মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত বলেই নৃশংস ঘটনা ঘটছে : -সাক্ষাৎকারে রোকেয়া হায়দার by কাজল ঘোষ
‘আমি
হতে চেয়েছিলাম ব্যারিস্টার। সাংবাদিক হবো- এমন স্বপ্ন বা আকাঙ্ক্ষাই ছিল
না। তবে যখন যা করেছি নিষ্ঠার সঙ্গেই করেছি। নিজেকে একজন নারী সাংবাদিক
হিসেবে পরিচয় দিতে কখনই স্বস্তিবোধ করি না’-
বলছিলেন রোকেয়া হায়দার। যিনি বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। সাংবাদিকতায় দৌড়ঝাঁপে পোশাক বিন্যাস বড় বিষয়। কিন্তু তিনি একাট্টা। শাড়িতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
বাঙালিয়ানাকে সঙ্গী করে দুনিয়া ঘুরেন। পশ্চিমা দুনিয়ায় বড় বড় সেমিনার আর খেলার মাঠে খবর খুঁজে ফেরেন এ পোশাকেই। কাজের ক্ষেত্রে এ পোশাক নেতিবাচক না হয়ে বরং ইতিবাচক- এমনটাই মনে করেন তিনি। বলেন, এর জন্য বাড়তি সুবিধাও পেয়েছি। দুনিয়ার তাবৎ মিডিয়াকে ফিরিয়ে দিলেও মাদার তেরেসাঁ তাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন শাড়ি পরা দেখেই।
রোকেয়া হায়দারের সাংবাদিকতা শুরু বিটিভি দিয়ে। খবর পড়তে ভালোবাসতেন। ১৯৮১ সালে পাড়ি জমান ওয়াশিংটনে। ভয়েস অব আমেরিকাতে। একমাত্র নারী প্রতিনিধি হিসেবে বাংলা বিভাগে যোগ দেন। কালে তিনিই ২০১১ সালে বাংলা বিভাগের প্রধান হন। পরে একই বিভাগের ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের দায়িত্বও লাভ করেন। কোনো আন্তর্জাতিক মাল্টিমিডিয়া প্রতিষ্ঠানে বাংলা বিভাগের প্রধান হওয়ার কৃতিত্ব তারই। নিজ কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিও পেয়েছেন। ১৯৯০ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। স্পষ্ট উচ্চারণ, বলিষ্ঠ কণ্ঠ আর দৃঢ়চেতা মনোভাব এই মানুষটিকে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। যিনি বিশ্বাস করেন সততা, সাহস আর ইচ্ছা থাকলে নির্ভয়ে যেকোনো খবর প্রকাশ সম্ভব। জোর দিয়ে বলেন, কাউকে তুষ্ট করার জন্য সাংবাদিকতা করবো এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মুক্ত গণমাধ্যম, মিডিয়ায় সেল্ফ সেন্সরশিপ, কনফ্লিক্ট রিস্যলুশান নিয়ে মানবজমিনের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন তিনি।
দীর্ঘ পথপরিক্রমায় কোনো প্রতিকূলতার মধ্যে পড়েছেন কিনা?
কোথাও কোনো প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়িনি। বিরাট কোনো দুর্ঘটনাও ঘটেনি। তবে পেশাগত অভিজ্ঞতায় কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছি। তা হচ্ছে প্রেস ফ্রিডম বা যেটাকে আমরা বলি মুক্ত গণমাধ্যম তা নিয়ে। একজন সাংবাদিকের পুরোপুরি প্রেস ফ্রিডম এখনো নেই। আমার কাজের শুরুতেও তা ছিল না। বর্তমানেও তা সীমিত। আর তা কেবল বাংলাদেশেই নয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেই এ অবস্থা বিদ্যমান। এখানকার মিডিয়ায় এখনো কথা বলার অধিকার সীমিত।
আমি দেখেছি, এখানে সকলেই চিন্তাভাবনা করে কথা বলে। বর্তমানে মিডিয়া বেড়েছে, পত্র-পত্রিকা, রেডিও বেড়েছে বলে হয়তো অনেককেই সোচ্চার হতে দেখা যায়। কিন্তু আমি জানি না, কতজন নির্ভয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারছেন। কারা নির্ভয়ে কথা বলতে পারছেন? বুয়েটে সাম্প্রতিক সময়ে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড থেকে কিছুটা হলেও কি প্রমাণিত হয় না যে, নির্ভয়ে কথা বলার অধিকার এদেশে এখনো সীমিত। বুয়েটের মতো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যেখানে মেধাবী ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করতে যায় সেখানে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি, সেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত বলেই এ ধরনের নৃশংস, বর্বরোচিত ঘটনা ঘটছে। এটা খুবই দুঃখজনক।
ভয়েস অব আমেরিকাতে দীর্ঘদিন কাজ করছেন, দু’ একটি অভিজ্ঞতার কথা বলবেন?
