বিআরটিসির ৪৫ এসি বাসের সব বিকল
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ
রুটে বিআরটিসির ৪৫টি এসি বাসের সব কটিই বিকল হয়ে গেছে। গত আগস্ট মাস থেকে
এই সার্ভিস বন্ধ আছে। নারায়ণগঞ্জে যাত্রী অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের
অভিযোগ, বেসরকারি একটি পরিবহন সংস্থাকে লাভবান করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে
বিআরটিসির বাসগুলো বিকল করা হয়েছে। সম্প্রতি বিআরটিসির নারায়ণগঞ্জ ডিপোতে
গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি এসি বাস বিকল হয়ে পড়ে আছে। ডিপোর ব্যবস্থাপক
(অপারেশন) মো. মোশাররফ হোসেন সিদ্দিকি প্রথম আলোকে বলেন, বেসরকারি এসি বাস
শীতল নামার পর থেকে বিআরটিসির ব্যবসা কমতে থাকে। কারণ সেগুলো ভালো সার্ভিস
দিচ্ছে। এগুলোতে ওয়াই-ফাই আছে। আর বিআরটিসির বাসগুলো পুরোনো হওয়ায় যাত্রী
কমে আসছিল। জ্বালানি খরচও উঠত না। তাই বন্ধ হয়ে গেছে। শহরের জামতলা এলাকার
বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, ‘তিন মাস ধরে কর্মক্ষেত্রের কারণে
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে নিয়মিত যাতায়াত করতে হয়। গত তিন মাসে এই রুটে
বিআরটিসির এসি বা নন এসি, কোনো বাস চোখে পড়েনি। এখন বেসরকারি বাসগুলোতে
চলাচল করি। সেগুলোর ভাড়া অনেক বেশি। বিআরটিসির বাস থাকলে স্বল্প খরচে চলাচল
করা যেত।’ বিআরটিসির এসি বাসগুলো বিকল হয়ে যাওয়ার বিষয়ে বিআরটিসির
দায়িত্বশীল দুজন কর্মকর্তা বলেন, এর মূল কারণ দুটি। প্রথমত, দেশের
টেকনিশিয়ানদের ভালোভাবে প্রশিক্ষিত করা যায়নি। দ্বিতীয়ত, এসব বাসের
যন্ত্রাংশ দেশের বাজারে পাওয়া যায় না। রক্ষণাবেক্ষণও বেশ দুর্বল ছিল।
তবে
নারায়ণগঞ্জ যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন,
নারায়ণগঞ্জে পরিবহন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকারী সিন্ডিকেটের দুর্নীতির কারণে
চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বিআরটিসির নন এসি বাস এই রুটে দেওয়া হয়নি। এসি বাস
দেওয়া হলেও সাম্প্রতিক সময়ে শীতল বাস নামানোর কারণে ইচ্ছাকৃতভাবে
পর্যায়ক্রমে লোকসান দেখিয়ে এগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ নাগরিক
কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, এই রুটে অন্য সব বেসরকারি পরিবহন
ঠিকই চলছে। তাহলে বিআরটিসির বাস এত বিকল হয় কেন। তিনি অভিযোগ করেন,
বিআরটিসির ভেতরেই বেসরকারি পরিবহনগুলোর মালিকদের লোকজন থাকেন, যাঁরা
যন্ত্রাংশ বিকল করার কাজ করেন। শীতল এসি ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের
ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুক্তার হোসেন বলেন, ‘বিআরটিসির ওপর আমাদের কোনো
প্রভাব নেই। ঢাকা-মুন্সিগঞ্জে তো শীতল বাস নেই। কিন্তু সেখানেও বিআরটিসির
পরিস্থিতি খারাপ। প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে।’ বিআরটিসির জিএম (টেকনিক্যাল) মেজর
মাহমুদুর রহমান গত শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ২০১১ সালে দক্ষিণ কোরিয়া
থেকে দাইয়ো কোম্পানির ২৫৫টি এসি ও নন এসি বাস আনা হয়। এর মধ্যে ওই বছরের
আগস্ট মাসে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ৪৫টি এসি বাস দেওয়া হয়। ২৫৫টির মধ্যে
বর্তমানে ১০৪টি বাস বিকল হয়ে বিভিন্ন ডিপোতে পড়ে আছে। এগুলোর মধ্যে
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ৪৫টি এসি বাসও আছে। বিআরটিসির চেয়ারম্যান ফরিদ আহমেদ
ভূইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বিআরটিসির বাস বন্ধ হয়ে
যাওয়ার মূল কারণ ছিল প্রশাসনিক দুর্বলতা। কয়েকজন দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত
ছিলেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে। দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে বেসরকারি বাসের মালিক ও শ্রমিক সমিতির কোনো চাপ আছে কি না,
এমন প্রশ্নের জবাবে বিআরটিসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ ধরনের বাস্তবতা কিছুটা
আছে। তবে কৌশলে ব্যবস্থা করছি। অনেক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আছেন।
বিআরটিসির বিভিন্ন জায়গায় পরোক্ষ চাপ আছে। এগুলোর উত্তরণ ঘটিয়ে সার্ভিস
ভালো করা যায় কি না, সেই চেষ্টা চলছে।’
No comments