‘আমার বাবাকে ফিরিয়ে দাও’ -ফিলিস্তিনি শিশুর আর্তচিৎকার
আমি
আমার বাবাকে চাই, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দাও- চিকিৎসাকর্মীর শার্ট ধরে
এভাবেই আর্তচিৎকার করে ওঠে ফিলিস্তিনের এক শিশু। শরীর রক্তাক্ত,
ক্ষতবিক্ষত। ইসরাইলি গোলাবারুদের ক্ষত তাকে কাবু করেনি, তাকে কাঁদিয়েছে
পিতা হারানোর বেদনা। ইসরাইল আর হামাস দ্বন্দ্বের বাস্তব দৃশ্য ফুটে উঠেছে
গাজার হাসপাতালে ফিলিস্তিনি ওই শিশুর মর্মস্পর্শী ছবিতে। শিশুটির পরনে কোন
শার্ট নেই। সারা শরীরে ক্ষতচিহ্ন। স্প্লিন্টারে ঝাঁঝরা হয়ে গেছে শরীর। সে
সব ক্ষত দিয়ে রক্ত ঝরছে। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠছে সে। কিন্তু সে ব্যথার চেয়ে তার
পিতার ভালবাসা অনেক বড়। তাই হাসপাতালের এক চিকিৎসাকর্মী বাচ্চাটিকে শুইয়ে
দিতে চেষ্টা করার সময় তার শার্ট আঁকড়ে ধরে চিৎকার করে ওঠে শিশুটি।
ফিলিস্তিনি সংবাদ মাধ্যম ইলেক্ট্রনিক ইনতিফাদা জানায়, ছবিটি গত বৃহস্পতিবার
গাজার আল শিফা হাসপাতাল থেকে নেয়া হয়েছে। একই খবর প্রকাশ করেছে ডেইলি মেইল
ও ফেয়ারফ্যাক্স। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একই পরিবারের ৪ ভাইবোনকে আহত
অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়। ওই শিশুটি তাদের একজন। বাকিদের দু’জনের বয়স
মাত্র ৩ বছর। গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি উন্মত্ততা অব্যাহত রয়েছে। এ রিপোর্ট
লেখা পর্যন্ত ইসরাইলের নৃশংসতায় সেখানে নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০৮। লাশের
স্তূপের সংখ্যা আরও উচ্চতায় বাড়ছে। বেড়ে চলেছে আহতের সংখ্যাও। হাসপাতালগুলো
হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। যদি কিছু প্রাণ বাঁচানো যায়- সে জন্য চলছে
তাদের প্রাণান্ত চেষ্টা। এক গাজা নিবাসী যথার্থই বলেছেন, নরকের দরজা খুলে
গেছে। এদিকে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় ক্রমবর্ধমান বেসামরিক লোকের
মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এক জরুরি বৈঠকের পর সংস্থাটি অবিলম্বে
যুদ্ধবিরতির দাবি জানায়। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন মধ্যপ্রাচ্যে তার সফরে
উভয় পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তির জন্য চেষ্টা করছেন। গতকাল দিনশেষে
তার কায়রো পৌঁছানোর কথা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি পুনরায়
মধ্যপ্রাচ্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহল থেকে দৃশ্যত কোন
কার্যকর চাপ নেই ইসরাইলের ওপর। ইসরাইল একটি রাষ্ট্র। সে একদিকে। সারা বিশ্ব
অন্যদিকে। নির্বিচারে পবিত্র রমজানে গাজায় মুসলমানদের ওপর যে নৃশংসতা
চালিয়ে যাচ্ছে তা যে কোন মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এক ইসরাইল রাষ্ট্র এত বড়
মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে চলেছে, আর এ সময়ে জাতিসংঘ উদ্বেগ প্রকাশ করেই কি
দায় সারতে চাইছে- এমন প্রশ্ন সাধারণ মানুষের মনে। তাছাড়া আরব বিশ্ব কিভাবে
এত শিশুর প্রাণহানি সহ্য করছে! হামাসের ‘রকেট ছোড়া’র জবাবে অকাতরে তারা
শিশু ও নারীদের হত্যা করে চলেছে। গাজার হাসপাতালগুলোতে নারী ও শিশুদের লাশ,
আহত মানুষে ঠাসা। একই বিছানায় আহত তিন-চারজনকে সেবা দেয়া হচ্ছে। নিহত
শিশুর লাশ বুকে নিয়ে আর্তচিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি করে তুলছেন পিতা-মাতা।
আবার কোন পরিবার চিরদিনের জন্য একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। তাদের
উত্তরসূরি বলতে কেউ বেঁচে নেই। ইসরাইলের গোলার আঘাতে থর থর করে কেঁপে উঠছে
গাজার মাটি। প্রাণভয়ে শিশুদের নিয়ে অভিভাবকরা ছুটছেন দূরে। একদিকে আকাশে
ইসরাইলি হামলার ফলে সৃষ্ট কালো ধোঁয়া, পিছনে দাউ দাউ করে জ্বলছে
এপার্টমেন্ট। আর তার পাশ দিয়ে রুদ্ধশ্বাসে ছুটছে মানুষ। যার যা আছে, যে যা
পারেন তাই নিয়ে ছুটে যাচ্ছেন কোন নিরাপদ আশ্রয়ে। কোন বয়োবৃদ্ধ মাকে তার
সন্তান হুইল চেয়ারে বসিয়ে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছেন। কোথাও প্রাইভেট কারের ব্যাক
কভারের ভিতর ঠেসে ঠেসে শিশু ও নারীদের বসিয়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এ এক
বিভীষিকা। বিশ্ব শুধু দেখছেই! বিলম্বে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, গাজার
আল-আকসা হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে কমপক্ষে ৪ জন নিহত হয়েছে।
No comments