আমাদের টার্গেট এরিয়া বাংলাদেশ এবং দুনিয়ায় যেখানে বাংলাদেশিরা আছেন। আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করি। একটু লক্ষ্য করে দেখবেন, ভয়েস অব আমেরিকাতে আমরা নির্দ্বিধায় লিখছি, পড়ছি। দেশের সর্বোচ্চ পদে যিনি আছেন তার বিরুদ্ধেও বা তার পক্ষে যা কিছু বলার প্রয়োজন হলে তা অত্যন্ত সোচ্চারভাবেই আমরা বলছি। সেখানে সরকারি কোনো চাপ নেই, আমরা নির্দ্বিধায় যা বলার তা বলতে পারছি। এমনকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রে যে ধরনের সমালোচনা তা প্রচার করছি। বহু গণতান্ত্রিক দেশেই তা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে কীভাবে দেখেন যুক্তরাষ্ট্রে বসে?
বাংলাদেশের গণমাধ্যম কর্মীদের বলবো, তোষামোদের রাজনীতি না করে কিছুটা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের ঝুঁকি নিতে। আমি কাউকে তুষ্ট করার জন্য সাংবাদিকতা করবো এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যদি কোনো সুবিধা লাভের আশায় সাংবাদিকতা করি তাহলে বিষয়টি অন্যরকম হবে। বহু দেশেই আমরা দেখি অনেকে থাকেন যারা সাংবাদিকতার তকমা লাগিয়ে বাড়তি সুবিধা আদায়ের চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন, যার মাধ্যমে বিশেষ সুযোগ পাওয়া যায়। বাংলাদেশেও এ ধরনের ঘটনা কমবেশি ঘটে থাকে। এটা কীভাবে ঘটে? যেমন আমি একজনের বিষয়ে কিছু তথ্য জানি। এখন আমি যদি তাকে গিয়ে বলি, তার বিষয়ে আমার কাছে তথ্য আছে তা আমি প্রকাশ করবো। সাংবাদিক শুনে অনেকেই শঙ্কিত হন। অনেকেই আছেন এমন একটা অবস্থানে থাকেন তারা চান না তাদের বিষয়ে কিছু প্রকাশ হোক। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে অসৎ সাংবাদিকরা সুযোগ নিয়ে থাকে।
সরকার বলছে, মিডিয়ায় সেন্সরশিপ নেই, কিন্তু একটি সেল্ফ সেন্সরশিপ আলোচনায় আছে?
দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়া ছাড়াও অনেক বড় দেশেও সেল্ফ সেন্সরশিপ রয়েছে। অনেক উন্নত গণতান্ত্রিক দেশেও এটা লক্ষ্য করা যায়। আর স্বৈরশাসন যেসব দেশে সেখানে তো বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এটা পারসন টু পারসন ভেরি করে। কথা হচ্ছে, আমি সাংবাদিক হিসেবে সেই সুবিধা নিতে চাই কিনা। আমি সত্য প্রকাশ করলাম তার প্রতিক্রিয়া কি হলো, কে কি ভাবলো, কতটা ভীত সেটা ভেবে আমি কতটা সন্ত্রস্ত বা আমি চাই না এ ধরনের কোনো পরিস্থিতিতে পড়ি।
খবর প্রচারের ক্ষেত্রে হয়তো এ বিষয়গুলো কাজ করে। ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই ভাবেন যে, আচ্ছা এই খবরটি আমি প্রকাশ করবো এর প্রতিক্রিয়া কি হবে? আমি একটু যাচাই করে, চিন্তাভাবনা করে দেখি। এই খবরটি প্রকাশ করে আমারই বা কি লাভ হচ্ছে আর তার প্রতিক্রিয়ায় আমি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। এই যে আমি ভাবি, এটা করে আমার কি লাভ হবে, এটা ভেবে অনেকেই চুপ করে যান। আবার অনেকেই মনে করেন যে, না এটা আমাদের বলা উচিত। এরকম কিছু মানুষ মিডিয়ায় আছেন যেটা আমরা আশা করি। কথায় আছে, অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে। অর্থাৎ উভয়েই সমান অপরাধী। হয়তো এসবের মধ্য থেকেই সত্যিকার সাহসী সাংবাদিক বেরিয়ে আসবে এবং যার পদাঙ্ক অনুসরণ করবে অনেকেই।
বাংলাদেশে সৎ, সাহসী সাংবাদিকতা নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
ধারা একদিন না একদিন পাল্টে যাবেই। পাল্টাতে বাধ্য। আমি যদি সারাজীবন মনে করি, না একইভাবে চলবে তা হবে না। আপনি নিজেই দেখুন, এতকিছু আড়াল করার পরও এখন অনেক কিছু বেরিয়ে আসছে। এখন অবাধ সংবাদ সরবরাহের দিন। আপনি মোবাইলে একটি চিত্র ধারণ করলেন বা সিসিটিভির একটি ফুটেজ সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে দিলেন তা তো আমি অস্বীকার করতে পারি না। আপনার মুঠোফোন এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। যেটাকে আমরা সিটিজেন জার্নালিজম বলছি। আপনি যদি অন্যায় কিছু চিন্তা করেন যে, আমি একটি ছবি তুলে আটকে দেবো, সেই মনোবৃত্তি ছাড়া আমি সঠিক তথ্যটি তুলে ধরবো এমন চিন্তা করলে, সততা নিয়ে কাজ করলে, আপনি সমাজের অনেক চিত্রই তুলে ধরতে পারবেন।
কি চেয়েছিলেন আর কি হলেন?
ব্যারিস্টার হতে চেয়েছিলাম। সাংবাদিক হওয়ার চিন্তা ছিল না। বাবা-মা চেয়েছিলেন ডাক্তার হই। আমার খবর পড়তে ভালো লাগতো। সেই ভালোলাগা থেকেই এতদূর। অমি নিজেকে এখনো পুরোপুরি সাংবাদিক হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি বলে মনে করি না। এ পেশায় এসেও অনেক কিছু করতে চেয়েছি কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। চার ছেলেমেয়েকে দেখাশুনা করার জন্য অনেক সময় দিতে হয়েছে। তবে যেটাই করতে চেয়েছি, সেটা একেবারে সর্বোচ্চ মানে গিয়ে করবো তা ভেবেছি সবসময়। যাই করি খুব ভালোভাবে করবো এবং নিষ্ঠার সঙ্গে করবো এবং সেটাই লক্ষ্য ছিল। বিখ্যাত হবো বা নাম করবো এমন কোনো লক্ষ্য ছিল না। চার দশকের সাংবাদিকতায় মনে হয়েছে, টেলিভিশনে যখন খবর পড়েছি সে সময়ই আমার কাছে স্বর্ণযুগ। কেউ দূর দেখে দেখলে এখনো বলে, আপনি বাংলাদেশের খবর পাঠিকা। এই যে খবর পড়ে এতটা জনপ্রিয় হওয়া যায়- এটা ভাবতেই ভালো লাগে।
নিজেকে নারী সাংবাদিক বলতে নারাজ?
