যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক কি নতুনভাবে বিন্যস্ত হতে পারে? by মোহাম্মদ আইয়ুব
পাকিস্তানের
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সদ্য সমাপ্ত তিন দিনের ওয়াশিংটন সফরের লক্ষ্য
ছিল যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক পুনঃবিন্যস্ত করা। কয়েক বছর ধরে এই
সম্পর্ক মারাত্মক চাপে ছিল, ২০১৭ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর
তা সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে যায়। ট্রাম্প একাধিকবার বলেছেন, কাবুলের সরকারি
বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত, সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনাকারী ও আমেরিকান
সৈন্যদের হামলার সাথে জড়িত তালেবানের প্রতি পাকিস্তানের সমর্থনে তিনি
প্রচণ্ডভাবে অসন্তুষ্ট।
আমেরিকান টার্গেটগুলোর ওপর হামলাকারী তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের মতো সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর জন্য পাকিস্তানে নিরাপদ আস্তানার অস্তিত্ব ছিল আমেরিকার পাকিস্তানকে ১.৩ বিলিয়ন ডলারের সামারিক সহায়তা ও ৮০০ মিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সহায়তা স্থগিত করার জন্য যথেষ্ট। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প তো তীব্রভাবে পাকিস্তানের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্র বোকার মতো ৩৩ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। বিনিময়ে পাকিস্তান প্রতারণা আর মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। তারা সন্ত্রাসীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়য়ের ব্যবস্থা করেছে।
শুরুতে পাকিস্তান এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে আর্থিক সহায়তার জন্য চীন ও সৌদি আরবের দিকে মুখ ফিরিয়েছে। এই মনোভাব আফগানিস্তান প্রসঙ্গে দুই দেশের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান প্রকাশ করে।
অবশ্য গত বছর থেকে দুই দেশের অবস্থানে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। পাকিস্তান মারাত্মক আর্থিক সঙ্কটে পড়ে কার্যত দেউলিয়া হয়ে যায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র দুই মাসের আমদানির পর্যায়ে নেমে যায়। চীনের কাছ থেকে জরুরিভিত্তিতে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়ে কোনোমতে রক্ষা হয়। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় অযৌক্তিক আমদানি পাকিস্তানের এমন অবস্থায় পড়ার একটি কারণ ছিল।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সাময়িকভাবে সামাল দেয়ার জন্য পাকিস্তান বাধ্য হয়েছে আইএমএফের কাছ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণ করতে। আইএমএফের ঋণ গ্রহণ করতে পাকিস্তানকে কঠিন কিছু সংস্কার সাধন করতে বাধ্য হতে হয়। আবার আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকে যুক্তরাষ্ট্রের ভোট শক্তি থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও সম্পর্ক ভালো করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে পাকিস্তানের।
আবার আফগানিস্তান জটিলতার অবসানের জন্য পাকিস্তানের সহাযোগিতার প্রয়োজন পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের। আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ ১৮ বছর ধরে চলছে। তালেবানের সাথে সমঝোতা হলেই কেবল যুক্তরাষ্ট্র মুখ রক্ষা করে আফগানিস্তান থেকে বের হয়ে যেতে পারে। আফগানিস্তানবিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত জালমি খালিলজাদ এক বছর ধরে তালেবানের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন একটি সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্য।
তালেবানের সাথে সম্পর্ক থাকায় এই শান্তিপ্রক্রিয়ায় পাকিস্তানকে প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের। তালেবান যাতে আফগান সরকারের সাথে আলোচনায় বসে সেজন্য গ্রুপটিকে রাজি করানোর দায়িত্বও পাকিস্তানকে দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানও এতে সহায়তা করতে চায়। আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাকিস্তানের নিজস্ব স্বার্থও রয়েছে।
ইমরান খানের সফরকালে ট্রাম্প স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, বিশ্বাসযোগ্যতা না হারিয়েই আফগানিস্তান থেকে মার্কিনিদের বের হওয়ার জন্য পাকিস্তানের সহায়তা দরকার যুক্তরাষ্ট্রের। ইমরান খানও তাতে রাজি হয়েছেন। তবে ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, তারা যেন মনে না করেন যে এটি খুবই সহজ কাজ। কারণ পরিস্থিতি খুবই জটিল।
আফগানিস্তান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এতে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইরান, রাশিয়া ও ভারতের মতো শক্তি নানাভাবে জড়িত। এসব দেশের স্বার্থ পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের চেয়ে ভিন্ন হতে পারে।
ইমরান খান পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে সহযোগিতার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আফগানিস্তানে আমেরিকাকে সহায়তার বিনিময়ে তিনি পাকিস্তানে মার্কিন সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা আবার শুরুর আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। তাছাড়া আফগানিস্তান ও কাশ্মির প্রশ্নে পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারত ও আফগানিস্তানকে রাজি করানোর কাজটিও যুক্তরাষ্ট্রকে করতে হবে বলে ইমরান খান আভাস দিয়েছেন।
কাশ্মির প্রশ্নে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্ততা করতে চান বলে ট্রাম্প যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটিকেও এই প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করতে হবে।
ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যে এই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আনুকূল্য বিনিময় দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন দিকে যাচ্ছে, এমনটা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে দুই পক্ষই আশাবাদী যে এমনটা হতে পারে।
