দেশে ফিরেই আত্মগোপনে জঙ্গি নেতা রিজওয়ান
ইমিগ্রেশনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে ফিরেই আত্মগোপন করেছেন জঙ্গি নেতা রিজওয়ান হারুন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সে মোস্ট ওয়ান্টেড। গত ১১ মে হযরত শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে হারুন। এর পর থেকে গোপনে কর্মী সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে জঙ্গি সংগঠনের এই নেতা। একই সঙ্গে বড় ধরনের হামলার পরিকল্পনা করছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র যুগান্তরকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শনিবার টেলিফোনে যুগান্তরকে বলেন, সন্দেহভাজন ওই জঙ্গি বিষয়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য ছিল না। সুনির্দিষ্ট তথ্য ও পাসপোর্ট ব্লক না থাকায় সহজেই সে দেশে প্রবেশ করে। পরে বিষয়টি জানতে পেরে বিভিন্ন সংস্থা সন্দেহভাজন ওই জঙ্গিকে খুঁজছে বলে তিনি যুগান্তরকে জানান। চিহ্নিত জঙ্গি দেশে প্রবেশ করায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের কাছে জঙ্গি হারুন সম্পর্কে তথ্য থাকবে না কেন তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সামনে দিয়ে হারুনের বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। হারুন একা এসেছে না তার সঙ্গে আরও অনেকেই প্রবেশ করেছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, বিমানবন্দর ইমিগ্রেশনের কাছে জঙ্গিদের তথ্য থাকবে না কেন।
তথ্য না থাকলে তারা কিভাবে চিনবেন কে জঙ্গি আর কে জঙ্গি নয়। এ বিষয়ে জঙ্গিবাদবিষয়ক বিশেষজ্ঞ মেজর (অব.) এএনএম মনিরুজ্জামান বলেন, বিমানবন্দরে কেবল ইমিগ্রেশন পুলিশই নয়, সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা কাজ করেন। এত নিরাপত্তা বলয়ের মধ্য দিয়ে কিভাবে জঙ্গি নেতা রিজওয়ান বিমানবন্দর থেকে নির্বিঘেœ বের হয়ে এলো তা আমার কাছে আশ্চর্য লাগছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। তাকে খুঁজে বের করাই এখন বড় বিষয়। তার নিশ্চয়ই বড় ধরনের কোনো পরিকল্পনা আছে। সে নিশ্চয়ই দেশে অবস্থিত তার নেটওয়ার্কের সঙ্গে যোগাযোগ করেই এসেছে। কেবল কর্মী সংগ্রহ করাই কার কাজ হবে না। বড় ধরনের কোনো হামলার ঘটনাও তিনি ঘটাতে পারে। নিশ্চয়ই কোনো বিশেষ বার্তা নিয়ে সে দেশে প্রবেশ করেছে। ঘটনাটি গভীরভাবে খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা কম্পিউটারাইজড। ফিঙ্গারপ্রিন্টসহ নানা ধরনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বিমানবন্দর থেকে বের হতে হয়। ওই জঙ্গি নেতা রিজওয়ানের নাম ইমিগ্রেশন কম্পিউটারে আগে থেকেই ছিল। তাহলে কিভাবে সে সেখান দিয়ে বেরিয়ে এল? রিজওয়ান হারুনের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি সদস্য সংগ্রহ ও জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর নেতা গোলাম মাওলাকে সঙ্গে নিয়ে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সে ইংরেজি মাধ্যম লেক এড গ্রামার স্কুল গড়ে তোলে। আনসার উল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসিম উদ্দিন রাহমানীসহ অর্ধশতাধিক নিখোঁজ, গ্রেফতার এবং পলাতক জঙ্গি নেতা তার স্কুলের সাবেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেয়া মেজর জাহিদের যাতায়াত ছিল ওই গ্রামার স্কুলে। সূত্র জানায়, গত জানুয়ারিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে রিজওয়ানের ওপর প্রতিবেদন পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে এ বিষয়ে আনইগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। পাশাপাশি রিজওয়ানের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে একাধিক প্রতিবেদন জমা পড়ে। প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, যুক্তরাজ্যের নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুসলিমীনের আমীর শেখ আবু ঈসা আল রাফায়ের প্রভাবে জঙ্গিবাদে জড়ায় রিজওয়ান হারুন। ২০০২ সালে বাংলাদেশে জামায়াতুল মুসলিমীনের দায়িত্ব নেয় রিজওয়ান। এরপর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে। এসব শিক্ষার্থীর কলাবাগানে অবস্থিত তার কারাতে একাডেমিতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জঙ্গিবাদে জড়ানোর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে বেশি। মালয়েশিয়ায় পলাতক ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. রেজাউর রাজাও তার সংগঠনে জড়িত বলে জানা গেছে।
No comments