আইএস গার্ল শামিমাকে নিয়ে ঢাকায় চিঠি চালাচালি
আইএস
গার্ল শামিমাকে নিয়ে ঢাকায়ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারণী
মহলে তাকে নিয়ে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা চলছে। তবে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে
যে, তাকে গ্রহণ করার পক্ষে কেউই নন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বিদেশ মন্ত্রণালয়। ওদিকে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে
যোগদানের জন্য কোনো অনুশোচনা না দেখানোয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক
শামিমার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বৃটেন।
ইতিমধ্যেই দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে শামিমার পরিবারকে বিষয়টি জানিয়েছে। ‘আইসিস ব্রাইড’ খ্যাত শামিমা বৃটিশ নাগরিক হলেও তার পিতা-মাতা দুজনই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক। তার বাবার পৈত্রিক নিবাস সুনামগঞ্জ জেলায়। সে অনুযায়ী তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবেন কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে।
এমন পরিস্থিতিতে শামিমা ইস্যুটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বৃটেন শামিমার নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে তাকে বাংলাদেশের ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেবে কি না সেই প্রশ্নও তুলছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শামিমাকে কোন অবস্থাতেই গ্রহণ করবে না বাংলাদেশ। তিনি বাংলাদেশের কেউ নন। কোনকালেই বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল না, এখনও নেই।
শামিমার পরিবারকে দেয়া বৃটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনাদের মেয়ে শামিমা বেগমের বৃটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যদি শামিমার সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ থাকে, বা শিগগিরই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, তাহলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত তাকে জানাবেন। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শামিমা স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিল কমিশনে আপিল করার সুযোগ পাবেন। ইতিমধ্যেই বৃটিশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত শামিমা জানতে পেরেছেন। তিনি বিষয়টিকে হৃদয়-বিদারক আখ্যা দিয়েছেন। শামিমা বলেন, আমি ততটা বিস্মিত না, তবে কিছুটা শোকাহত। এটা হতাশাজনক খবর। আমি মনে করি, এটা আমার ও আমার সন্তানের প্রতি অবিচার। শামিমার আইনজীবী জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে তার পরিবার হতাশ। তারা এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছেন। তবে বাংলাদেশে ফেরত আসার সম্ভাবনা আগেই নাকচ করে দিয়েছেন শামিমা। জানিয়েছেন, তিনি কখনো বাংলাদেশে আসেননি। তার কাছ বাংলাদেশের পাসপোর্টও নেই।
প্রসঙ্গত, ১৯ বছর বয়সী শামিমা ৪ বছর আগে ২০১৫ সালে বৃটেন থেকে পালিয়ে যান। তিনি বসবাস করতেন পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন এলাকায়। সেখান থেকে সিরিয়া গিয়ে তিনি বিয়ে করেন আইএস যোদ্ধাকে। বর্তমানে তিনি আছেন সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে। সেখান থেকে গত সপ্তাহে বৃটেন ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। এ নিয়ে বৃটেনজুড়ে তোলপাড় হচ্ছে। বৃটেনে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করার সময় তিনি সন্তানসম্ভবা ছিলেন। কয়েকদিন আগে ছেলে সন্তান প্রসব করেন তিনি। এমন অবস্থায় মানবিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অনেকে তাকে বৃটেনে ফেরার সুযোগ দেয়ার কথা বলছেন। কিন্তু শামিমা আইএসে যোগদানের কারণে কোন অনুশোচনা প্রকাশ না করায় কট্টরপন্থিরা তার জন্য বৃটেনের দ্বার বন্ধ করার আহবান জানান।
