মনের দরজা খোলা রাখা চাই by মতিউর রহমান
সমাবর্তন বক্তা প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান l ছবি: ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌজন্যে |
গতকাল (৫ নভেম্বর, ২০১৫) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম সমাবর্তন উৎসবে দেওয়া সমাবর্তন-বক্তৃতা
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি ও সদস্যবৃন্দ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর, কর্মকর্তাগণ, শিক্ষকমণ্ডলী, সমাবর্তনে উপস্থিত অভিভাবকমণ্ডলী, অতিথিগণ এবং ছাত্রছাত্রীবৃন্দ:
আপনারা সকলে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির দশম সমাবর্তন উৎসবে সমাবর্তন-বক্তৃতা দিতে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি বিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় আমার মতো একজন সাধারণ সংবাদকর্মীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে যে সম্মান ও স্বীকৃতি দিল, সে জন্য আমি ও আমার সহকর্মীরা অভিভূত হয়েছি।
আমি ও আমার সহপাঠীরা ছাত্রজীবন শেষে কিংবা কর্মজীবনের সূচনাকালে আজকের মতো আনন্দময় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারিনি। আমার বিএ (অনার্স) এবং এমএ ডিগ্রি লাভের বছর ছিল ১৯৬৬ ও ১৯৬৭ সাল। সেই বছরগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সমাবর্তন উৎসব হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখন ছিল পাকিস্তানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র।
আজকে আমি আপনাদের সামনে আমার ব্যর্থ শিক্ষাজীবনের কথা বলতে এসেছি।
১৯৫০-এর দশকের শুরুতে পুরান ঢাকার বংশাল রোড থেকে প্রতিদিন হেঁটে নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমার স্কুলজীবনের হইচইমুখর দিনগুলোর বড় সময় কেটেছে ফুটবল, ক্রিকেটসহ নানা ধরনের খেলা দেখে। স্কুলের দশম শ্রেণি থেকে ঢাকার প্রথম বিভাগে ক্রিকেট খেলতে শুরু করি। ওই সময় বিশ্বের সেরা ক্রিকেট দলগুলো—ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান আর নিউজিল্যান্ডের সেরা খেলোয়াড়দের খেলা দেখে আনন্দিত হয়েছি। একই সঙ্গে সেরা ক্রীড়াবিদ ও সাঁতারুদেরও খোঁজখবর রাখতাম। ১৯৫৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের বিশ্ব অলিম্পিক গেমসের অনেক স্বর্ণজয়ীর নাম ও রেকর্ড এখনো স্মৃতিতে উজ্জ্বল।
নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় (১৯৫৩-১৯৬১ সাল) থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে পাস করি। ১৯৬১ সালে ঢাকা কলেজে ভর্তি হই। ১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই পাকিস্তানি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়ি। তারপর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স বিল্ডিং, আর্টস বিল্ডিং, আমতলা আর মধুর ক্যানটিন—পুরো এলাকাটিই ছিল আমাদের বিচরণকেন্দ্র।
একই সঙ্গে ছিল কবিতা ও গানের প্রতি ভালোবাসা। তখনো ক্রিকেট খেলি। এত কিছু করে লেখাপড়া আর কি হয়! তারপরও পাস করলাম সময়মতো—উচ্চমাধ্যমিক বিজ্ঞান শাখায় দ্বিতীয় বিভাগে।
১৯৬৩ সালে আমাদের অতিপরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংখ্যাতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। সঙ্গে অতিরিক্ত বিষয় ছিল অর্থনীতি আর গণিত। তখন দুই বছর পর অতিরিক্ত দুটি বিষয়ে পাস করতে হতো। তারপরের বছর অনার্স পরীক্ষা। তার আরও এক বছর পর এমএ পরীক্ষা। বুঝতেই পারছেন আমার অবস্থা!
বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোতে বক্তৃতা-বিবৃতি লেখা, দেয়ালে পোস্টার লাগানো থেকে শুরু করে বড় বড় সভা আর মিছিল সংগঠিত করেছি, অংশ নিয়েছি। হল ও সংগঠনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুধু নয়, একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে বড় অনুষ্ঠান এবং আরও অনেক বড় বড় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছি। একই সঙ্গে চলেছে সংকলন ও বই প্রকাশনা এবং কবিতা লেখা। তখনো ক্রিকেট খেলছি।
এসবের মধ্যেই দেশ-বিদেশের অসামান্য সব গল্প-উপন্যাস আর অনুপ্রেরণা সৃষ্টিকারী আত্মজীবনী পড়েছি। দেশে তৈরি সিনেমা দেখার পাশাপাশি কলকাতা, মুম্বাই, হলিউড, ফ্রান্স, ইতালি আর রুশ দেশের সেরা পরিচালক আর অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সিনেমা দেখেছি। বাংলা গানের মধ্যে রবীন্দ্রসংগীত, গণসংগীত—এসবের পাশাপাশি বিশ্বের সেরা সংগীতশিল্পীদের গান শুনেছি। সেরা নাটক দেখেছি, সেরা শিল্পীদের প্রদর্শনী উপভোগ করেছি। দেশের সেরা কবি, লেখক, গায়ক, চিত্রশিল্পী, অভিনেতা, শিক্ষক, চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছি।
তখন আমার প্রধান কাজ ও জীবনের লক্ষ্য ছাত্ররাজনীতি এবং রাজনীতি দিয়ে দেশে পরিবর্তন নিয়ে আসা। একই সঙ্গে ছিল হইহুল্লোড়, আড্ডা, গল্প আর আনন্দ করা। আর ছিল নানা রকমের লেখালেখি। আবার এর মধ্যে জীবনসঙ্গিনীকে খুঁজে পাই। এত সব করে কি আর পড়াশোনার মতো কঠিন কাজ হয়! অনার্স আর মাস্টার্স পরীক্ষার সময় মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। ঘুম আসে না। ঘুমের ওষুধ খাই। আম্মাকে বসিয়ে রাখি সারা রাত। সেই আতঙ্ক এখনো মাঝেমধ্যে স্বপ্নে ফিরে ফিরে আসে।
এত সবকিছুর পর সময়মতোই অনার্স আর মাস্টার্স পাস করলাম দ্বিতীয় শ্রেণিতে। কিন্তু এখনো সেই দিনগুলোর কথা মনে করে ভীষণ কষ্ট পাই—কেন স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোতে ভালো করে পড়াশোনা করলাম না। এখন প্রতিদিন বেদনা হয়—কেন ভালো করে বাংলা আর ইংরেজি ভাষা শিখলাম না। এরই মধ্যে আমার ক্রিকেটীয় জীবনও শেষ; হয়ে গেছি এক ব্যর্থ কবি!
