দৃষ্টিহীনদের জন্য সুখবর
ড্যানিয়েল
কিশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। কিন্তু তার রয়েছে অদ্ভুত এক শক্তি। তিনি মুখে
ক্লিক ক্লিক শব্দ করে তার প্রতিধ্বনি থেকে বস্তুর অবস্থান শনাক্ত করতে
পারেন। বাদুড়ও রাতের বেলা ওড়ার সময় এই 'একোলোকেশন' পদ্ধতি ব্যবহার করে
এবং শব্দের প্রতিধ্বনি ব্যবহার করে অন্ধকারে সহজ ওড়া উড়ি করতে পারে।
এখন
নতুন এক গবেষণায় জানা যাচ্ছে যে কিছু কিছু মানুষ, যারা চোখে দেখতে পান না,
তারও এরকম পদ্ধতির ব্যবহার জানেন। প্রতিধ্বনিকে ব্যবহার করে তারা 'শব্দকে
দেখতে পান।' এই গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি ব্রিটেনের রয়্যাল সোসাইটির
জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। এই ফলাফলে বলা হচ্ছে, বাদুড়ের মতোই দক্ষ
একোলোকেটাররা তাদের শব্দের তীব্রতা বাড়িয়ে দেন। কোনো বস্তু দৃষ্টিহীন
মানুষের পাশে চলে গেলে বা পেছনে চলে গেলে তারা আরো ঘন ঘন ক্লিক ক্লিক করে
শব্দ করতে থাকেন। "ভিন্ন ভিন্ন মানুষ ভিন্নভাবে এই আওয়াজ করে থাকেন,"
বলছেন ড্যানিয়েল কিশ, যিনি নিজেও এই পরীক্ষার একজন গবেষক। বলেন, "মুখের
তালুর সাথে জিহবা দিয়ে ক্লিক শব্দ তুলে আমি এই কাজটা করি। আশেপাশের শব্দ
ভেদ করে এই শব্দ ছুটে যায় চারপাশে এবং আবার ফিরে আসে।" "শব্দটি এতই
তীক্ষ্ণ হয় যে কয়েক শো' মিটার দূর থেকে ফিরে আসার পরও আমি তার প্রতিধ্বনি
শুনতে পাই।" একোলোকেশন নিয়ে যেসব গবেষণা চলছে তার থেকে জানা যাচ্ছে যে এই
পদ্ধতি ব্যবহার করে শুধু বস্তুর অবস্থান সম্পর্কেই জানা যায় না।
বস্তুর
আকার, দূরত্ব, এবং এমনকি বস্তুটি কী দিয়ে তৈরি তাও জানা সম্ভব। ড. লোর
থেলার হচ্ছেন একোলোকশেনের ওপর ব্রিটেনের ডারাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের
প্রধান। তিনি জানালেন, তাদের গবেষণায় তারা আটজন দৃষ্টিহীন কিন্তু দক্ষ
একোলোকেটরকে একটা ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দেন। এরপর এরা কানে আঙুল ঢুকিয়ে
গুনগুন করে শব্দ করতে থাকেন। তখন গবেষকরা নীরবে একটা ধাতব গোলাকার চাকতি
ঘরের কোন একটা জায়গায় বসিয়ে দেন। এরপর একোলোকেটারদের গায়ে স্পর্শ করে
তাদের গুনগুন করা থামাতে বলেন এবং ক্লিক ক্লিক করে শব্দ করতে বলেন। এই
গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে সামনের কোন বস্তুর চেয়ে পাশের বস্তুর অবস্থান বের
করতে একোলোকেটারদের বেশি করে শব্দ তৈরি করতে হয়। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন,
এই বিষয়ে আরো গবেষণা হলে ভবিষ্যতে অন্ধ মানুষও শব্দ ব্যবহার করে সহজে
চলাফেরা করতে পারবেন।
No comments