন মিশিয়ে ব্যবহৃত হতে থাকে মাদকদ্রব্য
হিসেবে। থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারে এর উৎপাদন সবচেয়ে বেশি। শুধু বাংলাদেশকে
টার্গেট করেই ইয়াবা তৈরি করছে মিয়ানমার। ১৯৯৮ সালের দিকে দেশে আসতে শুরু
করে ইয়াবা। প্রথমে উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের টার্গেট করে ছড়িয়ে দেয়া
হয় এই মরণ নেশা। পরবর্তীতে নকল ইয়াবা তৈরি করে দাম কমিয়ে উচ্চবিত্তের গণ্ডি
ছাড়িয়ে মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্ত তরুণ-তরুণীদের মধ্যেও ইয়াবার বিস্তার ঘটে।
গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, প্যাথেডিনের পথ ধরে বাংলাদেশেও এখন এটি সহজলভ্য।
যে কারণে ইয়াবার প্রতি তরুণ-তরুণীদের আকর্ষণ : তরুণ-তরুণীদের মাঝে ইয়াবাকে
আকর্ষণীয় করতে মূল উপাদানের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে আঙ্গুর, কমলা ও ভ্যানিলার
ফ্লেভার। লাল,কমলা রংয়ের এ ট্যাবলেটটি দেখতে ও খেতে অনেকটা ক্যান্ডির মতো।
এটি পরিবহন ও লুকিয়ে রাখাও সহজ। ইয়াবা সেবনে ক্ষুধা কমে যায় বলে বেশিরভাগ
তরুণী এটি সেবন করেন স্লিম হওয়ার ওষুধ হিসেবে। তরুণ-তরুণীরা এর ক্ষতিকর
প্রভাব বুঝে ওঠার আগেই আসক্ত হয়ে পড়ে।
ইয়াবা সেবনের ক্ষতি : প্রথমে কম ডোজে এ ট্যাবলেট কাজ করলেও ধীরে ধীরে ডোজ বাড়াতে হয়। শুরুতে যে পরিমাণ আনন্দ এনে দেয়, পরে তা আর দেয় না। বাড়তে থাকে ট্যাবলেটের পরিমাণ, ক্ষণস্থায়ী আনন্দের পর বাড়তে থাকে ক্ষতিকর নানা উপসর্গ। ইয়াবার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এতটাই ভয়ঙ্কর যে টানা সাত থেকে ১০ দিনও জেগে থাকতে বাধ্য হয় সেবনকারীরা। এক সময় শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়তে থাকে, মেজাজ হয় খিটখিটে, গলা-মুখ শুকিয়ে আসতে থাকে অনবরত। প্রচণ্ড ঘাম আর গরমের অসহ্য অনুভূতি বাড়তে থাকে। বাড়ে নাড়ির গতি, রক্তচাপ, দেহের তাপমাত্রা আর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি। দীর্ঘদিনের আসক্ত ব্যক্তিরা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। ইয়াবা সেবনের কারণে মস্তিষ্কের ভেতরকার ছোট রক্তনালিগুলো ক্ষয় হতে থাকে, এগুলো ছিঁড়ে অনেকের রক্তক্ষরণ হয়। স্মৃতিশক্তি কমে যায়, মানসিক নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। সব ক্ষেত্রে ব্যর্থতা বা পিছিয়ে পড়তে থাকায় আসক্ত ব্যক্তিরা বিষণতায় আক্রান্ত হয়। কারও মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়। একসময় সিজোফ্রেনিয়ার মতো জটিল মানসিক ব্যাধিও দেখা দেয়।
নেশা ছাড়া কষ্ট যে কারণে : ইয়াবার পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি আসক্ত ব্যক্তিরা এর ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। একবার ইয়াবা নেয়ার কয়েক ঘণ্টা বা নির্দিষ্ট সময় পর আবার না নিলে শরীর ও মনে নানা উপসর্গ দেখা দেয়, ফলে বাধ্য হয়ে আসক্ত ব্যক্তিরা আবার ফিরে যায় নেশার জগতে।
ইয়াবার নেশা ছাড়তে করণীয় : প্রচণ্ড মানসিক শক্তি নেশা থেকে ফেরাতে পারে আসক্ত ব্যক্তিকে। যারা ফিরে পেতে চায় স্বাভাবিক জীবন, তাদের নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। এমন নয় যে, আসক্ত ব্যক্তিরা আর কখনোই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে না। এজন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি আসক্ত ব্যক্তিদের আশার আলো দেখাচ্ছে, তারা ফিরে পাচ্ছেন মাদকমুক্ত স্বাভাবিক জীবনধারায়। একজন আসক্ত ব্যক্তি সম্মিলিত সহযোগিতায় ফিরে পেতে পারে ইয়াবামুক্ত সুস্থ জীবন।
