বেড়ায় বোমা মেশিন দিয়ে যমুনা থেকে বালু উত্তোলন অব্যাহত
বালুদস্যুরা
বেড়ার মোহনগঞ্জ থেকে ঢালারচর পর্যন্ত যমুনা নদীর ৩০ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী
দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা নদীর বিভিন্ন পেয়েন্টে শতাধিক বোমামেশিনের
সাহায্যে প্রতিদিন লক্ষাধিক ঘনফুট বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। যমুনা নদী
পাড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে বালু বেচা-কেনার হাট বসেছে। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার
বালু কেনা-বেচা হচ্ছে। প্রশাসন চিহিৃত বালুদস্যুদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোন
ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ বালু উত্তোলন ঠেকাতে এলাকাবাসী
মানববন্ধন কর্মসূচী ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। প্রশাসনের কাছে বার বার লিখিত
আবেদন দিয়েছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবশ্য দুই-একবার লোক দেখানো নামমাত্র
অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, অভিযানের আগেই বালুদস্যুরা খবর পেয়ে
যায়। বন্ধ হয়নি বালু উত্তোলন। উপজেলার মোহনগঞ্জ থেকে ঢালারচর পর্যন্ত যমুনা
নদীর প্রায় ৩০ কিলোমিটার অংশ জুড়েই রয়েছে বালু উত্তোলনকারীদের একচ্ছত্র
আধিপত্য। ওই এলাকাজুড়ে প্রতিদিন দেড় শতাধিক বোমামেশিনের সাহায্যে নদীর
তলদেশের ২০-৬০ ফুট গভীর থেকে বালু উত্তোলন করে নৌকায় পাড়ে আনা হচ্ছে। কোথাও
কোথাও আবার নদী থেকে মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন করে পাইপের মাধ্যমে
সরাসরি নদী পাড়ে এনে রাখা হচ্ছে। নদী পাড়ের কাজিরহাট, নটাখোলা, হরিরামপুর,
বেড়া ডাকবাংলা ও বৃশালিখায় বালু বেচা-কেনার হাট বসেছে। সেখান থেকে শত শত
ট্রাক বালু জেলার বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে।
প্রতিদিন লক্ষাধিক ঘন ফুট
বালু বিক্রি করে সংশ্লিষ্টরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। সরেজমিনে দেখা
গেছে, সবচেয়ে বেশি বালু উত্তোলন করা হচ্ছে নগরবাড়ী ঘাটের পার্শ্ববর্তী
যমুনা নদী থেকে। সেখানে অর্ধশতাধিক বোমামেশিনে মাধ্যমে বালু উত্তোলন করে বড়
বড় নৌকা অথবা কার্গো বোঝাই করে নগরবাড়ী ঘাটে নিয়ে আসা হয়। এর পর সেখান
থেকে দীর্ঘ পাইপের মাধ্যমে উত্তোলিত বালু এনে রাখা হয় নগরবাড়ী ঘাটের পাশে
খোলা জায়গায়। সেখান থেকে ট্রাক বোঝাই করে বালু পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন
স্থানে। বালু উত্তোলনে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উত্তোলিত বালুর
বেশির ভাগই চলে যাচ্ছে ঈশ্বরদী-ঢালাচর রেলপথ নির্মাণের কাজে। প্রতিট্রাক
বালু বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে। প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ ট্রাক
বালু বিক্রি করা হচ্ছে। বালু বিক্রির টাকা রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে
প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে ভাগ হয়ে থাকে। এ জন্যই প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু
উত্তোলন বন্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। নগরবাড়ী ঘাট
নলখোলা বণিক সমিতির সাধারন সম্পাদক ও পুরাণভারেঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান এ এম
রফিকউল্লাহর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ
রয়েছে। রফিকউল্লাহ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বালু উত্তোলনের
ফলে নগড়বাড়ী ঘাট মারাত্মক হুমকীর মুখে পড়েছে। তবে ঈশ্বরদী-ঢালারচর নতুন
রেলপথ নির্মাণে প্রচুর বালুর প্রয়োজন হচ্ছে। যেহেতু বেড়া অংশে যমুনা নদীতে
বালু মহল নেই, সে জন্য প্রশাসনের উচিত নদী সার্ভে করে নিরাপদ স্থান থেকে
বালু উত্তোলনের আদেশ দেয়া। এতে সরকারের বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় হবে বলে
তিনি জানান। বেড়ার মোহনগঞ্জ থেকে রাকশা পর্যন্ত বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত
শরীফুল ইসলাম বলেন, বালু উত্তোলনের ফলে কোন ক্ষতি হচ্ছে না। বরং এতে নদীর
নাব্যতা বজায় থাকছে।
একটি স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদীত হয়ে বালু
উত্তোলনের ব্যপারে অপবাদ দিচ্ছে। বালুকাটা প্রতিরোধ কমিটি ও নাকালিয়া বাজার
বণিক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, বালুদস্যুদের কারণে ইতিমধ্যে সাত-আট
শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের হুমকীর
মুখে রয়েছে নাকালিয়া বাজারসহ ১২টি গ্রাম। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিস
থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসকের অফিস পর্যন্ত বালু উত্তোলন বন্ধের আবেদন করা
হয়েছে। কিন্তু কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানিয়েছেন। এ
ব্যাপারে বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ এ
প্রতিনিধিকে বলেন, যমুনা নদী ভাঙন প্রতিরক্ষ বাঁধের পাশ দিয়ে প্রবাহিত
হওয়ায় নদীর যে কোনো পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন প্রতিরক্ষা বাঁধের জন্য
মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। নদীর যে স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হয় তার চার
পাশের এলাকা ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে জন্য প্রশাসনকে অবৈধভাবে বালু
উত্তোলন বন্ধে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলেই সম্ভাব্য ক্ষয়-ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা
পাওয়া সম্ভব বলে তিনি জানান। বেড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সামসুন নাহার
সুমি বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে উত্তোলন বন্ধ
করে দিয়েছিলাম। আবার যদি বালু উত্তোলন শুরু হয়ে থাকে তবে দ্রুততম সময়ে তা
বন্ধ হবে।
No comments