শীর্ষ ২৫ খেলাপির কাছে দশ হাজার কোটি টাকা
দেশের
শীর্ষ ২৫ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ১০ হাজার
কোটি টাকা আটকে আছে। এ টাকা আদায়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই বলে অর্থ
মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিকে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি
এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য জানায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন
অনুযায়ী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শীর্ষ ২৫টি প্রতিষ্ঠানের কাছে খেলাপি ঋণের
পরিমাণ ৯ হাজার ৬৯৬ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। গতকাল বুধবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত
অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ
প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে এ
বৈঠকে অংশ নেন সদস্য নাজমুল হাসান, মোস্তাফিজুর রহমান, ফরহাদ হোসেন এবং
আখতার জাহান। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ড. আবদুর রাজ্জাক সমকালকে বলেন,
খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলো তাদের অসহায়ত্বের কথা বিভিন্ন সময়ে তুলে ধরেছে।
এসব প্রতিষ্ঠানকে খেলাপি ঘোষণা করা হলে, তারা আদালতে গিয়ে নিষেধাজ্ঞা নিয়ে
আসে। ফলে ব্যাংকগুলোর কিছুই করার থাকে না। আদালতের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে
দক্ষ আইনজীবী নিয়োগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কমিটির পক্ষ থেকে এসব
ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে এবং খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং খাত ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ
ব্যাংকের সমন্বয়ে একটি কমিটি করতে বলা হয়েছে। ওই কমিটিকে আগামী দেড় মাসের
মধ্যে করণীয় নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া খেলাপি
প্রতিষ্ঠানগুলো কোন কোন ব্যাংক থেকে কত টাকা ঋণ নিয়েছে, তাদের পারিবারিক
পরিচয়সহ বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কমিটি খেলাপি ঋণ
কমাতে সংশ্নিষ্ট আইন পরিবর্তনেরও সুপারিশ করা হয়েছে। বৈঠকের কার্যপত্র থেকে
জানা গেছে, শীর্ষ ২৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে চট্টগ্রামের
খাতুনগঞ্জের দাদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান মোহাম্মদ
ইলিয়াছ ব্রাদার্স। আলোচিত এ প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনা ৮৮৯ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
আসবাব প্রতিষ্ঠান অটবির মালিকানাধীন যশোরের নওয়াপাড়ার কোয়ান্টাম পাওয়ার
সিস্টেমসের কাছে আটকে আছে ৫৫৮ কোটি টাকা। চট্টগ্রামের নূরজাহান গ্রুপের
মালিকানাধীন জাসমির ভেজিটেবল অয়েল ৫৪৮ কোটি টাকার খেলাপি। ঋণ কেলেঙ্কারিতে
আলোচিত হলমার্ক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের কাছে পাওনা ৫২৫
কোটি ৬০ লাখ টাকা। মাদারীপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ ৫১৭
কোটি টাকা খেলাপি। পরিবহন কোম্পানি টিআর ট্রাভেলসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান
ঢাকা ট্রেডিং হাউজের কাছে পাওনা ৪৮৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া আনোয়ারা
স্পিনিং মিলসের কাছে ৪৭৪ কোটি ৩৭ লাখ,
সিদ্দিক ট্রেডার্সের কাছে ৪২৮ কোটি
৫৭ লাখ, ইয়াসির এন্টারপ্রাইজের কাছে ৪১৪ কোটি ৮০ লাখ, আলফা কম্পোজিট
টাওয়েলস লিমিটেডের কাছে ৪০১ কোটি ৭৩ লাখ, লিজেন্ড হোল্ডিংসের কাছে ৩৪৭ কোটি
৮৫ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। হলমার্ক ফ্যাশনের ৩৩৯ কোটি ৩৪ লাখ, খাতুনগঞ্জের
জয়নাল আবেদীনের ম্যাক ইন্টারন্যাশনালের কাছে ৩৩৮ কোটি ৭৪ লাখ, বিএনপির
সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ খান মুন্নুর মালিকানাধীন মুন্নু ফেব্রিক্সের কাছে
৩৩৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকার খেলাপি। এ ছাড়া ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিক্স ৩২২ কোটির
টাকার ঋণ শোধ করেনি। শাহারিশ কম্পোজিট টাওয়েল লিমিটেড ৩১২ কোটি ৯৬ লাখ,
নূরজাহান সুপার অয়েল ৩০৪ কোটি ৪৯ লাখ, কেয়া ইয়ার্ন ২৯২ কোটি ৫৩ লাখ, সালেহ
কার্পেট মিলস ২৮৭ কোটি ১ লাখ, ফেয়ার ইয়ার্ন প্রসেসিং ২৭৩ কোটি ১৬ লাখ, এসকে
স্টিল ২৭১ কোটি ৪৮ লাখ, চৌধুরী নিটওয়্যার ২৬৯ কোটি ৩৮ লাখ, হেল্প লাইন
রিসোর্সেস ২৫৮ কোটি ৩০ লাখ, সিক্স সিজন অ্যাপার্টমেন্ট ২৫৪ কোটি ৫৭ লাখ ও
বিসমিল্লাহ টাওয়েলস ২৪৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকার খেলাপি। এদিকে সংসদীয় কমিটি
শেয়ারবাজার নিয়েও আলোচনা করেছে বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য ফরহাদ হোসেন।
তিনি জানান, সামনে নির্বাচনের বছর, এই সময় পুঁজিবাজারে যাতে কোনো অস্থিরতা
তৈরি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ২০১০ সালে যেসব
প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম হঠাৎ করে বেড়ে গিয়েছিল সে সব প্রতিষ্ঠানের
ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য বলা হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত
অংশীদার হিসেবে ভারত ও চীনের দুটি কনসোর্টিয়ামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার
ক্ষেত্রে 'কৌশলগত' ও 'ভূ-রাজনৈতিক' বিষয় বিবেচনা করার জন্য বলা হয়েছে।
এদিকে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কার্যকর ও সুষ্ঠু
শেয়ারবাজার গড়ে তোলার লক্ষ্যে আধুনিক সার্ভেইলেন্স সিস্টেম সংযোজন এবং
সুপারভিশন ও মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার ফলে শেয়ারবাজারের বড় ধরনের
বিপর্যয়ের আশঙ্কা নেই বলে কমিটিকে জানানো হয়। দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো
নামে-বেনামে নানা ধরনের সার্ভিস চার্জ আদায়, ক্রেডিট কার্ডে অতিরিক্ত
সুদহার, সুপ্ত চার্জ আদায়সহ গ্রাহকদের নানা ধরনের অভিযোগ খতিয়ে দেখে আগামী
বৈঠকে প্রতিবেদন প্রদানের সুপারিশ করা হয় বৈঠকে। বাজারে চালসহ অন্যান্য
প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মন্ত্রণালয়কে কার্যকর পদক্ষেপ
গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়।
No comments