ইয়াবা প্রতিরোধে করণীয় : ইয়াবার আগ্রাসন থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে প্রয়োজন সামগ্রিক প্রতিরোধ। প্রতিবেশী দেশ থেকে যেসব সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে, সেসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। ইয়াবার কুফল সম্পর্কে সবাইকে বিশেষত উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের সচেতন করতে হবে।
ইয়াবা সেবনের ক্ষতি : প্রথমে কম ডোজে এ ট্যাবলেট কাজ করলেও ধীরে ধীরে ডোজ বাড়াতে হয়। শুরুতে যে পরিমাণ আনন্দ এনে দেয়, পরে তা আর দেয় না। বাড়তে থাকে ট্যাবলেটের পরিমাণ, ক্ষণস্থায়ী আনন্দের পর বাড়তে থাকে ক্ষতিকর নানা উপসর্গ। ইয়াবার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এতটাই ভয়ঙ্কর যে টানা সাত থেকে ১০ দিনও জেগে থাকতে বাধ্য হয় সেবনকারীরা। এক সময় শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়তে থাকে, মেজাজ হয় খিটখিটে, গলা-মুখ শুকিয়ে আসতে থাকে অনবরত। প্রচণ্ড ঘাম আর গরমের অসহ্য অনুভূতি বাড়তে থাকে। বাড়ে নাড়ির গতি, রক্তচাপ, দেহের তাপমাত্রা আর শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি। দীর্ঘদিনের আসক্ত ব্যক্তিরা উচ্চ রক্তচাপে ভোগেন। ইয়াবা সেবনের কারণে মস্তিষ্কের ভেতরকার ছোট রক্তনালিগুলো ক্ষয় হতে থাকে, এগুলো ছিঁড়ে অনেকের রক্তক্ষরণ হয়। স্মৃতিশক্তি কমে যায়, মানসিক নানা রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। সব ক্ষেত্রে ব্যর্থতা বা পিছিয়ে পড়তে থাকায় আসক্ত ব্যক্তিরা বিষণতায় আক্রান্ত হয়। কারও মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়। একসময় সিজোফ্রেনিয়ার মতো জটিল মানসিক ব্যাধিও দেখা দেয়।
নেশা ছাড়া কষ্ট যে কারণে : ইয়াবার পরিমাণ বাড়ানোর পাশাপাশি আসক্ত ব্যক্তিরা এর ওপর শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। একবার ইয়াবা নেয়ার কয়েক ঘণ্টা বা নির্দিষ্ট সময় পর আবার না নিলে শরীর ও মনে নানা উপসর্গ দেখা দেয়, ফলে বাধ্য হয়ে আসক্ত ব্যক্তিরা আবার ফিরে যায় নেশার জগতে।
ইয়াবার নেশা ছাড়তে করণীয় : প্রচণ্ড মানসিক শক্তি নেশা থেকে ফেরাতে পারে আসক্ত ব্যক্তিকে। যারা ফিরে পেতে চায় স্বাভাবিক জীবন, তাদের নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। এমন নয় যে, আসক্ত ব্যক্তিরা আর কখনোই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারবে না। এজন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি আসক্ত ব্যক্তিদের আশার আলো দেখাচ্ছে, তারা ফিরে পাচ্ছেন মাদকমুক্ত স্বাভাবিক জীবনধারায়। একজন আসক্ত ব্যক্তি সম্মিলিত সহযোগিতায় ফিরে পেতে পারে ইয়াবামুক্ত সুস্থ জীবন।
ইয়াবা প্রতিরোধে করণীয় : ইয়াবার আগ্রাসন থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে প্রয়োজন সামগ্রিক প্রতিরোধ। প্রতিবেশী দেশ থেকে যেসব সীমান্ত দিয়ে ইয়াবা ঢুকছে, সেসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও তৎপর হতে হবে। ইয়াবার কুফল সম্পর্কে সবাইকে বিশেষত উঠতি বয়সী তরুণ-তরুণীদের সচেতন করতে হবে।
No comments