ইয়েমেন: যুদ্ধের ১০০০ দিন
রোমানরা
ইয়েমেনকে আরব উপদ্বীপের সবচেয়ে আশীর্বাদপুষ্ট অঞ্চল হিসেবে বর্ণনা করেছিল।
কিন্তু গত ১০০০ দিন ধরে এক সহিংস গৃহযুদ্ধের শিকার হয়ে এখন প্রায় সবচেয়ে
অভিশপ্ত অঞ্চলগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে দেশটি। হাসপাতালে খুব সাধারণ
রোগেরও চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে হাজারো শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান। জনশূন্য হয়ে পড়েছে বহু এলাকা। এক সময়কার বিশাল উঁচু ভবনগুলো
এখন শুধুই ধুলো আর ইট-পাথরের ভাঙা টুকরো হয়ে পড়ে আছে। ২০১৫ সালের ২১শে
মার্চ থেকে স্থানীয় হুতি বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে নামে সৌদি-নেতৃত্বাধীন
জোট।
এরপর থেকে সেই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রাণহানি ঘটেছে ১০ হাজারের বেশি মানুষের। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ। এই বছরের ডিসেম্বরে মাত্র ১১ দিনে প্রাণ হারিয়েছে ১৩৬ জন। সৌদি-জোট দেশটির উত্তরাংশে অবস্থিত বন্দরগুলোতে অবরোধ জারি করে রেখেছে। বিশাল এলাকাজুড়ে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে মৃত্যুর হুমকিতে রয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
ইয়েমেনের সাদা শহরের বাসিন্দা হিশাম আবদুল্লাহ। ২৭ বছর বয়সী আবদুল্লাহ দুই সন্তানের পিতা। তিনি বলেন, সাদা প্রদেশে প্রবেশ করার পর আপনাকে সবার আগে দুটি জিনিস স্বাগতম জানাবে- মৃত্যু আর ধ্বংস। সৌদি আরবের সীমান্তবর্তী এই দরিদ্র প্রদেশটি বোমার আঘাতে ছারখার হয়ে গেছে। আবদুল্লাহ বলেন, আপনি বাসায় ঘুমিয়ে থাকতে পারেন, দোকানে যেতে পারেন, আপনার সন্তানদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে পারেন- যেকোনো মুহূর্তে একটি সৌদি বিমান হামলা করে আপনাকে মেরে ফেলতে পারে। অবস্থা এমন যে, একটা কুকুরও রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারে না। এক সময় সাদায় বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার। শহরটির হুতি ঘাঁটি ধ্বংস করতে এখানে সৌদি-জোট ২ হাজার ৯৯৬টির বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে। এক সময়কার জনাকীর্ণ সাদা শহর পরিণত হয়েছে একটি ভূতুড়ে শহরে। আবদুল্লাহ বলেন, এখান থেকে চলে না যাওয়ার জন্য অনেকে আমাদের পাগল বলে। কিন্তু আমরা আর কিইবা করতে পারতাম? কোথায় যেতাম? তিনি বলেন, আমরা আজকাল দেখছি যে সিরীয়রা শরণার্থী শিবিরে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। আমরা এ শহর ছেড়ে চলে গেলে আমাদের অবস্থাও এমনই হবে।
১০০০ দিন ধরে আরব উপদ্বীপের সবচেয়ে দরিদ্র দেশটি শিকার হয়েছে একটি আঞ্চলিক ‘প্রক্সি যুদ্ধের’। অভিযোগ রয়েছে হুতিদের পেছনে ইরানের সমর্থন রয়েছে। আর ইরান, সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় হুতিদের ওপর আরো চড়াও হয়েছে সৌদি-জোট। এই দুই শক্তির মধ্যকার লড়াইয়ে অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়েছে ইয়েমেন। লাখ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়া ও ধ্বংসের পাশাপাশি শিশুসহ প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ভুগছেন বিশুদ্ধ পানির অভাবে। রাজধানী সানা-ভিত্তিক এক ফটোগ্রাফার সাইফ আল-অলিবি বলেন, সন্তানদের খাবার জোগাড় করতে মানুষ নিজের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। আমি নিজেও কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছি না। আমার পরিবারের আর কেউও কোনো অর্থ উপার্জন করতে পারছে না। সৌদি জোটের অবরোধ ইতিমধ্যে বিদ্যমান খারাপ পরিস্থিতি আরো খারাপ করে তুলেছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, খাদ্য ও জ্বালানির দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। আর এসবের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হচ্ছে দরিদ্ররা। আয়হাম আলঘোপারি নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, ময়দার দাম নভেম্বর থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। খোলা বাজারে আর জ্বালানি কিনতে পাওয়া যায় না। এর দামও দ্বিগুণ হয়েছে। আগে একটি ছোট গাড়ি সম্পূর্ণরূপে ভরতে লাগতো ১৬ ডলার। এখন লাগে ৩৫ ডলার।
গৃহযুদ্ধের আগে ইয়েমেন, দেশের ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় গমের ৯০ শতাংশ ও সবটুকু চাল বাইরে থেকে আমদানি করতো। আমদানিকৃত পণ্যের ৭০ শতাংশই বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চল দিয়ে আসতো। কিন্তু এই প্রাণঘাতী যুদ্ধে আমদানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এই মুহূর্তে দেশের লাখ লাখ মানুষ জানে না, তারা আবার কখন খেতে পারবে। সৌদি আরব নভেম্বরে ইয়েমেনের ওপর অবরোধ জারি করে। বন্ধ করে দেয়া হয় জলপথ, আকাশপথ ও সমুদ্রপথের সকল বন্দর। হুতি বিদ্রোহীরা রিয়াদের উদ্দেশে একটা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পরই এ অবরোধ আসে। তিন সপ্তাহ পরে বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার অনুরোধে অবরোধ কিছুটা শিথিল করা হয়। কিন্তু হোদেইদাহ দিয়ে কোনো বাণিজ্যিক পণ্য প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রাখা হয়। প্রসঙ্গত, হোদেইদাহ হচ্ছে লোহিত সাগরের একটি বন্দর শহর। এটি হুতিদের একটি প্রধান ঘাঁটি। ২৫ বছর বয়সী সানা নিবাসী লুতফ আলসানানি বলেন, আমি বিদ্যুৎ ছাড়াই বাঁচতে শিখছি। আমাদের এখানে পরিষ্কার পানি, গ্যাস, রান্নার তেলের ঘাটতি। এক বছর ধরে আমি কোনো বেতন পাইনি। তিনি বলেন ১০০০ দিনে, ইয়েমেন রক্ত আর বোমার ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছে। এটা হচ্ছে পৃথিবীতে অবস্থিত জাহান্নাম।
এরপর থেকে সেই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত প্রাণহানি ঘটেছে ১০ হাজারের বেশি মানুষের। বাস্তুচ্যুত হয়েছে ৩০ লাখেরও বেশি মানুষ। এই বছরের ডিসেম্বরে মাত্র ১১ দিনে প্রাণ হারিয়েছে ১৩৬ জন। সৌদি-জোট দেশটির উত্তরাংশে অবস্থিত বন্দরগুলোতে অবরোধ জারি করে রেখেছে। বিশাল এলাকাজুড়ে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দুর্ভিক্ষের শিকার হয়ে মৃত্যুর হুমকিতে রয়েছে লাখ লাখ মানুষ।
ইয়েমেনের সাদা শহরের বাসিন্দা হিশাম আবদুল্লাহ। ২৭ বছর বয়সী আবদুল্লাহ দুই সন্তানের পিতা। তিনি বলেন, সাদা প্রদেশে প্রবেশ করার পর আপনাকে সবার আগে দুটি জিনিস স্বাগতম জানাবে- মৃত্যু আর ধ্বংস। সৌদি আরবের সীমান্তবর্তী এই দরিদ্র প্রদেশটি বোমার আঘাতে ছারখার হয়ে গেছে। আবদুল্লাহ বলেন, আপনি বাসায় ঘুমিয়ে থাকতে পারেন, দোকানে যেতে পারেন, আপনার সন্তানদের সঙ্গে ফুটবল খেলতে পারেন- যেকোনো মুহূর্তে একটি সৌদি বিমান হামলা করে আপনাকে মেরে ফেলতে পারে। অবস্থা এমন যে, একটা কুকুরও রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারে না। এক সময় সাদায় বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার। শহরটির হুতি ঘাঁটি ধ্বংস করতে এখানে সৌদি-জোট ২ হাজার ৯৯৬টির বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে। এক সময়কার জনাকীর্ণ সাদা শহর পরিণত হয়েছে একটি ভূতুড়ে শহরে। আবদুল্লাহ বলেন, এখান থেকে চলে না যাওয়ার জন্য অনেকে আমাদের পাগল বলে। কিন্তু আমরা আর কিইবা করতে পারতাম? কোথায় যেতাম? তিনি বলেন, আমরা আজকাল দেখছি যে সিরীয়রা শরণার্থী শিবিরে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। আমরা এ শহর ছেড়ে চলে গেলে আমাদের অবস্থাও এমনই হবে।
