অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আজ
অমর
২১শে ফেব্রুয়ারি আজ। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মায়ের ভাষার দাবিতে
বাঙালির আত্মত্যাগের মহিমায় ভাস্বর এদিন। বাঙালির আত্মগৌরবের স্মারক অমর
একুশের গৌরবময় এদিনে জাতি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে মহান ভাষা শহীদদের,
যাদের আত্মত্যাগে আমরা পেয়েছিলাম মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার। যাদের
ত্যাগে বাংলা বিশ্ব আসনে পেয়েছে গৌরবের অবস্থান। একুশের প্রথম প্রহর থেকে
বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করা হচ্ছে মহান ভাষা শহীদদের। মধ্যরাতের পর মানুষের
হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহীদ মিনার। একুশের প্রথম
প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পরে মন্ত্রীবর্গ ও দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, কূটনীতিক বর্গ এবং উচ্চপদস্থ সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ভিসি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। দিনটিকে ঘিরে দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি। মধ্যরাতের পর থেকে সারা দেশের শহীদ মিনারে শুরু হয় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। সকালে খালি পায়ে প্রভাতফেরির মাধ্যমে শহীদদের জানানো হবে শ্রদ্ধা।
প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদ মিনার সবার জন্য খুলে দেয়া হয়। এরপরই ঢল নামে সাধারণ মানুষের। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ফুল হাতে সারি বেঁধে এগিয়ে যান শহীদ বেদির দিকে। শ্রদ্ধা নিবেদনকে ঘিরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা গতকাল থেকেই ছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা। কয়েকটি সড়কে রাতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন। শহীদ মিনার চত্বরে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবীরা। এদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সঙ্গে সারা দেশের শহীদ মিনারগুলোতেও একুশের প্রথম প্রহর থেকে চলে শ্রদ্ধা নিবেদনের পালা।
দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আজ সরকারি ছুটির দিন। দিবসটি উপলক্ষে রেডিও, টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
এদিকে গতকাল এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিকের হাতে একুশে পদক তুলে দিয়েছেন।
মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় ১৯৫২-এ জীবন দিয়েছিল সালাম, বরকত, জব্বার, রফিক, শফিউল্লাহসহ নাম না জানা অনেকে। তাদের রক্তের বিনিময়েই আজকে মুখে মুখে বাংলা ভাষা। বাংলায় রচিত হচ্ছে হাজারো গান, কবিতা, নাটক, উপন্যাস আর অজস্র কথামালা। আজকের দিনটি শুধু সেই বীর ভাষাসৈনিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর, যারা ভাষার জন্য অকাতরে নিজের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিলেন। আজকের দিনটি কেবল বাংলাদেশে নয় বিশ্বের সব প্রান্তে পালিত হচ্ছে বীরের রক্তস্রোত আর মায়ের অশ্রুভেজা অমর একুশে। বাঙালির রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। এরপর থেকেই যথাযোগ্য মর্যাদায় সারা বিশ্বে একযোগে পালিত হয়ে আসছে দিনটি।
এই দিনে বাংলার সংগ্রামী ছেলেরা যে ত্যাগ ও গৌরবগাথা রচনা করেছিলেন, তারই পথ ধরে আমরা মুখোমুখি হই স্বাধীনতা সংগ্রামে। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। লাভ করি লাল সবুজের পতাকা। ১৯৫২ সালের এই দিনে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ঘোষিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনরত বাঙালি রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করে। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রতিবাদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে হরতালের প্রস্তুতি চলতে থাকে। সরকার ২০শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় একটানা এক মাসের জন্য ঢাকা জেলার সর্বত্র হরতাল, সভা, মিছিলের ওপর ১৪৪ ধারা জারি করে। এসব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ছাত্ররা দলে দলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমায়েত হয়। ঐতিহাসিক আমতলায় ছাত্রদের সভা থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরিকল্পনা করা হয়, চারজন চারজন করে মিছিল নিয়ে বের হওয়ার।
ছাত্ররা মিছিল শুরু করলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে ট্রাকে তুলতে থাকে। বিকাল ৩টায় গণপরিষদের অধিবেশনের আগেই শুরু হয়ে যায় ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ। বিকাল ৪টায় পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ছাত্রদের ওপর গুলি চালায়। বুলেট কেড়ে নেয় জব্বার ও রফিকের প্রাণ। গুলিবিদ্ধ আবুল বরকত রাত পৌনে আটটায় হাসপাতালে মারা যান। তাদের মৃত্যু সংবাদে বাংলা ভাষার প্রাণের দাবি সারা দেশে স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে। শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। এরপর থেকেই একুশে ফেব্রুয়ারি অমর ভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। শহীদদের স্মরণে সারা দেশে তৈরি হয় অসংখ্য শহীদ মিনার। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগের দু’দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকালে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সংগঠনের সকল শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন।