এটা আমার একদম ভালো লাগে না। নারী সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে স্বস্তিবোধ করি না। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আমি একজন মানুষ। আমি যদি ডাক্তার হতাম আর খুব ভালো কাজ করতাম তাহলে আমাকে কেউ মহিলা ডাক্তার হিসেবে দেখলে আমি এটাও পছন্দ করতাম না। তেমনি আমার খুবই অপছন্দ নারী সাংবাদিক বলাটা। আমি যে পেশায় আছি সে হিসেবে পরিচিত হতে চাই। সেই কাজের স্বীকৃতি চাই। আমি কতটা ভালো কাজ করতে পারছি তার স্বীকৃতি চাই নারী বা পুরুষ হিসেবে নয়। তবে হ্যাঁ কথা থাকে হয়তো নারীদের জন্য সাংবাদিকতা অনেক ক্ষেত্রে কঠিন। সেটা তো অন্য পেশার সময়ও আছে। একটি পরিবারে বাবা যদি একদিন রান্না করেন তাহলে তাকে বাহবা দেয়া হয়, কিন্তু মা তো প্রতিদিন রান্না করেন তার কাজের স্বীকৃতিটা কে দেয়? ঠিক তেমনি নারীদের যেকোনো কাজে সফলতা আনতে হলে দ্বিগুণ না দশগুণ কাজ করতে হয়। এখন নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে এসেছে। তারা সর্বস্তরে কাজ করছে। রাস্তার ইট ভাঙা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত নারীরা। পোশাক শিল্পে কাজ করে নারীরাই আশি শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন দেশের জন্য। যেমন খেলাধুলার মাঠেই বলুন, আগে মেয়েদের খুব একটা দেখা যেত না। এখন অনেক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আসছে মেয়েদের থেকে। একইভাবে মেয়েরা আগের চেয়ে অনেক বেশি হারে সাংবাদিকতায়ও এসেছে। আমি যখন শুরু করি ১৯৮১ সালে, তখন ভয়েজ অব আমেরিকাতে একজন মাত্র নারী কাজ করতেন। আজ দিন বদলেছে সেখানেও।
সাংবাদিকতায় স্পোর্টস বাছাই করলেন কেন?
আমার বাইরে বেড়াতে খুব ভালো লাগতো। আর খেলার মাঠে যাওয়া মানেই বাইরে যাবার সুযোগ। অন্যদিকে খেলার মাঠে প্রাণের জোয়ার, তারুণ্যের জোয়ার দেখা যায় তা অন্য কোনো কিছুতে সম্ভব নয়। তারুণ্যের জোয়ার দেখতে মাঠে যেতে আমার খুব ভালো লাগে। খেলার মাঠে অবাধে চলাফেরা করতে পারতাম, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারতাম- এটাও একটা কারণ। সেখানে কোনো রাজনৈতিক চাপ ছিল না। ফলে খুব সহজেই স্পোর্টস নিয়ে কাজে মেতেছি। খেলার মাঠে বড় বড় তারকাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। কিংবদন্তির ফুটবল তারকা পেলের সাক্ষাৎকার নিয়েছি, সেফ ব্লাটারের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। বিশ্বকাপ ফুটবলের ট্রফি ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।
মাদার তেরেসাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন?
এটি একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। আমেরিকাতেই মাদার তেরেসাঁ এসেছিলেন তার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেখতে। সেখানেই ওনার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। আমি যখন মাইক্রোফোন নিয়ে ওনার সাক্ষাৎকার চাইলাম প্রথমদিকে তিনি মাইক্রোফোন সরিয়ে দিয়েছিলেন। তখন আমি বললাম, আমি আপনারই দেশ থেকে এসেছি। আমি বাঙালি। আমার পোশাক দেখেই বুঝতে পারছেন, আমি আপনাদেরই লোক। তারপর তিনি কথা বলতে শুরু করলেন। এটা আমার জীবনে অসাধারণ পাওয়া।
তরুণ প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য আপনার কি পরামর্শ?
একটাই কথা বলবো, প্রেস ফ্রিডমে বিশ্বাস করেন। সততার সঙ্গে নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করেন। আমি অন্তত এটি বলতে পারি, যতদিন সাংবাদিকতা করছি নির্ভয়ে এবং সততার সঙ্গে করছি। ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ভয়েস অব আমেরিকা শুরু হয়েছিল দুটি লাইনের ওপর ভিত্তি করে- খবর ভালো হোক মন্দ হোক, আমরা প্রকৃত তথ্য তুলে ধরবো। এতদিন পরও এর ভিত্তিতেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি প্রেস ফ্রিডম নিয়ে।
কখনও সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সমস্যা হয়েছে?
