কোটার মাত্রাটা কি একটু বেশি? by সফিকুল সাজু
চাকরির
ক্ষেত্রে দেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা একটি যৌক্তিক বিষয়। এটা
থাকতেই পারে। বিভিন্ন কারণে থাকাও উচিত। যেমন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী হিসেবে
নারী, প্রতিবন্ধী, বিভিন্ন পিছিয়ে থাকা জেলার নাগরিক ও সুযোগবঞ্চিত
জনগোষ্ঠী হিসেবে পাহাড়িরা কোটাসুবিধা পাওয়ার দাবি রাখেন। এছাড়া ভালো কাজের
স্বীকৃতিস্বরূপ রাষ্ট্রীয় প্রেষণা হিসেবে কোটার প্রচলন থাকা প্রয়োজন। যেমন,
মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন,
এমন কি নিজের প্রাণ তুচ্ছ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন দেশমাতৃকার মুক্তির নেশায়।
কোন কিছু দিয়ে তাদের সে ঋণ শোধ হবে না। বোধ করি ঋণ শোধ করে দেব বললেও
তাদের প্রতি অসম্মান হবে। তবু দেশের নাগরিকদের উৎসাহ দেয়ার লক্ষ্যে
রাষ্ট্রীয় প্রেষণা হিসেবে আামাদের বীর যোদ্ধা ও তাদের উত্তরসূরীদের একটি
নির্দিষ্ট মাত্রায় কোটা সুবিধা দেওয়া উচিত। এটুকু মেনে নেওয়ার মত বোধশক্তি ও
মূল্যবোধ আমাদের শিক্ষিত তরুণদের থাকা উচিত।
আাবার শিক্ষিত মেধাবীদের যোগ্যতার নিরিখে চাকরি প্রদান করা একটি রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। 'যোগ্যতা', 'পরীক্ষা', 'মূল্যায়ন'- শব্দগুলো যখন আসে, তখন মেধা কথাটাও চলে আসে। মেধা বাদ দিলে ওই শব্দত্রয় অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। কিন্তু আমরা সে মেধাকে কতটুকু মূল্যায়ন করছি?
অগ্রাধিকারের বিষয়টি ভাবতে গিয়ে কোটাপ্রথাকে আমরা এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছি যে, কোটা সুবিধাপ্রাপ্তদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতেও তরুণ প্রজন্ম দুদণ্ড ভাবে না। কোটাকে এমন চরম পর্যায়ে না পৌঁছালে আামাদের মুক্তিযোদ্ধা, নারী এবং অন্যান্য সুবিধাভোগীরা কি অসন্তুষ্ট হতেন? মোটেও না, বরং তারাও এর একটা যৌক্তিক মাত্রা প্রত্যাশা করেন। আমাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে মোট চাকরির ৫৫ শতাংশই চলে যাচ্ছে। মেধাবীদের জন্য থাকে ৪৫ শতাংশ মাত্র! যেখানে কোটা সম্পৃক্ত জনগোষ্ঠী মাত্র অর্ধকোটি, আর কোটা বহির্ভুত ১৫.৫ কোটি। অর্থাৎ একগুণ মানুষের জন্য অর্ধেক চাকরি আর একত্রিশগুণ (১৫.৫X২) মানুষের জন্য বাকি অর্ধেক। বাংলাদেশে উপজাতি ১৬ লাখ, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ২ লাখ, আনুমানিক সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠী ২০ লাখ (সর্বোচ্চ), প্রতিবন্ধী ১৫ লাখ, এই মোট ৫১ লাখের জন্য চাকরির ৪৫ শতাংশ (নারী কোটা ব্যতীত) চলে যাচ্ছে । বাকি ১৫.৫ কোটির জন্য থাকে ৫৫ শতাংশ। এটা কতটা যৌক্তিক? নারী কোটাও এখন আর ১০ শতাংশ রাখার দরকার নেই (অতীত পরিস্থিতির তুলনায়)। কারণ, এখন আামাদের নারীরা অনেক এগিয়েছে, ক্ষেত্রেবিশেষে ছেলেদেরকেও ছাড়িয়ে গেছে তারা।
