এবার ‘নতুন ধরনের’ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা উত্তর কোরিয়ার
উত্তর কোরিয়া এবার ‘নতুন ধরনের’ একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা গ্রহণের কয়েক দিনের মাথায় এমন উত্তেজনা ছড়াল দেশটি। রোববার রাজধানী পিয়ংইয়ংয়ের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শহর কুসং থেকে ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপ করা হয় বলে জানান দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। ক্ষেপণাস্ত্রটি দুই হাজার কিলোমিটারের বেশি উচ্চতায় পৌঁছায় এবং ৭০০ কিলোমিটার উড়ে গিয়ে উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূল এবং জাপানের মধ্যবর্তী সাগরে গিয়ে পড়ে। ক্ষেপণাস্ত্রটি উৎক্ষেপণের পর সেটি ৩০ মিনিট উড়ে গিয়ে সাগরে পড়ে বলে জানিয়েছে জাপান। উত্তর কোরিয়ার এ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার পর দেশটির বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে সব রাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। খবর রয়টার্স ও বিবিসির। গত ফেব্রুয়ারিতে কুসং থেকে একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছিল উত্তর কোরিয়া। গতবারের চেয়ে এবারের ক্ষেপণাস্ত্রটি বেশি দূরত্বে এবং বেশি উচ্চতায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে। জাপানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী টমমি ইনাডা বলেন, খুব সম্ভবত ক্ষেপণাস্ত্রটি ‘নতুন ধরনের’। নতুন এ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাশিয়া ও চীন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মুখপাত্র বলেন, ‘কোরিয়া উপদ্বীপের উত্তেজনা নিয়ে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ফোরামের বৈঠকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। এ সময় উত্তর কোরিয়ার এমন উস্কানিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুই নেতা।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ ঘটনার নিন্দা প্রকাশ করেছেন। হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ক্ষেপণাস্ত্রটি রাশিয়ার ভূখণ্ডের খুব কাছে গিয়ে পড়েছে- বাস্তবে জাপানের চাইতে রাশিয়া কাছে। তাই রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন এতে খুব একটা খুশি হতে পারছেন না। যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালাতে সক্ষম আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে উত্তর কোরিয়া। রয়টার্স জানায়, এর আগে উত্তর কোরিয়া যেসব ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে, রোববারের ক্ষেপণাস্ত্র সেগুলো থেকে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা ক্ষেপণাস্ত্রের উন্নয়নে উত্তর কোরিয়ার সফল হওয়ার লক্ষণ। হার্ভার্ডের অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের অধ্যাপক জনাথন ম্যাকডোওয়েল বলেন, ‘যদি ওই প্রতিবেদন সঠিক হয় তবে এ পরীক্ষা নতুন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের কথাই বলছে, যেটা অধিক দূরত্বে আঘাত হানতে সক্ষম। নিশ্চিতভাবেই এটা উদ্বেগজনক।’ দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন শপথ গ্রহণের পরপরই উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসে কোরীয় উপদ্বীপের সমস্যা সমাধানের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এজন্য প্রয়োজনে তিনি পিয়ংইয়ং যাওয়ার ইচ্ছার কথাও জানান। এর মাত্র সপ্তাহখানেকের মধ্যেই উত্তর কোরিয়ার নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা স্বাভাবিকভাবেই তাকে চাপে ফেলে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট মুন নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাকে ‘উস্কানি’ বলে বর্ণনা করেছেন। মুনের মুখপাত্র বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট বলেছেন, যদিও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য আলোচনার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার দরজা খোলা আছে। তবে এজন্য উত্তর কোরিয়াকে তাদের আচরণে পরিবর্তন আনতে হবে। সেটা হলেই কেবল আলোচনা সম্ভব।’ নতুন করে ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষার পর দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান কিম ওয়ান জিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচআর ম্যাকমাস্টারের সঙ্গে কথা বলেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে বলা হয়, তারা উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র কার্যক্রম আটকাতে প্রয়োজনে সহযোগিতার সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে।
No comments