ধরিত্রীকে হুমকির মুখে ফেলছেন ট্রাম্প
প্রেসিডেন্ট
ডোনাল্ড ট্রাম্প এক মিশনে নেমেছেন। বলা যায়- উন্মত্ত তাণ্ডবে মেতেছেন।
বারাক ওবামার জলবায়ু সম্পর্কিত গৃহীত পদক্ষেপসমূহ ও জলবায়ু পরিবর্তনের
বৈশ্বিক হুমকি মোকাবেলায় তার উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো ধুলোয় মেশাতে চান তিনি।
এতে ঝুঁকির মুখে পড়ছে আমাদের ধরিত্রী। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, জলবায়ু পরিবর্তন
যে প্রকৃতই ঘটছে এবং তা এক ক্ষমাহীন বাস্তবতা। এই সত্যের ওপর আঘাত হানছেন
ট্রাম্প। গত সপ্তাহে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (ডব্লিউএমও)এক প্রতিবেদনে উল্লেখ
করেছে, বৈশ্বিক উষ্ণতা রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে গেছে। গত তিন বছরে সর্বোচ্চ
তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এবং বিশ্ব তা অনুভব করছে। বাতাসে কার্বন
ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে, আর্কটিক ও অ্যান্টার্কটিক মহাসাগরের বরফ
ব্যাপকভাবে গলে যাচ্ছে।
আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চল এবং মধ্য
আমেরিকায় ভয়াবহ খরা দেখা দিয়েছে। প্রতিবেদনে হুশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে যে,
পৃথিবী নামক আমাদের এ গ্রহ এখন আসলেই জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত হুমকির
মুখে। ট্রাম্প এই হুমকিকে আরও ত্বরান্বিত করছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের পাহাড়সম
প্রমাণ সত্ত্বেও ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ও কর্মকাণ্ড তার অজ্ঞতারই পরিচায়ক।
অজ্ঞতা শুধু স্বেচ্ছাচারসুলভ নয়, ধ্বংসাত্মকও। ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে
ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে ওবামার গৃহীত প্রকল্প ‘ক্লিন পাওয়ার
প্ল্যান’ বাতিল ও বিদেশী তেলের ওপর আমেরিকার নির্ভরতা বৃদ্ধির জন্য
বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন ট্রাম্প। তার প্রস্তাবিত অপ্রতুল বাজেট বৈজ্ঞানিক
গবেষণা ধ্বংস করছে। তিনি পরিবেশ সুরক্ষা সংস্থার জন্য এমন একজন প্রশাসক
নির্বাচন করেছেন যিনি জলবায়ু ও পরিবেশ বিজ্ঞানের প্রযোজনীয়তাকে অস্বীকার
করছেন। ওবামার গৃহীত জলবায়ু নীতিতে পরিবর্তন আনতে ট্রাম্প মঙ্গলবার যে
নির্বাহী আদেশ সই করেছেন, তা পরিবেশগত সুরক্ষা নস্যাৎ করে ফেলবে এবং
করদাতাদের অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন ডলার অর্থ ক্ষতি করবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই
পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ড আমাদের সমগ্র বিশ্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। তবে আমরা
নিরাশ হতে চাই না। জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ভয়াবহ দিকগুলো আমরা এখনও এড়াতে
পারি। নির্বাচনে ৩০ লাখ বেশি পপুলার ভোট পেয়েও হোয়াইট হাউস জয় করা সম্ভব
হয়নি হিলারির। কিন্তু এই ভোট সংখ্যাগরিষ্ঠ মার্কিনির মতের প্রতিনিধিত্ব
করে। বিভিন্ন জনমত জরিপে এখনও দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ আমেরিকানই জলবায়ু
পরিবর্তনকে বড় ধরনের সমস্যা বলে বিশ্বাস করেন এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর
পদক্ষেপকে সমর্থন করেন। এছাড়া অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত নভেম্বরে যে
সব রাজ্য হিলারিকে ভোট দিয়েছিল, মার্কিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের
দুই-তৃতীয়াংশই এই রাজ্যগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। এটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ স্থানীয় ও
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের মধ্যপন্থী ও প্রগতিশীল নেতারা এই দুই-তৃতীয়াংশ
অর্থনীতি পরিচ্ছন্ন জ্বালানিভিত্তিক করতে সক্ষম হবেন। আমাদের সন্তান ও
উত্তর প্রজন্মের নিরাপত্তার স্বার্থে ক্লিন-এনার্জির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে
হবে।
No comments