বাড়ছে করমুক্ত আয়ের সীমা, কমছে কর্পোরেট ট্যাক্স
দুই লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা ধরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা চূড়ান্ত করা হয়েছে। রোববার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর বাজেট বৈঠকে এটি চূড়ান্ত করা হয়। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভ্যাটের হার ১২ বা ১৩ শতাংশ রাখার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ভ্যাট হার ১২ বা ১৩ যে কোনো একটি রাখার প্রস্তাব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ওই বৈঠকে করমুক্ত আয়ের সীমা এবং টার্নওভার ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি পুঁজিবাজারকে উৎসাহিত করতে কমানো হচ্ছে কর্পোরেট ট্যাক্সও। নতুন ভ্যাট হারসহ উল্লিখিত বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হবে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে। বৈঠকের একটি সূত্র থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। রাত ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৈঠক চলছিল। জানা গেছে, ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে আনলে কী পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হবে, এর একটি পর্যালোচনা বৈঠকে উপস্থাপন করে এনবিআর। সেখানে বলা হয়, এক শতাংশ মূসক কমানো হলে ৪ হাজার কোটি টাকার মতো ভ্যাট কমে যাবে। সেক্ষেত্রে ১২ শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করা হলে আগামী অর্থবছরে ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব কমে যেতে পারে। সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ভ্যাট হার নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়টি এনবিআরের কর্মকর্তারা তুলে ধরেন। সূত্র জানায়, ভ্যাট হার নিয়ে আলোচনার পর আয়কর ও শুল্ক খাতের আলোচনা হয়। এ সময় করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো ও কর্পোরেট ট্যাক্স যৌক্তিক হারে কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে ভ্যাট কমানোর ফলে যে রাজস্ব ক্ষতি হবে তা কীভাবে পুষিয়ে নেয়া হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়।
এনবিআরের প্রস্তাবে বলা হয়, ব্যবসায়ীরা যাতে সহজে হিসাব রাখতে পারেন, এজন্য বিশেষ সফটওয়্যার সংবলিত ৫০ হাজার ইলেকট্রুনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) বা পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) মেশিন কেনা দামে দেয়া হবে। জানা গেছে, বৈঠকে আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার ৪ লাখ ২৫০ কোটি টাকা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয়। এনবিআরের রাজস্বের সম্ভাব্য লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৫ শতাংশের বেশি নির্ধারণ করা হচ্ছে। এছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৭ দশমিক ৪ শতাংশ ও গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্য ধরা হয়েছে। এনবিআর সূত্র জানায়, তেল ও গ্যাস, সিগারেট, সিমেন্ট, মোবাইল ফোন সেবা- চারটি খাত থেকেই মোট মূসকের প্রায় ২০ শতাংশ আসে। এ চারটি খাতেই ১৫ শতাংশ হারে মূসক আছে। গত অর্থবছর এ চারটি খাত থেকে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি মূসক আদায় হয়েছে। মূসক হার কমিয়ে দেয়া হলে এ খাতগুলো থেকে আদায় কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। এছাড়া অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন আয়কর নীতির সদস্য পারভেজ ইকবাল, প্রথম সচিব সব্বির আহমেদ, ভ্যাট নীতির সদস্য ব্যারিস্টার জাহাঙ্গীর হোসেন, প্রথম সচিব ফায়জুর রহমান, শুল্ক নীতির সদস্য লুৎফর রহমান, প্রথম সচিব ফখরুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
No comments