ঢাকার স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনেই দেশের ও বিশ্বের যা কিছু সেরা, তার স্বাদ গ্রহণ করেছি; গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছি, অনুপ্রাণিত বোধ করেছি। এসবের মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের জীবনের যাত্রাপথের যা কিছু ভালো, তার সন্ধান পেয়েছি। ষাটের দশকের সেই ঝড়ের উত্তাল তরঙ্গমালার দিনগুলোতে আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সেরা নায়কদের সম্পর্কে জেনেছি, তাঁদের সঙ্গ পেয়েছি। তাঁদের কাছ থেকে কত কিছু যে জেনেছি আর পেয়েছি, তার হিসাব-নিকাশ কোনো দিন শেষ হবে না। যাঁরা বেঁচে নেই এবং যাঁরা এখনো সক্রিয় আছেন, তাঁদের কাছ থেকে বাংলাদেশ আর সারা বিশ্বের যা কিছু সেরা, সেই শিক্ষা নেওয়া এখনো আমার শেষ হয়নি।
ষাটের দশকে আমার ছাত্রত্ব আর ছাত্র আন্দোলনের শেষ প্রান্তে বাংলাদেশের মানুষ তখন পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে, উত্তেজনায় কাঁপছে এবং চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওই সময় জীবনের এক বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে সক্রিয় রাজনীতির পাশাপাশি পুরোপুরি সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়ে যাই। ১৯৭০ সালের জুলাই মাসে সাপ্তাহিক একতার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব নিলাম।
তারপর ১৯৭১ সালে আমাদের জীবনের এক মহত্তম সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর স্বাধীন বাংলাদেশে সাংবাদিকতা আর সরাসরি রাজনীতিতে নতুন করে জড়িয়ে পড়ি। চোখের সামনে দেখলাম কীভাবে নতুন বাংলাদেশ জেগে উঠছে। এভাবে সত্তরের দশক থেকে নব্বইয়ের দশকের শুরু পর্যন্ত বামপন্থার রাজনীতিতে গভীরভাবে যুক্ত থাকাকালেই গণতন্ত্র থেকে একদলীয় শাসন, সামরিকতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র এবং নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্রের কত-না রূপ দেখলাম। আমি বুঝতে পারলাম যে রাজনীতির এ পথে বিশেষ কোনো ভূমিকা রাখতে পারব না। তখন সাংবাদিকতাতেই সবটুকু সময় ঢেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
সেই দিনগুলোতে নিজেকে প্রস্তুত করতে সাপ্তাহিক একতার পাশাপাশি দৈনিক সংবাদসহ আরও চারটি কাগজে কাজ করেছি। ১৯৯২ সালে দৈনিক ভোরের কাগজ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হই। ভোরের কাগজ অনেকটা সফলও হয়েছিল। কিন্তু একপর্যায়ে নতুন আরেকটি দৈনিক পত্রিকার স্বপ্ন আমার মধ্যে জেগে ওঠে। ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম আলো প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ি।
গতকাল ৪ নভেম্বর প্রথম আলো ১৭ বছর পূর্ণ করেছে। প্রথম আলো দেশের এখন সবচেয়ে বড় পত্রিকা। অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে প্রতিদিন এখন এর পাঠক ৫৫ লাখ। দেশের ভেতরে ছাপা কাগজে প্রথম আলো পড়েন ৪৩ লাখ পাঠক। আর দেশে ও দেশের বাইরে অনলাইনে প্রথম আলো পড়েন আরও ১২ লাখ পাঠক। আর ফেসবুকে ৬৮ লাখ এবং টুইটারে দুই লাখ পাঠক প্রথম আলো অনুসরণ করেন। বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চল থেকে এই পাঠক প্রথম আলো পড়েন। এটি পৃথিবীর এক নম্বর বাংলা ওয়েবসাইট। কাতারে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক প্রথম আলো। কাতার থেকে যায় বাহরাইন ও ওমানে। আমাদের আরও আছে একাধিক প্রকাশনা।
প্রথম আলোর মধ্য দিয়ে দেখতে পাই বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বের সকল দেশ ও অঞ্চলে পৌঁছে গেছেন। আর তাঁরা যে যেখানে থাকুন না কেন, প্রতিদিন বাংলাদেশের সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত থাকছেন গভীর ভালোবাসা নিয়ে। একই সঙ্গে আমরা তাঁদের প্রতিদিনের জীবনের সকল ভালো-মন্দ আর আনন্দ-বেদনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে রয়েছি। জীবনে এর চেয়ে বেশি আর কী পাওয়ার আছে?
আবার এটাও সত্য যে প্রথম আলোর স্বাধীন ভূমিকার জন্য অনেক গালমন্দ শুনি। আমরা চাপে থাকি। মামলা-মোকদ্দমায় হাজিরা দিতে জেলায় জেলায় যেতে হয়। আবার অনেক সম্মান আর স্বীকৃতিও পাই মানুষের কাছ থেকে। পুরস্কারও পাই। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে? একজন ‘অর্ধশিক্ষিত’ মানুষ হয়েও এর চেয়ে বেশি আর কী চাই এক জীবনে?
