ট্রাম্পের জেরুজালেম ঘোষণা প্রত্যাখ্যান- প্রস্তাবের পক্ষে ১২৮, বিপক্ষে ৯ ভোট, বিরত ৩৫ দেশ
বেশ
কড়া ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তা দিয়ে দিলো বিশ্ব। জেরুজালেমকে ইসরাইলের
রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির নিন্দা জানিয়ে উত্থাপিত প্রস্তাব
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিপুল ব্যবধানে জয় পেয়েছে। এই প্রস্তাবের পক্ষে
ভোট দিলে মার্কিন অর্থ-সহায়তা বাতিল করা হবে মর্মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট
ডনাল্ড ট্রাম্পের হুমকিকে অগ্রাহ্য করেছে দুনিয়া। মোট ১২৮টি দেশ নিন্দা
প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। ৯টি বিপক্ষে দিয়েছে। ৩৫টি দেশ ভোটদানে বিরত
ছিল।
এই প্রস্তাবে দাবি জানানো হয়েছে যে, ৬ই ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে যে স্বীকৃতি দিয়েছিল, সেটি প্রত্যাহার করা হোক। উল্লেখ্য, প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ, উত্তর কোরিয়া, মিশর, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, পাকিস্তান, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বৃটেন। অন্যদিকে প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়া ৯টি দেশ হলো-গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, ইসরাইল, মার্শাল আইল্যান্ড, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, পালাউ, টোগো, যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকা দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মেক্সিকো, ফিলিপাইন।
এই প্রস্তাবটি আইনত বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু প্রতীকী হলেও, জেরুজালেম ইস্যুতে বিশ্বের সামগ্রিক অবস্থানের প্রতিফলন এই ফলাফল। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণীতে বলা হয়েছে, জেরুজালেম নিয়ে ৫০ বছর ধরে যে আন্তর্জাতিক ঐক্যমত্য রয়েছে, তা অগ্রাহ্য করে ট্রাম্প প্রশাসন এই পবিত্র শহরকে ইসরাইলের রাজধানী বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এই সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কতটা ক্ষুদ্ধ হয়েছে এবং তা কীভাবে আমেরিকাকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে, সেটিই এই ভোটাভুটিতে ফুটে উঠেছে। বৃটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও জাপানের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ কিছু মিত্ররাষ্ট্র এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো মার্কিন মিত্ররা ভোটদানে বিরত ছিল।
জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ট্রাম্প তার সমর্থকদের একটি অংশকে খুশি করেছেন বটে। কিন্তু, এটি ছিল দীর্ঘদিনের মার্কিন নীতির ব্যত্যয়। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ইসরাইল জেরুজালেম পুরোটা দখলে নেয়। এরপর থেকে নিরাপত্তা পরিষদে বহু প্রস্তাব পাস হয়েছে, যাতে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, জেরুজালেমের মর্যাদা অমীমাংসিত। এই শহরের ওপর ইসরাইলের স্বার্বভৌমত্বের দাবি বৈধ নয়। এ শহরের কিছু ইস্যু ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে হবে।
ইসরাইল বৃহস্পতিবারের ওই ভোটাভুটির নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালে বলেছেন, এই ভোটের কোনো আইনি ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, জাতিসংঘে হওয়া কোনো ভোটাভুটিই জেরুজালেমে আমেরিকার দূতাবাস স্থাপনের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলবে না। যেসব সদস্য রাষ্ট্র এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি পুনর্ব্যক্ত করে মার্কিন দূত বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এই দিনটি মনে রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রকে সাধারণ পরিষদে একঘরে করা হয়েছে শুধুমাত্র স্বার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে তার অধিকার প্রয়োগ করার অপরাধে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই দিনটি মনে রাখবো, যখন জাতিসংঘে বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য আমাদের প্রতি আহ্বান জানানো হবে। আমরা এই দিনটির কথা মনে রাখবো যখন, অনেক দেশ আমাদের কাছে আসবে, যেমনটা তারা প্রায়ই আসে, যাতে আমরা আরও অর্থ দেই তাদেরকে এবং আমাদের প্রভাব খাটিয়ে তাদের উপকার হয়।’ অন্যকথায়, যারা ট্রামেপর ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান বা বাতিল ঘোষণার ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবে তাদের আর্থিক সহায়তা বন্ধ বা কর্তন করা হবে। কিন্তু এমন নগ্ন হুমকির পরও জাতিসংঘকে, বিশ্ববিবেককে থামাতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। এখন দেখার বিষয় ট্রামপ প্রশাসন যে আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন তাতে কোনো কোনো দেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারতো বা হবে। এখানে উল্লেখ্য, এ ঘোষণায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারতো ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএসএইড’র মতে, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৩১০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা পেয়েছে ইসরাইল। ২০০১ থেকে আফগানিস্তানে ও ২০০৩ সাল থেকে ইরাকে সামরিক অভিযানে যুক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্র। শুধু এ দু’টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অধিক পরিমাণ আর্থিক সহায়তা পায়। চতুর্থ সর্ববৃহৎ সামরিক সহায়তা পায় যারা তাদের বিষয়টি আরো স্পর্শকাতর। সেই দেশটি হলো মিশর। তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফরেন মিলিটারি ফাইন্যান্সিং প্রোগ্রাম থেকে ১১০ কোটি ডলার সহায়তা পায়। এই মিশরই কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জেরুজালেম ঘোষণা বাতিল দাবিতে জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। সেই প্রস্তাবই অনুমোদন করেছে জাতিসংঘ। ট্রামপ প্রশাসন আর্থিক সহায়তা কর্তনের যে হুমকি দিয়েছে তা যদি সত্যি বাস্তবায়িত হয় তাহলে এক্ষেত্রে মিশরকে বড় একটি ধাক্কা খেতে হবে। সামপ্রতিক বছরগুলোতে মিশরের পুরো সামরিক বাজেটের প্রায় ২০ থেকে ২৫ ভাগের তহবিল আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এ তথ্য দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাজেজিক স্টাডিজ। অন্য কোনো দেশ মিশরকে এর ধারেকাছেও সামরিক সহায়তা দেয় না। এছাড়া সামরিক সহায়তা পায় পাকিস্তান। তাও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার অংক প্রায় ৫০ কোটি ডলার। জর্ডান পায় প্রায় ১০০ কোটি ডলার। কেনিয়া পায় প্রায় ৭০ কোটি ডলার। ইথিওপিয়া পায় প্রায় ৭০ কোটি ডলার। সিরিয়া পায় প্রায় ৭০ কোটি ডলার। দক্ষিণ সুদান পায় প্রায় ৮০ কোটি ডলার।
তবে হোয়াইট হাউজ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশকে চাপে ফেলার চেষ্টা করলেও, কূটনীতিকরা তাতে এতটুকু টলেননি। ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ মালকি বলেন, ‘ইতিহাস নাম লিখে রাখে, নাম মনে রাখে। তাদের নাম ইতিহাস মনে রাখে, যারা সঠিক করণীয় না করে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের নামও ইতিহাস মনে রাখে, যারা মিথ্যা বলে।’ তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনকে হুমকি দিয়ে দমানো যাবে না।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এই ভোটাভুটি ঠেকানোর চেষ্টা করলেও, অনেক কূটনীতিকই বলেছেন এমনটিই হওয়ার কথা ছিল আগে থেকে। এর ফলে ট্রাম্প আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন। এর দরুন যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্ররাও বিপদে পড়ার ঝুঁকিতে পড়ে গেল। পাশাপাশি, ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বাস্তবায়ন আরও জটিল হয়ে পড়লো।
ভোটাভুটির সময় দেখা গেছে, ট্রাম্প ও মার্কিন দূত হ্যালে যেসব হুমকি দিয়েছেন, তার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক কূটনীতিক। হ্যালে ভোটাভুটির আগেও নিজের বক্তৃতায় মার্কিন আর্থিক সহায়তা বন্ধের হুমকি দেন। তবে বেশির ভাগ দেশই এসব হুমকিকে পাত্তা দেয়নি। তারা ধরে নিয়েছেন, ট্রাম্প মূলত নিজের ঘরোয়া রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলেই এসব হুমকি দিয়েছেন। তাছাড়া মিশর, ইরাক ও জর্দানের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিত্ররাষ্ট্রকে দেওয়া বিপুল পরিমাণ অনুদান কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র বাতিল করবে বা প্রত্যাহার করবে, সেটির কোনো উত্তর নেই।
মোদ্দা কথা, জেরুজালেম নিয়ে আমেরিকার অবস্থান পরিবর্তন যেভাবে প্রত্যাখ্যান করলো বিশ্ব, সেটি মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য নিঃসন্দেহে বড় চপেটাঘাত। দায়িত্ব নেয়ার এক বছর পার হয়ে গেলেও, এখন পর্যন্ত পররাষ্ট্র নীতিতে তার বড় ধরনের কোনো অর্জন নেই। ইয়েমেন ও তুরস্ক এই প্রস্তাবনার খসড়া করেছে। এতে জেরুজালেম নিয়ে অতীতের অনেক প্রস্তাবনাকে উদ্ধৃত করে জেরুজালেমে কোনো কূটনৈতিক মিশন স্থাপন না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনে এ ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে যে, ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরাইলের কব্জায় থাকা পূর্ব জেরুজালেম হবে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী।
