আপন জুয়েলার্সের তিনশ’ কেজি স্বর্ণালঙ্কার জব্দ
রাজধানীর বনানীতে দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনার পর আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এরই অংশ হিসেবে রোববার আপন জুয়েলার্সে অভিযান চালিয়ে প্রায় তিনশ’ কেজি সোনা ও হীরার গহনা জব্দ করেছেন শুল্ক গোয়েন্দারা। তাদের দলিলাদির সঙ্গে স্বর্ণালঙ্কারের গরমিল রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ পেয়েছে সংস্থাটি। বেলা ১১টার দিকে দেশের শীর্ষস্থানীয় এ অলঙ্কার ব্র্যান্ড আপন জুয়েলার্সের মৌচাক, উত্তরা, জিগাতলার সীমান্ত স্কয়ার এবং গুলশানের দুটি বিক্রয় কেন্দ্রে একযোগে অভিযান শুরু হয়। রাতে অভিযান শেষে পাঁচটি শোরুম সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক মইনুল খান যুগান্তরকে জানান, স্বর্ণ ও রতœ সংগ্রহের তথ্যে অস্বচ্ছতা এবং মালিকের ‘অবৈধ সম্পদ’ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবেই রোববার এ অভিযান চালানো হয়। এ অভিযানে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ শাখার ভ্যাট ও র্যাব কর্মকর্তারা অংশ নেন। এর আগে ১১ মে আপন জুয়েলার্সের মালিকের যাবতীয় আর্থিক লেনদেনের তথ্যাদি চেয়ে বিএফআইইউ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। অভিযান শেষে রাতে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক দীপা রানী হালদার স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,
পাঁচটি শাখার চারটি থেকে ২৮৬ কেজি স্বর্ণালঙ্কার এবং ৬১ গ্রাম হীরা ‘আটক’ করা হয়েছে। এর মূল্য ৮৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। জব্দ স্বর্ণালঙ্কার শুল্ক আইনের বিধান অনুসারে প্রতিষ্ঠানগুলোর জিম্মায় রাখা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। শুল্ক গোয়েন্দারা জানান, এ সোনার গহনা এখন তাদের কাছে থাকবে, তবে তারা বিক্রি করতে পারবেন না। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এসব পণ্যের কাগজপত্র গভীরভাবে যাচাই করা হবে, অনুসন্ধানে কোনো অনিয়ম প্রমাণিত হলে প্রতিষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠান মালিকের বিরুদ্ধে চোরাচালান ও মানি লন্ডারিং আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযানকারী দলের প্রাথমিক অনুসন্ধানে আপন জুয়েলার্সের সব শাখা কর্তৃক উপস্থাপিত দলিলাদির সঙ্গে পাওয়া সোনার গরমিল পাওয়া গেছে বলে শুল্ক গোয়েন্দারা জানান। রোববারের অভিযানে আপন জুয়েলার্স মৌচাক মার্কেট শাখায় সাড়ে ৫৩ কেজি স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য ১৯ কোটি ১১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এ শাখায় ডায়মন্ডের অলঙ্কার পাওয়া যায় ১৭.৩৫ গ্রাম। যার বাজার মূল্য আনুমানিক দুই কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সীমান্ত শাখায় ৮১ কেজি ৬৮৮ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়। যার বাজার মূল্য ৩২ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এ শাখায় ডায়মন্ডের অলঙ্কার পাওয়া গেছে ৩৩.৪৪ গ্রাম। যার বাজার মূল্য এক কোটি ৩৩ লাখ টাকা। উত্তরা শাখা থেকে আটক করা হয় ৮২ কেজি স্বর্ণালঙ্কার, যার বাজার মূল্য ৩২ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এ শাখায় ডায়মন্ডের অলঙ্কার পাওয়া যায় ৯.৭ গ্রাম, যার বাজার মূল্য এক কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
ডিসিসি মার্কেট শাখায় ৬৮ কেজি ৪৬২ গ্রাম স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়, যার বাজার মূল্য ২৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। দুপুরে অভিযানের পর গুলশানের সুবাস্তু টাওয়ারে আপন জুয়েলার্সের শোরুমটি ছুটি থাকায় সেখানে অভিযান চালাতে পারেনি শুল্ক গোয়েন্দা। সংস্থাটির যুগ্ম কমিশনার শাফিউর রহমান যুগান্তরকে জানান, চারটি শোরুমে অভিযান শেষে এগুলো সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। আর সুবাস্তু টাওয়ারের শোরুমটি বন্ধ থাকায় সেখানে অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি। সোমবার (আজ) সবার উপস্থিতিতে সেখানে অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, আমরা এটা সিলগালা করেছি। এখন এটা খুলতে হলে তাদের প্রতিনিধি আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক মইনুল খান যুগান্তরকে বলেন, দেশে তো স্বর্ণের আমদানি নেই। তারপরও তারা এগুলো কোথা থেকে কিভাবে এনেছে বৈধ উপায়ে আনলে ভালো, না হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। সীমান্ত স্কয়ারে আপনের শোরুমে অভিযানে থাকা শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পরিচালক জাকির হোসেন বলেন, ‘ওদের কাছে ডায়মন্ডের যে অর্নামেন্টসগুলো পেয়েছি সেগুলোর তথ্য-উপাত্ত চেয়েছি। কিন্তু তারা পূর্ণাঙ্গভাবে দাখিল করতে পারেননি, সেখানে কিছুটা অস্বচ্ছতা রয়েছে।’
অভিযানের বিষয়ে বনানীতে দুই তরুণী ধর্ষণের প্রধান আসামি সাফাতের বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, আমরা ৪০ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠান। এর সঙ্গে প্রায় পাঁচ লাখ লোক সংশ্লিষ্ট আছেন। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ আমাদের কাছে যে যে কাগজপত্র চেয়েছে, তা আমরা আগেই দিয়েছি। সুবাস্তু টাওয়ারের শোরুমের বিষয়ে তিনি বলেন, সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় এটি খোলা হয়নি। সোমবার আমরা নিজেরাই এটি খুলব। তিনি আরও বলেন, চোরাচালান নয়, পুরনো স্বর্ণ রিফাইন করে বিক্রি করি। দিলদারের বড় ছেলে সাফাত আহমেদের জš§দিনের পার্টির কথা বলে ২৮ মার্চ ঢাকার বনানীর একটি বিলাসবহুল হোটেলে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয় বলে বনানী থানায় একটি মামলা হয় এক সপ্তাহ আগে। ওই মামলার অপর আসামিদের মধ্যে দু’জন সাফাতের বন্ধু, বাকি দু’জন তার দেহরক্ষী ও গাড়িচালক। বৃহস্পতিবার সাফাত ও তার বন্ধু সাদমান সাকিফকে সিলেট থেকে গ্রেফতার করার পর পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
No comments