আমাদের প্রথম আলোর এই সাফল্য কেন? কারণ, ১. প্রথম আলো স্বাধীনভাবে সাহস নিয়ে চলে; ২. প্রথম আলো সততার সঙ্গে পরিশ্রম করে; আর ৩. প্রথম আলো বিনীত থাকে তার পাঠকদের কাছে, মানুষের কাছে।
আমরা কাগজ করতে গিয়ে রোজ দেশে ও দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশের মানুষের, তরুণদের, নারীদের নানা উদ্যোগ আর সাফল্যের খবর পাই। সেই সব খবর আমরা আপনাদের কাছে যখন পৌঁছে দিই, তখন কিন্তু নিজেরাও অনুপ্রাণিত হই। আমাদের এই জীবনের সকল ব্যর্থতা-সফলতার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বারবার বলি, গভীর ভালোবাসা আর বিশ্বাস নিয়ে বলি, বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে। আজ বিশ্বজুড়ে প্রবল পরিবর্তনের ঝড়। বিজ্ঞান আর তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের সেই পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত করছে। বাংলাদেশের মানুষ অদম্য সৃজনশীলতায় তার ভালোটুকু আহরণ করছে।
আজকের বাংলাদেশ তরুণদের বাংলাদেশ। তরুণেরা দেখিয়ে দিচ্ছে, সবকিছুই সম্ভব। ৪০ কিলোমিটার দূর থেকে মোটরসাইকেলে চড়ে সাতক্ষীরার ক্রিকেট একাডেমিতে খেলতে আসত যে কিশোর মুস্তাফিজ, উদ্বোধনী খেলাতেই তার নাম বিশ্ব রেকর্ডের খাতায়। বাংলাদেশের দুজন তরুণ এভারেস্টে উঠল; উঠে পড়ল দুজন তরুণীও। এত অল্প পরিমাণ কৃষিজমি নিয়েও বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের ছাত্র এম জাহিদ হাসান বোর্ডের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন, তারপর প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক দলের নেতৃত্ব দিলেন, আবিষ্কার করলেন ভাইলফার্মিয়ন কণা, যে কণা ৮৫ বছর ধরে খুঁজছিলেন বিশ্বের খ্যাতিমান বিজ্ঞানীরা।
তার মানে, আপনি পারবেন। আপনারাই পারবেন। বাংলাদেশ পারবে। এই বিশ্বাস আপনাকে অদম্য করুক।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেটাই সব নয়। মনের দরজা খোলা রাখা চাই। দেশের আর বিশ্বের যা কিছু ভালো, যা কিছু সৃজনশীল—কবিতা-সাহিত্য-চিত্রকলা-সংগীত-নাটক-সিনেমা প্রভৃতি এবং জীবন থেকে প্রেরণা নিতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে। নিজের স্বপ্নকে বহু মানুষের স্বপ্নের সঙ্গে যূথবদ্ধ করতে হবে। মানুষের অফুরন্ত সম্ভাবনায় আস্থাবান থেকে আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে।
আপনি আলোকিত হবেন। আপনার মাধ্যমে আলোকিত হবে চারপাশ—এই দেশ, এই সমাজ এবং এই বিশ্ব। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন, মানুষের ভালোর জন্য যদি আপনি কাজ করেন, তা আমাদের সবার মুখ উজ্জ্বল করবে। আর আমরা জানি, আপনি ভুলবেন না আপনার মাকে এবং আপনার জন্মভূমিকে—প্রিয় এই বাংলাদেশকে।
মতিউর রহমান: সম্পাদক, প্রথম আলো।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি ও সদস্যবৃন্দ, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর, কর্মকর্তাগণ, শিক্ষকমণ্ডলী, সমাবর্তনে উপস্থিত অভিভাবকমণ্ডলী, অতিথিগণ এবং ছাত্রছাত্রীবৃন্দ:
আপনারা সকলে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির দশম সমাবর্তন উৎসবে সমাবর্তন-বক্তৃতা দিতে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি বিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় আমার মতো একজন সাধারণ সংবাদকর্মীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে যে সম্মান ও স্বীকৃতি দিল, সে জন্য আমি ও আমার সহকর্মীরা অভিভূত হয়েছি।
আমি ও আমার সহপাঠীরা ছাত্রজীবন শেষে কিংবা কর্মজীবনের সূচনাকালে আজকের মতো আনন্দময় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারিনি। আমার বিএ (অনার্স) এবং এমএ ডিগ্রি লাভের বছর ছিল ১৯৬৬ ও ১৯৬৭ সাল। সেই বছরগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সমাবর্তন উৎসব হয়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তখন ছিল পাকিস্তানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র।
আজকে আমি আপনাদের সামনে আমার ব্যর্থ শিক্ষাজীবনের কথা বলতে এসেছি।
১৯৫০-এর দশকের শুরুতে পুরান ঢাকার বংশাল রোড থেকে প্রতিদিন হেঁটে নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়েছি। আমার স্কুলজীবনের হইচইমুখর দিনগুলোর বড় সময় কেটেছে ফুটবল, ক্রিকেটসহ নানা ধরনের খেলা দেখে। স্কুলের দশম শ্রেণি থেকে ঢাকার প্রথম বিভাগে ক্রিকেট খেলতে শুরু করি। ওই সময় বিশ্বের সেরা ক্রিকেট দলগুলো—ওয়েস্ট ইন্ডিজ, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান আর নিউজিল্যান্ডের সেরা খেলোয়াড়দের খেলা দেখে আনন্দিত হয়েছি। একই সঙ্গে সেরা ক্রীড়াবিদ ও সাঁতারুদেরও খোঁজখবর রাখতাম। ১৯৫৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের বিশ্ব অলিম্পিক গেমসের অনেক স্বর্ণজয়ীর নাম ও রেকর্ড এখনো স্মৃতিতে উজ্জ্বল।
নবাবপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় (১৯৫৩-১৯৬১ সাল) থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে পাস করি। ১৯৬১ সালে ঢাকা কলেজে ভর্তি হই। ১৯৬২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই পাকিস্তানি সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে পড়ি। তারপর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স বিল্ডিং, আর্টস বিল্ডিং, আমতলা আর মধুর ক্যানটিন—পুরো এলাকাটিই ছিল আমাদের বিচরণকেন্দ্র।
একই সঙ্গে ছিল কবিতা ও গানের প্রতি ভালোবাসা। তখনো ক্রিকেট খেলি। এত কিছু করে লেখাপড়া আর কি হয়! তারপরও পাস করলাম সময়মতো—উচ্চমাধ্যমিক বিজ্ঞান শাখায় দ্বিতীয় বিভাগে।
১৯৬৩ সালে আমাদের অতিপরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংখ্যাতত্ত্ব বিভাগে ভর্তি হয়েছিলাম। সঙ্গে অতিরিক্ত বিষয় ছিল অর্থনীতি আর গণিত। তখন দুই বছর পর অতিরিক্ত দুটি বিষয়ে পাস করতে হতো। তারপরের বছর অনার্স পরীক্ষা। তার আরও এক বছর পর এমএ পরীক্ষা। বুঝতেই পারছেন আমার অবস্থা!
বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোতে বক্তৃতা-বিবৃতি লেখা, দেয়ালে পোস্টার লাগানো থেকে শুরু করে বড় বড় সভা আর মিছিল সংগঠিত করেছি, অংশ নিয়েছি। হল ও সংগঠনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুধু নয়, একুশে ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে বড় অনুষ্ঠান এবং আরও অনেক বড় বড় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করেছি। একই সঙ্গে চলেছে সংকলন ও বই প্রকাশনা এবং কবিতা লেখা। তখনো ক্রিকেট খেলছি।
এসবের মধ্যেই দেশ-বিদেশের অসামান্য সব গল্প-উপন্যাস আর অনুপ্রেরণা সৃষ্টিকারী আত্মজীবনী পড়েছি। দেশে তৈরি সিনেমা দেখার পাশাপাশি কলকাতা, মুম্বাই, হলিউড, ফ্রান্স, ইতালি আর রুশ দেশের সেরা পরিচালক আর অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সিনেমা দেখেছি। বাংলা গানের মধ্যে রবীন্দ্রসংগীত, গণসংগীত—এসবের পাশাপাশি বিশ্বের সেরা সংগীতশিল্পীদের গান শুনেছি। সেরা নাটক দেখেছি, সেরা শিল্পীদের প্রদর্শনী উপভোগ করেছি। দেশের সেরা কবি, লেখক, গায়ক, চিত্রশিল্পী, অভিনেতা, শিক্ষক, চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছি।
তখন আমার প্রধান কাজ ও জীবনের লক্ষ্য ছাত্ররাজনীতি এবং রাজনীতি দিয়ে দেশে পরিবর্তন নিয়ে আসা। একই সঙ্গে ছিল হইহুল্লোড়, আড্ডা, গল্প আর আনন্দ করা। আর ছিল নানা রকমের লেখালেখি। আবার এর মধ্যে জীবনসঙ্গিনীকে খুঁজে পাই। এত সব করে কি আর পড়াশোনার মতো কঠিন কাজ হয়! অনার্স আর মাস্টার্স পরীক্ষার সময় মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। ঘুম আসে না। ঘুমের ওষুধ খাই। আম্মাকে বসিয়ে রাখি সারা রাত। সেই আতঙ্ক এখনো মাঝেমধ্যে স্বপ্নে ফিরে ফিরে আসে।
এত সবকিছুর পর সময়মতোই অনার্স আর মাস্টার্স পাস করলাম দ্বিতীয় শ্রেণিতে। কিন্তু এখনো সেই দিনগুলোর কথা মনে করে ভীষণ কষ্ট পাই—কেন স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোতে ভালো করে পড়াশোনা করলাম না। এখন প্রতিদিন বেদনা হয়—কেন ভালো করে বাংলা আর ইংরেজি ভাষা শিখলাম না। এরই মধ্যে আমার ক্রিকেটীয় জীবনও শেষ; হয়ে গেছি এক ব্যর্থ কবি!
ঢাকার স্কুল, কলেজ আর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনেই দেশের ও বিশ্বের যা কিছু সেরা, তার স্বাদ গ্রহণ করেছি; গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছি, অনুপ্রাণিত বোধ করেছি। এসবের মধ্য দিয়েই আমরা আমাদের জীবনের যাত্রাপথের যা কিছু ভালো, তার সন্ধান পেয়েছি। ষাটের দশকের সেই ঝড়ের উত্তাল তরঙ্গমালার দিনগুলোতে আমাদের ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সেরা নায়কদের সম্পর্কে জেনেছি, তাঁদের সঙ্গ পেয়েছি। তাঁদের কাছ থেকে কত কিছু যে জেনেছি আর পেয়েছি, তার হিসাব-নিকাশ কোনো দিন শেষ হবে না। যাঁরা বেঁচে নেই এবং যাঁরা এখনো সক্রিয় আছেন, তাঁদের কাছ থেকে বাংলাদেশ আর সারা বিশ্বের যা কিছু সেরা, সেই শিক্ষা নেওয়া এখনো আমার শেষ হয়নি।
