কুসিকে ভোটযুদ্ধ শুরু
চাপা
উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে দিয়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের
ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে আজ। সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ
চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। গতকাল বুধবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে
ব্যালট পেপারসহ প্রয়োজনীয় মালামাল। নির্বাচনী অপরাধের সাজা দিতে আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর সাথে রয়েছেন নির্বাহী ও বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা।
নির্বাচনী
এলাকায় আজ মোটরসাইকেলসহ সবধরনের যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কর্মকাণ্ডে শান্তিপূর্ণ ভোটগ্রহণ
ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। তার কর্মীদের বাড়ি
গিয়ে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
প্রচারণার শুরু থেকেই বিএনপি সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু ভোট
নিয়ে এই শঙ্কার কথা জানিয়ে আসছিলেন। তবে প্রচারের শেষ দিন পর্যন্ত তেমন
কোনো অঘটন না ঘটায় তার সেই শঙ্কা খুব একটা আমলে নেননি রিটার্নিং অফিসার।
সাক্কুর পক্ষ থেকে মঙ্গলবার রাতে রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মণ্ডলের
বরাবর কয়েকটি কেন্দ্রের পুলিশ ইনচার্জদের বদলে দেয়ার আবেদন করা হয়। পরে
রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশনা অনুযায়ী বুধবার ওই পুলিশ কর্মকর্তাদের
কেন্দ্র পরিবর্তন করা হয়েছে। এ দিকে বুধবারও শঙ্কা প্রকাশ করে সাক্কু বলেন,
ভোট নিয়ে একটা শঙ্কা আছে। তবে যদি নির্বাচন কমিশন নিজেদের কথা রেখে সুষ্ঠু
নির্বাচন করতে পারে তবে অনেক ভোটেই আমি জয়ী হবো। অন্য দিকে আওয়ামী লীগ
সমর্থিত মেয়রপ্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাও জয়ের বিষয়ে আশা প্রকাশ করে
বলেন, আওয়ামী লীগ সারা দেশে যেভাবে উন্নয়ন করছে কুমিল্লায়ও সেই উন্নয়নের
ধারা অব্যাহত রাখতে মানুষ নৌকার প্রার্থীকেই ভোট দেবে। ভোটারদের উদ্দেশে
তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছি। আপনারা
কেন্দ্রে এসে ভোট দিন। এ ছাড়াও ভোটের মাত্র এক দিন আগে নৌকার প্রধান
প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের নির্বাচনী সমন্বয়কারী এজেন্টদের আইনশৃঙ্খলা
বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া হয়েছে।
ইমরান হোসেন ইকু ও আবদুর রাজ্জাক নামে
দু’জনকেই ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন
মেয়রপ্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দলীয় পরিচয়ের অভিযোগে
সিটির ১০৩ কেন্দ্রের মধ্যে সদর দক্ষিণ ও কোতোয়ালি থানাধীন ১৯ কেন্দ্রের
দায়িত্বপ্রাপ্ত এসআইকে অভ্যন্তরীণ বদলি করা হয়েছে। আঞ্চলিক নির্বাচন
কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেন, নির্বাচনের তফসিল
ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোথাও তেমন কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। আশা করছি
শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণও করতে পারব। সব প্রস্তুতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন,
১০৩ কেন্দ্রেই ভোটগ্রহণে প্রয়োজনীয় ব্যালট পেপার, সিল ও ব্যালট বাক্সসহ
অন্যান্য সরঞ্জাম পৌঁছে দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রগুলোতে দায়িত্বে থাকা ভোটগ্রহণ
কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও পৌঁছে গেছেন। আশা করছি কোথাও
কোনো সমস্যা নেই। বৈধ অস্ত্রের বিষয়ে তিনি বলেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন
এলাকায় যাদের বৈধ অস্ত্র রয়েছে। তাদের কারো অস্ত্রই আমরা জমা নিইনি। সবাইকে
বলে দেয়া হয়েছে কেউ অস্ত্র বের করবেন না, এখন পর্যন্ত কেউ অস্ত্র বের
করেওনি বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, যদি কেউ তার বৈধ অস্ত্র বের করেছেন, এমন
