সব লাশ বিদ্রোহীদের দখলে
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের বিধ্বস্ত বিমানের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকর্মীরা যে ১৯৬টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা সেগুলো অজ্ঞাতনামা স্থানে নিয়ে গেছে বলে ইউক্রেনের জরুরি বিভাগের এক মুখপাত্র অভিযোগ করেছেন। সংবাদ সংস্থা এপির বরাত দিয়ে মুখপাত্র নাতালিয়া বিস্ট্রো রোববার বলেন, শনিবার সাংবাদিকরা বিদ্রোহীদের ঘটনাস্থল থেকে লাশের বস্তাগুলো ট্রাকে তুলে নিয়ে যেতে দেখেছিলেন। কিন্তু রোববার তারা ঘটনাস্থলে কোনো মৃতদেহ দেখতে পাননি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, রুশপন্থী সশস্ত্র বিদ্রোহীরা উদ্ধারকর্মীদের কাছ থেকে মৃতদেহগুলো ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। সেগুলোকে তারা কোথায় রেখেছে এ বিষয়ে ইউক্রেন সরকারের কোনো ধারণা নেই। এদিকে ইউক্রেনের উচ্চপর্যায়ের এক বিদ্রোহী নেতা রোববার বলেছেন, কিয়েভ তাদের সঙ্গে চুক্তিতে রাজি হলে তারা আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলকে নিরাপদে বিধ্বস্ত বিমানের ঘটনাস্থল পরিদর্শনের নিশ্চয়তা দেবেন। ‘দনেতস্ক পিপলস রিপাবলিকান’ নামক দলের স্বঘোষিত উপপ্রধানমন্ত্রী আন্দ্রেই পুরগিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমরা এই মর্মে ঘোষণা দিচ্ছি যে, কিয়েভ আমাদের সঙ্গে একটি যুদ্ধবিরতি যুক্তিতে সম্মত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের নিরাপদে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের নিশ্চয়তা দেব।’ এদিকে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ইউক্রেনে বিধ্বস্ত বিমানের ঘটনাস্থলে যেতে না দেয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। শনিবার রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই লেভারভের কাছে টেলিফোনে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোপারেশন ইন ইউরোপ’ সংক্ষেপে ওএসসিই’র পর্যবেক্ষক এবং আন্তর্জাতিক তদন্তকারীদের সঠিকভাবে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে বাধা দেয়ার খবরে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। এছাড়া বিধ্বস্ত বিমানের মৃতদেহ এবং ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে নেয়ার খবরেও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ক্ষেপণাস্ত্রে ধ্বংস হয়ে যাওয়া মালয়েশিয়ার বিমান নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চাপানউতোর চলছেই। শনিবার ইউক্রেন অভিযোগ করেছে রাশিয়া এবং রুশপন্থী জঙ্গিরা দুর্ঘটনাস্থল থেকে প্রমাণ গায়েব করছে। ইউক্রেন সরকার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, জঙ্গিরা ৩৮টি দেহ দোনেস্কের মর্গে নিয়ে যাওয়া ছাড়াও সরকারি তদন্তকারীদের দুর্ঘটনাস্থলে ঢুকতে বাধা দিয়েছে।
রুশভাষী কিছু লোক মৃতদেহের অটোপসিতে বাধা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। অন্য দিকে, বিমান দুর্ঘটনার জন্য ওবামা রাশিয়াকে সরাসরি দায়ী করায় বিরক্ত ভাদিমির পুতিন প্রশাসন। সে দেশের উপ-বিদেশমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেন, ‘তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই ওবামা প্রশাসন একতরফা সিদ্ধান্ত নিল। প্রথিবী জুড়ে নিজের সিদ্ধান্ত চাপাতে গিয়ে আমেরিকা অপরিণত শল্যচিকিৎসকের মতো কাজ করে ফেলে। প্রথমেই গভীরে গিয়ে কাটাছেঁড়া করে ফেলায়, সেলাইটাও পাকাপোক্ত হয় না। ফলে ব্যথাটা থেকেই যায় আর সমস্যার সুরাহাও হয় না।’ রাশিয়ার অবস্থানকেই সমর্থন করে বহুল প্রচারিত রুশ দৈনিক ‘মসকভস্কি কমসোমোলেটস’ শনিবার সামরিক বিশেষজ্ঞ ভিক্তর মুরাখভস্কিকে উদ্ধৃত করে বলেছে, রুশপন্থী জঙ্গিদের বুক মিসাইল ছোড়ার দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা, কোনোটাই নেই। রুশ সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরের দুর্ঘটনাস্থল গ্রাবোভো গ্রাম থেকে জঙ্গিরা এখন প্রায় ২০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে একটি নিরাপদ অঞ্চল গড়ে তুলেছে। খোলা আকাশের নিচে এখানেই পড়ে আছে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ এবং অসংখ্য মৃতদেহ। কিন্তু কিয়েভের দিক থেকে এই ধরনের সেফ করিডরের ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শকদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
No comments