ষাটের দশকে আমার ছাত্রত্ব আর ছাত্র আন্দোলনের শেষ প্রান্তে বাংলাদেশের মানুষ তখন পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে, উত্তেজনায় কাঁপছে এবং চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওই সময় জীবনের এক বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে সক্রিয় রাজনীতির পাশাপাশি পুরোপুরি সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়ে যাই। ১৯৭০ সালের জুলাই মাসে সাপ্তাহিক একতার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব নিলাম।
তারপর ১৯৭১ সালে আমাদের জীবনের এক মহত্তম সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর স্বাধীন বাংলাদেশে সাংবাদিকতা আর সরাসরি রাজনীতিতে নতুন করে জড়িয়ে পড়ি। চোখের সামনে দেখলাম কীভাবে নতুন বাংলাদেশ জেগে উঠছে। এভাবে সত্তরের দশক থেকে নব্বইয়ের দশকের শুরু পর্যন্ত বামপন্থার রাজনীতিতে গভীরভাবে যুক্ত থাকাকালেই গণতন্ত্র থেকে একদলীয় শাসন, সামরিকতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র এবং নির্বাচিত স্বৈরতন্ত্রের কত-না রূপ দেখলাম। আমি বুঝতে পারলাম যে রাজনীতির এ পথে বিশেষ কোনো ভূমিকা রাখতে পারব না। তখন সাংবাদিকতাতেই সবটুকু সময় ঢেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
সেই দিনগুলোতে নিজেকে প্রস্তুত করতে সাপ্তাহিক একতার পাশাপাশি দৈনিক সংবাদসহ আরও চারটি কাগজে কাজ করেছি। ১৯৯২ সালে দৈনিক ভোরের কাগজ গড়ে তুলতে সচেষ্ট হই। ভোরের কাগজ অনেকটা সফলও হয়েছিল। কিন্তু একপর্যায়ে নতুন আরেকটি দৈনিক পত্রিকার স্বপ্ন আমার মধ্যে জেগে ওঠে। ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর প্রথম আলো প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ি।
গতকাল ৪ নভেম্বর প্রথম আলো ১৭ বছর পূর্ণ করেছে। প্রথম আলো দেশের এখন সবচেয়ে বড় পত্রিকা। অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে প্রতিদিন এখন এর পাঠক ৫৫ লাখ। দেশের ভেতরে ছাপা কাগজে প্রথম আলো পড়েন ৪৩ লাখ পাঠক। আর দেশে ও দেশের বাইরে অনলাইনে প্রথম আলো পড়েন আরও ১২ লাখ পাঠক। আর ফেসবুকে ৬৮ লাখ এবং টুইটারে দুই লাখ পাঠক প্রথম আলো অনুসরণ করেন। বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চল থেকে এই পাঠক প্রথম আলো পড়েন। এটি পৃথিবীর এক নম্বর বাংলা ওয়েবসাইট। কাতারে প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিক প্রথম আলো। কাতার থেকে যায় বাহরাইন ও ওমানে। আমাদের আরও আছে একাধিক প্রকাশনা।
প্রথম আলোর মধ্য দিয়ে দেখতে পাই বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বের সকল দেশ ও অঞ্চলে পৌঁছে গেছেন। আর তাঁরা যে যেখানে থাকুন না কেন, প্রতিদিন বাংলাদেশের সবকিছুর সঙ্গে যুক্ত থাকছেন গভীর ভালোবাসা নিয়ে। একই সঙ্গে আমরা তাঁদের প্রতিদিনের জীবনের সকল ভালো-মন্দ আর আনন্দ-বেদনার সঙ্গে যুক্ত হয়ে রয়েছি। জীবনে এর চেয়ে বেশি আর কী পাওয়ার আছে?
আবার এটাও সত্য যে প্রথম আলোর স্বাধীন ভূমিকার জন্য অনেক গালমন্দ শুনি। আমরা চাপে থাকি। মামলা-মোকদ্দমায় হাজিরা দিতে জেলায় জেলায় যেতে হয়। আবার অনেক সম্মান আর স্বীকৃতিও পাই মানুষের কাছ থেকে। পুরস্কারও পাই। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে? একজন ‘অর্ধশিক্ষিত’ মানুষ হয়েও এর চেয়ে বেশি আর কী চাই এক জীবনে?