খবর পাওয়া যায় তাহলে তার ওই অস্ত্র সিজ করা হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের
বিষয়ে তিনি বলেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১০৩ ভোটকেন্দ্রকেই অতি
গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করছি আমরা। নির্বাচনের সার্বিক মূল্যায়ন জানতে
চাইলে রিটার্নিং অফিসার বলেন, শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে আমরা
পার করেছি। যেকোনো মূল্যে শান্তিুপূর্ণ পরিবেশেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করব।
তবে কেউ যদি অবৈধভাবে ব্যালটে হাত দেয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
নেয়া হবে বলে মন্তব্য করেন রিটার্নিং অফিসার। অন্য দিকে ভোটারদের নির্বিঘেœ
ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। পৃথক প্রেস ব্রিফিংয়ে তারা এ
আহ্বান জানান। স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনটি দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক
জোটের মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। এর মধ্য দিয়েই দ্বিতীয়বারের মতো দলীয়
প্রতীকে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন কোনো সিটি মেয়র। এর আগে গত ২২ মার্চ
নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনটি রাজনৈতিক পরিচয় ও দলীয় প্রতীকের প্রথম
নির্বাচন। ভোট গণনা শেষে কেন্দ্রে ফল ঘোষণার পাশাপাশি কুমিল্লা টাউন হলেই
ইসি স্থাপিত কন্ট্রোলরুম থেকেই ফল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচক বিশ্লেষকেরা মনে
করেন এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকের ৩৮ হাজার নতুন ভোটারও ফল নির্ধারণে
ভূমিকা রাখবে। এর মধ্য দিয়েই নগরীর দুই লাখ সাত হাজার ৫৬৬ জন ভোটার তাদের
রায় ঘোষণা করবেন। ভোটগ্রহণ উপলক্ষে নির্বাচনী এলাকায় সরকারি ছুটি ঘোষণা করা
হয়েছে। মেয়র পদে ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মনিরুল
হক সাক্কু জনরায় পেলে টানা দ্বিতীয়বারের মতো কুমিল্লার মেয়র হিসেবে বিজয়ী
হবেন। অন্য দিকে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা
সীমা প্রথমবারের মতো জয়ী হলে রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে অন্য উচ্চতায়
উত্তরণ ঘটবে তার। কারণ বিদায়ী মেয়রের কাছে তার বাবা বিপুল ভোটে পরাজিত
হয়েছিলেন। নানা কারণেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীসহ
রাজনৈতিক মহল, এমনকি সাধারণ মানুষেরও দৃষ্টি থাকবে আজ কুমিল্লার দিকে।
নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন
নির্বাচন কমিশনের পথাচলা মসৃণ নাকি আরো জটিল হবে তার ওপরও প্রভাব ফেলতে
পারে এই ভোটের ফল। একই সাথে এই ভোটের ফল কুমিল্লার স্থানীয় আওয়ামী
লীগ-বিএনপির রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণের জন্ম দেবে। স্থানীয়দের মতে, নির্বাচন
নিয়ে বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। শান্তিপূর্ণভাবে
প্রচার শেষ হওয়ায় ভোটারদের মনে এক ধরনের স্বস্তিও বিরাজ করছে। যদিও
কুমিল্লার অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনের পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে এবার ভোটের
দিনটিকে ঘিরে আতঙ্কের কথাও উঠছে। তবে যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলা
করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কুমিল্লা র্যাব-১১ উপঅধিনায়ক মেজর আশিক বলেন,
প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন নয়, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন একটি মডেল
নির্বাচন হোক এটাই আমরা চাই। নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে নেয়া
হবে সব ধরনের পদক্ষেপ।
তিনি বলেন, নির্বাচনের সহিংসতা এড়াতে ঢাকা থেকে
বোমা নিষ্ক্রীয় বস্তু এবং দু’টি ডগ স্কোয়াড আনা হয়েছে, তারা বিভিন্ন এলাকায়
অশনি সঙ্কেত শনাক্ত করবে। এর আগে কুসিক নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও
বিএনপির নেতারা নানা বক্তব্য দেন। ইসিও তাদের বক্তব্য খণ্ডন করে। বিএনপির
সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচন
বর্তমান ইসির কাছে একটা অগ্নিপরীক্ষা। এ ইসির ব্যাপারে অনেক রাজনৈতিক দলের
নানা প্রশ্ন রয়েছে। এ পরীক্ষায় পাস করলে ইসির ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা
বাড়বে। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের সহযোগিতার
আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, নির্বাচন কমিশন
বেশি নিরপেক্ষতা দেখাতে গিয়ে সরকারি দলের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করছে। তিনি
বলেন, আমরা কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে অগ্নিপরীক্ষা মনে করছি না।
তবে এটি একটি কঠিন পরীক্ষা। শুধু কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নয়,
আগামীতে সব ধরনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ইসিকে সহযোগিতা করবে। ইসি সচিব
মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, দুই দলই বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে সিইসির সাথে
সাক্ষাত করেছে। তবে কমিশনের মেসেজ কিয়ার : সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। তিনি
বলেন, দুই দলই চায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড, আমরা সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি
করব। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে অনেকবারই প্রকাশ্যে নিজের আশঙ্কার কথা
বলেছেন ধানের শীষের মেয়রপ্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। গতকাল সারা দিন বাসাতেই
ছিলেন তিনি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাসাতেই থেকে নেতাকর্মীদের সাথে
মতবিনিময় করেন। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় সবাইকে ভোটের মাঠে নজর রাখার
পরামর্শ দেন সাক্কু। অপর দিকে নৌকার প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা ঘর থেকে
বেরোলেও জনসংযোগ করেননি। তবে নিজ বাসার বাইরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে
বৈঠক করেছেন বলে জানান তিনি।
সীমা বলেন, জয়ের বিষয়ে তিনি শতভাগ নিশ্চিত। এ
দিকে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে গতকাল বুধবার সকাল থেকেই র্যাব, বিজিবি
এবং রিটার্নিং কর্মকর্তা নির্বাচনী এলাকায় টহল ও মহড়া দেন। আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা জানান, নির্বাচনে বড় ধরনের কোনো সঙ্ঘাত-সংঘর্ষের
আশঙ্কা না থাকলেও জনমনে আস্থা ফেরাতে এবং কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি
বাড়াতে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে
পারেন সেই পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। অতীত কর্মকাণ্ডের কারণে বেশ কয়েকজন
কাউন্সিলর প্রার্থীকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ
থেকে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গতকালই কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটের
সরঞ্জাম পাঠানো হয়েছে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, গতকাল বেলা ১টায় শহরের নগর
মিলনায়তনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে নির্বাচনী সরঞ্জাম কেন্দ্রের
দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। স্বচ্ছ
ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, প্যাড, সিল, অমোচনীয় কালিসহ অন্যান্য উপকরণ
পুলিশি পাহারায় পাঠানো হয়েছে সব কেন্দ্রে। রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন
মণ্ডল বলেন, নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ১০৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে বিএনপির ৪৭ ও
আওয়ামী লীগের ৩৭টিকে বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার চেষ্টা
কঠোরভাবে দমন করা হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সদর দক্ষিণ এলাকাকে বেশি
ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন করা হচ্ছে।
কুসিক
নির্বাচনে মেয়র পদে কাগজে-কলমে চারজন প্রার্থী। বিদায়ী মেয়র মনিরুল হক