এমন দ্বিধা-বিভক্ত পরিস্থিতিতেই তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার ঘোষণা দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। যদিও লেবার রাজনীতিবিদরা শামিমার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেছেন। নাগরিকত্ব হারানোর প্রতিক্রিয়ায় শামিমা বলেন, এটা হৃদয়বিদারক সংবাদ। আমি শুনেছি, অন্যদেরকে বৃটেনে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে। তাই বুঝতে পারছি না, কেন আমার বিষয়টি অন্যদের থেকে ভিন্নভাবে দেখা হচ্ছে। শামিমা পরিবারের নিযুক্ত করা আইনজীবী তাসনিম আকুঞ্জি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদক্ষেপ বাড়াবাড়ি ছিল। কেননা শত শত বৃটিশ নাগরিককে সরকার ফিরিয়ে নিয়েছে। এদের মধ্যে সন্দেহভাজন আইএস যোদ্ধাও রয়েছে। অথচ এই তরুণী আইএস যোদ্ধা ছিল না। সে বলেছে, একজন আইএস যোদ্ধাকে বিয়ে করে সে গৃহবধূর জীবন যাপন করতো। আকুঞ্জি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ শামিমার বৃটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে সচেষ্ট হওয়ায় আমি হতাশ।
বৃটিশ নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের পর শামিমা এখন আরেকটি বিকল্পের কথা ভাবছেন। তার বর্তমান স্বামী নেদারল্যান্ডের নাগরিক। সেখানে তার পরিবারও রয়েছে। শামিমা এখন নেদারল্যান্ডের নাগরিকত্ব চাওয়ার কথা ভাবছেন। দেশে ফিরলে তার স্বামীকে জেলে পাঠানোর আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু শামিমা তারও পরোয়া করেন না। তিনি জানান, যতদিন জেলে থাকবেন, শামিমা তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করবেন।
এদিকে, বৃটিশ নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের ফলে শামিমাকে বাংলাদেশে আশ্রয় চাইতে বলা হবে কি না সে বিষয়ে বৃটেনের মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী শোয়েব খান মনে করেন, আইসিস ব্রাইড শামিমা বেগম বৃটেনের সমস্যা। এটা বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নয়। শামিমা বড় হয়েছেন বৃটেনে। তিনি উগ্রবাদী হয়েছেন বৃটেনে। তাই তার বিষয়টি বৃটিশ আইন অনুযায়ী নিষ্পত্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই আইনজীবী। শামিমার নাগরিকত্ব নিয়ে বৃটেনের অনলাইন মেট্রোতে একটি প্রতিবেদনে লিখেছেন সাংবাদিক জো রবার্টস। যার শিরোনাম ‘আইসিস ব্রাইড শামিমা বেগম ইজ এ প্রবলেম ফর বৃটেন, নট বাংলাদেশ’।
এতে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, বৃটিশ সরকার মনে করছে শামিমার দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে। তার পিতামাতা বাংলাদেশি হওয়ায় তিনিও বাংলাদেশি নাগরিক। তাই তার নাগরিকত্ব বাতিল করে বৃটিশ সরকার তাকে বাংলাদেশে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে বলতে পারে। সাংবাদিক জো রবার্টস আরো লিখেছেন, ধারণা করা হচ্ছে বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ এ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন এজন্য যে, শামিমার দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। কারণ, তার পিতামাতা বাংলাদেশি। অর্থাৎ শামিমা একই সঙ্গে বৃটিশ এবং বাংলাদেশি নাগরিক। আন্তর্জাতিক আইন কোনো মানুষকে যেহেতু রাষ্ট্রহীন করতে অনুমোদন দেয় না, তাই সাজিদ জাভিদ হয়তো শামিমাকে বাংলাদেশি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার যুক্তি দেখাতে পারেন। কিন্তু শামিমা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি কখনো বাংলাদেশে আসেননি। তার কাছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই। তিনি সিরিয়া গিয়েছেন তার বোনের পাসপোর্ট ব্যবহার করে। সীমান্ত পেরিয়ে সিরিয়ায় পৌঁছার পর তার পাসপোর্ট নিয়ে নেয়া হয়েছে।
মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী শোয়েব খান বলেন, যদিও শামিমার নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়টি আইনগত, তবু এটা হওয়া উচিত নয়। তিনি অনলাইন মেট্রোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শামিমাকে উগ্রপন্থি করা হয়েছে বৃটেনে। তাই এর দায়ভার অবশ্যই বৃটেনকে নিতে হবে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে নির্বাসনের মতো মধ্যযুগীয় শাস্তি গ্রাহ্য হওয়া উচিত নয়। শামিমা যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন তাহলে বৃটিশ আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কিন্তু তাকে যদি বাংলাদেশে পাঠানো হয় তাহলে এর কোনোটাই সম্ভব হবে না। আর এতে বৃটেন আরো বেশি ঝুঁকিতে পড়বে।
আইনজীবী শোয়েব খান আরো বলেন, শামিমা বেগমের নবজাতক শিশু বৃটিশ নাগরিক। তাই ওই শিশুটির স্বার্থের বিষয়টি আইনগতভাবে মানতে বাধ্য বৃটেন এবং তার যাতে ভালো হয়, সেজন্য সবকিছু আয়োজন করা উচিত। তিনি আরো বলেন, শামিমার ওই নবজাতককে বৃটেনে প্রবেশে সরকার যেকোনো রকম বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তা অবশ্যই হবে বেআইনি। তাতে, তাকে জন্ম দেয়ার আগে তার মায়ের অবস্থান বা কর্মকাণ্ড যা-ই হোক না কেন। অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে এবং তাদেরকে শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাস মোকাবিলা করা যায়, তাদেরকে দেশের বাইরে রেখে এটা করা যায় না।
ওদিকে, বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে বলেছেন, বৃটিশ নন এমন মানুষদেরকে বৃটেনে নিষিদ্ধ করার মতো এবং দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে এমন বিপজ্জনক নাগরিকদের নাগরিকত্ব নিষিদ্ধ করার মতো পর্যাপ্ত ক্ষমতা আমার আছে। এভাবে শতাধিক মানুষের নাগরিকত্ব এরই মধ্যে কেড়ে নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিশেষ কোনো ঘটনা নিয়ে এ আলোচনা করেননি। তিনি আরো বলেন, আমরা কাউকে রাষ্ট্রহীন করি না।
ইতিমধ্যেই দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক চিঠিতে শামিমার পরিবারকে বিষয়টি জানিয়েছে। ‘আইসিস ব্রাইড’ খ্যাত শামিমা বৃটিশ নাগরিক হলেও তার পিতা-মাতা দুজনই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিক। তার বাবার পৈত্রিক নিবাস সুনামগঞ্জ জেলায়। সে অনুযায়ী তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবেন কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে।
এমন পরিস্থিতিতে শামিমা ইস্যুটি বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বৃটেন শামিমার নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে তাকে বাংলাদেশের ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেবে কি না সেই প্রশ্নও তুলছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শামিমাকে কোন অবস্থাতেই গ্রহণ করবে না বাংলাদেশ। তিনি বাংলাদেশের কেউ নন। কোনকালেই বাংলাদেশের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা ছিল না, এখনও নেই।