কনফ্লিক্ট রিস্যলুশান বলে একটি বিষয় আছে। আমি এই প্রশিক্ষণও নিয়েছিলাম। যেখানে বলা হয়েছে দু’পক্ষেরই কথা শুনতে হবে। অন্যের মতকে গুরুত্ব দিতে হবে। সবসময় নিজের মত ঠিক নাও হতে পারে। এটা তো আমার কাজের জায়গা। সুতরাং অনেক কিছু মেনে নিতে হয়।
বলছিলেন রোকেয়া হায়দার। যিনি বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর। সাংবাদিকতায় দৌড়ঝাঁপে পোশাক বিন্যাস বড় বিষয়। কিন্তু তিনি একাট্টা। শাড়িতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
বাঙালিয়ানাকে সঙ্গী করে দুনিয়া ঘুরেন। পশ্চিমা দুনিয়ায় বড় বড় সেমিনার আর খেলার মাঠে খবর খুঁজে ফেরেন এ পোশাকেই। কাজের ক্ষেত্রে এ পোশাক নেতিবাচক না হয়ে বরং ইতিবাচক- এমনটাই মনে করেন তিনি। বলেন, এর জন্য বাড়তি সুবিধাও পেয়েছি। দুনিয়ার তাবৎ মিডিয়াকে ফিরিয়ে দিলেও মাদার তেরেসাঁ তাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন শাড়ি পরা দেখেই।
রোকেয়া হায়দারের সাংবাদিকতা শুরু বিটিভি দিয়ে। খবর পড়তে ভালোবাসতেন। ১৯৮১ সালে পাড়ি জমান ওয়াশিংটনে। ভয়েস অব আমেরিকাতে। একমাত্র নারী প্রতিনিধি হিসেবে বাংলা বিভাগে যোগ দেন। কালে তিনিই ২০১১ সালে বাংলা বিভাগের প্রধান হন। পরে একই বিভাগের ব্যবস্থাপনা সম্পাদকের দায়িত্বও লাভ করেন। কোনো আন্তর্জাতিক মাল্টিমিডিয়া প্রতিষ্ঠানে বাংলা বিভাগের প্রধান হওয়ার কৃতিত্ব তারই। নিজ কর্মদক্ষতার স্বীকৃতিও পেয়েছেন। ১৯৯০ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। স্পষ্ট উচ্চারণ, বলিষ্ঠ কণ্ঠ আর দৃঢ়চেতা মনোভাব এই মানুষটিকে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। যিনি বিশ্বাস করেন সততা, সাহস আর ইচ্ছা থাকলে নির্ভয়ে যেকোনো খবর প্রকাশ সম্ভব। জোর দিয়ে বলেন, কাউকে তুষ্ট করার জন্য সাংবাদিকতা করবো এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মুক্ত গণমাধ্যম, মিডিয়ায় সেল্ফ সেন্সরশিপ, কনফ্লিক্ট রিস্যলুশান নিয়ে মানবজমিনের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেন তিনি।
দীর্ঘ পথপরিক্রমায় কোনো প্রতিকূলতার মধ্যে পড়েছেন কিনা?
কোথাও কোনো প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে পড়িনি। বিরাট কোনো দুর্ঘটনাও ঘটেনি। তবে পেশাগত অভিজ্ঞতায় কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখি হয়েছি। তা হচ্ছে প্রেস ফ্রিডম বা যেটাকে আমরা বলি মুক্ত গণমাধ্যম তা নিয়ে। একজন সাংবাদিকের পুরোপুরি প্রেস ফ্রিডম এখনো নেই। আমার কাজের শুরুতেও তা ছিল না। বর্তমানেও তা সীমিত। আর তা কেবল বাংলাদেশেই নয় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেই এ অবস্থা বিদ্যমান। এখানকার মিডিয়ায় এখনো কথা বলার অধিকার সীমিত।
আমি দেখেছি, এখানে সকলেই চিন্তাভাবনা করে কথা বলে। বর্তমানে মিডিয়া বেড়েছে, পত্র-পত্রিকা, রেডিও বেড়েছে বলে হয়তো অনেককেই সোচ্চার হতে দেখা যায়। কিন্তু আমি জানি না, কতজন নির্ভয়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারছেন। কারা নির্ভয়ে কথা বলতে পারছেন? বুয়েটে সাম্প্রতিক সময়ে আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড থেকে কিছুটা হলেও কি প্রমাণিত হয় না যে, নির্ভয়ে কথা বলার অধিকার এদেশে এখনো সীমিত। বুয়েটের মতো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যেখানে মেধাবী ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা করতে যায় সেখানে আমরা কি দেখতে পাচ্ছি, সেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত বলেই এ ধরনের নৃশংস, বর্বরোচিত ঘটনা ঘটছে। এটা খুবই দুঃখজনক।
ভয়েস অব আমেরিকাতে দীর্ঘদিন কাজ করছেন, দু’ একটি অভিজ্ঞতার কথা বলবেন?
