মহাসড়কে মৃত্যুর বিভীষিকা
গত
মাসে ‘বাংলাদেশ সড়ক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট ২০১৭’ প্রকাশের অনুষ্ঠানে
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী মন্তব্য
করেন, ‘বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনার নামে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড চলছে।’ একই
অনুষ্ঠানে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন,
‘সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানে অন্যতম মহামারি হিসেবে চিহ্নিত।’ এ ধরনের বক্তব্য
যে কী মর্মান্তিক বাস্তবতা তুলে ধরে, তার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত গত সোমবার
সোনারগাঁয়ের টিপুরদী এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনা।
শিশু, নারীসহ ১০ জন নিরীহ মানুষ ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছে, আহত হয়েছে ২৬
জন। দুর্ঘটনা আকস্মিক এবং তা প্রতিদিন ঘটে না—এমন কথা এখন আর বাংলাদেশে খুব
একটা খাটে না। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায়
মানুষের অকালমৃত্যু ঘটছে। সর্বশেষ ৩৭৫ দিনে প্রথম আলোয় প্রকাশিত সড়ক
দুর্ঘটনাগুলোতে মোট প্রাণহানির যোগফল দাঁড়াচ্ছে ৩ হাজার ২০০। এই হিসাবে সড়ক
দুর্ঘটনায় গড়ে দৈনিক ৮ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। কী কী কারণে সড়ক
দুর্ঘটনা ঘটে, তা অজানা নয়। বিশেষজ্ঞরা সেসব চিহ্নিত করেছেন। সোমবার
সোনারগাঁয়ের দুর্ঘটনাটি দৃষ্টান্তমূলক: যাত্রীবাহী বাসটির চালক বাস চালাতে
চালাতে মুঠোফোনে কথা বলছিলেন, তিনি শুরু থেকেই বাসটি চালাচ্ছিলেন বেপরোয়া
গতিতে, বাসটির ফিটনেস সনদ ছিল না, বাসটি প্রথমে একটি রিকশাকে ধাক্কা
দিয়েছিল,
কিন্তু মহাসড়কে রিকশার মতো অযান্ত্রিক ও অন্যান্য ছোট যানবাহন
চলাচল আইনত নিষিদ্ধ এবং যে কনটেইনারবাহী ট্রেইলরের সঙ্গে বাসটি ধাক্কা
খেয়েছে, সেটিকে মহাসড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল, যা বেআইনি। বাংলাদেশে সড়ক
দুর্ঘটনার পেছনে যে প্রধান কারণগুলো বিশেষজ্ঞরা চিহ্নিত করেছেন, তার
সবগুলোই এই সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। সুতরাং সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে
হলে এই কারণগুলো দূর করতে হবে। কিন্তু এ নিয়ে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
ফলে দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিবেদন বলছে,
২০১৭ সালে সড়ক দুর্ঘটনা তার আগের বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে আর
দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর হার বেড়েছে ২২ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু এভাবে আর
চলতে পারে না। বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধানের যথাযথ প্রয়োগ, হাইওয়ে পুলিশ,
বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলতা ও
জনসচেতনতা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে তৎপর হতেই হবে।
No comments