আমাদের প্রথম আলোর এই সাফল্য কেন? কারণ, ১. প্রথম আলো স্বাধীনভাবে সাহস নিয়ে চলে; ২. প্রথম আলো সততার সঙ্গে পরিশ্রম করে; আর ৩. প্রথম আলো বিনীত থাকে তার পাঠকদের কাছে, মানুষের কাছে।
আমরা কাগজ করতে গিয়ে রোজ দেশে ও দেশের বাইরে থেকে বাংলাদেশের মানুষের, তরুণদের, নারীদের নানা উদ্যোগ আর সাফল্যের খবর পাই। সেই সব খবর আমরা আপনাদের কাছে যখন পৌঁছে দিই, তখন কিন্তু নিজেরাও অনুপ্রাণিত হই। আমাদের এই জীবনের সকল ব্যর্থতা-সফলতার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বারবার বলি, গভীর ভালোবাসা আর বিশ্বাস নিয়ে বলি, বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে। আজ বিশ্বজুড়ে প্রবল পরিবর্তনের ঝড়। বিজ্ঞান আর তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের সেই পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত করছে। বাংলাদেশের মানুষ অদম্য সৃজনশীলতায় তার ভালোটুকু আহরণ করছে।
আজকের বাংলাদেশ তরুণদের বাংলাদেশ। তরুণেরা দেখিয়ে দিচ্ছে, সবকিছুই সম্ভব। ৪০ কিলোমিটার দূর থেকে মোটরসাইকেলে চড়ে সাতক্ষীরার ক্রিকেট একাডেমিতে খেলতে আসত যে কিশোর মুস্তাফিজ, উদ্বোধনী খেলাতেই তার নাম বিশ্ব রেকর্ডের খাতায়। বাংলাদেশের দুজন তরুণ এভারেস্টে উঠল; উঠে পড়ল দুজন তরুণীও। এত অল্প পরিমাণ কৃষিজমি নিয়েও বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের ছাত্র এম জাহিদ হাসান বোর্ডের পরীক্ষায় প্রথম হয়েছিলেন, তারপর প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষক দলের নেতৃত্ব দিলেন, আবিষ্কার করলেন ভাইলফার্মিয়ন কণা, যে কণা ৮৫ বছর ধরে খুঁজছিলেন বিশ্বের খ্যাতিমান বিজ্ঞানীরা।
তার মানে, আপনি পারবেন। আপনারাই পারবেন। বাংলাদেশ পারবে। এই বিশ্বাস আপনাকে অদম্য করুক।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু সেটাই সব নয়। মনের দরজা খোলা রাখা চাই। দেশের আর বিশ্বের যা কিছু ভালো, যা কিছু সৃজনশীল—কবিতা-সাহিত্য-চিত্রকলা-সংগীত-নাটক-সিনেমা প্রভৃতি এবং জীবন থেকে প্রেরণা নিতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে। নিজের স্বপ্নকে বহু মানুষের স্বপ্নের সঙ্গে যূথবদ্ধ করতে হবে। মানুষের অফুরন্ত সম্ভাবনায় আস্থাবান থেকে আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে।
আপনি আলোকিত হবেন। আপনার মাধ্যমে আলোকিত হবে চারপাশ—এই দেশ, এই সমাজ এবং এই বিশ্ব। পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন, মানুষের ভালোর জন্য যদি আপনি কাজ করেন, তা আমাদের সবার মুখ উজ্জ্বল করবে। আর আমরা জানি, আপনি ভুলবেন না আপনার মাকে এবং আপনার জন্মভূমিকে—প্রিয় এই বাংলাদেশকে।
মতিউর রহমান: সম্পাদক, প্রথম আলো।
No comments