কেমন ছিল ডাইনোসরদের শেষ দিন?
প্রায়
৬ কোটি ৬০ লাখ বছর আগের কোনো এক দিন। রোদ–ঝলমল। মৃদু হাওয়ায় কেঁপে কেঁপে
উঠছে গাছের কচি পাতা। পৃথিবীতে বেড়াচ্ছে বিশালদেহী ব্রকিয়োসোরাস (লম্বা
গলার তৃণভোজী ডাইনোসর)। তীক্ষ্ম চোখে শিকারের খোঁজে বেরিয়েছে টাইরানোসোরাস
রেক্স। নিত্যব্যস্ততা শুরু হয়েছে পৃথিবীজুড়ে। চলছে জীবনের স্পন্দন।
ঠিক এ সময় হাজার কিলোমিটার দূরে মহাকাশে ঘটে আরেকটি ঘটনা, যা বদলে দেয় পৃথিবীকে চিরদিনের মতো। যার পর পৃথিবী আর কখনো আগের অবস্থায় ফিরতে পারেনি। মহাশূন্যে একটি গ্রহাণু কক্ষচ্যুত হয়। প্রচণ্ড গতিতে ধেয়ে আসে পৃথিবীতে। ১২ কিলোমিটার প্রশস্ত গ্রহাণুটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে ওঠে। বাড়তে থাকে গতি, কমতে থাকে ভূমি থেকে দূরত্ব। একসময় তা আছড়ে পড়ে ভূমিতে, এখনকার মেক্সিকো উপসাগরের চিক্সচুলুব এলাকায়।
গ্রহাণুটি ভূমিতে মিনিটে ১ হাজার ৮০ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানে। যেখানে এটি পড়ে, সেখানে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটারজুড়ে ৩০ কিলোমিটার গভীর খাদের সৃষ্টি হয়। গ্রহাণুটির আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত গতিতে বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৩২৫ গিগা টন সালফার ও প্রায় ৪২৫ গিগা টন কার্বন ডাই-অক্সাইড ছড়িয়ে পড়ে। এতে পৃথিবীর তাপমাত্র হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়। জমে যায় চারদিক। এ অবস্থা বিরাজ করে কয়েক বছর ধরে। সমুদ্রে এ প্রভাব থাকে কয়েক শতাব্দী। এতে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায় চার ভাগের তিন ভাগ প্রাণী ও গাছপালা। হারিয়ে যায় ডাইনোসর। অনুসন্ধানে উঠে আসা এমন ফলাফল গত বছর প্রকাশ করে একদল ব্রিটিশ বিজ্ঞানী। তবে সম্প্রতি এর সঙ্গে যোগ হয়েছে এক মহা সুনামির আলামত।
কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবী কাঁপিয়ে বেড়ানো ডাইনোসরেরা কীভাবে হারিয়ে গেল, বিজ্ঞানীদের কাছে তা এখনো এক রহস্য। এ নিয়ে দুটি বহুল প্রচলিত ধারণা রয়েছে। এর একটি হলো, ব্যাপক হারে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং অন্যটি ‘চিক্সচুলুব ইমপ্যাক্ট’ তত্ত্ব। তত্ত্বটি দাঁড়িয়ে আছে ওই গ্রহাণুর পৃথিবীতে আঘাতের ঘটনার ওপর। তত্ত্বটির উন্নয়ন ঘটিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার ভূতত্ত্ববিদ ওয়াল্টার আলভারেজ ও তাঁর বাবা লুই আলভারেজ। আলভারেজ সম্প্রতি আমেরিকার উত্তর ডাকোটায় খনন করে তাক লাগানো কিছু খুঁজে পান, যা তাঁদের তত্ত্বকে আরও সুদৃঢ় করেছে। তাঁরা এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র রচনা করেছেন, যা সোমবার প্রকাশিত হয়।
আলাভারেজের দল খননের জায়গায় মাটির এমন একটি স্তর খুঁজে পেয়েছে, যেখানে মাছ, গাছপালা ও আরও অনেক সামুদ্রিক প্রাণীর জীবাশ্ম একসঙ্গে জট পাকানো অবস্থায় রয়েছে। তাঁরা মাছের ফুলকায় মটরদানার মতো কিছু পদার্থ পেয়েছেন। পরীক্ষা করে এসব পদার্থের বয়স নির্ধারণ করেছেন আনুমানিক ৬৫ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন বছর, যা ওই গ্রহাণুর পতনের সময়কাল।
