সিয়াম সাধনার মাস ধর্ম মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান পরনিন্দা ও মিথ্যাচারিতা বর্জন করুন
মাহে রমজানে একজন রোজাদার সারা দিনের ক্লান্তি, অবসাদ ও কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমে সিয়াম সাধনা করে উন্নত মানবিক গুণাবলি অর্জনে সক্ষম হন। সে জন্য বিশেষভাবে রমজান মাসে পরচর্চা, পরনিন্দা ও মিথ্যাচারিতা বর্জনের জন্য রোজাদারদের জোরালো তাগিদ দেওয়া হয়েছে। মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া, পরনিন্দা বা গিবত করা, ধোঁকাবাজি, প্রতারণাসহ মানুষকে ঠকানোর যত রকম অপরাধ আছে, রমজান মাসে দেহ-মন থেকে তা যেন সর্বাবস্থায় নির্বাসিত হয় সে জন্য রোজাদারদের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোজা হচ্ছে ঢালস্বরূপ। যতক্ষণ না রোজাদার নিজেই তা ফাটিয়ে ফেলে।’ সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ঢাল ফাটাবে কীভাবে?’ জবাবে মহানবী (সা.) বলেন, ‘মিথ্যা এবং গিবতের দ্বারা।’ অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, পানাহারের মতো মিথ্যাচার ও পরনিন্দার দ্বারা রোজা নষ্ট হয়ে যায়।
রোজাদার মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করে। সমাজে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করা ইসলামের নির্দেশ। মানুষের মধ্যে কতগুলো ভালো গুণ থাকা দরকার। যেমন—পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সহানুভূতি, উদারতা প্রভৃতি। পক্ষান্তরে কতগুলো নিন্দনীয় আচরণ যা সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে বিনষ্ট ও ধ্বংস করে, যেমন—পরচর্চা, পরনিন্দা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, মিথ্যাচার প্রভৃতি বর্জন করা অবশ্যকর্তব্য। কারও দোষ বলে বেড়ানো, কুত্সা রটানো, গিবত করা—এসবই পরচর্চা ও পরনিন্দা। পরচর্চা মানে অন্যের নিন্দা করা, অন্যের দোষ-ত্রুটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা। পরনিন্দা যেমন সমাজে ঘৃণিত কাজ, তেমনি তা আল্লাহর কাছেও অত্যন্ত পাপের কাজ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না।’ (সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত-১২)
পরচর্চায় পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়, সমাজে শান্তি বিনষ্ট হয়। যে পরনিন্দা করে তাকে কেউ বিশ্বাস করে না ও ভালোবাসে না। একজনের দুর্নাম অন্যের কাছে করলে পারস্পরিক সম্পর্ক বিনষ্ট হয়, বিবাদ সৃষ্টি হয়। পরচর্চা ও পরনিন্দার পরিণতি সম্পর্কে হাদীস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারী ও মুসলিম) এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অন্যের দোষ অন্বেষণ করবে না, গুপ্তচরবৃত্তি করবে না, পরস্পর কলহ করবে না, হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে না, একে-অপরকে ঘৃণা করবে না, অন্যের ক্ষতিসাধনের কোনো কৌশল অবলম্বন করবে না, আর তোমরা আল্লাহর প্রকৃত বান্দা ও পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও।’ (বুখারি ও মুসলিম)
পরনিন্দা যেমন হারাম তদ্রূপ কারও অসাক্ষাতে দুর্নাম বা গিবত করাও হারাম। গিবত হচ্ছে কারও অনুপস্থিতিতে অন্যের কাছে তার এমন কোনো দোষের কথা বলা, যা সে শুনলে মনে কষ্ট পাবে। যারা ভালো মানুষ তারা অন্যের গুণ প্রকাশ করে, দোষ বলে না। আর যারা নিজেরা খারাপ তারা অন্যদের খারাপ মনে করে। তারা মানুষের গুণ দেখে না, দোষ খুঁজে বেড়ায়, কুত্সা রটনা করে। গিবত করা জঘন্য ও ঘৃণার কাজ। ত্রুটিমুক্ত রোজার মাধ্যমেই মুমিন তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে সক্ষম হবে। যেমন—রোজা রেখে মিথ্যা ও পরদোষ চর্চা করবে না এবং যত প্রকার গুনাহ্র কাজ আছে তা বর্জন করবে।
মিথ্যাচার হচ্ছে অসত্য কথা বলা, অসত্য সংবাদ দেওয়া, অবাস্তব বর্ণনা ও অসত্য তথ্য প্রদান। এর বিপরীত হচ্ছে সদাচার। মিথ্যাচার একটি ঘৃণিত বদস্বভাব। মিথ্যাচার মানুষকে কলঙ্কিত করে। তার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে তার জন্য ক্ষতি বয়ে আনে। আর ইহকাল ও পরকালে তাকে ধ্বংস করে দেয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা মিথ্যাচার বর্জনের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা মিথ্যা কথা বর্জন করো।’ (সূরা আল-হজ, আয়াত-৩০)
সদাচার ও সত্যবাদিতা হচ্ছে ইহকাল ও পরকালে সফলতা ও মুক্তির উপায়। রমজান মাসে রোজাদারদের পরচর্চা, পরনিন্দা ও মিথ্যাচার বর্জনের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ নিতে হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘অবশ্যই তোমরা মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকবে, কেননা নিশ্চয়ই মিথ্যা কথা অপকর্মের দিকে পরিচালিত করে এবং অপকর্ম দোজখের দিকে পরিচালিত করে। আর যে ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলতে থাকে ও মিথ্যার অনুসন্ধান করতে থাকে সে অবশ্যই আল্লাহর কাছে পরম মিথ্যাবাদী বলে লিখিত হবে।’ (বুখারী ও মুসলিম)
