৪০ বছর ধরে বাঁশের সাঁকোতে পারাপার
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের তিন গ্রামের অন্তত ১০ হাজার মানুষের ভোগান্তি একটি বাঁশের সাঁকো। স্থানীয় সাংসদ অথবা জনপ্রতিনিধির কাছে এলাকাবাসী তাদের এ ভোগান্তির কথা জানালেও কোন প্রতিকার হয়নি। শিশু, বৃদ্ধ, বনিতাসহ সব বয়সী মানুষের ওই খোয়াটি পাড় হয়ে জীবিকার চাহিদা মেটাতে হয়। বিশেষ করে স্কুল ও কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। এলাকাবাসীরা জানান, রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের গাব্বুনিয়া এলাকায় রাবনাবাদ নদীর একাংশ মরা খালে পরিণত হয়ে বারোই খাল নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। নদীর চারদিকে গাব্বুনিয়া, ফেলাবুনিয়া, স্লুইসঘাট গ্রাম অবস্থিত। এই তিন গ্রামের নানা পেশার অন্তত ১০ হাজার মানুষের বসবাস করে আসছেন। গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য নিজেরাই একটি বাশের সাঁকো তেরী করে চলাচল করছেন। এর পর থেকে ওই গ্রামের মানুষ গুলোর হাটবাজার, ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজে যাতায়াতসহ সব ধরনের কাজ করতে হয় খালের ওপর সাঁকোটি পাড় হয়ে। বর্ষা মৌসুমে সাঁকোটি কাদা মাটিতে প্রলেব থাকায় প্রায়শই ঘটে ছোট-বড় দূর্ঘটনা। যদি সাঁকোটি বাদ দিয়ে মানুষ জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে হয়, তা হলে তিন থেকে চার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে অন্য এলাকা হয়ে তাদের চাহিদা মেটাতে হয়। ফলে ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট মানুষ গুলোকে পরতে হয় চরম ভোগান্তিতে। এছাড়াও কৃষিজাত পন্য বাজার করতে কৃষকদের অধিক খরচ পোশাতে হয় বলে জানান একাধিক কৃষকরা। গাব্বুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী গোলাম রাব্বী, হৃদয়, রামিন জানান, প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে আমরা স্কুলে যাওয়া-আসা করে থাকি। বর্ষা কালে আমাদের বেশি কষ্টো হয়।
এছাড়াও সাঁকোটি পুরাতন হওয়ায় মাঝ-মধ্য আমরা নিয়ন্ত্রন হাড়িয়ে ফেলি। অনেক সময়ে নিয়ন্ত্রন হাড়িয়ে খালের মধ্যে পরে যাই। গায়ে কাদামাটি লাগায় ওই দিন আর ক্লাস করতে পারিনা। গাব্বুনিয়া গ্রামের মোঃ সোহাগ মিয়া বলেন, এর আগে অনেকবার ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানিয়েছি খালের ওপর সেতু তৈরি করার জন্য। তিনি শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছেন। কিন্তু সাঁকোর বদলে এই খালে সেতু হয়ে ওঠেনি। বর্তমান বাঁশের সাঁকোটি গ্রামবাসী মিলে তেরী ও মেরামত করেছেন। গাব্বুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোঃ মফিজ খাঁন বলেন, বাঁশের ওপর দিয়ে চলতে গিয়ে অনেকেই পা পিছলে খালের মধ্যে পড়ে যাই। বেশিরভাগ সময় স্কুলের শিশুরা সাঁকো পার হতে গিয়ে খালের পানিতে পড়ে যায়। পরে লোকজন তাদের উদ্ধার করে। এলাকার মানুষের চলাচলের জন্য মরা খালের ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। প্রায় দশ ফুট পরপর দুটি করে বাঁশের খুঁটি ১৮টি স্থানে বসানো হয়েছে। বাঁশের ওপর দিয়ে চলাচলের সময় ওপরে ধরার জন্য আড়াআড়ি বাঁশ বাধা হয়েছে। ৪০ বছর ধরে এলাকার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই চলাচল করছে। এ উপজেলায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে কিন্তু সাঁকোটি পাল্টায়নি। স্থানীয় ব্যাবসায়ী ইমরান মিয়া বলেন, মালামাল নিয়ে যাওয়া যায় না। নসিমন ভাড়া করে অনেক দূরের পথ ঘুরে যেতে হয়। তাই আমাগো ব্যবসায় লাভের তুলনায় খরচ বেশি হয়। জ¤œ থেকে এই খালটিতে সাঁকো দেখে আসছি। অনেক কিছুর উন্নতি ঘটেছে। কিন্তু সাঁকোটি বদলায়নি। বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, তিন গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এখাধিকবার উপর মহলকে জানানো হয়েছে।
No comments