সাক্কু ধানের শীষ প্রতীকে লড়ছেন বিএনপিসহ ২০ দলের একক প্রার্থী হিসেবে। তার
মূল প্রতিদ্বন্দ্বী নৌকার ১৪ দলের একক মেয়রপ্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা।
অপর মেয়রপ্রার্থী জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির শিরিন আক্তার এবং
স্বতন্ত্রপ্রার্থী মেজর (অব:) মামুনুর রশিদ। ফলে মেয়র পদে মূল
প্রতিদ্বন্দ্বী সীমা ও সাক্কু। এ ছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৪ ও সংরক্ষিত
সদস্য পদে ৪০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবমিলিয়ে প্রার্থী সংখ্যা ১৫৮
জন। দুই লক্ষাধিক ভোটার : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার মোট ভোটার
দুই লাখ ৭ হাজার ৫৬৬। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ দুই হাজার ৪৪৭ এবং নারী এক
লাখ পাঁচ হাজার ১১৯। ২৭ ওয়ার্ডে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১০৩। মোট ভোট কক্ষের
সংখ্যা ৬২৮টি। নির্বাচনে ১০৩ কেন্দ্রে একজন করে ১০৩ জন প্রিজাইডিং অফিসার,
৬২৮ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং এক হাজার ২৫৬ জন পোলিং অফিসার দায়িত্ব
পালন করছেন। ৩৮ হাজার নতুন ভোটার : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৩৮
হাজার নতুন ভোটারের মন জয় করতে উঠে পড়ে লেগেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী দুই
মেয়রপ্রার্থী। এই ৩৮ হাজার ভোটই এবার টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে বলে মনে করেন
তারা। জয়পরাজয়ে তাদের ভূমিকা থাকবে ব্যাপক। সে কারণে তাদের ওপর নজর বেশি
দুই প্রার্থীর। জানা গেছে, ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য কুমিল্লা
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রথম নির্বাচনে ভোটার ছিল এক লাখ ৬৯ হাজার ২৭৩
জন। আর এবার ৩৮ হাজার ২৯৩ জন ভোটার বেড়ে এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ সাত
হাজার ৫৬৬ জনে। নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে একাধিক স্থানীয়
সমাজসেবী, রাজনৈতিক, দলীয় নেতাকর্মীর সাথে নতুন ভোটারদের বিষয়ে কথা হলে
তারা জানান, বড় দুই রাজনৈতিক দলের মেয়র প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে
নিজেদের প্রতিশ্রুতি জানিয়েছেন। তাদের এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে
কুসিকের ৩৮ হাজার নতুন ভোটারের মধ্যে।
দলীয় প্রতীকে প্রথমবারের মতো
অনুষ্ঠিত হতে চলা কুসিক নির্বাচনে এই নতুন ভোটার একটা ফ্যাক্টর। নিরাপত্তার
চাদরে ঢাকা কুমিল্লা : কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজিবি, র্যাব,
পুলিশ ও আনসার বাহিনীসহ চারটি বাহিনীর প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার সদস্য
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করবেন আজ। এর মধ্যে ২৭ প্লাটুন বিজিবি (৬০০
জন), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ৩৩৮ জন, পুলিশের দুই হাজার
৪৫৬ জন ও আনসারের এক হাজার ৯৭২ জন সদস্য আজ নগরীতে দায়িত্ব পালন করছেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে ৩৬টি : রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মণ্ডল জানান,
ভোট গ্রহণের সময় কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে জড়িতদের সাথে সাথে সাজা
দেয়া হবে। এ জন্য ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯ জন জুডিশিয়াল
ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে ৩৬টি মোবাইলকোর্ট কাজ করবে। অপরাধকারীরা
কোনোভাবেই পার পাবে না। যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে বা বিশৃঙ্খলার চেষ্টা
করবে সে সাথে সাথেই সাজা পাবে। ১৯ কেন্দ্রের পুলিশ কর্মকর্তা পরিবর্তন :
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সদর দক্ষিণের ও
কোতোয়ালি থানার আওতাধীন ১৯টা ভোট কেন্দ্রে পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত
কর্মকর্তাকে কেন্দ্র পরিবর্তন করা হয়েছে। জানা গেছে, এসব পুলিশ কর্মকর্তাকে
কেন্দ্র পরিবর্তনের জন্য বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষ থেকে