১০০০ দিন ধরে আরব উপদ্বীপের সবচেয়ে দরিদ্র দেশটি শিকার হয়েছে একটি আঞ্চলিক ‘প্রক্সি যুদ্ধের’। অভিযোগ রয়েছে হুতিদের পেছনে ইরানের সমর্থন রয়েছে। আর ইরান, সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় হুতিদের ওপর আরো চড়াও হয়েছে সৌদি-জোট। এই দুই শক্তির মধ্যকার লড়াইয়ে অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হয়েছে ইয়েমেন। লাখ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুত হওয়া ও ধ্বংসের পাশাপাশি শিশুসহ প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ ভুগছেন বিশুদ্ধ পানির অভাবে। রাজধানী সানা-ভিত্তিক এক ফটোগ্রাফার সাইফ আল-অলিবি বলেন, সন্তানদের খাবার জোগাড় করতে মানুষ নিজের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। আমি নিজেও কোনো কাজ খুঁজে পাচ্ছি না। আমার পরিবারের আর কেউও কোনো অর্থ উপার্জন করতে পারছে না। সৌদি জোটের অবরোধ ইতিমধ্যে বিদ্যমান খারাপ পরিস্থিতি আরো খারাপ করে তুলেছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, খাদ্য ও জ্বালানির দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠেছে। আর এসবের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হচ্ছে দরিদ্ররা। আয়হাম আলঘোপারি নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, ময়দার দাম নভেম্বর থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। খোলা বাজারে আর জ্বালানি কিনতে পাওয়া যায় না। এর দামও দ্বিগুণ হয়েছে। আগে একটি ছোট গাড়ি সম্পূর্ণরূপে ভরতে লাগতো ১৬ ডলার। এখন লাগে ৩৫ ডলার।
গৃহযুদ্ধের আগে ইয়েমেন, দেশের ২ কোটি ৮০ লাখ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় গমের ৯০ শতাংশ ও সবটুকু চাল বাইরে থেকে আমদানি করতো। আমদানিকৃত পণ্যের ৭০ শতাংশই বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চল দিয়ে আসতো। কিন্তু এই প্রাণঘাতী যুদ্ধে আমদানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এই মুহূর্তে দেশের লাখ লাখ মানুষ জানে না, তারা আবার কখন খেতে পারবে। সৌদি আরব নভেম্বরে ইয়েমেনের ওপর অবরোধ জারি করে। বন্ধ করে দেয়া হয় জলপথ, আকাশপথ ও সমুদ্রপথের সকল বন্দর। হুতি বিদ্রোহীরা রিয়াদের উদ্দেশে একটা ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পরই এ অবরোধ আসে। তিন সপ্তাহ পরে বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থার অনুরোধে অবরোধ কিছুটা শিথিল করা হয়। কিন্তু হোদেইদাহ দিয়ে কোনো বাণিজ্যিক পণ্য প্রবেশ নিষিদ্ধ করে রাখা হয়। প্রসঙ্গত, হোদেইদাহ হচ্ছে লোহিত সাগরের একটি বন্দর শহর। এটি হুতিদের একটি প্রধান ঘাঁটি। ২৫ বছর বয়সী সানা নিবাসী লুতফ আলসানানি বলেন, আমি বিদ্যুৎ ছাড়াই বাঁচতে শিখছি। আমাদের এখানে পরিষ্কার পানি, গ্যাস, রান্নার তেলের ঘাটতি। এক বছর ধরে আমি কোনো বেতন পাইনি। তিনি বলেন ১০০০ দিনে, ইয়েমেন রক্ত আর বোমার ভূখণ্ডে পরিণত হয়েছে। এটা হচ্ছে পৃথিবীতে অবস্থিত জাহান্নাম।
No comments