আমাদের টার্গেট এরিয়া বাংলাদেশ এবং দুনিয়ায় যেখানে বাংলাদেশিরা আছেন। আর সে লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করি। একটু লক্ষ্য করে দেখবেন, ভয়েস অব আমেরিকাতে আমরা নির্দ্বিধায় লিখছি, পড়ছি। দেশের সর্বোচ্চ পদে যিনি আছেন তার বিরুদ্ধেও বা তার পক্ষে যা কিছু বলার প্রয়োজন হলে তা অত্যন্ত সোচ্চারভাবেই আমরা বলছি। সেখানে সরকারি কোনো চাপ নেই, আমরা নির্দ্বিধায় যা বলার তা বলতে পারছি। এমনকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে নিয়েও যুক্তরাষ্ট্রে যে ধরনের সমালোচনা তা প্রচার করছি। বহু গণতান্ত্রিক দেশেই তা সম্ভব নয়।
বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে কীভাবে দেখেন যুক্তরাষ্ট্রে বসে?
বাংলাদেশের গণমাধ্যম কর্মীদের বলবো, তোষামোদের রাজনীতি না করে কিছুটা স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের ঝুঁকি নিতে। আমি কাউকে তুষ্ট করার জন্য সাংবাদিকতা করবো এই মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। যদি কোনো সুবিধা লাভের আশায় সাংবাদিকতা করি তাহলে বিষয়টি অন্যরকম হবে। বহু দেশেই আমরা দেখি অনেকে থাকেন যারা সাংবাদিকতার তকমা লাগিয়ে বাড়তি সুবিধা আদায়ের চেষ্টায় লিপ্ত থাকেন, যার মাধ্যমে বিশেষ সুযোগ পাওয়া যায়। বাংলাদেশেও এ ধরনের ঘটনা কমবেশি ঘটে থাকে। এটা কীভাবে ঘটে? যেমন আমি একজনের বিষয়ে কিছু তথ্য জানি। এখন আমি যদি তাকে গিয়ে বলি, তার বিষয়ে আমার কাছে তথ্য আছে তা আমি প্রকাশ করবো। সাংবাদিক শুনে অনেকেই শঙ্কিত হন। অনেকেই আছেন এমন একটা অবস্থানে থাকেন তারা চান না তাদের বিষয়ে কিছু প্রকাশ হোক। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে অসৎ সাংবাদিকরা সুযোগ নিয়ে থাকে।
সরকার বলছে, মিডিয়ায় সেন্সরশিপ নেই, কিন্তু একটি সেল্ফ সেন্সরশিপ আলোচনায় আছে?
দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়া ছাড়াও অনেক বড় দেশেও সেল্ফ সেন্সরশিপ রয়েছে। অনেক উন্নত গণতান্ত্রিক দেশেও এটা লক্ষ্য করা যায়। আর স্বৈরশাসন যেসব দেশে সেখানে তো বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এটা পারসন টু পারসন ভেরি করে। কথা হচ্ছে, আমি সাংবাদিক হিসেবে সেই সুবিধা নিতে চাই কিনা। আমি সত্য প্রকাশ করলাম তার প্রতিক্রিয়া কি হলো, কে কি ভাবলো, কতটা ভীত সেটা ভেবে আমি কতটা সন্ত্রস্ত বা আমি চাই না এ ধরনের কোনো পরিস্থিতিতে পড়ি।
খবর প্রচারের ক্ষেত্রে হয়তো এ বিষয়গুলো কাজ করে। ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই ভাবেন যে, আচ্ছা এই খবরটি আমি প্রকাশ করবো এর প্রতিক্রিয়া কি হবে? আমি একটু যাচাই করে, চিন্তাভাবনা করে দেখি। এই খবরটি প্রকাশ করে আমারই বা কি লাভ হচ্ছে আর তার প্রতিক্রিয়ায় আমি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। এই যে আমি ভাবি, এটা করে আমার কি লাভ হবে, এটা ভেবে অনেকেই চুপ করে যান। আবার অনেকেই মনে করেন যে, না এটা আমাদের বলা উচিত। এরকম কিছু মানুষ মিডিয়ায় আছেন যেটা আমরা আশা করি। কথায় আছে, অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে। অর্থাৎ উভয়েই সমান অপরাধী। হয়তো এসবের মধ্য থেকেই সত্যিকার সাহসী সাংবাদিক বেরিয়ে আসবে এবং যার পদাঙ্ক অনুসরণ করবে অনেকেই।
বাংলাদেশে সৎ, সাহসী সাংবাদিকতা নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?