সর্বোপরি এই কোটার মাত্রাটা কি একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না? এটা সব মিলিয়ে তো কোনভাবেই এক-পঞ্চামাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়, সেখানে বিদ্যমান অর্ধাংশেরও বেশি হচ্ছে কোটা। এভাবে হয়ত অনেকে শুনতে শুনতে সয়ে গেছেন। একটু ভিন্নভাবে বলি, মনে করুন, কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থীর ৫৫ শতাংশ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, শিক্ষক, কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট পরিবারের সন্তান হয়, আর ৪৫ শতাংশ দেশের সমস্ত জনগণের মধ্য থেকে, তবে তা কি মেনে নিতে পারবেন? যারা চাকরির ক্ষেত্রে কোটা পাচ্ছেন, তারাও কি পারবেন? একটু নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করুন তো। আামি বিশ্বাস করি, যিনি দেশের জন্য জীবন বাজি রাখার মত মানসিক স্বচ্ছতা ও বিশালতা ধারণ করেন, তিনি কখনও কোটার মত সংকীর্ণ স্বার্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ নন। কাজেই কোটাকে সংস্কার করে যৌক্তিক পর্যায়ে আনা হলে, মনে হয় না কোন বীর মুক্তিযোদ্ধা বা অন্য সুবিধাভোগীরা প্রতিবাদ করবেন। অন্তত যৌক্তিক দেশপ্রেমিকরা করবেন না। দেশটা আমাদের সবার। তাই আামাদের সব পক্ষকেই কিছু ছাড় দিতে হবে এবং ছাড় দেয়ার মানসিকতা লালন করতে হবে জাতীয় সমৃদ্ধির খাতিরে ।
সমৃদ্ধ দেশের জন্য আমাদের মানবসত্তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। অতিমাত্রায় কোটাপ্রথার মত এমন অনিয়ম কখনও দেশের সুষ্ঠু সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারে না। আমরা আমাদের জাতীয় দর্শনকেই নিচু করে গড়ে তুলছি। আমাদের তরুণরাও এমন সংস্কৃতিতে দ্বিধান্বিত। তারা চরম অবিশ্বাস ও আাত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগছে। এটা আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও জাতীয় স্বপ্নের সত্যিকার প্রতিফলন কখনও ঘটাবে না।
বর্তমান সরকারে থাকা দলটির হাতেই এই দেশ এসেছে। এদেশের বড় বড় সব অর্জন হয়েছে। অনেক চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়িত হয়েছে। গণমানুষের আাস্থার জায়গা হিসেবে অসহায়রা বারবারই এই সরকারের কাছে এসেছে। আামার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকার লাখো তরুণের এই আার্তনাদ শুনবে, এর একটা বিহিত করবে। এই তরুণদের অধিকাংশই মাঠে-ঘাটে-দোকানে কিংবা খালে-বিলে-কারখানায় কাজ করে দেশের অর্থনৈতিক ভিত গড়ে তোলা সাধারণ পরিবারের সন্তান। তাদের সংখ্যাটা বিশাল, অবদান বেশি, স্বপ্নও বিশাল, অথচ তাদের সুযোগ কম। তাই তাদের স্বপ্নকে মর্যাদা দিতে হবে। তবেই আামাদের জাতির জনকের প্রত্যাশা ও স্বপ্ন আালোর দেখা পাবে, তার দর্শন এগিয়ে যাবে।
লেখক : শিক্ষক, কবির হাট সরকারি কলেজ, নোয়াখালী
আাবার শিক্ষিত মেধাবীদের যোগ্যতার নিরিখে চাকরি প্রদান করা একটি রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। 'যোগ্যতা', 'পরীক্ষা', 'মূল্যায়ন'- শব্দগুলো যখন আসে, তখন মেধা কথাটাও চলে আসে। মেধা বাদ দিলে ওই শব্দত্রয় অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। কিন্তু আমরা সে মেধাকে কতটুকু মূল্যায়ন করছি?
