১ কিমি ব্যয় সোয়া ৩ কোটি টাকা
কোনো
নীতিমালা না থাকায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সড়ক উন্নয়ন বা নির্মাণের ক্ষেত্রে
ব্যয়ের কোনো লাগাম নেই। ফলে প্রতি কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন ব্যয় ভিন্ন ভিন্ন
অঙ্কের হচ্ছে। ব্যয়ের ব্যবধানও অনেক বেশি। ঢাকা সিটিতে যেখানে প্রতি
কিলোমিটার সড়ক বা রাস্তা উন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, সেখানে
চট্টগ্রাম সিটিতে এই ব্যয় ধরা হয়েছে সোয়া ৩ কোটি টাকার বেশি। বিশ্বব্যাংকের
ঢাকা অফিসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে- ভারত, চীন ও ইউরোপের
তুলনায় প্রতি কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে বাংলাদেশের ব্যয় অনেক বেশি। এখানে
দুর্নীতি একটা মুখ্য ভূমিকা পালন করে বলে তিনি মনে করেন। খোঁজ নিয়ে জানা
গেছে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার বিভিন্ন সড়ক বিশেষ করে ৮৯টি সড়ক
উন্নয়ন করার প্রস্তাব নিয়ে একটি প্রকল্প আগামীতে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের
নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় পেশ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যয়
ধরা হয়েছে ৬৩০ কোটি ১২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। যেখানে ৫০৪ কোটি ১০ লাখ ১১ হাজার
টাকা সরকার দেবে। বলা হচ্ছে, শহরের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নত করতে
গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার অবকাঠামোগত দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানো ও কিছু ব্রিজের
উন্নয়ন করা হবে। মোট ১০৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন করা হবে। এ
ছাড়া ৩৬টি ব্রিজ নির্মাণ, চারটি অ্যাসকেলেটরসহ ফুটওভারব্রিজ স্থাপন, ১৩৮
দশমিক ৭৪ কিলোমিটার বিদ্যুতায়ন করা হবে। ব্যয় বিভাজনে দেখা যায়, ১০৮ দশমিক
৫০ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের জন্য মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৪২ কোটি ৬১
লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এখানে প্রতি কিলোমিটারে সড়ক উন্নয়নে ব্যয় হবে ৩ কোটি ১৫
লাখ ৭৭ হাজার টাকা।
অথচ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে চলমান রাস্তার
অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রতি কিেিলামিটারে ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঢাকার শ্যামপুর, মাতুয়াইল, দনিয়া, সারুলিয়া এলাকার সড়ক
অবকাঠামো উন্নয়নে প্রতি কিলোমিটার ব্যয় ধরা হয় ১ কোটি ৯৪ লাখ ৫ হাজার টাকা।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায় ব্যয় রাজধানী বিশেষ করে ডিএসসিসির
প্রকল্পের প্রতি কিলোমিটারের ব্যয়ের চেয়ে অনেক বেশি। অন দিকে, এসব সড়কে ৬০৩
দশমিক ৬৭ মিটার ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি ২৭ লাখ ৪৯ হাজার
টাকা। এখানে প্রতি মিটার ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় হবে ২০ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
যেখানে উপজেলা পর্যায়ের সড়কের ব্রিজ নির্মাণ ব্যয় ৮ লাখ টাকা। এটি তার
চেয়েও আড়াই গুণ বেশি। চট্টগ্রাম সিটিতে ১৩৮ দশমিক ৭৪ কিলোমিটার বিদ্যুতায়ন
করা হবে, যার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৯ কোটি ৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা। ফলে প্রতি
কিলোমিটার বিদ্যুতায়নে ব্যয় হবে ৭১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। পরিকল্পনা কমিশন
সূত্র বলেছে, প্রকল্পের সড়কের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ আলাদাভাবে উল্লেখসহ সড়কের
ব্যয় নির্ধারণ করতে হবে। সে অনুযায়ী ক্রয় পরিকল্পনা করতে হবে। এখানে
অন্যান্য প্রকল্পের ব্যয়ের তুলনায় এই প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে সড়ক উন্নয়ন
ব্যয় বেশি প্রাক্কলন করা হয়েছে। অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের বিশ্লেষণ
ভূমি অধিগ্রহণ যুক্ত হলে ব্যয় বেশি হবে; কিন্তু শহরের রাস্তা উন্নয়নে ভূমি
অধিগ্রহণ ছাড়া এতটা ব্যয় বিশ্বাসযোগ্য হওয়ার মতো নয়। নির্মাণসামগ্রীর দাম
বৃদ্ধি পেলেও প্রতি কিলোমিটারে এত ব্যয় যৌক্তিক মনে হয় না। এর আগে
বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, মূলত টেন্ডারিং (দরপত্র)
প্রতিযোগিতার অভাবের কারণেই খরচ বেশি হয়। এটি দুর্নীতিরই একটি অংশ। এ ছাড়া
উঁচু-নিচু জমির কারণেও খরচ বাড়ে।
No comments