বুধবার রাতে রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন মণ্ডলের বরাবরে আবেদন করা হয়।
পরে রিটার্নিং অফিসারের নির্দেশ অনুযায়ী তাদের কেন্দ্র পরিবর্তন করা হয়েছে।
ভোটারদের কেন্দ্রে আসার আহ্বান দুই প্রার্থীর : নির্বাচনের পরিবেশ
স্বাভাবিক উল্লেখ করে ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন
আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র আঞ্জুম সুলতানা সীমা। বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক
সাক্কু বলেছেন, যেকোনো পরিস্থিতিতেই যেন ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দ্রে যান।
ভোটারদের উদ্দেশে বুধবার সীমা বলেন, শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হবে
বলে আশা করছি। আপনারা কেন্দ্রে এসে ভোট দিন। তিনি বলেন, কারচুপির মাধ্যমে
জয়ের কোনো চেষ্টাই আমি করিনি। জনগণ যাকে ভোট দেবে তিনিই মেয়র হবেন। এখানে
জোরজবরদস্তির কিছু নেই। তিনি বলেন, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচারের শেষ
দিন পর্যন্ত আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করেছি। আশা করছি, ভোটের দিনও সবাই
শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট দেবেন। আমি ভোটে বিশ্বাসী। নির্বাচন কমিশন
নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে বলেও মন্তব্য করেন সীমা। অন্য দিকে, বিএনপি সমর্থিত
মেয়রপ্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুও ভোটারদের কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেয়ার আহ্বান
জানিয়েছেন। ভোটরদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যত শঙ্কাই থাক আপনারা কেন্দ্রে
আসুন, ভোট দিন।
ভোটের বিকল্প কিছুই নেই। তিনি বলেন, প্রচার-প্রচারণা শুরুর
পর থেকেই আমার কর্মীদের বাড়ি বাড়িতে গিয়ে পুলিশের লোকজন খোঁজাখুুঁজি
করেছে। আমার কর্মীরা ঠিকমতো বাড়িতে ঘুমাতেও পারেননি। এসব কারণে ভোট নিয়ে
আমার একটা শঙ্কা রয়েই গেছে। তবে যদি সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তবে
আমিও জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। আর জয়ী হলে নিজের অসমাপ্ত কাজগুলো সম্পন্ন করার
কথাও বলেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের এই প্রথম মেয়র। সীমা ও সাক্কু
কখন-কোথায় ভোট দেবেন : আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তার বাবা প্রবীণ রাজনীতিবিদ আফজাল খানকে সাথে নিয়ে ৮
নম্বর ওয়ার্ডের কুমিল্লা মডার্ন স্কুল (প্রাইমারি শাখা) কেন্দ্রে ভোট
দেবেন। অন্য দিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় বাবা-মায়ের কবর জিয়ারত মাধ্যমে
দিনের কর্মসূচি শুরু করবেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। পরে
তিনি দারোগা বাড়ি মাজার ও কালিয়া ঝুড়ি মাজার জিয়ারত করে সকাল ৯টা থেকে সাড়ে
৯টার মধ্যে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে নবাব হোচ্ছাম হায়দার সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দেবেন। ইসির ২৭ নীরব পর্যবেক্ষক : নির্বাচন কমিশনের
নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্যে ২৭ জন ‘নীরব পর্যবেক্ষক’ হিসেবে সিটি নির্বাচনে
দায়িত্ব পালন করবেন। এসব কর্মকর্তা পরিচয় গোপন রেখে নির্বাচনের সামগ্রিক
পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য নির্বাচন কমিশনকে জানাবেন। ইসির কর্মকর্তারা জানান,
নির্বাচনের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্দেশ্যে এসব পর্যবেক্ষক
নিয়োগ করা হয়েছে। কোথাও অনিয়মের খবর পেলে তারা কমিশনকে জানাবে এবং সেই
অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে ইসি।
যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা : ২৯ মার্চ মধ্যরাত থেকে ৩০ মার্চ দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ, স্প্রিড বোট, ট্যাক্সিক্যাব, বেবিট্যাক্সি/অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক ও টেম্পো চলাচলের ওপরও এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসি।
