রাজধানীর বাজারে বিষাক্ত আম
রাজশাহীর খিরসা (হিমসাগর) আমটি পরিপক্ব হতে আরো এক সপ্তাহ বাকি। গাছগুলোতে এখনো পাকতে শুরু করেনি আম। অথচ এখনই ঢাকার অলিতে-গলিতে মিলছে রাজশাহীর এই আমটি। হলদে রঙের আম দেখে লোভ সামলানো দায়। তাই ক্রেতারাও দেদারসে কিনে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। রাজধানীবাসী অপরিপক্ব জ্যৈষ্ঠের রসালো ফল আমের স্বাদ নিচ্ছেন সপরিবারে। কেমিক্যাল মিশ্রিত এসব আমে ছয়লাব হয়ে গেছে বাজার। রাজশাহীতে আম পরিপক্ব না হলেও এমন লোভনীয় রঙের আম বাজারে কিভাবে এলো এমন প্রশ্ন করা হয় মতিঝিলের এক আমবিক্রেতাকে। তার জবাবে বেরিয়ে আসে লোভনীয় রঙের রহস্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, রাজশাহীর বাগানের আমগাছগুলোতে এখনো ৪০ ভাগ এখনো অপরিপক্ব। বাকি ৬০ ভাগ আম পরিপক্ব হয়েছে। এখন বাজারে আমের চাহিদা অনেক। তাই আমগাছ থেকে নামিয়ে কেমিক্যাল ¯েপ্র করা হচ্ছে আমে। এরপর তা খাচি বা ক্যারেটে সাজিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে রাজধানীতে। এই সময়ের মধ্যেই পাকা আমের মতো লোভনীয় রঙ ধরছে। বাজারে এই আমের চাহিদাও অনেক বেশি। দেশের শীর্ষ আম উৎপাদনকারী জেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে তিকারক কার্বাইড দিয়ে আম পাকানো থামছে না। প্রশাসনের মাইকিংসহ নানা প্রচারণা উপেক্ষা করে বেশি মুনাফার লোভে কাঁচা আমই কার্বাইড দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খুরশীদ জাহান বলেন, প্রতিটি মানুষ মওসুমি ফল খেতে চায়। কিন্তু অসৎ ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে ফলে কেমিক্যালের মিশ্রণ দেয়। সেই ফলে খেলে কিডনি লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়াও পরিপক্ব আম আর কেমিক্যাল মিশ্রিত আমের স্বাদ ও গন্ধ এক নয়। কেমিক্যাল মিশ্রিত আম দৃশ্যত পাকলেও তাতে পরিপক্ব আমের উপাদান থাকে না। এজন্য মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের শক্ত পদক্ষেপ নেয়া উচিত। এ বিষয়ে সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা: মো: ছায়েদুল হক বলেন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড পানি বা জলীয় বাষ্পের সঙ্গে মিশে ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও এসিটাইলিন গ্যাস সৃষ্টি করে। এই এসিটাইলিন গ্যাস ইথিলিনের মতো কাজ করে।
ফলে সহজেই আমসহ যেকোনো কাঁচা ফল পেকে যায়। ক্যালসিয়াম কার্বাইড দামে খুব সস্তা হওয়ায় দেশের ফল ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে সহজলভ্য ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে ফল পাকিয়ে থাকে। ফল পরিণত হওয়ার আগেই ফল পাকানোর কাজটি সহজেই সম্পন্ন হয়ে যায় কৃত্রিমভাবে। এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, সাধারণত পানিতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড মিশিয়ে সেই পানিতে ফল ভেজানো হয়। ক্যালসিয়াম কার্বাইড পানির সঙ্গে মিশে এসিটিলিন নিঃসৃত করে ফল পাকিয়ে দিচ্ছে। একই সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ফলের ত্বক ভেদ করে ফলের ভেতরে শাসে ঢুকে যায়। এই ক্যালসিয়াম কার্বাইডে মারাত্মক বিষ হিসেবে মিশ্রিত থাকে আর্সেনিক ও ফসফরাস। এই আরসেনিক ও ফসফরাসও ফলের ভেতর ঢুকে যায়। ফল পাকার পরও ভেতরে এই আর্সেনিক ও ফসফরাস থেকে যায়। এভাবে কার্বাইড দিয়ে পাকানো ফল খেলে শরীরের ভেতর বিষক্রিয়া চলতে থাকে। তাৎণিকভাবে হয়তো কোনো প্রতিক্রিয়া নাও দেখা দিতে পারে, অথবা অনেক সময় ত্বকে এলার্জি (রেশ) দেখা দিতে পাড়ে। তবে দীর্ঘমেয়াদে কিডনি অথবা লিভারের সমস্যা ছাড়াও সেগুলো বিকল হয়ে যেতে পারে। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া। এই সমস্যাগুলো হয়তো দেখা দেবে ১৫-২০ বছর বা তারও পর। আশঙ্কা হচ্ছে, বর্তমানে যেভাবে নৈতিকতাবিহীনভাবে বিষ মেশানোর কাজটি জনসমে বাধাহীনভাবে চলছে এবং সবাই বিশেষ করে শিশুরা যেভাবে ফলের সঙ্গে বিষ খাচ্ছে, তাতে কয়েক দশক পরে প্রায় প্রতি পরিবারে না হলেও সবার আত্মীয়স্বজন এক বা একাধিক পাওয়া যাবে, যারা কিডনি নষ্ট বা লিভারের সমস্যা অথবা দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে।
No comments