চীনের মান্দারিন পাকিস্তানের দাপ্তরিক ভাষা?
চীনা
ভাষাকে দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে পাকিস্তান। দেশটির
পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেটে এ–সংক্রান্ত একটি বিলও পাস হয়েছে। দুই দেশের
(চীন ও পাকিস্তান) অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়—এমন খবর
গত কয়েক দিন থেকে চাউর হচ্ছে পাকিস্তান ও ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোয়। এই
খবরের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। খবরটি ভুয়া বলেও দাবি তোলা হয়েছে। আর
সাধারণ মানুষের মনের প্রশ্ন আরও বেশি প্রবল হয়েছে—চীনা ভাষা কি সত্যিই
পাকিস্তানের দাপ্তরিক ভাষা? বুধবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনা
ভাষার কোর্স করতে পাকিস্তানি পার্লামেন্ট একটি প্রস্তাব পাস করেছে।
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের (সিপিইসি) সঙ্গে প্রত্যেককে সম্পৃক্ত করার
জন্য ‘যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতা’ এড়াতেই এই প্রস্তাব পাস করা হয়। ওই প্রস্তাবে
পাকিস্তানের দাপ্তরিক ভাষা করার কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এই বিষয়টি
ভালোভাবে বুঝতে না পেরে ১৯ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের স্থানীয় একটি উর্দু
ভাষার নিউজ চ্যানেল এ বিষয়ে ব্রেকিং নিউজে জানায়, ‘চাইনিজ ভাষা পাকিস্তানের
দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পাকিস্তানের পার্লামেন্টের
উচ্চকক্ষ সিনেটে এটি গৃহীত হয়েছে।’ এমন খবর প্রকাশের পর থেকে মূলত বিষয়টি
নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। খবরের সত্যতা নিয়ে চলছে তুমুল বিতর্ক। কোনো
কোনো খবরে চীনা ভাষা বলতে মান্দারিন ভাষার কথা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা
হয়েছে। মান্দারিন পাকিস্তানের দাপ্তরিক ভাষা বিষয়ে ঘোষণার সংবাদ প্রকাশের
পর ২২ ফেব্রুয়ারি দেশটির বেশ কিছু রাজনৈতিক দল, সাহিত্য সংস্থা প্রতিবাদ
জানায়।
বিবিসি প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডরের
(সিপিইসি) সঙ্গে প্রত্যেককে সম্পৃক্ত করার জন্য ‘যোগাযোগ প্রতিবন্ধকতা’
কমাতে সিনেটে একটি রেজল্যুশন পাস করা হয়েছিল। আর সেটাকে সবাই পাকিস্তানের
‘দাপ্তরিক ভাষা চাইনিজ’ বলে মনে করেছে। সিপিইসি একটি বড় প্রকল্প। যার আওতায়
পাকিস্তানে বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে চীন অন্তত ৬২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ
করেছে। চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার উদাহরণ উপস্থাপন
করতে গিয়ে পাকিস্তানের মতো ভারতের এএনআই সংবাদ সংস্থা, ইন্ডিয়া টুডে,
ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসসহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম দাপ্তরিক ভাষা নিয়ে ভুল
প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলেও বিবিসির প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। একটি
শীর্ষস্থানীয় ম্যাগাজিন আউটলুক তাদের প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রত্যাহার করে
নিয়ে বলেছে, পাকিস্তান ও চীনের ক্রমবর্ধমান বন্ধুত্বের বিষয় নিয়ে ‘ভুয়া
খবরটি’ অধিকাংশের কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে। প্রসঙ্গত, উর্দু
পাকিস্তানের জাতীয় ভাষা। উর্দুতে মাত্র ৮ শতাংশ মানুষ কথা বলে এবং এই ভাষার
ব্যবহার বেশি শহর এলাকায়। ইংরেজি দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
দেশটির বেশির ভাগ মন্ত্রণালয় ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করে এবং এলিট শ্রেণির
মানুষ ইংরেজি ভাষা বলতে বেশি অভ্যস্ত। সেখানে বেশ কিছু আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে।
তার মধ্যে পাঞ্জাবি ভাষা বেশি ব্যবহার হয়। প্রায় ৪৮ শতাংশ মানুষ পাঞ্জাবি
ভাষায় কথা বলে। তবে আইন অনুযায়ী এটি দাপ্তরিক ভাষা নয়।
No comments