শামিমার পরিবারকে দেয়া বৃটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনাদের মেয়ে শামিমা বেগমের বৃটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। যদি শামিমার সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ থাকে, বা শিগগিরই তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, তাহলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত তাকে জানাবেন। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শামিমা স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিল কমিশনে আপিল করার সুযোগ পাবেন। ইতিমধ্যেই বৃটিশ সরকারের এই সিদ্ধান্ত শামিমা জানতে পেরেছেন। তিনি বিষয়টিকে হৃদয়-বিদারক আখ্যা দিয়েছেন। শামিমা বলেন, আমি ততটা বিস্মিত না, তবে কিছুটা শোকাহত। এটা হতাশাজনক খবর। আমি মনে করি, এটা আমার ও আমার সন্তানের প্রতি অবিচার। শামিমার আইনজীবী জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে তার পরিবার হতাশ। তারা এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছেন। তবে বাংলাদেশে ফেরত আসার সম্ভাবনা আগেই নাকচ করে দিয়েছেন শামিমা। জানিয়েছেন, তিনি কখনো বাংলাদেশে আসেননি। তার কাছ বাংলাদেশের পাসপোর্টও নেই।
প্রসঙ্গত, ১৯ বছর বয়সী শামিমা ৪ বছর আগে ২০১৫ সালে বৃটেন থেকে পালিয়ে যান। তিনি বসবাস করতেন পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন এলাকায়। সেখান থেকে সিরিয়া গিয়ে তিনি বিয়ে করেন আইএস যোদ্ধাকে। বর্তমানে তিনি আছেন সিরিয়ার একটি শরণার্থী শিবিরে। সেখান থেকে গত সপ্তাহে বৃটেন ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। এ নিয়ে বৃটেনজুড়ে তোলপাড় হচ্ছে। বৃটেনে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করার সময় তিনি সন্তানসম্ভবা ছিলেন। কয়েকদিন আগে ছেলে সন্তান প্রসব করেন তিনি। এমন অবস্থায় মানবিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে অনেকে তাকে বৃটেনে ফেরার সুযোগ দেয়ার কথা বলছেন। কিন্তু শামিমা আইএসে যোগদানের কারণে কোন অনুশোচনা প্রকাশ না করায় কট্টরপন্থিরা তার জন্য বৃটেনের দ্বার বন্ধ করার আহবান জানান।
এমন দ্বিধা-বিভক্ত পরিস্থিতিতেই তার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার ঘোষণা দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ। যদিও লেবার রাজনীতিবিদরা শামিমার নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেছেন। নাগরিকত্ব হারানোর প্রতিক্রিয়ায় শামিমা বলেন, এটা হৃদয়বিদারক সংবাদ। আমি শুনেছি, অন্যদেরকে বৃটেনে ফিরিয়ে নেয়া হচ্ছে। তাই বুঝতে পারছি না, কেন আমার বিষয়টি অন্যদের থেকে ভিন্নভাবে দেখা হচ্ছে। শামিমা পরিবারের নিযুক্ত করা আইনজীবী তাসনিম আকুঞ্জি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদক্ষেপ বাড়াবাড়ি ছিল। কেননা শত শত বৃটিশ নাগরিককে সরকার ফিরিয়ে নিয়েছে। এদের মধ্যে সন্দেহভাজন আইএস যোদ্ধাও রয়েছে। অথচ এই তরুণী আইএস যোদ্ধা ছিল না। সে বলেছে, একজন আইএস যোদ্ধাকে বিয়ে করে সে গৃহবধূর জীবন যাপন করতো। আকুঞ্জি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ শামিমার বৃটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে সচেষ্ট হওয়ায় আমি হতাশ।
বৃটিশ নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের পর শামিমা এখন আরেকটি বিকল্পের কথা ভাবছেন। তার বর্তমান স্বামী নেদারল্যান্ডের নাগরিক। সেখানে তার পরিবারও রয়েছে। শামিমা এখন নেদারল্যান্ডের নাগরিকত্ব চাওয়ার কথা ভাবছেন। দেশে ফিরলে তার স্বামীকে জেলে পাঠানোর আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু শামিমা তারও পরোয়া করেন না। তিনি জানান, যতদিন জেলে থাকবেন, শামিমা তার স্বামীর জন্য অপেক্ষা করবেন।