এ ছাড়া শুক্রবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সকল কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের জন্য দলের নেতাকর্মীসহ সংগঠনের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ছাড়াও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জাতীয় জাদুঘর, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, শিশু একাডেমি সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থান হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গমন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। বাদ জোহর অমর একুশে হলে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত, বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদুল জামিয়া, সকল হলের মসজিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত/শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা।
কঠোর নিরাপত্তা: শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনকে ঘিরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা দেয়ার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বুধবার সকাল থেকেই পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়। দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা মহড়া।
ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, শহীদ মিনার এলাকায় প্রবেশের আগে প্রত্যেক দর্শনার্থীকে একাধিক আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। একুশে ফেব্রুয়ারির নিরাপত্তায় ঢাকা শহরজুড়ে মোতায়েন থাকবে ১৬ হাজার পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শহীদ মিনারকেন্দ্রিক থাকবে ৬ হাজার পুলিশ সদস্য। প্রস্তুত থাকবে সোয়াত ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা।
মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সামর্থ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে নিরাপত্তা দেবে বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মঙ্গলবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান র?্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, র?্যাবের পেট্রোল, মোবাইল পেট্রোল, অবজারভেশন পোস্ট ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। শহীদ মিনার ও পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাজুড়ে র্যাবের নিরাপত্তা বলয় থাকবে। ২০শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকে একুশের দুপুর পর্যন্ত নিরাপত্তা বলবৎ থাকবে, প্রয়োজনে সেটা আরো বাড়ানো হবে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা পরে মন্ত্রীবর্গ ও দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে দলের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, কূটনীতিক বর্গ এবং উচ্চপদস্থ সামরিক, বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ভিসি অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। দিনটিকে ঘিরে দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে নানা কর্মসূচি। মধ্যরাতের পর থেকে সারা দেশের শহীদ মিনারে শুরু হয় ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ। সকালে খালি পায়ে প্রভাতফেরির মাধ্যমে শহীদদের জানানো হবে শ্রদ্ধা।
প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও গুরুত্বপূর্ণ নাগরিকদের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদ মিনার সবার জন্য খুলে দেয়া হয়। এরপরই ঢল নামে সাধারণ মানুষের। নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ফুল হাতে সারি বেঁধে এগিয়ে যান শহীদ বেদির দিকে। শ্রদ্ধা নিবেদনকে ঘিরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা গতকাল থেকেই ছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা বলয়ে ঘেরা। কয়েকটি সড়কে রাতে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও আশেপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন। শহীদ মিনার চত্বরে শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবীরা। এদিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সঙ্গে সারা দেশের শহীদ মিনারগুলোতেও একুশের প্রথম প্রহর থেকে চলে শ্রদ্ধা নিবেদনের পালা।
দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আজ সরকারি ছুটির দিন। দিবসটি উপলক্ষে রেডিও, টেলিভিশন বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। জাতীয় দৈনিকগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র।
এদিকে গতকাল এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিকের হাতে একুশে পদক তুলে দিয়েছেন।
মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষায় ১৯৫২-এ জীবন দিয়েছিল সালাম, বরকত, জব্বার, রফিক, শফিউল্লাহসহ নাম না জানা অনেকে। তাদের রক্তের বিনিময়েই আজকে মুখে মুখে বাংলা ভাষা। বাংলায় রচিত হচ্ছে হাজারো গান, কবিতা, নাটক, উপন্যাস আর অজস্র কথামালা। আজকের দিনটি শুধু সেই বীর ভাষাসৈনিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর, যারা ভাষার জন্য অকাতরে নিজের প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছিলেন। আজকের দিনটি কেবল বাংলাদেশে নয় বিশ্বের সব প্রান্তে পালিত হচ্ছে বীরের রক্তস্রোত আর মায়ের অশ্রুভেজা অমর একুশে। বাঙালির রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্বীকৃতি দিয়ে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। এরপর থেকেই যথাযোগ্য মর্যাদায় সারা বিশ্বে একযোগে পালিত হয়ে আসছে দিনটি।