ধারা একদিন না একদিন পাল্টে যাবেই। পাল্টাতে বাধ্য। আমি যদি সারাজীবন মনে করি, না একইভাবে চলবে তা হবে না। আপনি নিজেই দেখুন, এতকিছু আড়াল করার পরও এখন অনেক কিছু বেরিয়ে আসছে। এখন অবাধ সংবাদ সরবরাহের দিন। আপনি মোবাইলে একটি চিত্র ধারণ করলেন বা সিসিটিভির একটি ফুটেজ সোস্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে দিলেন তা তো আমি অস্বীকার করতে পারি না। আপনার মুঠোফোন এখন অনেক বেশি শক্তিশালী। যেটাকে আমরা সিটিজেন জার্নালিজম বলছি। আপনি যদি অন্যায় কিছু চিন্তা করেন যে, আমি একটি ছবি তুলে আটকে দেবো, সেই মনোবৃত্তি ছাড়া আমি সঠিক তথ্যটি তুলে ধরবো এমন চিন্তা করলে, সততা নিয়ে কাজ করলে, আপনি সমাজের অনেক চিত্রই তুলে ধরতে পারবেন।
কি চেয়েছিলেন আর কি হলেন?
ব্যারিস্টার হতে চেয়েছিলাম। সাংবাদিক হওয়ার চিন্তা ছিল না। বাবা-মা চেয়েছিলেন ডাক্তার হই। আমার খবর পড়তে ভালো লাগতো। সেই ভালোলাগা থেকেই এতদূর। অমি নিজেকে এখনো পুরোপুরি সাংবাদিক হিসেবে গড়ে তুলতে পেরেছি বলে মনে করি না। এ পেশায় এসেও অনেক কিছু করতে চেয়েছি কিন্তু তা হয়ে ওঠেনি। চার ছেলেমেয়েকে দেখাশুনা করার জন্য অনেক সময় দিতে হয়েছে। তবে যেটাই করতে চেয়েছি, সেটা একেবারে সর্বোচ্চ মানে গিয়ে করবো তা ভেবেছি সবসময়। যাই করি খুব ভালোভাবে করবো এবং নিষ্ঠার সঙ্গে করবো এবং সেটাই লক্ষ্য ছিল। বিখ্যাত হবো বা নাম করবো এমন কোনো লক্ষ্য ছিল না। চার দশকের সাংবাদিকতায় মনে হয়েছে, টেলিভিশনে যখন খবর পড়েছি সে সময়ই আমার কাছে স্বর্ণযুগ। কেউ দূর দেখে দেখলে এখনো বলে, আপনি বাংলাদেশের খবর পাঠিকা। এই যে খবর পড়ে এতটা জনপ্রিয় হওয়া যায়- এটা ভাবতেই ভালো লাগে।
নিজেকে নারী সাংবাদিক বলতে নারাজ?