এই প্রস্তাবে দাবি জানানো হয়েছে যে, ৬ই ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে যে স্বীকৃতি দিয়েছিল, সেটি প্রত্যাহার করা হোক। উল্লেখ্য, প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাংলাদেশ, উত্তর কোরিয়া, মিশর, ফ্রান্স, জার্মানি, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, পাকিস্তান, কাতার, দক্ষিণ কোরিয়া, রাশিয়া, সৌদি আরব, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বৃটেন। অন্যদিকে প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেয়া ৯টি দেশ হলো-গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, ইসরাইল, মার্শাল আইল্যান্ড, মাইক্রোনেশিয়া, নাউরু, পালাউ, টোগো, যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকা দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, মেক্সিকো, ফিলিপাইন।
এই প্রস্তাবটি আইনত বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু প্রতীকী হলেও, জেরুজালেম ইস্যুতে বিশ্বের সামগ্রিক অবস্থানের প্রতিফলন এই ফলাফল। নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণীতে বলা হয়েছে, জেরুজালেম নিয়ে ৫০ বছর ধরে যে আন্তর্জাতিক ঐক্যমত্য রয়েছে, তা অগ্রাহ্য করে ট্রাম্প প্রশাসন এই পবিত্র শহরকে ইসরাইলের রাজধানী বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এই সিদ্ধান্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কতটা ক্ষুদ্ধ হয়েছে এবং তা কীভাবে আমেরিকাকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ঠেলে দিয়েছে, সেটিই এই ভোটাভুটিতে ফুটে উঠেছে। বৃটেন, ফ্রান্স, জার্মানি ও জাপানের মতো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ কিছু মিত্ররাষ্ট্র এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। তবে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো মার্কিন মিত্ররা ভোটদানে বিরত ছিল।
জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ট্রাম্প তার সমর্থকদের একটি অংশকে খুশি করেছেন বটে। কিন্তু, এটি ছিল দীর্ঘদিনের মার্কিন নীতির ব্যত্যয়। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর ইসরাইল জেরুজালেম পুরোটা দখলে নেয়। এরপর থেকে নিরাপত্তা পরিষদে বহু প্রস্তাব পাস হয়েছে, যাতে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়েছে, জেরুজালেমের মর্যাদা অমীমাংসিত। এই শহরের ওপর ইসরাইলের স্বার্বভৌমত্বের দাবি বৈধ নয়। এ শহরের কিছু ইস্যু ইসরাইল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে চূড়ান্ত করতে হবে।
ইসরাইল বৃহস্পতিবারের ওই ভোটাভুটির নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘে আমেরিকান রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালে বলেছেন, এই ভোটের কোনো আইনি ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, জাতিসংঘে হওয়া কোনো ভোটাভুটিই জেরুজালেমে আমেরিকার দূতাবাস স্থাপনের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলবে না। যেসব সদস্য রাষ্ট্র এই প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি পুনর্ব্যক্ত করে মার্কিন দূত বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এই দিনটি মনে রাখবে। যুক্তরাষ্ট্রকে সাধারণ পরিষদে একঘরে করা হয়েছে শুধুমাত্র স্বার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে তার অধিকার প্রয়োগ করার অপরাধে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই দিনটি মনে রাখবো, যখন জাতিসংঘে বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য আমাদের প্রতি আহ্বান জানানো হবে। আমরা এই দিনটির কথা মনে রাখবো যখন, অনেক দেশ আমাদের কাছে আসবে, যেমনটা তারা প্রায়ই আসে, যাতে আমরা আরও অর্থ দেই তাদেরকে এবং আমাদের প্রভাব খাটিয়ে তাদের উপকার হয়।’ অন্যকথায়, যারা ট্রামেপর ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান বা বাতিল ঘোষণার ওই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবে তাদের আর্থিক সহায়তা বন্ধ বা কর্তন করা হবে। কিন্তু এমন নগ্ন হুমকির পরও জাতিসংঘকে, বিশ্ববিবেককে থামাতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। এখন দেখার বিষয় ট্রামপ প্রশাসন যে আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন তাতে কোনো কোনো দেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারতো বা হবে। এখানে উল্লেখ্য, এ ঘোষণায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারতো ইসরাইল। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএসএইড’র মতে, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৩১০ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা পেয়েছে ইসরাইল। ২০০১ থেকে আফগানিস্তানে ও ২০০৩ সাল থেকে ইরাকে সামরিক অভিযানে যুক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্র। শুধু এ দু’টি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অধিক পরিমাণ আর্থিক সহায়তা পায়। চতুর্থ সর্ববৃহৎ সামরিক সহায়তা পায় যারা তাদের বিষয়টি আরো স্পর্শকাতর। সেই দেশটি হলো মিশর। তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ফরেন মিলিটারি ফাইন্যান্সিং প্রোগ্রাম থেকে ১১০ কোটি ডলার সহায়তা পায়। এই মিশরই কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জেরুজালেম ঘোষণা বাতিল দাবিতে জাতিসংঘে প্রস্তাব উত্থাপন করেছে। সেই প্রস্তাবই অনুমোদন করেছে জাতিসংঘ। ট্রামপ প্রশাসন আর্থিক সহায়তা কর্তনের যে হুমকি দিয়েছে তা যদি সত্যি বাস্তবায়িত হয় তাহলে এক্ষেত্রে মিশরকে বড় একটি ধাক্কা খেতে হবে। সামপ্রতিক বছরগুলোতে মিশরের পুরো সামরিক বাজেটের প্রায় ২০ থেকে ২৫ ভাগের তহবিল আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এ তথ্য দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাজেজিক স্টাডিজ। অন্য কোনো দেশ মিশরকে এর ধারেকাছেও সামরিক সহায়তা দেয় না। এছাড়া সামরিক সহায়তা পায় পাকিস্তান। তাও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার অংক প্রায় ৫০ কোটি ডলার। জর্ডান পায় প্রায় ১০০ কোটি ডলার। কেনিয়া পায় প্রায় ৭০ কোটি ডলার। ইথিওপিয়া পায় প্রায় ৭০ কোটি ডলার। সিরিয়া পায় প্রায় ৭০ কোটি ডলার। দক্ষিণ সুদান পায় প্রায় ৮০ কোটি ডলার।
তবে হোয়াইট হাউজ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন দেশকে চাপে ফেলার চেষ্টা করলেও, কূটনীতিকরা তাতে এতটুকু টলেননি। ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ মালকি বলেন, ‘ইতিহাস নাম লিখে রাখে, নাম মনে রাখে। তাদের নাম ইতিহাস মনে রাখে, যারা সঠিক করণীয় না করে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। তাদের নামও ইতিহাস মনে রাখে, যারা মিথ্যা বলে।’ তিনি আরও বলেন, ফিলিস্তিনকে হুমকি দিয়ে দমানো যাবে না।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এই ভোটাভুটি ঠেকানোর চেষ্টা করলেও, অনেক কূটনীতিকই বলেছেন এমনটিই হওয়ার কথা ছিল আগে থেকে। এর ফলে ট্রাম্প আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন। এর দরুন যুক্তরাষ্ট্রের আরব মিত্ররাও বিপদে পড়ার ঝুঁকিতে পড়ে গেল। পাশাপাশি, ইসরাইল-ফিলিস্তিন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বাস্তবায়ন আরও জটিল হয়ে পড়লো।
ভোটাভুটির সময় দেখা গেছে, ট্রাম্প ও মার্কিন দূত হ্যালে যেসব হুমকি দিয়েছেন, তার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক কূটনীতিক। হ্যালে ভোটাভুটির আগেও নিজের বক্তৃতায় মার্কিন আর্থিক সহায়তা বন্ধের হুমকি দেন। তবে বেশির ভাগ দেশই এসব হুমকিকে পাত্তা দেয়নি। তারা ধরে নিয়েছেন, ট্রাম্প মূলত নিজের ঘরোয়া রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলেই এসব হুমকি দিয়েছেন। তাছাড়া মিশর, ইরাক ও জর্দানের মতো গুরুত্বপূর্ণ মিত্ররাষ্ট্রকে দেওয়া বিপুল পরিমাণ অনুদান কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র বাতিল করবে বা প্রত্যাহার করবে, সেটির কোনো উত্তর নেই।
মোদ্দা কথা, জেরুজালেম নিয়ে আমেরিকার অবস্থান পরিবর্তন যেভাবে প্রত্যাখ্যান করলো বিশ্ব, সেটি মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য নিঃসন্দেহে বড় চপেটাঘাত। দায়িত্ব নেয়ার এক বছর পার হয়ে গেলেও, এখন পর্যন্ত পররাষ্ট্র নীতিতে তার বড় ধরনের কোনো অর্জন নেই। ইয়েমেন ও তুরস্ক এই প্রস্তাবনার খসড়া করেছে। এতে জেরুজালেম নিয়ে অতীতের অনেক প্রস্তাবনাকে উদ্ধৃত করে জেরুজালেমে কোনো কূটনৈতিক মিশন স্থাপন না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইনে এ ব্যাপারে ঐকমত্য রয়েছে যে, ১৯৬৭ সাল থেকে ইসরাইলের কব্জায় থাকা পূর্ব জেরুজালেম হবে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী।
No comments