জাবির হল ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা, গ্রেফতার ৪০
সড়ক দুর্ঘটনায় দুই সহপাঠী নিহতের ঘটনায় বিক্ষোভ-ভাংচুরের পর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে রোববার সকাল ১০টার মধ্যে সবাইকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শনিবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের জরুরি সভা থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মেনে সকাল থেকে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে দেখা গেছে। ইতিমধ্যে বেশিরভাগ ছাত্রী হল ত্যাগ করেছেন। তবে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ছাত্রদের হলে রাখার চেষ্টা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এজন্য ছেলেদের হলগুলোতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাও হচ্ছে। জানা গেছে, ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের বিষয়ে ঘোর আপত্তি জানিয়েছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত তুলে নিতে বেলা ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চল প্রশ্ন রেখে যুগান্তরকে বলেন, 'কতিপয় ব্যক্তির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য সব শিক্ষার্থীকে কেন হল ছাড়তে হবে? আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।' বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত তুলে নিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে, ভিসির বাসভবনে ভাংচুর ও হামলার ঘটনায় শনিবার মধ্যরাতে পুলিশ ৪০ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে। আশুলিয়া থানার ওসি মহসিনুল কাদির যুগান্তরকে জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের লিখিত অভিযোগে ৪০ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় রোববার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এর আগে শুক্রবার ভোরে সাভারের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় বাসের ধাক্কায় নিহত হন জাবির মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান রানা ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত। এর প্রতিবাদে শুক্রবার দুপুরে এক ঘণ্টার জন্য শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে। ছাত্রদের লাশ জানাজার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে না এনে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দোষারোপ করে আসছিল।
শনিবার প্রথম থেকেই অবরোধ তুলে নিতে জাবি শাখা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করলেও তাতে কেউ সাড়া দেয়নি। একপর্যায়ে অবরোধকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতাহাতি হয়। মহাসড়ক থেকে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনতে দুপুর ১টায় ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম ছুটে যান এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধ করেন। এ সময় ‘আমার ভাইয়ের জানাজা, ক্যাম্পাসে কেন হল না,’ ‘আমার ভাই মরল কেন প্রশাসন জবাব চাই।’ ভিসি এ সময় তাদের সব দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন। দাবিগুলো হচ্ছে- নিহত দুই ছাত্রের লাশ ক্যাম্পাসে ঢুকতে না দেয়ার কৈফিয়ত দেয়া, নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া, নিহত আরাফাতের দুলাভাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেয়া, ঘাতক বাসটিতে চিহ্নিত করে চালককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া, সিঅ্যান্ডবি থেকে বিশমাইল— পর্যন্ত স্পিডব্রেকার ও গাড়ির গতিসীমা ৩০ কিমি বেঁধে দেয়া, জয় বাংলা গেটে ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণ এবং একাধিক পুলিশ বক্স স্থাপন। দাবি পূরণে ভিসির আশ্বাসেও কাজ হচ্ছিল না। পরে বেলা ৩টায় ভিসি ফের অবরোধস্থলে ছুটে আসেন এবং অবরোধ তুলে নেয়ার অনুরোধ জানান এবং একই সঙ্গে দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের অসদাচরণে ঘটনায় দায়ী ছাত্রলীগ নেতাদের শাস্তির দাবিতে অটল থাকলে ভিসি চলে যান। পরে পুলিশ অ্যাকশনে যায় এবং শিক্ষার্থীরা পরে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বিকাল ৫টা থেকে মহাসড়কটি যান চলাচলের উপযোগী হয়। পুলিশি অ্যাকশনে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পরে ভিসি অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলামের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়।
No comments