ভোটার ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা : কুসিকে মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ সাত হাজার ৫৬৬ জন। পুরুষ এক লাখ দুই হাজার ৪৪৭ জন ও নারী এক লাখ পাঁচ হাজার ১১৯ জন। তবে নারী ভোটার পুরুষের চেয়ে বেশি এ সিটিতে। প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার এক হাজার ৯৮৭ জন। এর মধ্যে প্রিজাইডিং প্রতি কেন্দ্রে এক জন করে ১০৩ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার প্রতি কক্ষে একজন করে ৬২৮ জন এবং পোলিং অফিসার প্রতিটি কক্ষে দু’জন করে এক হাজার ২৫৪ জন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ থেকে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে এবং বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনিরুল হক সাক্কুকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয় প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। পরে ২ মার্চ মনোনয়নপত্র দাখিল করেন প্রার্থীরা। ৫ ও ৬ মার্চ মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর ১৪ মার্চ প্রত্যাহারের শেষ দিন। ১৫ মার্চ ১৫৮ জন বৈধ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং অফিসার। ওই দিন থেকেই প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়েন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা। সীমা ও সাক্কু ছাড়াও কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আরো দু’জন মেয়রপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে শিরীন আক্তার (তারা প্রতীক) এবং স্বতন্ত্রপ্রার্থী মেজর (অব:) মামুনুর রশিদ। অন্য দিকে ২৭ ওয়ার্ডে সাধারণ আসনে কাউন্সিলর পদে ১১৪ জন প্রার্থী লড়ছেন। সংরক্ষিত ৯ মহিলা কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৪০ জন প্রার্থী।
যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা : ২৯ মার্চ মধ্যরাত থেকে ৩০ মার্চ দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত লঞ্চ, স্প্রিড বোট, ট্যাক্সিক্যাব, বেবিট্যাক্সি/অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক ও টেম্পো চলাচলের ওপরও এক ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ইসি।
ভোটার ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা : কুসিকে মোট ভোটার সংখ্যা দুই লাখ সাত হাজার ৫৬৬ জন। পুরুষ এক লাখ দুই হাজার ৪৪৭ জন ও নারী এক লাখ পাঁচ হাজার ১১৯ জন। তবে নারী ভোটার পুরুষের চেয়ে বেশি এ সিটিতে। প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং অফিসার এক হাজার ৯৮৭ জন। এর মধ্যে প্রিজাইডিং প্রতি কেন্দ্রে এক জন করে ১০৩ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার প্রতি কক্ষে একজন করে ৬২৮ জন এবং পোলিং অফিসার প্রতিটি কক্ষে দু’জন করে এক হাজার ২৫৪ জন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ থেকে আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে এবং বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনিরুল হক সাক্কুকে মেয়র পদে মনোনয়ন দেয় প্রধান দুই রাজনৈতিক দল। পরে ২ মার্চ মনোনয়নপত্র দাখিল করেন প্রার্থীরা। ৫ ও ৬ মার্চ মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর ১৪ মার্চ প্রত্যাহারের শেষ দিন। ১৫ মার্চ ১৫৮ জন বৈধ প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দ দেন রিটার্নিং অফিসার। ওই দিন থেকেই প্রচার-প্রচারণায় নেমে পড়েন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকেরা। সীমা ও সাক্কু ছাড়াও কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে আরো দু’জন মেয়রপ্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন : জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে শিরীন আক্তার (তারা প্রতীক) এবং স্বতন্ত্রপ্রার্থী মেজর (অব:) মামুনুর রশিদ। অন্য দিকে ২৭ ওয়ার্ডে সাধারণ আসনে কাউন্সিলর পদে ১১৪ জন প্রার্থী লড়ছেন। সংরক্ষিত ৯ মহিলা কাউন্সিলর পদে লড়ছেন ৪০ জন প্রার্থী।
No comments