তাঁদের ধারণা, উত্তর ডাকোটা থেকে ৩ হাজার কিলোমিটার দূরে মেক্সিকো উপসাগরের উপত্যকায় গ্রহাণুটি যখন আঘাত হানে, তখন চারদিকে প্রায় হাজার হাজার কিলোমিটারজুড়ে গলিত পাথর ছড়িয়ে পড়ে। সেসব পাথরের অংশ মাছের ফুলকায় থাকা মটরদানার মতো পদার্থ। মাছগুলো এমন পানিতে শ্বাস নিয়েছিল, যেখানে ওই পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে।
এক জায়গায় এত সামুদ্রিক প্রাণী ও গাছপালা এমনভাবে জট পাকিয়ে আছে, যা এক মহা সুনামির কথা বলছে, গ্রহাণুটি আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যা ঘটেছিল। তবে এ সুনামি ডাকোটায় কোথা থেকে এসেছিল তা অবশ্য নির্ধারণ করা যায়নি।
তবে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, স্থানীয় কোনো জলের উৎস থেকে সুনামির ঢেউ এসেছিল। গ্রহাণু যখন আঘাত হানে, তখন রিখটার স্কেলে ১০ থেকে ১২ মাত্রার ভূকম্পন হয়, যা গোটা পৃথিবীকে ঝাঁকি দিয়েছিল। এর ফলেই শুরু হয়েছিল এক মহা সুনামি। যাত্রাপথে সুনামিটি সবকিছুই গুঁড়িয়ে দিয়েছিল।
ক্যানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের রবার্ট ডিপালমা বলেন, মিষ্টি পানির মাছ, স্থলের মেরুদণ্ডী প্রাণী, গাছের শাখা–প্রশাখা, সামুদ্রিক শামুক ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী সবকিছু দলা পাকানো অবস্থায় এ স্তরে পাওয়া গেছে।
আবিষ্কারটি প্রফেসর আলভারেজ ও তাঁর টিমের জন্য উত্তেজনাকর। আলভারেজ বলেন, যখন তাঁরা ‘ইম্প্যাক্ট তত্ত্ব’ দাঁড় করান, তখন তাঁদের হাতে প্রমাণ হিসেবে ছিল শুধু ইরিডিয়ামের (গ্রহাণু বা ধূমকেতুতে পাওয়া একধরনের পদার্থ) অস্বাভাবিক উপস্থিতি। তারপর থেকে ধীরে ধীরে তত্ত্বটি বস্তব রূপ লাভ করছে। এ সময় একটি মহা সুনামি হতে পারে—এমন ধারণা তিনি কখনোই করেননি।
তাঁদের এই আবিষ্কার কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বোঝাতে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল ম্যানিং বলেন, প্রকৃত অর্থেই যদি কেউ বুঝতে চায় ডাইনোসরদের শেষ দিনটা কেমন ছিল, তাহলে বলব এটাই সেই দৃশ্য।
ঠিক এ সময় হাজার কিলোমিটার দূরে মহাকাশে ঘটে আরেকটি ঘটনা, যা বদলে দেয় পৃথিবীকে চিরদিনের মতো। যার পর পৃথিবী আর কখনো আগের অবস্থায় ফিরতে পারেনি। মহাশূন্যে একটি গ্রহাণু কক্ষচ্যুত হয়। প্রচণ্ড গতিতে ধেয়ে আসে পৃথিবীতে। ১২ কিলোমিটার প্রশস্ত গ্রহাণুটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে জ্বলে ওঠে। বাড়তে থাকে গতি, কমতে থাকে ভূমি থেকে দূরত্ব। একসময় তা আছড়ে পড়ে ভূমিতে, এখনকার মেক্সিকো উপসাগরের চিক্সচুলুব এলাকায়।
গ্রহাণুটি ভূমিতে মিনিটে ১ হাজার ৮০ কিলোমিটার গতিতে আঘাত হানে। যেখানে এটি পড়ে, সেখানে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটারজুড়ে ৩০ কিলোমিটার গভীর খাদের সৃষ্টি হয়। গ্রহাণুটির আঘাতের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত গতিতে বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৩২৫ গিগা টন সালফার ও প্রায় ৪২৫ গিগা টন কার্বন ডাই-অক্সাইড ছড়িয়ে পড়ে। এতে পৃথিবীর তাপমাত্র হিমাঙ্কের নিচে নেমে যায়। জমে যায় চারদিক। এ অবস্থা বিরাজ করে কয়েক বছর ধরে। সমুদ্রে এ প্রভাব থাকে কয়েক শতাব্দী। এতে পৃথিবী থেকে হারিয়ে যায় চার ভাগের তিন ভাগ প্রাণী ও গাছপালা। হারিয়ে যায় ডাইনোসর। অনুসন্ধানে উঠে আসা এমন ফলাফল গত বছর প্রকাশ করে একদল ব্রিটিশ বিজ্ঞানী। তবে সম্প্রতি এর সঙ্গে যোগ হয়েছে এক মহা সুনামির আলামত।
কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবী কাঁপিয়ে বেড়ানো ডাইনোসরেরা কীভাবে হারিয়ে গেল, বিজ্ঞানীদের কাছে তা এখনো এক রহস্য। এ নিয়ে দুটি বহুল প্রচলিত ধারণা রয়েছে। এর একটি হলো, ব্যাপক হারে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত এবং অন্যটি ‘চিক্সচুলুব ইমপ্যাক্ট’ তত্ত্ব। তত্ত্বটি দাঁড়িয়ে আছে ওই গ্রহাণুর পৃথিবীতে আঘাতের ঘটনার ওপর। তত্ত্বটির উন্নয়ন ঘটিয়েছেন ক্যালিফোর্নিয়ার ভূতত্ত্ববিদ ওয়াল্টার আলভারেজ ও তাঁর বাবা লুই আলভারেজ। আলভারেজ সম্প্রতি আমেরিকার উত্তর ডাকোটায় খনন করে তাক লাগানো কিছু খুঁজে পান, যা তাঁদের তত্ত্বকে আরও সুদৃঢ় করেছে। তাঁরা এ বিষয়ে একটি গবেষণাপত্র রচনা করেছেন, যা সোমবার প্রকাশিত হয়।
আলাভারেজের দল খননের জায়গায় মাটির এমন একটি স্তর খুঁজে পেয়েছে, যেখানে মাছ, গাছপালা ও আরও অনেক সামুদ্রিক প্রাণীর জীবাশ্ম একসঙ্গে জট পাকানো অবস্থায় রয়েছে। তাঁরা মাছের ফুলকায় মটরদানার মতো কিছু পদার্থ পেয়েছেন। পরীক্ষা করে এসব পদার্থের বয়স নির্ধারণ করেছেন আনুমানিক ৬৫ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন বছর, যা ওই গ্রহাণুর পতনের সময়কাল।
তাঁদের ধারণা, উত্তর ডাকোটা থেকে ৩ হাজার কিলোমিটার দূরে মেক্সিকো উপসাগরের উপত্যকায় গ্রহাণুটি যখন আঘাত হানে, তখন চারদিকে প্রায় হাজার হাজার কিলোমিটারজুড়ে গলিত পাথর ছড়িয়ে পড়ে। সেসব পাথরের অংশ মাছের ফুলকায় থাকা মটরদানার মতো পদার্থ। মাছগুলো এমন পানিতে শ্বাস নিয়েছিল, যেখানে ওই পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে।
এক জায়গায় এত সামুদ্রিক প্রাণী ও গাছপালা এমনভাবে জট পাকিয়ে আছে, যা এক মহা সুনামির কথা বলছে, গ্রহাণুটি আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যা ঘটেছিল। তবে এ সুনামি ডাকোটায় কোথা থেকে এসেছিল তা অবশ্য নির্ধারণ করা যায়নি।
তবে বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন, স্থানীয় কোনো জলের উৎস থেকে সুনামির ঢেউ এসেছিল। গ্রহাণু যখন আঘাত হানে, তখন রিখটার স্কেলে ১০ থেকে ১২ মাত্রার ভূকম্পন হয়, যা গোটা পৃথিবীকে ঝাঁকি দিয়েছিল। এর ফলেই শুরু হয়েছিল এক মহা সুনামি। যাত্রাপথে সুনামিটি সবকিছুই গুঁড়িয়ে দিয়েছিল।
ক্যানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের রবার্ট ডিপালমা বলেন, মিষ্টি পানির মাছ, স্থলের মেরুদণ্ডী প্রাণী, গাছের শাখা–প্রশাখা, সামুদ্রিক শামুক ও অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী সবকিছু দলা পাকানো অবস্থায় এ স্তরে পাওয়া গেছে।
আবিষ্কারটি প্রফেসর আলভারেজ ও তাঁর টিমের জন্য উত্তেজনাকর। আলভারেজ বলেন, যখন তাঁরা ‘ইম্প্যাক্ট তত্ত্ব’ দাঁড় করান, তখন তাঁদের হাতে প্রমাণ হিসেবে ছিল শুধু ইরিডিয়ামের (গ্রহাণু বা ধূমকেতুতে পাওয়া একধরনের পদার্থ) অস্বাভাবিক উপস্থিতি। তারপর থেকে ধীরে ধীরে তত্ত্বটি বস্তব রূপ লাভ করছে। এ সময় একটি মহা সুনামি হতে পারে—এমন ধারণা তিনি কখনোই করেননি।
তাঁদের এই আবিষ্কার কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বোঝাতে ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল ম্যানিং বলেন, প্রকৃত অর্থেই যদি কেউ বুঝতে চায় ডাইনোসরদের শেষ দিনটা কেমন ছিল, তাহলে বলব এটাই সেই দৃশ্য।
No comments