ব্যস্ত ৩০০০০ কারিগর
ঈদকে সামনে রেখে সুঁই-সুতা দিয়ে কাপড়ে বাহারী আলপনা তুলতে ব্যস্ত মানিকগঞ্জের প্রায় ৩০ হাজার নকশির কারিগর। এসব কারিগররা কাপড়ে আর্কষণীয় ডিজাইন আর নকশা বসিয়ে তৈরি করছে পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, শাড়ি, ফতুয়া, বেবী ড্রেসসহ নানান পোশাক। আর এই কাজের বেশির ভাগ কারিগর হচ্ছেন গ্রামীণ নারী। তাদের নিখুঁত হাতে তৈরি এসব পোশাকে লাগানো হচ্ছে নামীদামি ব্যান্ডের স্টিকার। তা শোভা পাচ্ছে রাজধানীর বড় বড় মার্কেটের শোরুমে। দেখা গেছে, বেশ কয়েক বছর ধরে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু নকশি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্র্যাকের আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন, মনামি, নকশি, ইউসুফ ইব্রাহীম হ্যান্ডিক্রাপ্ট, জননী ক্র্যাফট অ্যান্ড ফ্যাশন উল্লেখযোগ্য। এসব প্রতিষ্ঠানের শতাধিক কেন্দ্রে প্রায় ৩০ হাজার নকশি কারিগর সারা বছরই তৈরি করে পাঞ্জাবি, শাড়ি, থ্রিপিস ও বেবী ড্রেস। কিন্তু ঈদ এলে এসব পোশাকের চাহিদা বাড়ে বহু গুণ। প্রত্যেক বছর ঈদের সময় নকশি কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করেন। এই ঈদেও একই অবস্থা। পাঞ্জাবি-ফতুয়া শাড়িতে এখন সুঁই-সুতার নকশি আঁকতে দিন-রাত ব্যস্ত এইসব কারিগররা। জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই এখন বাড়ির উঠানে উঠানে চেখে পড়বে কারিগরদের ব্যস্ততার এই দৃশ্য। আর সুঁই-সুতার বেশিরভাগ কাজ করেন গ্রামীণ নারীরা। তাদের নিপুণ হাতের এই কাজের কদর জেলার গ-ি পেরিয়ে রয়েছে সারা দেশেই। অভিজাত বিপণি বিতান আড়ং, বুনন, অঞ্জনস, কো-ক্রাফট, বাংলার মেলা, গ্রামীণ চেক, রং, আবর্তনসহ দেশের নামীদামি সব প্রতিষ্ঠানে চলে যায় মানিকগঞ্জের তৈরি এসব বাহারী পোশাক। এবার ঈদ উপলক্ষে সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে পাঞ্জাবি, শাড়ি, ফতুয়া, থ্রিপিস ও বেবী ড্রেসের লক্ষাধিক পোশাক। শুধুমাত্র মানিকগঞ্জ আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন থেকে আড়ংয়ে যাচ্ছে প্রায় ৬০ হাজার নকশির কাজের পোশাক। এর মধ্যে রয়েছে প্রায় ২৩ হাজার পাঞ্জাবি, ৮ হাজার ফতুয়া, ১০ হাজার স্যালোয়ার-কামিজ, ৮ হাজার শাড়ি, ৬ হাজার বেবী ড্রেস ও ৪ হাজার হাউজ হোল্ড। এছাড়া জননী ক্র্যাফট অ্যান্ড ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান থেকেও ৩০ হাজারের বেশি পোশাক ঢাকার নামীদামি বিপণি বিতানে যাচ্ছে এবার ঈদ উপলক্ষে। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া গ্রামের নকশা কারিগর সালমা বেগম জানালেন, সারা বছর নকশা তোলার কাজ করলেও প্রতি বছর ঈদের আগে কাজের চাপ বেড়ে যায় কয়েক গুণ। রোজা শুরু হওয়ার আগে থেকে দিন-রাত পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু সেই তুলনায় মজুরি অনেক কম। তারপরও সংসার চালানো ও ছেলেমেয়েদের পড়ার খরচ করা হয় এই আয় দিয়ে। আরেক কারিগর হোসনেআরা জানালেন, আমাদের হাতে তৈরি পোশাকের কদর আমরা তেমন বুঝি না। যখন মানুষজন এই পোশাকগুলো বড় বড় শোরুম থেকে কিনে ব্যবহার করেন তখন আমরাই বুঝতে পারি না এগুলো আমাদের হাতে তৈরি। মানিকগঞ্জ ব্র্যাক আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনের ম্যানেজার আশরাফ উজ্জামান বলেন, কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী কোয়ালিটি ঠিক রেখে এসব পোশাক তৈরি করা হয়। ভাল কোয়ালিটির কারণেই মানিকগঞ্জের নকশি করা পোশাকের চাহিদা বেশি। ঈদের সময় এসব পোশাকের কদর বেশি থাকে। এবার প্রায় ৬০ হাজার পোশাক আমরা মানিকগঞ্জ থেকেই শুধুমাত্র আড়ংয়েই দিচ্ছি।
No comments