র্যাব ভেঙে দিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি
র্যাব সংস্কার ও একে জবাবদিহির
প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি রাখতে পুরোপুরি
ব্যর্থ হয়েছে সরকার। জবাবদিহির ঘাটতি থাকায় সন্ত্রাসে লিপ্ত হতে পারছে
র্যাব। তাই র্যাব সংস্কারের বাইরে এবং দ্রুততার সঙ্গে এ সংস্থাকে বাতিল
করা উচিত। নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস
ওয়াচ গতকাল এক প্রতিবেদনে এ কথা বলেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশের
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের কাছে এ বিষয়ে চিঠি লিখেছে। তাতে বলা
হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের উচিত র্যাব ভেঙে দেয়া। যত দিন র্যাব বিলুপ্ত না
হচ্ছে ততদিন এ বাহিনী থেকে সব সামরিক কর্মকর্তা ও সেনাকে প্রত্যাহার করে
একে পুরোপুরি একটি বেসামরিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলা উচিত। হিউম্যান রাইটস
ওয়াচ আরও বলেছে, র্যাব সদস্যরা যে এ বছরের এপ্রিলে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের
জন্য দায়ী এমন প্রমাণ আছে। তারা ক্ষমতাসীন দলের সদস্যের পক্ষে কাজ করেছেন
বলে অভিযোগ আছে। তাদের এ কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে এবং এটা
আরেকটা উদাহরণ স্থাপন করেছে যে, কিভাবে এই বাহিনী ডেথ স্কোয়াড হিসেবে কাজ
করছে। তাই হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ব্রাড এডামস বলেছেন,
বাংলাদেশ সরকার র্যাব নিয়ে প্রতিশ্রুতি রাখতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
র্যাব এখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। তাই একে অবিলম্বে বাতিল করতে
হবে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৪ সালে গঠন করে
র্যাব। তারপর এক দশক ধরে বিএনপি, পর্যায়ক্রমিক সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক
সরকার ও ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার এই বাহিনীকে দায়মুক্তি
দিয়েছে। এতে মারাত্মক ও পর্যায়ক্রমিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ বছরে
নির্যাতন, অন্যান্য অশোভন আচরণ, খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তার ও প্রায় ৮০০
হত্যাকাণ্ডের জন্য তারা দায়ী।
ওদিকে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বিবিসিকে বলেছেন, যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের র্যাবে এনে বেসামরিক আইনে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে কাজ করানো হচ্ছে। আমরা বলছি যে, র্যাবের মধ্যে যে আর্মি আছে ওদের সরিয়ে দেয়া হোক। কেননা, ১০ বছর ধরে বাংলাদেশ আর্মি র্যাবের থ্রুতে সিভিলিয়ান ল এনফর্সমেন্ট করছে। আর্মির রোল তো হয় এক্সটার্নাল ডিফেন্স। যেহেতু ওরা র্যাবের মধ্যে ডিপ্লয়েড, সেজন্য তারা কিন্তু পুলিশের কাজ করছে। ৯/১১’র পর কাউন্টার টেররিস্ট ফোর্স হিসেবে র্যাব গঠন হয়েছিল। তখন বাংলাদেশ সরকার বলেছিল, বাংলাদেশ পুলিশ এতো বড় ইস্যু হ্যান্ডেল করতে পারবে না। সেজন্য তখন র্যাবের সৃষ্টি হলো, যেখানে সেনাবাহিনীকে আনা হলো। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে র্যাব ক্রিমিনালদেরকে ধরছে। এটা পুলিশের কাজ।
দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে এইচআরডাব্লিউ অযাচিত আচরণ করছে: শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, র্যাব ভেঙে দেয়ার সুপারিশ জানিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অযাচিত আচরণ করছে। এটা কোন মতেই সরকার পছন্দ করছে না। গতকাল সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে বিষয়টি আলোচনার জন্য ওঠে। ওই বৈঠকে এইচআরডাব্লিউর আহবান প্রত্যাখ্যান করা হয়। বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের বলেন, এটা দেশীয় বিষয় (র্যাব ভাঙা), এটা তাদের বিষয় নয়। আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা নেবো। এর আগে নারায়ণগঞ্জে সাত হত্যাকাণ্ডে র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার সম্পৃতার অভিযোগ ওঠার পর এই বাহিনীকে বিলুপ্ত করার দাবি তোলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তার দাবির প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে বলেছিলেন, চট করে র্যাব বন্ধ করে দেয়া সম্ভব নয়। শিল্পমন্ত্রী আমু জানান, নারায়ণগঞ্জের সাত খুন এবং ফেনীর একরামুল হক হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। তবে কমিটি তা আরও ত্বরান্বিত করতে বলেছে। ঢাকার মিরপুরে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের (বিহারি) ক্যাম্পে হতাহতের মতো ঘটনা ভবিষ্যতে যেন আর না ঘটে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
No comments