আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও চেয়ারে মিশা-জায়েদ
আদালতের অর্ন্তবর্তীকালীন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শপথ নিয়ে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেছেন সদ্য অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। ১১ মে ওমর সানী-অমিত হাসান প্যানেলের প্রার্থী রমিজ উদ্দিন আদালতে নির্বাচনী ফলাফল স্থগিতের জন্য আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ঢাকার দ্বিতীয় সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারক নির্বাচন ও প্রকাশিত ফলাফলের ওপর স্থগিতাদেশ দেন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নতুন কমিটির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার জন্যে অন্তবর্তীকালীন অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞাও জারি করেন আদালত। আদালতের ওই নির্দেশনা বাস্তবায়নে শিল্পী সমিতির নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান মনতাজুর রহমান আকবর, আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন দিলু, শিল্পী সমিতির আগের কমিটির সভাপতি শাকিব খান এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও শুক্রবার বিকেলে এফডিসিতে শপথ নেন নির্বাচিত কমিটির ১১ সদস্য। অনুষ্ঠানে প্রথমে নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি মিশা সওদাগরকে শপথ বাক্য পাঠ করান সমিতির নির্বাচন কমিশনার চিত্রপরিচালক মনতাজুর রহমান আকবর। এরপর ধারাবাহিকভাবে অন্য সদস্যদের শপথ পাঠ করান নতুন সভাপতি মিশা সওদাগর।
শপথ অনুষ্ঠানে নির্বাচিত কমিটির ১১ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে নির্বাচিত কমিটির সদস্য চিত্রনায়ক ফেরদৌস, ইমন, সাইমন সাদিক, কমল, জাকির, চিত্রনায়িকা মৌসুমী ও জেসমিন অনুপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চিত্রনায়ক ফারুক, শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আপিল বিভাগের দুই সদস্য প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু ও শামসুল হক, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, নৃত্য পরিচালক মাসুম বাবুল। আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নির্বাচিত কমিটির শপথ অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে সমিতির নির্বাচন কমিশনার মনতাজুর রহমান আকবর বলেন, ‘আদালত ক্ষমতা হস্তান্তর করতে নিষেধ করেছেন, কিন্তু শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কোনো আপত্তি জানিয়েছেন বলে মনে হয় না। তাই আমরা শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান করে দিয়ে আমাদের দায় শেষ করতে চাই।’ যদিও তিনি শুক্রবার দুপুরে বলেছেন, বিজ্ঞ আদালতের প্রতি সম্মান জানিয়ে শুক্রবার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তিনি মত পাল্টান এবং বিকাল ৫টায় শপথ বাক্য পাঠ করান। এদিকে শপথ গ্রহণ শেষে শুক্রবার সমিতির কার্যালয়ে ওই দুই পদের জন্য নির্ধারিত চেয়ারে গিয়ে বসেন মিশা সওদাগর ও জায়েদ খান। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন চিত্রনায়ক ফারুক। শপথ গ্রহণ শেষে কমিটির কার্যালয়ে প্রবেশের পর জায়েদ খান বলেন, ‘আমি নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনে করছি। কারণ সাধারণ শিল্পীরা আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করেছেন। আমি সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেছি নায়ক ফারুক সাহেবের হাত ধরে। যিনি এই শিল্পী সমিতি প্রতিষ্ঠা করেছেন।’ এদিকে আদালতের আদেশ অমান্য করাটাকে অনেকেই ভালো চোখে দেখছেন না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সিনিয়র শিল্পী বলেন, ‘এ চেয়ারের মধ্যে এমন কী আছে আমি বুঝি না। যেহেতু একটি বিষয় আদালতে বিচারের প্রক্রিয়াধীন এবং আদালত একটি আদেশও দিয়েছেন, সেখানে তারা আরও কয়েকটি দিন অপেক্ষা করতে পারতো। তারা তো নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন।
এত তাড়াহুড়োর কিছু আমি দেখছি না। আদালত যেহেতু বলেছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করতে, সেখানে চেয়ারে বসা মানেই আমার মতে আদালত অবমাননা। এখন আদালত থেকে যদি অন্য কোনো আদেশ আসে তাহলে সেটা আরও জটিল হয়ে পড়বে। বিষয়টির সঙ্গে আমাদের সবার তথা চলচ্চিত্রের সম্মান জড়িত।’ এদিকে নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথ করানোর বিষয়ে বাদী পক্ষের আইনজীবী আমিনুর রহমান খান বলেন, ‘ক্ষমতা হস্তান্তর করতে না পারলে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান করার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাজটি করা মানেই আদালত অবমাননার শামিল। আমরা বাদী পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’ আদালতের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে শিল্পী সমিতির চলতি কমিটির সভাপতি চিত্রনায়ক শাকিব খান যুগান্তরকে বলেন, ‘১০ মে রাতেই আমি আদেশের কপি হাতে পেয়েছি। মামলায় আমাকেও বিবাদী হিসেবে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালত থেকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। আদালতের আদেশ অমান্য করে কীভাবে শপথ অনুষ্ঠান করা হলো সেটা আমার বোধগম্য নয়। এমনকি চলতি কমিটির সভাপতি হিসেবে আমাকে শপথ অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কোনো কিছুই জানানো হয়নি। মহামান্য আদালত এরপর যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটার প্রতি অনুগত থাকব।’
No comments