>>>লেখক: ইউনিভার্সিটি ডিস্টিঙ্গুইশড প্রফেসর ইমিরিটাস অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স, মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি, নন-রেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো, সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসি, ওয়াশিংটন ডিসি
আমেরিকান টার্গেটগুলোর ওপর হামলাকারী তালেবান ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের মতো সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর জন্য পাকিস্তানে নিরাপদ আস্তানার অস্তিত্ব ছিল আমেরিকার পাকিস্তানকে ১.৩ বিলিয়ন ডলারের সামারিক সহায়তা ও ৮০০ মিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সহায়তা স্থগিত করার জন্য যথেষ্ট। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্প তো তীব্রভাবে পাকিস্তানের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্র বোকার মতো ৩৩ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। বিনিময়ে পাকিস্তান প্রতারণা আর মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই দেয়নি। তারা সন্ত্রাসীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়য়ের ব্যবস্থা করেছে।
শুরুতে পাকিস্তান এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে আর্থিক সহায়তার জন্য চীন ও সৌদি আরবের দিকে মুখ ফিরিয়েছে। এই মনোভাব আফগানিস্তান প্রসঙ্গে দুই দেশের সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান প্রকাশ করে।
অবশ্য গত বছর থেকে দুই দেশের অবস্থানে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। পাকিস্তান মারাত্মক আর্থিক সঙ্কটে পড়ে কার্যত দেউলিয়া হয়ে যায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মাত্র দুই মাসের আমদানির পর্যায়ে নেমে যায়। চীনের কাছ থেকে জরুরিভিত্তিতে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ পেয়ে কোনোমতে রক্ষা হয়। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের আওতায় অযৌক্তিক আমদানি পাকিস্তানের এমন অবস্থায় পড়ার একটি কারণ ছিল।
অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সাময়িকভাবে সামাল দেয়ার জন্য পাকিস্তান বাধ্য হয়েছে আইএমএফের কাছ থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ গ্রহণ করতে। আইএমএফের ঋণ গ্রহণ করতে পাকিস্তানকে কঠিন কিছু সংস্কার সাধন করতে বাধ্য হতে হয়। আবার আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকে যুক্তরাষ্ট্রের ভোট শক্তি থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও সম্পর্ক ভালো করার প্রয়োজন হয়ে পড়ে পাকিস্তানের।
আবার আফগানিস্তান জটিলতার অবসানের জন্য পাকিস্তানের সহাযোগিতার প্রয়োজন পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের। আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ ১৮ বছর ধরে চলছে। তালেবানের সাথে সমঝোতা হলেই কেবল যুক্তরাষ্ট্র মুখ রক্ষা করে আফগানিস্তান থেকে বের হয়ে যেতে পারে। আফগানিস্তানবিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত জালমি খালিলজাদ এক বছর ধরে তালেবানের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন একটি সমঝোতা প্রতিষ্ঠার জন্য।
তালেবানের সাথে সম্পর্ক থাকায় এই শান্তিপ্রক্রিয়ায় পাকিস্তানকে প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের। তালেবান যাতে আফগান সরকারের সাথে আলোচনায় বসে সেজন্য গ্রুপটিকে রাজি করানোর দায়িত্বও পাকিস্তানকে দিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানও এতে সহায়তা করতে চায়। আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাকিস্তানের নিজস্ব স্বার্থও রয়েছে।
ইমরান খানের সফরকালে ট্রাম্প স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, বিশ্বাসযোগ্যতা না হারিয়েই আফগানিস্তান থেকে মার্কিনিদের বের হওয়ার জন্য পাকিস্তানের সহায়তা দরকার যুক্তরাষ্ট্রের। ইমরান খানও তাতে রাজি হয়েছেন। তবে ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, তারা যেন মনে না করেন যে এটি খুবই সহজ কাজ। কারণ পরিস্থিতি খুবই জটিল।
আফগানিস্তান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এতে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইরান, রাশিয়া ও ভারতের মতো শক্তি নানাভাবে জড়িত। এসব দেশের স্বার্থ পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের চেয়ে ভিন্ন হতে পারে।
ইমরান খান পারস্পরিক স্বার্থের ভিত্তিতে সহযোগিতার ইঙ্গিত দিয়েছেন। আফগানিস্তানে আমেরিকাকে সহায়তার বিনিময়ে তিনি পাকিস্তানে মার্কিন সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা আবার শুরুর আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। তাছাড়া আফগানিস্তান ও কাশ্মির প্রশ্নে পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারত ও আফগানিস্তানকে রাজি করানোর কাজটিও যুক্তরাষ্ট্রকে করতে হবে বলে ইমরান খান আভাস দিয়েছেন।
কাশ্মির প্রশ্নে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে মধ্যস্ততা করতে চান বলে ট্রাম্প যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটিকেও এই প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করতে হবে।
ওয়াশিংটন ও ইসলামাবাদের মধ্যে এই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক আনুকূল্য বিনিময় দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক নতুন দিকে যাচ্ছে, এমনটা বলার সময় এখনো আসেনি। তবে দুই পক্ষই আশাবাদী যে এমনটা হতে পারে।
>>>লেখক: ইউনিভার্সিটি ডিস্টিঙ্গুইশড প্রফেসর ইমিরিটাস অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স, মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি, নন-রেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো, সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসি, ওয়াশিংটন ডিসি
No comments