নতুন এডিপিতে মেয়াদ উত্তীর্ণ ১৫১ প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন
নীতিমালা ভেঙে মেয়াদ উত্তীর্ণ ১৫১টি প্রকল্পের বোঝা চাপানো হচ্ছে আগামী অর্থবছরের নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)। এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে ১২ হাজার ২২১ কোটি টাকা। এতে করে নতুন প্রকল্পে অর্থায়নের সুযোগ কমে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও এডিপি তৈরির নীতিমালায় বলা হয়েছিল, মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি ছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা যাবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হবে এমন প্রকল্পগুলোকে তারকা চিহ্ন দিয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে নতুন এডিপিতে। এ পদক্ষেপের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল রোববার যুগান্তরকে বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রকল্পগুলোর বিষয়ে তাগাদা দিয়েছি। এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে মেয়াদ বৃদ্ধি বা সংশোধন করা না হলে অর্থছাড় কিংবা ব্যয় করা সম্ভব হবে না। সূত্র জানায়, গত বছরের ৭ আগস্ট পরিকল্পনামন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এডিপি পর্যালোচনা সভায় মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনো প্রকল্প আগামী অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই সঙ্গে প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ সংক্রান্ত পরিপত্রে বেঁধে দেয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মেয়াদ বৃদ্ধির সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ১৮৫টি প্রকল্পের মধ্যে মাত্র ৩৪টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি বা সংশোধনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। ফলে একেবারেই কোনো উদ্যোগ না নেয়া ১৫১টিসহ মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পই এডিপিতে যুক্ত করা হয়েছে। এর পেছনে প্রথম পর্যায় পরিকল্পনা কমিশন কঠোর অবস্থানে থাকলেও শেষ পর্যন্ত মন্ত্রণালয় ও বিভাগের চাপ এবং প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যতের কথা ভেবে শিথিলতা দেখানো হয়েছে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন বলেছে, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, মেয়াদ বৃদ্ধি যথাসময়ে না হওয়ায় অর্থবছরের প্রথম ৪ থেকে ৫ মাস এ ধরনের প্রকল্পের অনুকূলে অর্থ ছাড় বা ব্যয় করা সম্ভব হয় না। ফলে এডিপির বরাদ্দ ব্যবহার কমে যায় এবং সার্বিক এডিপি বাস্তবায়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৩০ জুনের মধ্যেই এসব মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্প সংশোধনের তাগিদ দেয়া হয়েছে। যাতে করে আগামী অর্থবছরের শুরু থেকেই অর্থাৎ জুলাই মাস থেকেই এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ ব্যয় করা যায়। কেননা এর আগে গত ১ মে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভায় মেয়াদ বৃদ্ধি ছাড়া এসব প্রকল্পের বরাদ্দ করা অর্থ ছাড় ও ব্যয় করা যাবে না বলে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হচ্ছে, শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট ডুয়েল ফুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট প্রজেক্ট। এটির বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২ হাজার ২২ কোটি ৪২ লাখ টাকা ধরা হলেও প্রায় ৫ বছরে গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ১ হাজার ১৩৩ কোটি ২১ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে আবারও নতুন করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৬৫ কোটি টাকা। এছাড়া কনভারশন অব শাহজীবাজার ৭০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট টু ১০৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পটি ২০১৩ সালে শুরু হয়ে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয় ৩৪২ কোটি টাকা। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৮৯ লাখ টাকা। এখন নতুন করে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩২ কোটি টাকা। কনভারশন অব বাঘাবাড়ী ১০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট টু ১৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট প্রকল্পটি ৫১৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৩ সালে বাস্তবায়ন শুরু হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা ছিল। কিন্তু গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এ প্রকল্পের অনুকূলে ব্যয় হয়েছে মাত্র ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ অবস্থায় আগামী অর্থবছরে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মেয়াদোত্তীর্ণের তালিকায় আরও রয়েছে, উপজেলা পর্যায়ে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল নেটওয়ার্ক উন্নয়ন, ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ব্রডব্যান্ড ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক স্থাপন, আঞ্চলিক সাবমেরিন টেলিযোগাযোগ প্রকল্প, বাংলাদেশ, জাতীয় সংসদ ভবনের পূর্ত কাজ-বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক সিস্টেমের উন্নয়ন, সব জেলায় মুক্তিযোদ্ধা কমপেক্স ভবন নির্মাণ (প্রথম পর্যায়), ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ, মাধ্যমিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রকল্প এবং উচ্চ মাধ্যমিক উপবৃত্তি প্রকল্প।
No comments