চিন্তিত পুলিশ, আক্রান্ত হলে গুলির নির্দেশনা by নুরুজ্জামান লাবু
সাম্প্রতিক
সময়ে একের পর এক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চিন্তিত হয়ে পড়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর
সদস্যরা। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তারা। একের পর এক লেখক-ব্লগার-প্রকাশকদের টার্গেট করে হত্যা করা
হচ্ছে। চলছে বোমা হামলাও। টার্গেট হচ্ছেন চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ
সদস্যরাও। দুই সপ্তাহ পেরোতে না পেরোতেই রাজধানীর গাবতলী ও আশুলিয়ায়
চেকপোস্টে দায়িত্বরত দুই পুলিশ সদস্যকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে এসব
করছে। কিন্তু পরিকল্পিত এসব হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হচ্ছেন তারা। দুর্বৃত্তদের
চোরাগোপ্তা হামলার আগাম গোয়েন্দা তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায়
চিন্তিত হয়ে পড়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা
করা যায় সেই কর্মকৌশল ঠিক করছেন। চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের
যথাযথ নিরাপত্তার মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। যে কোন
চেকপোস্টে অন্তত দুজন সদস্যকে আগ্নেয়াস্ত্র লোডেড অবস্থায় অনগার্ডে থাকতে
বলা হয়েছে। আক্রান্ত হলে বিধি মোতাবেক বল প্রয়োগ এবং প্রয়োজনে আগ্নেয়াস্ত্র
ব্যবহারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সর্বোচ্চ সতর্কতার
সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। গত বুধবার পুলিশ সদর দপ্তর
থেকে পাঠানো এক চিঠিতে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়। পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী
পুলিশ মহাপরিদর্শক (এআইজি গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত এই চিঠি
অতিরিক্ত আইজি এসবি ও এপিবিএন, র্যাব মহাপরিচালক, ছয়টি মেট্রোপলিটন এলাকার
কমিশনার, সকল রেঞ্জ ডিআইজিসহ দেশের সকল পুলিশ সুপার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের
কাছে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিদর্শক জাভেদ পাটোয়ারী বলেন, চেকপোস্ট বা তল্লাশির সময় পুলিশ আক্রান্ত হলে প্রয়োজনে গুলি করবে। এটা পুলিশের আইনেই উল্লেখ রয়েছে। এটা শুধু তাদের মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে স্পেশাল ব্রাঞ্চে দায়িত্বরত পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ চেকপোস্ট বা তল্লাশির সময় কিভাবে দায়িত্ব পালন করবে তার একটি বিধিবদ্ধ নিয়মাবলী রয়েছে। যেমন- প্রতিটি চেকপোস্টে অন্তত দুজন পুলিশ সদস্য লোডেড আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকার কথা রয়েছে। চেকপোস্টগুলিতে যদি এই নিয়ম যথাযথভাবে মান্য করা হয় তবে দুর্বৃত্তরা আক্রমণ করার আগেই পুলিশ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। উদাহরণ হিসেবে রাজধানী ঢাকার গাবতলীর চেকপোস্টে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে এক পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, গাবতলীর চেকপোস্টে যদি একজন-দুজন পুলিশ সদস্য অনগার্ডে থাকতো তাহলে দুর্বৃত্তরা ছুরিকাঘাত করার সুযোগ পেত না। আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বিদেশ সফরে থাকায় ভারপ্রাপ্ত আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এই কর্মকর্তা বলেন পুলিশ কখন, কোথায়, কোন পরিস্থিতিতে গুলি করতে পারবে তার সবকিছুই পুলিশ বিধিতে বলা রয়েছে। এই বিষয়টি নতুন করে তাদের মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, টহল বা চেকপোস্টে পুলিশ আক্রান্ত হবে, সন্ত্রাসীরা গুলি করে চলে যাবে, পুলিশ গুলি করবে না, এটা হতে পারে না। নিজেদের রক্ষায় গুলি চালাতে হবে। এক্ষেত্রে কারোর অনুমতি লাগবে না।