বগুড়ায় তুফান-মতিনের স্বেচ্ছাচারিতা: দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আজাহার
বগুড়ায় তুফানদের রোষানলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আজাহার আলী খান নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। জীবনের সঞ্চিত টাকা দিয়ে শহরের তালুকদার মার্কেটে ১৯৮৪ সালে এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় দোকান পজেশন নিয়ে ব্যবসা করছিলেন তিনি। পজেশন বুঝিয়ে না দিলেও ভালোভাবেই চলছিল তার ব্যবসা। ব্যবসা জমে উঠলে বছর তিনেক পর আজাহারের কাছ থেকে দোকানটি ছিনিয়ে নিতে তুফান-মতিনের আশ্রয় নেন মার্কেট মালিক। শহরের থানা মোড় এলাকায় গড়ে ওঠা মার্কেটের মালিক সালমা খাতুন হলেও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন তারই নিকটজন শাহেনশাহ তালুকদার। শেষ পর্যন্ত গত বছর ডিসেম্বরে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে জোরপূর্বক দোকানটি ছিনিয়ে নিয়ে আজাহারকে পথে বাসানো হয়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আজাহার আলী ১৯৮৪ সালে দোকানটির পজেশন ক্রয় করেন এবং ৩ বছর পর ১৯৮৭ সালে তাকে বাধ্য করা হয় ভাড়ায় চুক্তি করতে। দোকানের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ২০০৯ সালের দিকে দোকানটি আজাহারের কাছ থেকে ফেরত নেওয়ার উদ্যোগ নেয়। এক পর্যায়ে আজাহার আলী আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালতের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মাসিক ৬০০ টাকা হারে ভাড়াও পরিশোধ করেন। কিন্তু গত বছর ২৬ ডিসেম্বর শাহেনশাহর ভাগ্নে মাসুদ দোকানে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরদিন আজাহার আলী তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। পরের দিন শাহেনশাহ ও তার লোকজন দোকানে হামলা চালায়। এ নিয়ে থানার ভেতরে দু’পক্ষের উকিলের উপস্থিতি দেনদরবার হলেও কোনো কাজ হয়নি। পুলিশ তাদের আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। কথা হয় বৃদ্ধ আজাহার আলী খানের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করেন, ১৫ জানুয়ারি শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকার ও তার ক্যাডাররা দোকানে তালা দেন। নাম ও ফোন নম্বর লিখে একটি কাগজ লাগিয়ে দেন সেখানে। পরে ফোন দিলে তুফান ছেলে আপেলকে তুলে আনার হুমকি দেন। পরে তিনি যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা মতিন সরকারের দ্বারস্থ হন। মার্কেটের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করে মতিন সরকার দুই লাখ দিয়ে আজাহারকে দোকানটি ছেড়ে দেয়ার জন্য বলেন। পরে সোয়া দুই লাখ টাকা দিলেও দোকানের মালামাল ও দোকানের ক্যাশ বাক্সে থাকা নগদ টাকা ফেরত দেয়ার কথা থাকলেও তা আর ফেরত দেননি। পরবর্তীকালে শাহেনশাহ ওই দোকান ১২ লাখ টাকায় মিজান নামে এক ব্যক্তির কাছে পজেশন বিক্রি করে দিয়েছেন। আজাহার আলী অভিযোগ করেন, মতিন সরকার ও তুফান সরকার হস্তক্ষেপ করায় তিনি দোকানটি ছাড়তে বাধ্য হন। দোকানে নগদ টাকাসহ তিন লাখ টাকার মালামাল ছিল। তাও ফেরত পাইনি। কথা হয় মার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তারা জানান, তুফান-মতিন বাহিনীকে ভাড়া করে শাহেনশাহ তাকে দোকান থেকে উচ্ছেদ করেন। আয়ের একমাত্র অবলম্বনটি কেড়ে নিয়ে অথৈ সাগরে ফেলে দেয়া হয়েছে আজাহারকে। তার সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছে। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে শাহেনশাহ তালুকদার জানান, তিনি তুফান বা মতিনের মাধ্যমে দোকান কেড়ে নেননি। তাদের ভাড়াও করেননি। আজাহার আলী দীর্ঘ ৪১ মাস ধরে ভাড়া দিচ্ছেন না। তিনি খেলাপিতে পরিণত হয়েছেন। ভাড়া না দেয়ায় তার মালামাল নেয়া হয়েছে। আর তিনি স্বেচ্ছায় সোয়া ২ লাখ টাকা নিয়ে দোকান ছেড়ে দিয়েছেন। মার্কেটের পাশের দোকানের রেজা নামের এক ব্যবসায়ী জানান, অন্যায়ভাবে আজাহারের কাছ থেকে দোকান ও মালামাল কেড়ে নেয়া হয়েছে। তুফান ও তার ভাই মতিনকে দিয়ে তাকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি তুফান সরকার জেলে থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। আর মতিন সরকার হত্যা মামলায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বক্তব্য নেয়ার জন্য তাকে কয়েকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ধরেননি।
No comments