বিএনপির সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেছেন, কেউ দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতেই হবে।
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে যুক্ত কিংবা অপরাধী যেই হোক, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতিকে কোনো প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। বুধবার দশম
জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার পর তার ছেলে তারেক রহমানকে বিএনপির
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি
নেত্রী জেলে যাওয়ার পর যাকে দায়িত্ব দেওয়া হলো, তিনিও দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক
ফেরারি আসামি। বিএনপির নেতৃত্বে কি একজনও ছিল না যে, তাকে দায়িত্ব দিতে
পারত? তিনি বলেন, বিএনপির অধিকাংশ নেতার নামেই দুর্নীতির মামলা রয়েছে। কারও
বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা রয়েছে, কেউ কেউ সাজাপ্রাপ্ত। খালেদা জিয়া জানেন,
যাদের দায়িত্ব দেবেন তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই দুর্নীতির মামলা রয়েছে।
বিএনপির সবাই তো দুর্নীতিগ্রস্ত, সবার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। যদি তা-ই না
হয়ে থাকে, তাহলে বিএনপি নেত্রী দলে একজনকেও খুঁজে পেলেন না, যাকে দায়িত্ব
দিয়ে যাবেন? সবকিছু জেনেই বিএনপি নেত্রী যদি দণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমানের
হাতে দায়িত্ব দিয়ে থাকেন, কোনো কিছু বলার নেই। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন
চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদে প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ
সমাপনী ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর রাষ্ট্রপতির অধিবেশন
সমাপ্তির আদেশ পাঠ করার মাধ্যমে স্পিকার শীতকালীন অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা
করেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় সামনে রেখে
বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধনের কঠোর সমালোচনা করে সংসদ নেতা বলেন, বিএনপি
নেত্রী কারাগারে যাবেন- সেটি আগেই তারা টের পেয়েছিল কি-না জানি না। রায়
হওয়ার আগেই রাতারাতি বিএনপি তাদের দলীয় গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা পরিবর্তন করেছে।
এই ধারায় দুর্নীতিগ্রস্ত কিংবা সাজাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি নেতা হতে পারতেন
না। রাতারাতি গঠনতন্ত্র সংশোধন করে বিএনপি দুর্নীতিকেই মেনে নিল,
দুর্নীতিগ্রস্তকে নেতা হিসেবে মেনে নিল। যে দল দুর্নীতিকে নীতি হিসেবে নেয়,
দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্তকে নেতা হিসেবে মেনে নেয়- সেই দল দেশকে কী দিতে
পারে? তিনি বলেন, যে রাজনৈতিক দল দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজকে গ্রহণ করে, সেই
দল কীভাবে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পারে? এরা হত্যা-দুর্নীতি-লুণ্ঠন-অর্থ
পাচার- এসবই করতে পারে; জনগণের কল্যাণ করতে পারে না। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে
আদালতের রায় প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা আরও বলেন, আদালত রায় দিয়েছেন। এখানে
সরকারের কোনো হাত নেই। বিচারক রায় দিলেন কেন- সে জন্য অনেক বিএনপি নেতাও
হুমকি দেন। তবে কি অপরাধীদের অভয়ারণ্য হবে বাংলাদেশ? এটা তো আমরা হতে দিতে
পারি না। দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি
বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার জনগণ ভোগ করবে।
তার সরকার দুর্নীতিকে প্রশ্রয়
দেয় না। নিজেদের লোককেও ছাড় দেওয়া হয় না। এমনকি মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে
কোনো অভিযোগ উঠলে, যে কোনো সময় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আদালত থেকেও
ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) স্বাধীনভাবে কাজ
করছে। আমরা আইন মানি; কখনও নিজেদের দোষকে ঢাকার চেষ্টা করি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিএনপি নেত্রীর
বিরুদ্ধে যে ধরনের মামলা দিয়েছে, সেই একই ধরনের মামলা তার বিরুদ্ধেও দেওয়ার
চেষ্টা করেছে। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের একাউন্ট বন্ধ করে দিয়ে সব
কাগজপত্র পরীক্ষা করেছে- এতটুকু ফাঁক পাওয়া যায় কি-না। শত চেষ্টা করেও
ট্রাস্টের এতটুকু অনিয়ম তারা পায়নি। তবে একাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ায় বঙ্গবন্ধু
ট্রাস্ট থেকে প্রতি মাসে ১৬ থেকে ১৭শ' শিক্ষার্থীকে যে আর্থিক সহযোগিতা
দেওয়া হয়, সেটি বন্ধ হয়ে যায়। এতে ওই সময় অনেক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া বন্ধ
হয়ে যায়। টাকার অভাবে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আহতদের সহযোগিতা দেওয়া
যায়নি। এতে তাদেরও অসহনীয় কষ্ট করতে হয়েছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের নামে
আসা টাকা খালেদা জিয়াসহ তার ছেলে ও অন্যদের আত্মসাৎ প্রসঙ্গে সংসদ নেতা
বলেন, এতিমদের জন্য টাকা এসেছিল ২৭ বছর আগে। কিন্তু সেই এতিমের টাকা কোথায়?
তখনকার দিনে দুই কোটি টাকার অনেক মূল্য ছিল। ওই সময় এ টাকা দিয়ে
ধানমণ্ডিতে ৭-৮টি ফ্ল্যাট কেনা যেত। সেই টাকার লোভ বিএনপি নেত্রী সামলাতে
পারেননি। এতিমের হাতে একটি টাকাও তুলে দেননি; পুরো টাকাই মেরে খেয়েছেন। শেখ
হাসিনা আরও বলেন, তাদের কিছুই নেই। তবুও তারা দু'বোন ধানমণ্ডির পৈতৃক
বাড়িটি জনগণের জন্য দান করে দিয়েছেন। অথচ বিএনপি নেত্রী এতিমের দুই কোটি
টাকার লোভ সামলাতে পারলেন না! মামলা করেছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও দুদক।
এখানে সরকারের দোষ কোথায়? খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে ১০৯ বার সময় নেওয়া হয়েছে।
১০ বছর ধরে মামলা চলেছে; তারপর শাস্তি হয়েছে। শুরুতেই এতিমের টাকা দিয়ে
দিলে তো এই মামলা চলত না। কিন্তু লোভ সামলাতে পারেননি বলেই আজ এ অবস্থা।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হোসেন
শহীদ সোহরাওয়ার্দীর টাকায় ইত্তেফাক গঠন হয়েছিল। এটা আওয়ামী লীগেরও সম্পদ।
অথচ সেই ইত্তেফাকের টাকায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের নিয়ে ওই ব্যক্তি রাজনৈতিক দল
গঠন করেছিলেন। সেই ব্যক্তির মুখে এখন গণতন্ত্রের ছবক ও সংজ্ঞা শুনতে হয়-
এটাই দুর্ভাগ্যজনক। তিনি জানান, এই ব্যক্তিটি তার কাছে অনেকবার এসেছিলেন-
উপদেষ্টা হতে; তিনি করনেনি। এ কারণে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে
মামলা দেওয়া হলো। মামলা মোকাবেলার জন্য জোর করে বিদেশ থেকে ফিরে আসি।
বর্তমান সংসদকে কার্যকর ও গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে ভূমিকা রাখায়
সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ভূমিকার প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।
No comments