পরিকল্পিত উন্নয়ন চাই : প্রধানমন্ত্রী
‘পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের’ নাম পরিবর্তন করে ‘পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন’ মন্ত্রণালয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় পরিবেশ কমিটির (ন্যাশনাল কমিটি অন এনভায়রনমেন্ট) চতুর্থ বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বৈঠকে মংলা বন্দর এলাকায় পরিবেশবান্ধব নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান করার অনুমোদন দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কৃষিজমি রক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘উন্নয়ন হতে হবে পরিকল্পিত।’ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘বৈঠকে জাতীয় পরিবেশনীতি ২০১৭’র খসড়া এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ‘জাতীয় বিনিয়োগ পরিকল্পনার (কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্লান-সিআইপি)’ খসড়াও অনুমোদন পেয়েছে।’ প্রেস সচিব জানান, সরকারপ্রধান চাষের জমি রক্ষার পাশাপাশি অহেতুক গাছ না কাটা এবং নতুন আবাসন এলাকা ও শিল্পাঞ্চলে জলাধার রাখার কথাও বলেছেন। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে উপকূলে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন। সুন্দরবনকে সৃষ্টিকর্তার উপহার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি নতুন বনায়নের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জীবিকা নির্বাহের জন্য কেউ যাতে সুন্দরবনের গাছ না কাটে, সেজন্য ওই এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রেস সচিব জানান, অতিবৃষ্টিতে জনভোগান্তির প্রসঙ্গ বৈঠকে উঠলে প্রধানমন্ত্রী এর ইতিবাচক দিকও তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা বলেন, ‘অতিবৃষ্টি নদীর দূষণ রোধ করার পাশাপাশি লবণাক্ততা কমায়।’ নদী রক্ষায় বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, দূষণ এড়ানো না গেলে নদী নষ্ট হয়ে যাবে। ঢাকাকে ঘিরে থাকা বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদ দূষণমুক্ত রাখতে হবে। বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ২২ শ্রাবণ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবসে তাকে স্মরণ করেন। কৃষকের উন্নয়নে কবিগুরুর বিভিন্ন অবদানের কথাও তুলে ধরেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইশতিয়াক আহমেদ বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন। নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর ইইউ প্রস্তাবকে স্বাগত : এদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে বিদায়ী ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়েদুন সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থার প্রশংসা করে বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে।’ এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার প্রস্তাবকে স্বাগত জানান এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তাদের উদ্যোগে ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়নের প্রশংসা করেন। সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। অর্থনৈতিক কার্যক্রম বাড়াতে বাংলাদেশ এ লক্ষ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে পারে। প্রেস সচিব জানান, পিয়েরে মায়েদুন বাংলাদেশের শ্রম আইন ও ইপিজেডের খসড়া আইন আরও পর্যালোচনা করতে প্রধানমন্ত্রীর কমিটমেন্টের প্রশংসা করেন। শ্রম অধিকার ইস্যুতে বাংলাদেশকে সফলতার উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন বিদায়ী রাষ্ট্রদূত। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রসঙ্গে পিয়েরে মায়েদুন বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হবে। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনে সহযোগিতার জন্য ইইউ’র নেয়া ‘ইউরো হরাইজন-২০২০’ বাংলাদেশের আরও বেশি অংশগ্রহণে উৎসাহ দেন তিনি। পিয়েরে মায়েদুন ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তিতে বাংলাদেশের উন্নতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং নিজেকে এই পরিবর্তনের সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করেন। ব্ল– ইকোনমিতে বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন তিনি। সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম উপস্থিত ছিলেন।
No comments