মায়ের ভালোবাসার তুলনা হয় না
‘মা’ ছোট্ট একটা শব্দ। কিন্তু কি বিশাল তার পরিধি। মধুর এই শব্দটি শুধু মমতার-স্নেহের নয়, ক্ষমতার-নিরাপদ আশ্রয়েরও। তিনি আমাদের গর্ভধারিণী মা। মা শাশ্বত, মা চিরন্তন। মায়ের ভালোবাসার তুলনা হয় না। আজ বিশ্ব ‘মা’ দিবস। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে দিনটি পালন করা হয়। মে মাসের দ্বিতীয় রোববার এ দিবসটি বাংলাদেশে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় রোববার নরওয়েতে, মার্চের চতুর্থ রোববার আয়ারল্যাল্ড, নাইজেরিয়া ও যুক্তরাজ্যে। বিশ্ব মা দিবসের ইতিহাস শতবর্ষের পুরনো। যুক্তরাষ্ট্রে আনা জারভিস নামের এক নারী মায়েদের অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য সচেতন করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছিলেন। ১৯০৫ সালে আনা জারভিস মারা গেলে তার মেয়ে আনা মারিয়া রিভস জারভিস মায়ের কাজকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সচেষ্ট হন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯১৮ সালের ৮ মে মার্কিন কংগ্রেস মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। শুরু হয় মা দিবসের যাত্রা। দিবসটি উপলক্ষে গত তিন দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সংগ্রামী মায়েদের খেয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকার চিত্র। এমনও অনেক মা আছেন, যারা বিভিন্ন ফুটপাতে, বস্তিতে, রেল-বাস স্টেশন, লঞ্চঘাটে থাকছেন। রাজধানীর আগারগাঁও প্রবীণ নিবাসে আছেন অনেক মা। সন্তানরা আজ তাদের ছেড়ে অনেক দূরে। চোখের জলে বুক ভাসাচ্ছেন বছরের পর বছর ধরে। যে সন্তানের ভালোর জন্য রাতের পর রাত সন্তানকে বুকে রেখে ঘুম পারাতেন। সেই মায়ের বুক আজ শূন্য। শুক্রবার দুপুর। রাজধানীর হাইকোর্ট মাজার এলাকায় ফুটপাতে বসে দুই শিশু ছোট্ট হাতে মায়ের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। কাছে যেতেই মা বললেন, রাস্তার কিনারে পলিথিনের ঘর বানাইয়া থাকলেও আমরা ভালা আছি। দেখেন না, আমি খাইতে চাই না। তার পরও আমার পুলাপান (সন্তানরা) ঠেইল্লা খাওয়াইতাচ্ছে। শনিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁও প্রবীণ হিতৈষী নিবাসে গিয়ে দেখা যায় অন্য দৃশ্য। সেখানে সন্তানদের না দেখতে পেয়ে মায়েরা হা-হুতাশ করছেন। এ নিবাসে প্রায় ৫০ জন মা-বাবা থাকেন। পঞ্চমতলার ১৫ নম্বর রুমের কাছে যেতেই কান্নার শব্দ শোনা গেল। অসুস্থ এক মা বিছানায় কাতরাচ্ছেন। অ্যাজমা, বক্ষব্যাধিসহ বিভিন্ন রোগ বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। এখন ওষুধ খাওয়ার টাকা নেই।
ডাক্তারের পরামর্শ মতো ওষুধ ও খাবারের টাকা যেন কেউ তাকে সাহায্য করেন। তার নাম নার্গিস জাহান (৮০)। তিনি এখানে সাত বছর ধরে থাকছেন। চতুর্থতলার ১৫ নম্বর রুমে থাকেন মিরা চৌধুরী (৮৯)। ব্যথায় কাঁদছিলেন। জীবনের যা কিছু গড়েছেন সবই একমাত্র ছেলে অপূর্ব হাসান চৌধুরীকে দিয়েছেন। ছেলে আমেরিকায় থাকেন। তিনি এখন বড়ই একা। ভাতের লোকমা মুখের কাছে নিতেই সন্তানদের চেহারা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। তখন ভেতরে খাবার যায় না। আরেক মা বলেন, মায়ের কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সম্পদ হচ্ছে সন্তান। সেই সন্তানের সুখের জন্যই এখানে (প্রবীণ নিবাসে) থাকছেন। এ নিবাসে প্রায় ৩০ জন মা রয়েছেন। যাদের আনন্দ ও কষ্টের গল্প একই। বাংলাদেশ প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মহাসচিব ড. এএমএস আতিকুর রহমান বলেন, এ নিবাসে সবাইকে টাকা দিয়ে থাকত হয়। দেশে এখন প্রায় দেড় কোটি প্রবীণ রয়েছেন। যাদের মধ্যে প্রায় ১২ থেকে ১৫ লাখ খুবই কষ্টে আছেন। সন্তান কিংবা সমাজ থেকে তারা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে প্রবীণ হওয়ার আগেই সব কিছু সন্তানদের বিলিয়ে দিয়ে নয় বরং নিজেকে আরও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী রাখতে হবে। তবে সন্তান যেন ভুলে না যায় বাবা-মা আশীর্বাদ। তাদের ভুলে গেলে চলবে না যে এমন পরিণতি একদিন তাদেরও হতে পারে। মাকে কষ্ট দিয়ে কোনো সন্তান কখনই ভালো থাকতে পারে না জানিয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, মা দিবস সন্তানদের কাছে প্রতিদিনের। মায়ের ভালোবাসার কাছে পৃথিবীর কোনো ভালোবাসারই তুলনা হয় না। দিবসটি উপলক্ষে তিনি বলেন, মায়ের কি আলাদা করে কোনো উপহারের প্রয়োজন পড়ে? তারা যে সন্তানের মুখে শুধুমাত্র ‘মা’ ডাক শুনতে পেলেই জীবনের পরম উপহারটি পেয়ে যান।
No comments