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ফুট পেট্রোল, মোবাইল পেট্রোল ও চেকপোস্টসহ ডিউডিতে কমপক্ষে ৫ জন সদস্য মোতায়েন করতে হবে। মোতায়ের আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে ব্রিফিং করবেন। ইউনিট প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ প্রত্যুষ, মধ্যরাত, সান্ধ্যকালীন ও ডিউটি পরিবর্তন সময়ে মোতায়েনকৃত সদস্যদের পরিদর্শন করবেন। এ সকল ডিউটি সংক্রান্তে প্রত্যেক ইউনিটে প্রদর্শনীসহ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ডিউটিতে মোতায়েনের পূর্বে পুলিশ সদস্যদের যথাযথ রায়ট গিয়ার (হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, লেগগার্ড, বুট) পরিধান নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্যগণ নিজ নিজ নামে ইস্যুকৃত সরকারি অস্ত্র-গুলি, যানবাহন ও অন্যান্য লজিস্টিকস সামগ্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে মোতায়েনকৃত ফোর্সের সঙ্গে ইনচার্জ অফিসারদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। মোতায়েনকৃত অফিসার ও ফোর্সদের বিচ্ছিন্নভাবে না থেকে দলবদ্ধভাবে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যে কোন প্রকার নাশকতা, সহিংসতা, বোমাবাজি সকল ধরনের অপতৎপরতা রোধকল্পে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি, আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহপূর্বক প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ও নিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের উপর কোন আক্রমণ হলে বিধি মোতাবেক বল প্রয়োগ করবেন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবেন। চেকপোস্ট ডিউটিকালীন কিছু পুলিশ সদস্য তল্লাশি করবেন এবং দুই জন্য সদস্য লোডেড ম্যাগাজিনসহ অনগার্ড অবস্থায় সতর্ক থাকবেন। স্ট্যাটিক চেকপোস্টসমূহ মাঝে মাঝে স্থান পরিবর্তন করতে হবে এবং মোবাইল চেকপোস্ট জোরদার করতে হবে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এর আগে ডিউটিতে গমন বা মোতায়েনের পূর্বে পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তি নিরাপত্তার লক্ষ্যে যথাযথ রায়ট গিয়ার পরিধান করাসহ ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা ইনচার্জ কর্তৃক ব্রিফিং করা সংক্রান্তে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন পুলিশ ইউনিট পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশনা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। ফলে পুলিশ সদস্য নিহত ও গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এমতাবস্থায়, নির্দেশনা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে কেউ শিথিলতা প্রদর্শন করলে বা কারো গাফিলতির জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটলে পার্টি ইনচার্জ, তদারককারী অফিসার, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণসহ ইউনিট প্রধান দায়ী থাকবেন এবং দায়ীগণ কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থার সম্মুখীন হবেন।
চিন্তিত পুলিশ, চলছে ভিডিও প্রশিক্ষণ: বিদেশী নাগরিকসহ লেখক-ব্লগার-প্রকাশক হত্যার পর খোদ পুলিশ আক্রান্ত হওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এ কারণে পুলিশ সদর দপ্তরসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকেরই দিন-রাত প্রায় ২৪ ঘণ্টাই কাজ করতে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই কৌশল হাতে নিয়েছে বলে তাদের মনে হয়েছে। এজন্য তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মনোবল চাঙা রাখতে মোটিভেশনসহ নানারকম কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। একই সঙ্গে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দায়িত্ব পালন করতে ভিডিও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চেকপোস্টে যথাযথ দায়িত্ব পালনের মহড়ার একটি ভিডিও চিত্র গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা সব ইউনিট প্রধানের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই ভিডিও দৃশ্য অনুযায়ী ইউনিট প্রধানগণ মাঠপর্যায়ের দায়িত্বপালনকারী সদস্যদের সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের কৌশলগুলি শেখাবেন। পুলিশ ও গোয়েন্দা ইউনিটের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ের একাধিক ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে দেরি হওয়ায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নিজেদের সফল মনে করছে। এ কারণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এসব ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তবে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত চোরাগোপ্তা হামলাকারীরা দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করে হামলা চালায় এবং তারা যথাযথ নিরাপত্তার বিষয়গুলি রেকি করে যে কোন মিশনে অংশ নেয়। এ কারণে তাদের ধরতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সময় লেগে যায়। যদিও ‘পারফেক্ট ক্রাইম’ বলে কিছু নেই উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, অপরাধীরা কিছু না কিছু ক্লু রেখে যায়, সেসব ক্লু নিয়ে অপরাধীদের ধরতে অনুসন্ধান চলছে।
পুলিশের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিদর্শক জাভেদ পাটোয়ারী বলেন, চেকপোস্ট বা তল্লাশির সময় পুলিশ আক্রান্ত হলে প্রয়োজনে গুলি করবে। এটা পুলিশের আইনেই উল্লেখ রয়েছে। এটা শুধু তাদের মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে। অতিরিক্ত আইজিপি হিসেবে স্পেশাল ব্রাঞ্চে দায়িত্বরত পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, পুলিশ চেকপোস্ট বা তল্লাশির সময় কিভাবে দায়িত্ব পালন করবে তার একটি বিধিবদ্ধ নিয়মাবলী রয়েছে। যেমন- প্রতিটি চেকপোস্টে অন্তত দুজন পুলিশ সদস্য লোডেড আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকার কথা রয়েছে। চেকপোস্টগুলিতে যদি এই নিয়ম যথাযথভাবে মান্য করা হয় তবে দুর্বৃত্তরা আক্রমণ করার আগেই পুলিশ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। উদাহরণ হিসেবে রাজধানী ঢাকার গাবতলীর চেকপোস্টে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে এক পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, গাবতলীর চেকপোস্টে যদি একজন-দুজন পুলিশ সদস্য অনগার্ডে থাকতো তাহলে দুর্বৃত্তরা ছুরিকাঘাত করার সুযোগ পেত না। আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বিদেশ সফরে থাকায় ভারপ্রাপ্ত আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এই কর্মকর্তা বলেন পুলিশ কখন, কোথায়, কোন পরিস্থিতিতে গুলি করতে পারবে তার সবকিছুই পুলিশ বিধিতে বলা রয়েছে। এই বিষয়টি নতুন করে তাদের মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, টহল বা চেকপোস্টে পুলিশ আক্রান্ত হবে, সন্ত্রাসীরা গুলি করে চলে যাবে, পুলিশ গুলি করবে না, এটা হতে পারে না। নিজেদের রক্ষায় গুলি চালাতে হবে। এক্ষেত্রে কারোর অনুমতি লাগবে না।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ফুট পেট্রোল, মোবাইল পেট্রোল ও চেকপোস্টসহ ডিউডিতে কমপক্ষে ৫ জন সদস্য মোতায়েন করতে হবে। মোতায়ের আগে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যথাযথভাবে ব্রিফিং করবেন। ইউনিট প্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ প্রত্যুষ, মধ্যরাত, সান্ধ্যকালীন ও ডিউটি পরিবর্তন সময়ে মোতায়েনকৃত সদস্যদের পরিদর্শন করবেন। এ সকল ডিউটি সংক্রান্তে প্রত্যেক ইউনিটে প্রদর্শনীসহ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। ডিউটিতে মোতায়েনের পূর্বে পুলিশ সদস্যদের যথাযথ রায়ট গিয়ার (হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, লেগগার্ড, বুট) পরিধান নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ কর্মকর্তা বা সদস্যগণ নিজ নিজ নামে ইস্যুকৃত সরকারি অস্ত্র-গুলি, যানবাহন ও অন্যান্য লজিস্টিকস সামগ্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করতে হবে। মাঠ পর্যায়ে মোতায়েনকৃত ফোর্সের সঙ্গে ইনচার্জ অফিসারদের অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। মোতায়েনকৃত অফিসার ও ফোর্সদের বিচ্ছিন্নভাবে না থেকে