বস্তি থেকে উচ্চশিক্ষা নিতে আমেরিকা যাচ্ছেন সিয়াম
"যখন থেকে আমি বুঝি যে পড়াশুনা কত
গুরুত্বপূর্ণ, অনেক দূর যেতে হবে - তখন থেকেই আমার স্বপ্ন ছিলো যে, একদিন
বাইরে যাবো, বাইরে গিয়ে পড়াশুনা করবো, মানুষের সাথে মিশবো।" এভাবেই
নিজের স্বপ্নের কথা বলছিলেন সিয়াম হোসেন।
সিয়াম থাকেন রাজধানী ঢাকার রায়ের বাজার বস্তিতে, তবে সেখানে আটকে থাকেন নি তিনি।
বস্তির সংকীর্ণতা ছাড়িয়ে তিনি এখন উচ্চশিক্ষা নিতে যাচ্ছেন আমেরিকায়।
সিয়ামের
আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে 'ডেয়ার টু ড্রিম' বা 'স্বপ্ন দেখার সাহস'
নামের এই বৃত্তিটি দিয়েছে আমেরিকার ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড কলেজ বা
ইউডব্লিউসি।
ইউডাব্লিউসি-তে ২০১৯-২০ শিক্ষাবছরে ৮০ হাজার ডলার মূল্যের পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে পড়তে এ মাসেই নিউ মেক্সিকো যাচ্ছেন তিনি।
তবে
তার স্বপ্নপূরণের এই যাত্রাটি সহজ ছিলো না সিয়ামের জন্য। কিভাবে বস্তি
থেকে আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করলেন, বিবিসি বাংলার সাথে সাক্ষাৎকারে
সেকথাই বলছিলেন সিয়াম।
তিনি বলেন, তার এই অর্জনের পেছনে অবদান রয়েছে জাগো ফাউন্ডেশনের।
"২০০৭
সালে যখন জাগো ফাউন্ডেশনের স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় তখন এখানকার প্রথম
ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলাম আমি। ১৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে স্কুলের যাত্রা শুরু
হলেও ক্লাসে আসতো দুই তিন জন করে।"
"মানুষ তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে চাইতো না। কারণ এক ধরণের গুজব
ছিলো যে, এখান থেকে বাচ্চাদের পাচার করা হবে কিনা। এমন গুজবেও আমার মা-বাবা
আমাকে ভর্তি করে। এমনকি তারা অন্য বাচ্চাদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও তাদের
স্কুলে ভর্তি করাতে বলতো।"
সিয়াম জানান, ছোটবেলা থেকেই স্কুলে
যাওয়া খুব পছন্দ ছিলো তার। "আশেপাশে তো দেখতাম যারা স্কুলে যেতো, তো তাদের
মুখে যে হাসিটা না থাকতো, আমাদের মুখে সেটা থাকতো" - বলছিলেন তিনি।
সেই স্কুলে যখন বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা পরিদর্শনে আসতেন, তাদের সাথে কথা বলে বা মিশে তাদের মতোই হতে চাইতেন সিয়াম।
এই
স্বপ্ন পূরণের পেছনে জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করবি রাকসান্দ ছিলেন
সিয়ামের কাছে আদর্শ একজন মানুষ। তিনি বলেন, "আমার জীবনের প্রথম স্কাইপ
অ্যাকাউন্ট করে দিয়েছিলেন স্যার, যাতে আমি বিদেশি নাগরিকদের সাথে যোগাযোগ
রাখতে পারি।"
সিয়াম জানান, আগে বড় হয়ে একজন ভালো চিকিৎসক হতে
চাইতেন তিনি। তবে এখন জীবনের লক্ষ্য বদলে গেছে তার। এখন তিনি হতে চান একজন
যোগাযোগ কর্মী।
এর কারণ জানতে চাইলে সিয়াম বলেন, "আমি মনে করি আমি
অনেক ভালো কথা বলতে পারি। এটা আমার আত্মবিশ্বাস। আমার মনে হয় এই সেক্টরে
আমি অনেক ভালো করবো।"
সিয়াম জানান, তার এই অর্জনে শুধু তার পরিবার
নয় বরং তার প্রতিবেশীরাও অনেক খুশি। সিয়ামকে দেখেই নিজেদের সন্তানদের
ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা পান তারা।
তিনি বলেন, "আমাকে দিয়েই শুরু। আর তারা চায় যাতে আমাকে দিয়েই শেষ হয়ে না যায়। তারা আমাকে নিয়ে অনেক আশাবাদী।"
নিজের
মতো অন্যদের উদ্দেশ্যে সিয়াম বলেন, "আমি সবচেয়ে বড় এক্সাম্পল
(দৃষ্টান্ত) যে, যেখান থেকে আজ আমি যে পর্যায়ে এসেছি, ইনশাল্লাহ আরো অনেক
দূর যাবো। আমি মনে করি, তারাও পারবে।"
"বাধা-বিপত্তি থাকে জীবনে, কিন্তু সেগুলো পার করেও যে সাফল্যের দিকে যাওয়া সম্ভব সেটাই হচ্ছে মূল বিষয়।"
বস্তির সংকীর্ণতা ছাড়িয়ে সিয়াম হোসেন এখন উচ্চশিক্ষা নিতে যাচ্ছেন আমেরিকায়। |
No comments