এই দিনে বাংলার সংগ্রামী ছেলেরা যে ত্যাগ ও গৌরবগাথা রচনা করেছিলেন, তারই পথ ধরে আমরা মুখোমুখি হই স্বাধীনতা সংগ্রামে। রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। লাভ করি লাল সবুজের পতাকা। ১৯৫২ সালের এই দিনে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ঘোষিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মায়ের ভাষা প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনরত বাঙালি রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করে। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রতিবাদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে হরতালের প্রস্তুতি চলতে থাকে। সরকার ২০শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় একটানা এক মাসের জন্য ঢাকা জেলার সর্বত্র হরতাল, সভা, মিছিলের ওপর ১৪৪ ধারা জারি করে। এসব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ছাত্ররা দলে দলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জমায়েত হয়। ঐতিহাসিক আমতলায় ছাত্রদের সভা থেকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরিকল্পনা করা হয়, চারজন চারজন করে মিছিল নিয়ে বের হওয়ার।
ছাত্ররা মিছিল শুরু করলে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে ট্রাকে তুলতে থাকে। বিকাল ৩টায় গণপরিষদের অধিবেশনের আগেই শুরু হয়ে যায় ছাত্র-পুলিশ সংঘর্ষ। বিকাল ৪টায় পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে ছাত্রদের ওপর গুলি চালায়। বুলেট কেড়ে নেয় জব্বার ও রফিকের প্রাণ। গুলিবিদ্ধ আবুল বরকত রাত পৌনে আটটায় হাসপাতালে মারা যান। তাদের মৃত্যু সংবাদে বাংলা ভাষার প্রাণের দাবি সারা দেশে স্ফুলিঙ্গের মতো ছড়িয়ে পড়ে। শাসকগোষ্ঠী বাংলা ভাষার দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। এরপর থেকেই একুশে ফেব্রুয়ারি অমর ভাষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। শহীদদের স্মরণে সারা দেশে তৈরি হয় অসংখ্য শহীদ মিনার। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আওয়ামী লীগের দু’দিনব্যাপী কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকালে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় বঙ্গবন্ধু ভবনসহ সংগঠনের সকল শাখা কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন। সকাল ৭টায় কালো ব্যাজ ধারণ, প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন।
এ ছাড়া শুক্রবার বিকাল ৩টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক বিবৃতিতে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সকল কর্মসূচি যথাযথভাবে পালনের জন্য দলের নেতাকর্মীসহ সংগঠনের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ছাড়াও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জাতীয় জাদুঘর, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর, শিশু একাডেমি সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে প্রভাতফেরি সহকারে আজিমপুর কবরস্থান হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গমন ও পুষ্পস্তবক অর্পণ। বাদ জোহর অমর একুশে হলে শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত, বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদুল জামিয়া, সকল হলের মসজিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার মসজিদসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে ভাষা শহীদদের রুহের মাগফেরাত/শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা।
কঠোর নিরাপত্তা: শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনকে ঘিরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা দেয়ার কথা জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বুধবার সকাল থেকেই পুরো এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয়। দেয়া হয়েছে নিরাপত্তা মহড়া।
ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, শহীদ মিনার এলাকায় প্রবেশের আগে প্রত্যেক দর্শনার্থীকে একাধিক আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করতে দেয়া হবে। একুশে ফেব্রুয়ারির নিরাপত্তায় ঢাকা শহরজুড়ে মোতায়েন থাকবে ১৬ হাজার পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও শহীদ মিনারকেন্দ্রিক থাকবে ৬ হাজার পুলিশ সদস্য। প্রস্তুত থাকবে সোয়াত ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা।
মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সামর্থ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে নিরাপত্তা দেবে বলে জানিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। মঙ্গলবার দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের একথা জানান র?্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, র?্যাবের পেট্রোল, মোবাইল পেট্রোল, অবজারভেশন পোস্ট ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। শহীদ মিনার ও পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাজুড়ে র্যাবের নিরাপত্তা বলয় থাকবে। ২০শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা থেকে একুশের দুপুর পর্যন্ত নিরাপত্তা বলবৎ থাকবে, প্রয়োজনে সেটা আরো বাড়ানো হবে।
No comments