সবার আগে একলা ট্রাম্প
হিলারি
ক্লিনটনের মতো একজন অভিজ্ঞ ও তুখোড় রাজনীতিবীদকে হারিয়ে রাজনীতিতে
নিতান্তই নবিশ ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত
হলেন, তখন সেটাকে ‘ট্রাম্পের ওভারট্রাম্প’ ছাড়া আর কীই-বা বলার ছিল? ২০১৬
সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে বসেই তিনি
ঘোষণা দিলেন, ‘সবার আগে যুক্তরাষ্ট্র’—এই হবে তাঁর নীতি। এরপর প্রায় এক বছর
হতে চলল এবং এ পর্যন্ত এই আনাড়ি খেলোয়াড় যা যা করার চেষ্টা করেছেন, তা এক
বাক্যে রূপান্তর করলে দাঁড়ায়, ‘সবার আগে ট্রাম্প’। নিজের লক্ষ্য পূরণে দেশে
বা দেশের বাইরে আর কাউকেই তোয়াক্কা করছেন না ট্রাম্প। এই করতে গিয়ে তাঁর
দেশ একলা হয়ে পড়ছে বিশ্ব থেকে। সর্বশেষ ঘটনা জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী
হিসেবে স্বীকৃতি।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক
সম্প্রদায়ের দীর্ঘদিনের স্বীকৃত নীতি ছুড়ে ফেলে তাঁর এই একতরফা ঘোষণায়
জলাঞ্জলি যেতে বসেছে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রচেষ্টা। আবাসন, হোটেল ও
ক্যাসিনো ব্যবসা আর পার্টটাইম শোবিজ—এই নিয়ে জীবনের বড় অংশ কাটিয়ে ট্রাম্প
হঠাৎ করে ঢুকে পড়লেন রাজনীতিতে। প্রথম দিকে মনে হয়েছিল, কোটিপতি ব্যবসায়ীর
নেতা হওয়ার খায়েশ, কিন্তু রিপাবলিকান দলের এক ডজনের বেশি বাঘা নেতাকে
হারিয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নেওয়ার পর চমকে গিয়েছিল মার্কিন সমাজ ও পুরো বিশ্ব।
আর শেষমেশ হিলারিকে যখন হারালেন, তখন তা রীতিমতো বিস্ময়। সেই বিস্ময় এখনো
চলছে এবং ক্ষণে ক্ষণে ভড়কে দিচ্ছে বিশ্বকে। শুরুটা হয়েছিল হোয়াইট হাউসে বসে
এক সপ্তাহের মধ্যে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে, মুসলিমপ্রধান সাতটি দেশের
মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে। এরপর জলবায়ু পরিবর্তনের
বিষয়টি ‘নিছক ধাপ্পাবাজি’ আখ্যা দিয়ে নিজের দেশকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিলেন
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে, বিশ্বসমাজের মাথায় পড়ল আরেক বাজ। আর উত্তর
কোরিয়ার সঙ্গে তাঁর ঠেলাঠেলি ও হুমকি-ধামকিতে তটস্থ আধুনিক সভ্যতা, কখন না
জানি পরমাণুযুদ্ধ বেধে যায়। তবে সর্বক্ষণ সবচেয়ে তটস্থ থাকতে হচ্ছে তাঁরই
আপনজনদের। তাঁর মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও হোয়াটাই হাউসের বড় কর্তাদের। তাঁদের
কার চাকরি কখন আছে কখন নেই, সে এক বড় অনিশ্চয়তা। হোয়াইট হাউসের সিল-প্যাডে
স্বাক্ষর লাগছে না। হাই তুলতে তুলতে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বা সকালে ঘুম
থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে টুইটারে ট্রাম্পের তিন শব্দের টুইট। হোয়াইট
হাউসের চাকরির পাশাপাশি তাতেই নির্ধারিত হয়ে যাচ্ছে, ট্রাম্পের
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের কোথায় আছে আর কোথায় নেই।
No comments