ছেলের খুনি পুত্রবধূকে ক্ষমা করলেন শাশুড়ি
এক
মা তার ছেলেকে হত্যাকারী পুত্রবধূকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। এমনকি তিনি ছেলে
হত্যার ঘটনায় পুলিশের কাছে অভিযোগ পর্যন্ত করেননি। তবে স্বামী হত্যার ঘটনায়
বিচার এড়াতে পারেননি ওই নারী। আদালত তাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।
তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় বুরসা প্রদেশে এ ঘটনা ঘটেছে বলে এক
প্রতিবেদনে জানিয়েছে দৈনিক হেবারতুর্ক। ওই মায়ের নাম হেসার ইলিকমেন।
পারিবারিক কলহের জেরে তার ছেলে সুয়াত ইলিকমেনকে ছুরিকাঘাত হত্যা করে
পুত্রবূধ ইলিফ ইলিকমেন। হেসার জানান, ইলিফকে ক্ষমা করে দিয়েছেন কারণ তার
ছেলে তার সঙ্গে যে আচরণ করেছে, একই আচরণ তিনি নিজের স্বামীর কাছ থেকেও
পেয়েছিলেন। নিজের ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, 'আমি এর আগে দুবার বিয়ে
করেছিলাম।
আমার প্রথম স্বামী ছিল সুয়াতের বাবা। তার কারণে আমি অনেক ভুগেছি।
তিনি আমাকে পেটাননি, কিন্তু তিনি অবৈধ কাজে জড়িত এবং মাদকাসক্ত ছিলেন।'
হেসার বলেন, 'যখন আমি পুত্রবধূকে কাঠগড়ায় দেখলাম, তখন আমি নীরব থাকার
সিদ্ধান্ত নিলাম। এমনকি আমি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ দায়েরের ব্যাপারে
ইতস্ত করেছি।' নিহত সুয়াত ও ঘাতক ইতিফ দুজনেই মাদকাসাক্ত ছিলেন। একটি
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার সময় তারা পরিচিত হন। পরে তারা বিয়ে করেন।
কিন্তু বিয়ের পর সুয়াত কোনো চাকরি খুঁজে না পাওয়ায় এ দম্পতির সম্পর্ক দিনে
দিনে খারাপ হতে থাকে। এ অবস্থায় সুয়াতের মা তাদের বলেন, তারা যদি দাম্পত্য
সম্পর্ক বজায় রাখতে না পারে তাহলে যেন তারা বিবাহবিচ্ছেদ করে। কিন্তু তারা এ
পরামর্শ শোনেনি। এরপর তাদের ঝগড়া হাতাহাতিতেও রূপ নেয়। তারা নিজেদের দুই
বছরবয়সী ছেলেকে উপেক্ষা করতে থাকেন। হাতাহাতির জের ধরে একদিন ইলিফ পুলিশকে
ফোন করলে স্বামী-স্ত্রী উভয়কে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এত ওই দম্পতির
সম্পর্কের অবনতি ঘটে। পরে একদিন রাতে উভয়ের মধ্যে নোংরা গালাগালের ঘটনা
ঘটলে ইলিফ ছুরিকাঘাত করে স্বামী সুয়াতকে মেরে ফেলেন। ঘটনার ব্যাপার হেসার
বলেন, ওই রাতে দুজনেই মাদক সেবন করেছিল। তারা একজন আরেক জনকে নোংরা গালি
দিচ্ছিল। তিনি বলেন, 'আমি তাদের থামাতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পুলিশকে ফোন
করতে চাই। তখন আমার ছেলে বাধা দিয়ে বলে সে ঘুমাতে যাচ্ছে।' 'যখন আমরা শোয়ার
ঘরে ফিরলাম তখন একটা চিৎকার শুনতে পাই। তখন গিয়ে দেখি ইলিফ আমার ছেলেকে
ছুরিকাঘাত করেছে।
আমার মনে হয়েছিল- ছেলের পরিবর্তে যদি আমিই মারা যেতাম!'
যোগ করেন সুয়াতের মা। তবে ছেলেকে মেরে ফেললেও পুত্রবধূকে দোষী মনে করেন না
হেসার। তিনি বলেন, বউ একটাই ভুল করেছে, বিবাহবিচ্ছেদ করতে বললেও সে আমার
ছেলের সঙ্গে রয়ে গিয়েছিল। এদিকে সুয়াতকে হত্যার ঘটনায় আরেক ট্রাজেডির শিকার
হয়েছেন ইলিফের বোন ইমিরিয়ে ইলিকমেন। তার সঙ্গে সুয়াতের ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে।
তার বোন সুয়াতকে মেরে ফেলায় এখন তাকে তালাক নিতে বলা হচ্ছে। ইমিরিয়ে বলেন,
'আমার ব্যাপারটা দেখুন। আমার বোন তার স্বামীকে মেরে ফেলেছে। আর আমি নিহতের
ভাইকে বিয়ে করেছি এবং একই বাসায় আমরা থাকি।' তিনি বলেন, 'বোন খুন করার পর
শ্বশুর বাড়ির লোকজন সব কিছু আমার উপর চাপিয়েছে। তারা আমাকে তালাক নিয়ে
বুরসা ছেড়ে যেতে বলছেন।' 'আমি এখন নিজের শেষ পরিণতি নিয়ে ভাবছি। আমি
পুরোপুরি বিধ্বস্ত' যোগ করেন ইমিরিয়ে।
No comments