পনের দিনের আল্টিমেটাম গণজাগরণ মঞ্চের -সব হত্যার বিচার চাই : অজয় রায়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ে দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত লেখক অভিজিৎ রায়ের পিতা অধ্যাপক ড. অজয় রায় বলেছেন, একের পর এক ব্লগার লেখক খুন হচ্ছে। যার সর্বশেষ শিকার দীপন। সন্তান হারানোর বেদনা উপলব্ধি করতে পারি। তার পিতা বলেছেন আমি বিচার চাই না। সবার শুভবুদ্ধির উদয় হোক। এটা দার্শনিক কথা। আমি দৃঢ়কণ্ঠে সরকারের কাছে ব্লগার, লেখকসহ দেশের সব হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। অভিজিৎ, দীপনসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচার যতদিন না হবে ততদিন পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাবেন বলে জানান তিনি।
জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সাল আরেফীন দীপন হত্যা ও শুদ্ধস্বরের প্রকাশক আহমেদ রশীদ টুটুল, কবি তারেক রহিম ও ব্লগার রণদীপম বসুকে হত্যাচেষ্টার প্রতিবাদে, দোষীদের গ্রেফতার এবং শাস্তির দাবিতে আজ শুক্রবার বিকেলে শাহবাগের জাতীয় যাদুঘরের সামনে মুক্তবুদ্ধির সংহতি সমাবেশের আয়োজন করে গণজাগরণ মঞ্চের একাংশ। সেখানে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক অজয় রায় একথা বলেন।
সমাবেশে মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার সরকারকে ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
অজয় রায় বলেন, অধিকার কিভাবে আদায় করতে হয় তা জানা আছে। সবাইকে সম্মিলিতভাবে রাস্তায় নামতে হবে। সংগ্রাম ছাড়া অধিকায় আদায় হয় না। সারাদেশের মানুষের মধ্যে সংগ্রাম ছড়িয়ে দিতে হবে। এ সংগ্রামে জয়ী হওয়ার মাধ্যমেই যুদ্ধাপরাধী এবং নব্য রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ অর্জিত হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সব হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সরকারকে ১৫ দিনের সময় বেধে দিয়ে ইমরান এইচ সরকার বলেন, চলতি বছরে গণজাগরণ মঞ্চের পাঁচজন কর্মী হত্যার শিকার হয়েছেন। হত্যা হলে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করলেও প্রতিকার কিছুই হচ্ছে না। বরং নানাভাবে হত্যাকারীদেরকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে সবকিছু উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার জঙ্গিবাদ দমনের কথা বলে ক্ষমতায় এসেছে। অথচ এখন তারা উল্টোটা করছে। একই কলের গান তারা বার বার বাজাচ্ছে। তারা আগের সরকারের পুরনো হত্যার কথা বলছে আর আমরা একে একে লাশ হয়ে ঘরে ফিরছি। সরকারের কাছে অনুরোধ, ভিন্নমত দমন নয় জঙ্গিবাদ দমন করুন। অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে শেষ রক্ষা হবে না। তিনি অবিলম্বে জঙ্গিবাদের লাগাম টেনে ধরার আহবান জানান।
সমাবেশে ঘোষিত নতুন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, আগামী ৯ নভেম্বর শাহবাগ থেকে শহীদ মিনার অভিমূখে আলোর মিছিল ও সমাবেশ, ১৩ নভেম্বর শুক্রবার শাহবাগে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সমাবেশ, ২০ নভেম্বর সব হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিচার ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে সমাবেশ। এছাড়া ডিসেম্বর মাসজুড়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেমিনারের আয়োজন করবে গণজাগরণ মঞ্চ। দীপন, অভিজিৎসহ সব হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে আগামী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত সরকারকে সময় বেঁধে দেন ইমরান এইচ সরকার।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, উদীচীর সহ সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম, মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির, ডাকসুর সাবেক ভিপি অধ্যাপক মাহফূজা খানম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, নাট্য ব্যক্তিত্ব আজাদ আবুল কালাম, কলামিস্ট মমতাজ লতিফ, মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম, ভাস্কর রাসা প্রমুখ।
খুশি কবির বলেন, জণগণের ওপর আস্থা রাখা উচিৎ, সরকার সেটা ভুলে যায়। স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে দেব না। আপনারা ব্যর্থ হলে বলেন, আমরা সহযোগিতা করব।
মাহফূজা খানম বলেন, আজ লেখকদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। কাল হয়ত পাঠকদেরকে হত্যা করা হবে। অর্থ্যাৎ মুক্তবুদ্ধি থাকবে না। তারা আধুনিক ধ্যান ধারণার কাউকে রাখবে না। তিনি বলেন, মুক্ত চিন্তার বিশ্বাসীরা পিছপা হবে না। যত চেষ্টাই তারা করুক সত্য অবিনশ্বর বলে মন্তব্য করেন তিনি।
খালেকুজ্জামান বলেন, যেসব ব্লগার লেখককে হত্যা করা হচ্ছে তাদেরকে জাতীয় বীর হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। কোন ধর্মগ্রন্থে বিসমিল্লাহ নাই, অথচ সংবিধানের শুরুতেই বিসমিল্লাহ দিয়ে রাখা হয়েছে বলে এসময় তিনি মন্তব্য করেন।
আয়েশা খানম বলেন, এসব হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে শুধু পরিবারগুলোতেই নয়, গণতন্ত্রেই এক ধরনের ক্ষত তৈরি করেছে।
মমতাজ লতিফ নিজেদের নিরাপত্তার জন্য সব লেখক-ব্লগারের নিকট প্রয়োজনে লাইসেন্স করা পিস্তল, রাইফেল রাখার আহবান জানান।

No comments

Powered by Blogger.