দলবদ্ধভাবে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যে কোন প্রকার নাশকতা, সহিংসতা, বোমাবাজি সকল ধরনের অপতৎপরতা রোধকল্পে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি, আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহপূর্বক প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ও নিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের উপর কোন আক্রমণ হলে বিধি মোতাবেক বল প্রয়োগ করবেন এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করবেন। চেকপোস্ট ডিউটিকালীন কিছু পুলিশ সদস্য তল্লাশি করবেন এবং দুই জন্য সদস্য লোডেড ম্যাগাজিনসহ অনগার্ড অবস্থায় সতর্ক থাকবেন। স্ট্যাটিক চেকপোস্টসমূহ মাঝে মাঝে স্থান পরিবর্তন করতে হবে এবং মোবাইল চেকপোস্ট জোরদার করতে হবে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এর আগে ডিউটিতে গমন বা মোতায়েনের পূর্বে পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তি নিরাপত্তার লক্ষ্যে যথাযথ রায়ট গিয়ার পরিধান করাসহ ইউনিটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা ইনচার্জ কর্তৃক ব্রিফিং করা সংক্রান্তে বিভিন্ন সময়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন পুলিশ ইউনিট পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের নির্দেশনা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। ফলে পুলিশ সদস্য নিহত ও গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এমতাবস্থায়, নির্দেশনা প্রতিপালনের ক্ষেত্রে কেউ শিথিলতা প্রদর্শন করলে বা কারো গাফিলতির জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটলে পার্টি ইনচার্জ, তদারককারী অফিসার, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণসহ ইউনিট প্রধান দায়ী থাকবেন এবং দায়ীগণ কঠোর বিভাগীয় ব্যবস্থার সম্মুখীন হবেন।
চিন্তিত পুলিশ, চলছে ভিডিও প্রশিক্ষণ: বিদেশী নাগরিকসহ লেখক-ব্লগার-প্রকাশক হত্যার পর খোদ পুলিশ আক্রান্ত হওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এ কারণে পুলিশ সদর দপ্তরসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনেকেরই দিন-রাত প্রায় ২৪ ঘণ্টাই কাজ করতে হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠী এই কৌশল হাতে নিয়েছে বলে তাদের মনে হয়েছে। এজন্য তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মনোবল চাঙা রাখতে মোটিভেশনসহ নানারকম কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। একই সঙ্গে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে দায়িত্ব পালন করতে ভিডিও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চেকপোস্টে যথাযথ দায়িত্ব পালনের মহড়ার একটি ভিডিও চিত্র গতকাল ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকা সব ইউনিট প্রধানের কাছে পাঠানো হয়েছে। এই ভিডিও দৃশ্য অনুযায়ী ইউনিট প্রধানগণ মাঠপর্যায়ের দায়িত্বপালনকারী সদস্যদের সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের কৌশলগুলি শেখাবেন। পুলিশ ও গোয়েন্দা ইউনিটের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ের একাধিক ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করতে দেরি হওয়ায় সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নিজেদের সফল মনে করছে। এ কারণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এসব ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তবে গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণত চোরাগোপ্তা হামলাকারীরা দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা করে হামলা চালায় এবং তারা যথাযথ নিরাপত্তার বিষয়গুলি রেকি করে যে কোন মিশনে অংশ নেয়। এ কারণে তাদের ধরতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সময় লেগে যায়। যদিও ‘পারফেক্ট ক্রাইম’ বলে কিছু নেই উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, অপরাধীরা কিছু না কিছু ক্লু রেখে যায়, সেসব ক্লু নিয়ে অপরাধীদের ধরতে অনুসন্ধান চলছে।
No comments