এদিকে, বৃটিশ নাগরিকত্ব প্রত্যাহারের ফলে শামিমাকে বাংলাদেশে আশ্রয় চাইতে বলা হবে কি না সে বিষয়ে বৃটেনের মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী শোয়েব খান মনে করেন, আইসিস ব্রাইড শামিমা বেগম বৃটেনের সমস্যা। এটা বাংলাদেশের কোনো সমস্যা নয়। শামিমা বড় হয়েছেন বৃটেনে। তিনি উগ্রবাদী হয়েছেন বৃটেনে। তাই তার বিষয়টি বৃটিশ আইন অনুযায়ী নিষ্পত্তি হওয়া উচিত বলে মনে করেন এই আইনজীবী। শামিমার নাগরিকত্ব নিয়ে বৃটেনের অনলাইন মেট্রোতে একটি প্রতিবেদনে লিখেছেন সাংবাদিক জো রবার্টস। যার শিরোনাম ‘আইসিস ব্রাইড শামিমা বেগম ইজ এ প্রবলেম ফর বৃটেন, নট বাংলাদেশ’।
এতে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, বৃটিশ সরকার মনে করছে শামিমার দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে। তার পিতামাতা বাংলাদেশি হওয়ায় তিনিও বাংলাদেশি নাগরিক। তাই তার নাগরিকত্ব বাতিল করে বৃটিশ সরকার তাকে বাংলাদেশে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে বলতে পারে। সাংবাদিক জো রবার্টস আরো লিখেছেন, ধারণা করা হচ্ছে বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ এ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকতে পারেন এজন্য যে, শামিমার দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। কারণ, তার পিতামাতা বাংলাদেশি। অর্থাৎ শামিমা একই সঙ্গে বৃটিশ এবং বাংলাদেশি নাগরিক। আন্তর্জাতিক আইন কোনো মানুষকে যেহেতু রাষ্ট্রহীন করতে অনুমোদন দেয় না, তাই সাজিদ জাভিদ হয়তো শামিমাকে বাংলাদেশি নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার যুক্তি দেখাতে পারেন। কিন্তু শামিমা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি কখনো বাংলাদেশে আসেননি। তার কাছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই। তিনি সিরিয়া গিয়েছেন তার বোনের পাসপোর্ট ব্যবহার করে। সীমান্ত পেরিয়ে সিরিয়ায় পৌঁছার পর তার পাসপোর্ট নিয়ে নেয়া হয়েছে।
মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী শোয়েব খান বলেন, যদিও শামিমার নাগরিকত্ব বাতিলের বিষয়টি আইনগত, তবু এটা হওয়া উচিত নয়। তিনি অনলাইন মেট্রোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, শামিমাকে উগ্রপন্থি করা হয়েছে বৃটেনে। তাই এর দায়ভার অবশ্যই বৃটেনকে নিতে হবে। একবিংশ শতাব্দীতে এসে নির্বাসনের মতো মধ্যযুগীয় শাস্তি গ্রাহ্য হওয়া উচিত নয়। শামিমা যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন তাহলে বৃটিশ আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। কিন্তু তাকে যদি বাংলাদেশে পাঠানো হয় তাহলে এর কোনোটাই সম্ভব হবে না। আর এতে বৃটেন আরো বেশি ঝুঁকিতে পড়বে।
আইনজীবী শোয়েব খান আরো বলেন, শামিমা বেগমের নবজাতক শিশু বৃটিশ নাগরিক। তাই ওই শিশুটির স্বার্থের বিষয়টি আইনগতভাবে মানতে বাধ্য বৃটেন এবং তার যাতে ভালো হয়, সেজন্য সবকিছু আয়োজন করা উচিত। তিনি আরো বলেন, শামিমার ওই নবজাতককে বৃটেনে প্রবেশে সরকার যেকোনো রকম বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে তা অবশ্যই হবে বেআইনি। তাতে, তাকে জন্ম দেয়ার আগে তার মায়ের অবস্থান বা কর্মকাণ্ড যা-ই হোক না কেন। অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে এবং তাদেরকে শাস্তি দেয়ার মাধ্যমে সন্ত্রাস মোকাবিলা করা যায়, তাদেরকে দেশের বাইরে রেখে এটা করা যায় না।
ওদিকে, বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সোমবার পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে বলেছেন, বৃটিশ নন এমন মানুষদেরকে বৃটেনে নিষিদ্ধ করার মতো এবং দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে এমন বিপজ্জনক নাগরিকদের নাগরিকত্ব নিষিদ্ধ করার মতো পর্যাপ্ত ক্ষমতা আমার আছে। এভাবে শতাধিক মানুষের নাগরিকত্ব এরই মধ্যে কেড়ে নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিশেষ কোনো ঘটনা নিয়ে এ আলোচনা করেননি। তিনি আরো বলেন, আমরা কাউকে রাষ্ট্রহীন করি না।
No comments