হাঁচি আটকালে ভয়ঙ্কর বিপদ
হাঁচি
তো সবাই দেয়। আটকানো খুবই কঠিন। তবে মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়,
যার ফলে হাঁচি আটকানোই মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ। কিন্তু তা করা মানে সর্বনাশ
ডেকে আনা। আসলে হাঁচির সময় নাক বা মুখ বন্ধ করলে শরীরের বিভিন্ন অংশে এত
মাত্রায় চাপ বৃদ্ধি পায় যে দেহের অন্দরে মারাত্মক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা
বৃদ্ধি পায়। এমনকি মস্তিষ্কে চোট লাগার কারণে হতে পারে মারাত্মক কিছুও।
তাই ভুলেও হাঁচিকে আটকাবেন না যেন! আচ্ছা বলতে পারেন কখন আমাদের হাঁচি আসে?
আসলে যখন আমাদের শরীর, পরিবেশে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদানের কারণে হওয়া
সংক্রমণের হাত থেকে আমাদের বাঁচায়, তখনই সাধারণত হাঁচি আসে। তাই তো একথা
বলতেই হয় যে হাঁচি একেবারেই খারাপ কিছু নয়, বরং শরীরের পক্ষে খুবই উপকারি।
সেই কারণেই এবার থেকে বারে বারে যখন নাক সুরসুরিয়ে হাঁচি আসবে, তখন জানবেন
শরীর আপনাকে বাঁচানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই তো শরীরের
এই ডিফেন্স মেকানিজমকে মাঝ পথে বাধা দিতে মানা করেন চিকিৎসকেরা। আমাদের
শরীরে যখন নানাবিধ ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করার চেষ্টা করে, তখন
শরীরের বিশেষ একটা মেকানিজম অ্যাকটিভেট হয়ে গিয়ে হাঁচি শুরু হয়। হাঁচির
চোটে সেই সব ক্ষতিকর উপাদানগুরো আমাদের শরীর থেকে প্রায় ১৬০
কিলোমিটার/প্রতি ঘন্টা স্পিডে বাইরে বেরিয়ে আসে। ফলে রোগভোগের আশঙ্কা
কমে। এবার বুঝলেন তো সুস্থ থাকতে বারে বারে হাঁচি আসাটা কতটা জরুরি।
সম্প্রতি এই বিষয়ের উপর হওয়া একটি গবেষণায় দেখা গেছে হাঁচির সময় প্রচন্ড
স্পিডে হাওয়া নাক ও মুখ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে চায়। সেই সময় এই এয়ার
প্রেসারকে যদি আটকে দেয়া হয়, তাহলে বায়ু প্রবাহ উল্টো পথ ধরে শরীরের
অন্দরে প্রবেশ করে। ফলে গলা এবং ফুসফুসের উপর একেবারেই প্রথমেই মারাত্মক
চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে লাং ও শরীরের এই অংশের ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি মস্তিষ্কেও
চোট লাগার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই সাবধান! এখানেই শেষ নয়,বেশ কিছু কেস
স্টাডিতে দেখা গেছে হাঁচি আসার সময় তা আটকে দিলে আমাদের শরীরের একাধিক অঙ্গ
মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এমনকি এই কারণে হতে পারে মৃত্যুও। আসলে
হাঁচি আটকালে যে গতিতে বায়ু বাইরে বেরতে চাইছে, তা লম গতিতে শরীরে ভিতরে
চলে গিয়ে কান, মস্তিষ্ক, ঘার, ডায়াফরাম প্রভৃতি অংশে মারাত্মক চাপ সৃষ্টি
করে। ফলে ধীরে ধীরে শরীরের এই অংশগুলোর কর্মক্ষমতা কমে যেতে শুরু। এখানেই
শেষ নয়, হাঁচি আটকালে আরো নানাবিধ ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই কদিন আগেই
যেমন ৩৪ বছরের এক ব্যক্তি অফিস মিটিং-এর সময় আসা হাঁচি ভুলে আটকে
ফেলেছিলেন।
এমনটা করার কারণে গলায় এত চোট লেগেছিল যে কথা বলতেও সমস্যা
হচ্ছিল। সেই সঙ্গে যন্ত্রণা তো ছিলই। এবার বুঝেছেন তো আপাত দৃষ্টিতে
হাঁচিকে কেউ তেমন একটা গুরুত্ব না দিলেও শরীরের ভালো মন্দের সঙ্গে এর
সরাসরি যোগ রয়েছে। হাঁচি আটকানো ক্ষতিকারক কেন? হাঁচির সময় প্রায় ১০০-১৬০
কিলোমিটার/প্রতি ঘন্টা গতিতে বায়ু নাকের ছিদ্র দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে।
তাই সে সময় যদি এই বায়ু প্রবাহকে জোর করে আটকানো হয়, তাহলে তা সম গতিতে
শরীরের ভিতরে চলে যায় এবং একাধিক অঙ্গের ক্ষতি সাধন করে। যেমন ধরুন কানে
যদি এর প্রভাব পরে তাহলে কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। ফলে কালা হয়ে যাওয়ার
অশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এখানেই শেষ নয়, হাঁচি আটকালে শরীর ক্ষতিকর
ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যেতে শুরু করে। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা বৃদ্ধি
পায়। চোখ, ঘাড় ও মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হয় : রাজধানী ট্রেনের যে
গতিবেগ, সেই সমান স্পিডে বায়ু প্রবাহ যখন চোখ এসে ধাক্কা মারে তখন একাধিক
নার্ভ ড্যামেজ হয়ে যায়। এই কারণে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া এবং অন্ধত্বেরও
আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। আর যদি ঘারে এর প্রভাব পরে তাহলে মারাত্মক নেক ইনজুরি
হতে পার। এখানেই শেষ নয়, একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে এই গতি বেগে বায়ু প্রবাহ
মস্তিষ্কের একাধিক নার্ভে গিয়ে আঁছড়ে পরলে অনের ক্ষেত্রেই স্টোক এবং সেই
কারণে মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে। তাই বাঁচতে চাইলে এবার থেকে হাঁচি
এলে আর আটকাবেন না দয়া করে। কেন আমরা হাঁচি আটকে থাকি? সামাজিকতার কারণেই
বেশিরভাগ মানুষ এমনটা করে থাকেন। লোক সমাজে থাকলে বা মিটিং- এ থাকাকালীন
হাঁচি এলে অনেকেই মনে করেন সম্মান চলে যাবে, তাই সঙ্গে সঙ্গে পকেটে হাতটা
চালান হয়ে যায় আর নাকের সামনে এসে যায় রুমাল। আশা করা যেতে পারে এবার থেকে
নিশ্চয় আর এমনটা করবেন না। কারণ সামাজিক সম্মানের থেকে মনে হয় সুস্থভাবে
বেঁচে থাকাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাই না!
No comments