ছোট ফ্ল্যাটে লাভ কম, নজরও কম
ছোট
পরিবার। টানাটানি আছে অর্থেরও। তারা ছোট আকারের বা ১ হাজার ২০০ বর্গফুটের
কম আয়তনের ফ্ল্যাট কিনতে চান। এমন ক্রেতার সংখ্যা অনেক হলেও কেবল অল্প কিছু
আবাসন প্রতিষ্ঠানের কাছেই ছোট ফ্ল্যাট আছে। অধিকাংশ আবাসন প্রতিষ্ঠানের এ
বিষয়ে নজর কম। তাদের বক্তব্য, ছোট ফ্ল্যাট ব্যবসায়িকভাবে কম লাভজনক হয়ে
থাকে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে চলছে পাঁচ
দিনব্যাপী রিহ্যাবের আবাসন মেলা। গতকাল রোববার মেলায় অংশ নেওয়া কয়েকটি
আবাসন প্রতিষ্ঠানের স্টলে ছোট আকারের ফ্ল্যাটের খোঁজ মিলল। তেমনই একটি
প্রতিষ্ঠান বিল্ডিং ফর ফিউচার। উত্তরা, মিরপুর ও বসুন্ধরা এলাকায় ৯৭০ থেকে ১
হাজার বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট প্রকল্প আছে তাদের। প্রতি বর্গফুটের দাম
পড়বে সাড়ে পাঁচ হাজার থেকে সাড়ে ছয় হাজার টাকা। জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানের
বিক্রয় নির্বাহী নাজমুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছোট আকারের ফ্ল্যাটের
চাহিদা আছে। আমরা মাঝারি ও বড় আকারের পাশাপাশি অল্প কিছু ছোট আকারের
ফ্ল্যাট নির্মাণ করি। তবে যেগুলো নির্মাণ করা হয়, তা খুব দ্রুতই বিক্রি হয়ে
যায়।’ ছোট আকারের ফ্ল্যাটের তিনটি প্রকল্প আছে বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড
আইডিয়াস লিমিটেডের (বিটিআই)। উত্তরার দিয়াবাড়ি, উত্তরখান ও সাভারে তাদের
প্রায় পৌনে ছয় শ ছোট আকারের ফ্ল্যাট। এসব ফ্ল্যাটের আয়তন ৭০০ থেকে শুরু।
সাভারে ৭০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটে আছে ২টি শয়নকক্ষ, ১টি ড্রয়িং কাম ডাইনিং,
২টি বাথরুম ও ২টি ব্যালকনি। দাম ৩৫ লাখ টাকা। দিয়াবাড়িতে ৯০০ বর্গফুটের
ফ্ল্যাটের দাম ৬৮ লাখ টাকা। জানতে চাইলে বিটিআইয়ের সিনিয়র কনসালট্যান্ট
ইয়াসিন রুমন বলেন, অধিকাংশ ক্রেতাই তিন শয়নকক্ষের ফ্ল্যাট চান। ১ হাজার
থেকে ১ হাজার ২০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট হলে ৩টি শয়নকক্ষ পাওয়া যায়।
ফ্ল্যাটের আয়তন ৯০০ বর্গফুটের নিচে হলে ২টি শয়নকক্ষ হয়। তাই আবাসন
প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত ছোট আকারের ফ্ল্যাট কম করে। তবে চাহিদা থাকার
কারণেই বিটিআই ছোট আকারের ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে। সাড়াও মিলছে ভালো।
১ হাজার
১০০ বর্গফুট আয়তনের কয়েকটি ফ্ল্যাট আছে বিশ্বাস বিল্ডার্সের। মিরপুর
এলাকায় তাদের এই ছোট আকারের ফ্ল্যাটের প্রতি বর্গফুটের দাম সাড়ে ছয় হাজার
টাকা। প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপক সোহেল রানা বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকায় জমির
আকার ও ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী আমরা ফ্ল্যাট নির্মাণ করি। সে জন্য সব সময়
ছোট আকারের ফ্ল্যাট নির্মাণ করা সম্ভব হয় না।’ এদিকে অন্যান্য দিনের তুলনায়
গতকাল রিহ্যাবের মেলায় দর্শনার্থীর সংখ্যা কম ছিল। রিহ্যাবের দেওয়া হিসাব
অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার
দর্শনার্থী মেলায় এসেছেন। ইতিমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিক্রিবাট্টা হয়েছে।
তবে ফ্ল্যাটের দাম নিয়ে অসন্তোষও আছে। শহিদুল ইসলাম নামের একজন সরকারি
চাকরিজীবী গতকাল মেলায় ফ্ল্যাটের খোঁজখবর নিতে এসেছিলেন। জানতে চাইলে তিনি
প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্ল্যাটের দাম অস্বাভাবিক বেশি। আমাদের মতো সীমিত আয়ের
চাকরিজীবীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে।’ দেশের আবাসন খাতের সবচেয়ে পুরোনো
প্রতিষ্ঠান ইস্টার্ন হাউজিং লিমিটেড (ইএইচএল)। প্রতিষ্ঠানটি বনানী,
বসুন্ধরা, সার্কিট হাউস রোড, বেইলি রোড, গুলশান এলাকার ১৬ প্রকল্পের প্রায়
৫০টি ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছে। ফ্ল্যাটের আয়তন ১ হাজার ৬৭৫ থেকে ২
হাজার ২৭২ বর্গফুট। প্রকল্পভেদে প্রতি বর্গফুটের দাম সাড়ে ৯ হাজার থেকে ১৬
হাজার টাকা। প্রতিষ্ঠানের সহকারী ব্যবস্থাপক (বিক্রয় ও ব্যবসা উন্নয়ন)
উজ্জ্বল চক্রবর্তী বলেন, মেলায় তাঁদের আটটি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়েছে।
ফ্ল্যাটের পাশাপাশি কিছু প্রতিষ্ঠান প্লটও বিক্রি করছে। তাদের মধ্যে অন্যতম
ইউএস-বাংলা অ্যাসেট। তাদের পূর্বাচল আমেরিকান সিটি নামের প্রকল্পে ২ দশমিক
৮, ৩, ৪ ও ৫ কাঠার প্লট আছে। জি ব্লকে প্রতি কাঠার দাম ১০ লাখ টাকা। এ, বি
ও ডি ব্লকের প্রতি কাঠার দাম ১৮ লাখ টাকা। মেলা উপলক্ষে কাঠাপ্রতি ২৫
শতাংশ মূল্যছাড় দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। মেলায় কাঠাপ্রতি বুকিং ১০ হাজার টাকা।
প্রতিষ্ঠানটির উপব্যবস্থাপক মীর গোলাম মোরশেদ ইমরান বলেন, ‘আমাদের
প্রকল্পে প্রস্তুত (রেডি) প্লট আছে। ক্রেতারা সর্বনিম্ন ৭ হাজার ৪১৬ টাকা
মাসিক কিস্তিতে প্লট কিনতে পারবেন।’
No comments