এন্টিবায়োটিক সচেতনতা
বিশেষজ্ঞ
ডাক্তার ছাড়া এন্টিবায়োটিক সেবন করা ঠিক নয়। এন্টিবায়োটিকের মাত্রাতিরিক্ত
ব্যবহার শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ এন্টিবায়োটিক ঠাণ্ডা বা
ভাইরাসজনিত রোগে কোনো কাজ করে না। যদি ভাইরাসজনিত রোগে এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ
করা হয়, তবে বিপজ্জনক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এ ধরনের চিকিৎসা
চলতে থাকলে অর্থাৎ এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার যথার্থ না হলে এমন একটা সময়
আসবে যখন ব্যাকটেরিয়াকে মারা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এ অবস্থাকে ব্যাকটেরিয়াল
রেজিসট্যান্স বা এন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স বলা হয়। কারণ এন্টিবায়োটিক
রেজিসট্যান্স বা অকার্যকারিতার জন্য অনেক রোগের চিকিৎসা সফলভাবে করা সম্ভব
হয় না। চিকিৎসার ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক রেজিসট্যান্স বা অকার্যকারিতা একটি
বড় হুমকি। এন্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে।
ভাইরাসের বিরুদ্ধে এন্টিবায়োটিক কোনো কাজ করে না। আমাদের দেশে রোগীরা
ওষুধের দোকান থেকে মুখস্থ এন্টিবায়োটিক ক্রয় করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে সেবন
করে থাকেন। তারা খুব দ্রুত রোগ থেকে মুক্তি চান। ফলে এন্টিবায়োটিকের যথার্থ
প্রয়োগ না হওয়ায় জীবাণুগুলো ধীরে ধীরে রেজিসট্যান্স হয়ে পড়ছে। পৃথিবীর
অন্যান্য দেশে এন্টিবায়োটিক বা অন্য কোনো ওষুধ কিনতে হলে ডাক্তারের
পরামর্শপত্র দেখাতে হয়। ডাক্তার ছাড়া অন্য কারো ওষুধ দেয়ার কোনো এখতিয়ার
নেই।
আমাদের দেশে চকলেট, মিমির মতো এন্টিবায়োটিক মুহূর্তের মাঝে ক্রয় করে
সাধারণ জনগণ নিয়ম না মেনে তা সেবনও করছে। এন্টিবায়োটিকের পার্শ্ব
প্রতিক্রিয়া বা অন্য ওষুধের সঙ্গে এর কোনো ইন্টারঅ্যাকশন আছে কিনা তা
সাধারণ জনগণের অজানা। এন্টিবায়োটিক সেবন করতে গিয়ে অনেকে অন্যান্য সমস্যায়
আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই এন্টিবায়োটিক সচেতনতা খুবই জরুরি। এন্টিবায়োটিক যেমন-
সিপ্রোফ্লক্সাসিন, লিভোফ্লক্সাসিন এবং টেট্রাসাইক্লিন ভালোভাবে কাজ করে না
যদি একই সময় এ জাতীয় এন্টিবায়োটিকের সঙ্গে ক্যালসিয়াম, আয়রন বা এন্টাসিড
প্রদান করা হয়। এ জাতীয় এন্টিবায়োটিক চলাকালীন দুধ, পনির এবং বাদাম জাতীয়
খাবার খাওয়া উচিত নয়। কখনও কখনও এন্টিবায়োটিক যেমন ইরাইথ্রোমাইসিন বা
সিপ্রোফ্লক্সাসিন সেবনের কারণে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন বা রক্তচাপ হ্রাস
পেতে পারে। কিছু এন্টিবায়োটিক সেবনের পর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে মুখের
অভ্যন্তরে লাইকেনয়েড রিঅ্যাকশন হয়ে থাকে যা দেখতে মুখের রোগ লাইকেন
প্ল্যানাসের মতো। তাই মুখের অভ্যন্তরে কোনো আলসার বা ঘাঁ, সাদা দাগ, লেসি
স্ট্রাই দেখলে রোগ নির্ণয়ের আগে রোগীর সার্বিক ইতিহাস জানা জরুরি। সব
রোগীদের সব ধরনের এন্টিবায়োটিক প্রদান করা যায় না। অন্য কোনো রোগ না থাকলে
একজন মানুষকে কোনো রোগের জন্য যে এন্টিবায়োটিক প্রদান করা হয়, একই রোগের
জন্য অন্য একজন মানুষকে ওই এন্টিবায়োটিক দেয়া যাবে না যদি রোগী কোনো জটিল
কিডনি, লিভার বা অন্য আরেকটি রোগে আক্রান্ত থাকেন। এন্টিবায়োটিক ডাক্তারের
পরামর্শ ছাড়া কখনোই সেবন করবেন না।
No comments