এটা আমার একদম ভালো লাগে না। নারী সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে স্বস্তিবোধ করি না। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আমি একজন মানুষ। আমি যদি ডাক্তার হতাম আর খুব ভালো কাজ করতাম তাহলে আমাকে কেউ মহিলা ডাক্তার হিসেবে দেখলে আমি এটাও পছন্দ করতাম না। তেমনি আমার খুবই অপছন্দ নারী সাংবাদিক বলাটা। আমি যে পেশায় আছি সে হিসেবে পরিচিত হতে চাই। সেই কাজের স্বীকৃতি চাই। আমি কতটা ভালো কাজ করতে পারছি তার স্বীকৃতি চাই নারী বা পুরুষ হিসেবে নয়। তবে হ্যাঁ কথা থাকে হয়তো নারীদের জন্য সাংবাদিকতা অনেক ক্ষেত্রে কঠিন। সেটা তো অন্য পেশার সময়ও আছে। একটি পরিবারে বাবা যদি একদিন রান্না করেন তাহলে তাকে বাহবা দেয়া হয়, কিন্তু মা তো প্রতিদিন রান্না করেন তার কাজের স্বীকৃতিটা কে দেয়? ঠিক তেমনি নারীদের যেকোনো কাজে সফলতা আনতে হলে দ্বিগুণ না দশগুণ কাজ করতে হয়। এখন নারীরা অনেক ক্ষেত্রেই এগিয়ে এসেছে। তারা সর্বস্তরে কাজ করছে। রাস্তার ইট ভাঙা থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পরিচালনা পর্যন্ত নারীরা। পোশাক শিল্পে কাজ করে নারীরাই আশি শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন দেশের জন্য। যেমন খেলাধুলার মাঠেই বলুন, আগে মেয়েদের খুব একটা দেখা যেত না। এখন অনেক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আসছে মেয়েদের থেকে। একইভাবে মেয়েরা আগের চেয়ে অনেক বেশি হারে সাংবাদিকতায়ও এসেছে। আমি যখন শুরু করি ১৯৮১ সালে, তখন ভয়েজ অব আমেরিকাতে একজন মাত্র নারী কাজ করতেন। আজ দিন বদলেছে সেখানেও।
সাংবাদিকতায় স্পোর্টস বাছাই করলেন কেন?
আমার বাইরে বেড়াতে খুব ভালো লাগতো। আর খেলার মাঠে যাওয়া মানেই বাইরে যাবার সুযোগ। অন্যদিকে খেলার মাঠে প্রাণের জোয়ার, তারুণ্যের জোয়ার দেখা যায় তা অন্য কোনো কিছুতে সম্ভব নয়। তারুণ্যের জোয়ার দেখতে মাঠে যেতে আমার খুব ভালো লাগে। খেলার মাঠে অবাধে চলাফেরা করতে পারতাম, স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারতাম- এটাও একটা কারণ। সেখানে কোনো রাজনৈতিক চাপ ছিল না। ফলে খুব সহজেই স্পোর্টস নিয়ে কাজে মেতেছি। খেলার মাঠে বড় বড় তারকাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। কিংবদন্তির ফুটবল তারকা পেলের সাক্ষাৎকার নিয়েছি, সেফ ব্লাটারের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। বিশ্বকাপ ফুটবলের ট্রফি ছুঁয়ে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে।
মাদার তেরেসাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন?
এটি একটি স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। আমেরিকাতেই মাদার তেরেসাঁ এসেছিলেন তার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেখতে। সেখানেই ওনার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। আমি যখন মাইক্রোফোন নিয়ে ওনার সাক্ষাৎকার চাইলাম প্রথমদিকে তিনি মাইক্রোফোন সরিয়ে দিয়েছিলেন। তখন আমি বললাম, আমি আপনারই দেশ থেকে এসেছি। আমি বাঙালি। আমার পোশাক দেখেই বুঝতে পারছেন, আমি আপনাদেরই লোক। তারপর তিনি কথা বলতে শুরু করলেন। এটা আমার জীবনে অসাধারণ পাওয়া।
তরুণ প্রজন্মের সাংবাদিকদের জন্য আপনার কি পরামর্শ?
একটাই কথা বলবো, প্রেস ফ্রিডমে বিশ্বাস করেন। সততার সঙ্গে নির্ভয়ে দায়িত্ব পালন করেন। আমি অন্তত এটি বলতে পারি, যতদিন সাংবাদিকতা করছি নির্ভয়ে এবং সততার সঙ্গে করছি। ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ভয়েস অব আমেরিকা শুরু হয়েছিল দুটি লাইনের ওপর ভিত্তি করে- খবর ভালো হোক মন্দ হোক, আমরা প্রকৃত তথ্য তুলে ধরবো। এতদিন পরও এর ভিত্তিতেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি প্রেস ফ্রিডম নিয়ে।
কখনও সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সমস্যা হয়েছে?
কনফ্লিক্ট রিস্যলুশান বলে একটি বিষয় আছে। আমি এই প্রশিক্ষণও নিয়েছিলাম। যেখানে বলা হয়েছে দু’পক্ষেরই কথা শুনতে হবে। অন্যের মতকে গুরুত্ব দিতে হবে। সবসময় নিজের মত ঠিক নাও হতে পারে। এটা তো আমার কাজের জায়গা। সুতরাং অনেক কিছু মেনে নিতে হয়।
No comments