ইয়েমেন এখন রক্ত আর বোমার দেশ



হাসপাতালগুলো রোগীদের সেবা দিতে পারছে না। হাজার হাজার স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা নান্দনিক ভবনগুলো ধোঁয়া আর আর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে। প্রতিবেশীরা এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছে। আরব উপদ্বীপের মধ্যে সৃষ্টিকর্তার সবচেয়ে বেশি আশীর্বাদপুষ্ট ইয়েমেন আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আজ ইয়েমেন যুদ্ধের এক হাজার দিন পূর্ণ হল। ওই সময়ের মধ্যে আরব-উপদ্বীপের দেশটি ধ্বংসের সীমানায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ২০১৫ সালের ২১ মার্চ হুতি বিদ্রোহীদের লক্ষ করে ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে সৌদির-নেতৃত্বাধীন জোট। এরপর ওই জোটের বোমা হামলায় কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া উদ্বাস্তু হয়েছেন ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ। সৌদির বিমান হামলায় গত ১১ দিনেই ১৩৬ ইয়েমেনি নাগরিক নিহত হয়েছে। এ ছাড়া সৌদি জোটের জল-স্থল ও আকাশপথে দেশটিকে অবরুদ্ধ করার ফলে সেখানে ব্যাপকমাত্রায় দুর্ভিক্ষ নেমে এসেছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, সৌদির অবরোধ চলতে থাকলে ব্যাপক হারে মানুষ মারা যাবে। ইয়েমেনের উত্তর সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী কয়েক লাখ লোক বর্তমানে ডায়রিয়াসহ আরও নানা জটিলতায় ভুগছে। এদিকে অবরোধ চলতে থাকলে, যারা বেঁচে আছেন, তারাও কয়েক দিনের মধ্যে মৃত্যুর ভাগ্য বরণ করতে হবে বলে হুশিয়ারি করেছেন ইউএনডিপি। ইয়েমেনের সাদা শহরের বাসিন্দা হিশাম আবদুল্লাহ বলেন, আপনি যখন সাদা শহরে প্রবেশ করবেন, মৃত্যু আর ধ্বংসযজ্ঞই আপনাকে অভিবাদন জানাবে। এই প্রদেশে মৃত্যু আর ধ্বংসযজ্ঞ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। বোমা এই দরিদ্র এলাকাকে তছনছ করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আপনি আপনি রাতে বাসায় ঘুমাতে পারবেন, ছেলেদের নিয়ে ফুটবল খেলতে পারবেন, তবে যে কোনো মুহূর্তে সৌদির একটি বিমান হামলা আপনার পুরো পরিবারকে কেড়ে নিয়ে যাবে।
তাই মানুষ ঘরের বাইরে বের হওয়ার সাহস দেখায় না, এমনকি কোনো কুকুরও নয়। সাদা শহরে ৫০ হাজার মানুষ বাস করে, যা মোটামুটি সমৃদ্ধ একটি শহর বলে মনে করেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তবে সেই সুন্দর শহর আর সুন্দর নেই। দুই হাজার ৯৯৬টি বিমান হামলায় ওই শহর এখন ভুতুড়ে শহরে পরিণত হয়েছে। আবদুল্লাহ বলেন, অনেকেই বলছে, এখান থেকে চলে যাবে, তবে কোথায় যাব আমরা? সর্বত্রই তো ভয় আর মৃত্যু। দুটোকে নিয়েই আমাদের জীবন। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কোনো শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে চাই না। কারণ আমরা তো দেখছি শরণার্থী শিবিরগুলির অবস্থা কী? সিরিয়ার শরণার্থীদের দুর্বিষহ জীবনযাপনে আমরা আরও শঙ্কিত। আমাদের বাঁচার কী কোনো অধিকার নেই।’ সাম্প্রতিক বিশ্বের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ কলেরা প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে ইয়েমেনে। গত এপ্রিল থেকে অন্তত ১০ লাখ মানুষ কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার জানিয়েছে রেডক্রস। সংস্থাটি বলছে, দেশটির ৮০ শতাংশের বেশি মানুষের খাদ্য, জ্বালানি, বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত অস্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পানীয়ের মাধ্যমে কলেরা ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ইয়েমেনে কলেরায় আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত অন্তত দুই হাজর ২২৭ জন মারা গেছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, ইয়েমেন যুদ্ধের অবসানে কোনো সামরিক সমাধান নেই। ওয়াশিংটন বিশ্বাস করে, সংকট সমাধানে দরকার আগ্রাসী কূটনীতি। বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে এ মন্তব্য করেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রালয়ের উপ-সহকারী সচিব টিম লেন্ডারকিং। তিনি বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিশ্বাস করে যে হুতি বিদ্রোহীরা সৌদি আরবের ওপর হামলা বন্ধ করলে তাদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেজন্য তাদের সৌদি আরবের ওপর রকেট হামলা বন্ধ করতে হবে। আলজাজিরা ও সিএনএন।

No comments

Powered by Blogger.