অগ্রাধিকারের বিষয়টি ভাবতে গিয়ে কোটাপ্রথাকে আমরা এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছি যে, কোটা সুবিধাপ্রাপ্তদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করতেও তরুণ প্রজন্ম দুদণ্ড ভাবে না। কোটাকে এমন চরম পর্যায়ে না পৌঁছালে আামাদের মুক্তিযোদ্ধা, নারী এবং অন্যান্য সুবিধাভোগীরা কি অসন্তুষ্ট হতেন? মোটেও না, বরং তারাও এর একটা যৌক্তিক মাত্রা প্রত্যাশা করেন। আমাদের বিভিন্ন শ্রেণিকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে মোট চাকরির ৫৫ শতাংশই চলে যাচ্ছে। মেধাবীদের জন্য থাকে ৪৫ শতাংশ মাত্র! যেখানে কোটা সম্পৃক্ত জনগোষ্ঠী মাত্র অর্ধকোটি, আর কোটা বহির্ভুত ১৫.৫ কোটি। অর্থাৎ একগুণ মানুষের জন্য অর্ধেক চাকরি আর একত্রিশগুণ (১৫.৫X২) মানুষের জন্য বাকি অর্ধেক। বাংলাদেশে উপজাতি ১৬ লাখ, মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ২ লাখ, আনুমানিক সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠী ২০ লাখ (সর্বোচ্চ), প্রতিবন্ধী ১৫ লাখ, এই মোট ৫১ লাখের জন্য চাকরির ৪৫ শতাংশ (নারী কোটা ব্যতীত) চলে যাচ্ছে । বাকি ১৫.৫ কোটির জন্য থাকে ৫৫ শতাংশ। এটা কতটা যৌক্তিক? নারী কোটাও এখন আর ১০ শতাংশ রাখার দরকার নেই (অতীত পরিস্থিতির তুলনায়)। কারণ, এখন আামাদের নারীরা অনেক এগিয়েছে, ক্ষেত্রেবিশেষে ছেলেদেরকেও ছাড়িয়ে গেছে তারা।
সর্বোপরি এই কোটার মাত্রাটা কি একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না? এটা সব মিলিয়ে তো কোনভাবেই এক-পঞ্চামাংশের বেশি হওয়া উচিত নয়, সেখানে বিদ্যমান অর্ধাংশেরও বেশি হচ্ছে কোটা। এভাবে হয়ত অনেকে শুনতে শুনতে সয়ে গেছেন। একটু ভিন্নভাবে বলি, মনে করুন, কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থীর ৫৫ শতাংশ যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা, শিক্ষক, কর্মচারী ও সংশ্লিষ্ট পরিবারের সন্তান হয়, আর ৪৫ শতাংশ দেশের সমস্ত জনগণের মধ্য থেকে, তবে তা কি মেনে নিতে পারবেন? যারা চাকরির ক্ষেত্রে কোটা পাচ্ছেন, তারাও কি পারবেন? একটু নিরপেক্ষভাবে চিন্তা করুন তো। আামি বিশ্বাস করি, যিনি দেশের জন্য জীবন বাজি রাখার মত মানসিক স্বচ্ছতা ও বিশালতা ধারণ করেন, তিনি কখনও কোটার মত সংকীর্ণ স্বার্থের মধ্যে সীমাবদ্ধ নন। কাজেই কোটাকে সংস্কার করে যৌক্তিক পর্যায়ে আনা হলে, মনে হয় না কোন বীর মুক্তিযোদ্ধা বা অন্য সুবিধাভোগীরা প্রতিবাদ করবেন। অন্তত যৌক্তিক দেশপ্রেমিকরা করবেন না। দেশটা আমাদের সবার। তাই আামাদের সব পক্ষকেই কিছু ছাড় দিতে হবে এবং ছাড় দেয়ার মানসিকতা লালন করতে হবে জাতীয় সমৃদ্ধির খাতিরে ।
সমৃদ্ধ দেশের জন্য আমাদের মানবসত্তাকে গুরুত্ব দিতে হবে। অতিমাত্রায় কোটাপ্রথার মত এমন অনিয়ম কখনও দেশের সুষ্ঠু সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারে না। আমরা আমাদের জাতীয় দর্শনকেই নিচু করে গড়ে তুলছি। আমাদের তরুণরাও এমন সংস্কৃতিতে দ্বিধান্বিত। তারা চরম অবিশ্বাস ও আাত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগছে। এটা আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও জাতীয় স্বপ্নের সত্যিকার প্রতিফলন কখনও ঘটাবে না।
বর্তমান সরকারে থাকা দলটির হাতেই এই দেশ এসেছে। এদেশের বড় বড় সব অর্জন হয়েছে। অনেক চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়িত হয়েছে। গণমানুষের আাস্থার জায়গা হিসেবে অসহায়রা বারবারই এই সরকারের কাছে এসেছে। আামার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকার লাখো তরুণের এই আার্তনাদ শুনবে, এর একটা বিহিত করবে। এই তরুণদের অধিকাংশই মাঠে-ঘাটে-দোকানে কিংবা খালে-বিলে-কারখানায় কাজ করে দেশের অর্থনৈতিক ভিত গড়ে তোলা সাধারণ পরিবারের সন্তান। তাদের সংখ্যাটা বিশাল, অবদান বেশি, স্বপ্নও বিশাল, অথচ তাদের সুযোগ কম। তাই তাদের স্বপ্নকে মর্যাদা দিতে হবে। তবেই আামাদের জাতির জনকের প্রত্যাশা ও স্বপ্ন আালোর দেখা পাবে, তার দর্শন এগিয়ে যাবে।
লেখক : শিক্ষক, কবির হাট সরকারি কলেজ, নোয়াখালী
No comments