ট্রাম্পের ব্যর্থতায় ইরানের লাভ
জেরুজালেমকে
ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতি
জাতিসংঘে বিপুলভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়াটা ‘ইরানের জন্য উপহার’ বলে মন্তব্য
করেছে ইসরাইলি দৈনিক হারেৎজ। গত সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে
ভোটাভুটিতে ট্রাম্পের ঘোষণার বিপক্ষে ভোট দেয় ১২৮ দেশ। অন্যদিকে পক্ষে পড়ে
মাত্র ৯ ভোট।
এর আগে নিরাপত্তা পরিষদে ট্রাম্পের ঘোষণার বিপক্ষে অবস্থান
নেয় ১৪ দেশ। তবে সেই প্রস্তাবে ভেটো দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বামঘেঁষা প্রভাবশালী
হারেৎজ পত্রিকার নিবন্ধে বলা হয়, ট্রাম্পের ঘোষণাকে ‘অকার্যকর’ বলে যেভাবে
প্রস্তাবটি পাস হয়েছে, তা ‘বিশ্ববিস্তৃত অনাস্থা ভোট।’ এতে বলা হয়,
ভবিষ্যতে ইরান ও অন্য কোনো শত্রু দেশের বিরুদ্ধে ইসরাইল আন্তর্জাতিক
সম্প্রদায়ের কোনো যৌথ প্রয়াস চাইলে তেল আবিবকে ভুগতে হবে। নিবন্ধে বলা হয়,
ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার
বৈরিতা চলছে। এটা জেরুজালেম সংক্রান্ত প্রস্তাবকেও প্রভাবিত করেছে। এতে
আমেরিকার বিরুদ্ধে যে নেতিবাচক মনোভাব গতি সঞ্চার করেছে, তা ইরান নিয়ে
আমেরিকার প্রস্তাবেও প্রভাব ফেলতে পারে। তারা ধরে নেবে যে, এটা ট্রাম্পের
প্রস্তাব এবং এ কারণে এতে আন্তর্জাতিক বিরোধিতা প্রবল হবে। এটাই ইসরাইলের
জন্য ভয়ের কারণ। ইরান ও বিশ্ব শক্তির মধ্যে স্বাক্ষরিত ঐতিহাসিক চুক্তির
ধারা অনুসারে মধ্য জানুয়ারির মধ্যেই ট্রাম্পকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তিনি
ইরানের ওপর নিধেষাজ্ঞা শিথিল করবেন কিনা। চুক্তি অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা
শিথিলের বিনিময়ে ইরান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সীমিত করবে। ট্রাম্প ওই চুক্তিকে
জঘন্য চুক্তি বলে মন্তব্য করেছেন। ইসরাইলকে ইহুদি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিতে
চায় আমেরিকা-হামাস : ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের
পলিটব্যুরো প্রধান ইসমাইল হানিয়া সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ফিলিস্তিন ও
জেরুজালেমের ব্যাপারে ওয়াশিংটন আরও কিছু নতুন সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে তার
কাছে তথ্য রয়েছে। তিনি শনিবার গাজায় এক অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে বলেছেন,
‘আমাদের কাছে গোপন তথ্য আছে যে, মার্কিন প্রশাসন ইসরাইলকে ইহুদি রাষ্ট্র
হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চায়। সেইসঙ্গে দখলীকৃত বসতিগুলো ইসরাইলকে দিয়ে দিতে
এবং ফিলিস্তিনিদের তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে আসার সুযোগ চিরতরে বন্ধ করে দিতে
চায় ওয়াশিংটন।’ এ কারণে তিনি ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার
জন্য বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ফিলিস্তিন স্বশাসন
কর্তৃপক্ষকে আমেরিকা ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান
নেয়ারও আহ্বান জানান। হামাস প্রধান বলেন, ১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তিসহ
আমেরিকার মধ্যস্থতায় ইহুদিবাদীদের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সব চুক্তি বাতিল করতে
হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে
স্বীকৃতি দেয়ার পর ওইসব চুক্তি বহাল রাখার আর কোনো অর্থ হয় না বলে হানিয়া
মন্তব্য করেন।
হামাসের পলিটব্যুরো প্রধান জোর দিয়ে বলেন, অখণ্ড জেরুজালেম
হচ্ছে ফিলিস্তিনের রাজধানী এবং এই নগরীর ওপর দখলদার ইহুদিবাদীদের কোনো
অধিকার নেই। যুক্তরাজ্যে প্রতিবাদ অব্যাহত : ট্রাম্পের জেরুজালেমনীতি
ঘোষণার পর থেকেই যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। তিন
সপ্তাহ ধরে চলা এ প্রতিবাদ কর্মসূচি শেষ হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
ব্রিটেনের ফিলিস্তিন ফোরাম (পিএফবি), ফিলিস্তিন সংহতি আন্দোলন ও বার্মিংহাম
মসজিদ কাউন্সিলের ডাকে শনিবারও শত শত মানুষ বিক্ষোভ করেছে।
মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডলইস্ট মনিটর এ খবর জানিয়েছে। প্রতিবেদনে
বলা হয়, বেশ কয়েকটি নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের ডাকে এ সমাবেশে সবাই
মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকারের
পক্ষে কথা বলেন। পিএফবি’র সভাপতি হাফিজ আল কারমি সমাবেশের উদ্দেশ্য তুলে
ধরে বলেন, ‘এটা ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের বিরোধিতার ওপর পুনরায় জোর দেয়ার
পাশাপাশি ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সংহতি প্রদর্শনের জন্য করা হচ্ছে। তাদের
নিশ্চয়তা দিতে চাই কেউ তাদের ওপর জোর করতে পারবে না।’ পিএফবি’র সংবাদমাধ্যম
শাখার প্রধান আদনান হামিদান বলেন, ‘জেরুজালেম হল ঐক্যের প্রতীক। এ
প্রতিবাদেই বোঝা যায় আরব-অনারব, মুসলিম-অমুসলিম সবাই হাতে হাত রেখে
ট্রাম্পের অবৈধ ঘোষণার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।’
No comments