জনগণ মিথ্যাচারীকে বিশ্বাস করে না, তাকে ভালোবাসে না, তার ওপর আস্থা স্থাপন বা নির্ভর করতে পারে না। অপরদিকে সদাচারীকে লোকেরা বিশ্বাস করে, তাকে ভালোবাসে ও তার ওপর নির্ভর করে। তাই মিথ্যাবাদী যখন কোনো বিপদ-আপদে বা সমস্যায় পতিত হয়, তখন তাকে রক্ষা করার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না।
সুতরাং মাহে রমজানে যাবতীয় অনৈতিক ও অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড, অসদাচরণ, কথাবার্তা ও অবৈধ লেনদেন থেকে বিরত থাকুন এবং পরচর্চা ও পরনিন্দা পরিহার করুন। রমজান মাসে রোজা রেখে কখনোই মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা ও বাতিল মজলিশে যোগ দেওয়া এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া যাবে না। যদি কেউ মিথ্যা ও বাতিল মজলিশের নিকটবর্তী হয়ে পড়ে, তবে গাম্ভীর্য ও ভদ্রতাসহকারে তা এড়িয়ে বা পরিহার করে চলে যাওয়া উচিত। যে মিথ্যা কথা বলা এবং সে অনুসারে কাজ করা বর্জন না করে তার পানাহার বর্জন আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা এবং তদনুযায়ী আমল পরিত্যাগ করতে বা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারল না, এমন ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করার প্রয়োজন আল্লাহর নেই।’ (বুখারি) হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে যে, ‘বহু রোজাদার রোজার মাধ্যমে ক্ষুধা আর পিপাসা ছাড়া্র আর কিছুই লাভ করতে পারে না এবং রাতের বহু নামাজি রাত জাগরণ ছাড়া অন্য কিছুই পায় না।’ (ইবনে মাজা)
পক্ষান্তরে নিখুঁত ও মর্যাদাপূর্ণ রোজা হলো এই যে, রোজাদার ব্যক্তি মিথ্যা বলবে না, ঘুষ খাবে না, জিনিস বাটে কোনো প্রকার দ্রব্য নেওয়ার সময় বেশি মেপে নেবে না এবং দেওয়ার সময় কম মেপে দেবে না। তৈরি খাদ্যে বা চাল, ডাল, তেল ও দুধ জাতীয় তরল খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল দেবে না ও প্রতারণা করবে না। অনাথ-এতিম বা যেকোনো লোকের সম্পদ অন্যায়ভাবে জোর করে আত্মসাত্ করবে না। হত্যাকাণ্ড, ব্যভিচার, ধর্ষণ ও ছিনতাই করবে না। গিবত বা পরদোষ চর্চা করবে না।
মাহে রমজানের একটি মাসে সিয়াম সাধনার কঠিন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিটি রোজাদার মুসলমান যদি পরনিন্দা ও মিথ্যাচার বর্জনের প্রাত্যহিক অভ্যাস গড়ে তোলেন তাহলে সমাজ থেকে যাবতীয় অনাচার, পাপাচার বিলুপ্ত হয়ে পৃথিবী শান্তির আবাসস্থলে পরিণত হতে বাধ্য। অতএব, মাহে রমজানের শিক্ষা অনুযায়ী আমাদের সবার পরচর্চা, পরনিন্দা ও মিথ্যাচার পরিহার করা, কোনো অবস্থায়ই মিথ্যার আশ্রয় না নেওয়া এবং সর্বাবস্থায় সততার সঙ্গে নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে সত্যাশ্রয়ী হওয়া উচিত। তাহলে আল্লাহ তাআলার মহাপুরস্কার ‘সত্যবাদী’ খেতাবপ্রাপ্ত হয়ে ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক অনাবিল সুখ-শান্তি লাভ করা সম্ভব হবে।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান, সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমী, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
dr.munimkhan@yahoo.com
রোজাদার মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করে। সমাজে সুখে-স্বাচ্ছন্দ্যে মিলেমিশে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করা ইসলামের নির্দেশ। মানুষের মধ্যে কতগুলো ভালো গুণ থাকা দরকার। যেমন—পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, সহানুভূতি, উদারতা প্রভৃতি। পক্ষান্তরে কতগুলো নিন্দনীয় আচরণ যা সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা মারাত্মকভাবে বিনষ্ট ও ধ্বংস করে, যেমন—পরচর্চা, পরনিন্দা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, মিথ্যাচার প্রভৃতি বর্জন করা অবশ্যকর্তব্য। কারও দোষ বলে বেড়ানো, কুত্সা রটানো, গিবত করা—এসবই পরচর্চা ও পরনিন্দা। পরচর্চা মানে অন্যের নিন্দা করা, অন্যের দোষ-ত্রুটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা। পরনিন্দা যেমন সমাজে ঘৃণিত কাজ, তেমনি তা আল্লাহর কাছেও অত্যন্ত পাপের কাজ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা অন্যের দোষ খুঁজে বেড়াবে না।’ (সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত-১২)
পরচর্চায় পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়, সমাজে শান্তি বিনষ্ট হয়। যে পরনিন্দা করে তাকে কেউ বিশ্বাস করে না ও ভালোবাসে না। একজনের দুর্নাম অন্যের কাছে করলে পারস্পরিক সম্পর্ক বিনষ্ট হয়, বিবাদ সৃষ্টি হয়। পরচর্চা ও পরনিন্দার পরিণতি সম্পর্কে হাদীস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘পরনিন্দাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (বুখারী ও মুসলিম) এ সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা অন্যের দোষ অন্বেষণ করবে না, গুপ্তচরবৃত্তি করবে না, পরস্পর কলহ করবে না, হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করবে না, একে-অপরকে ঘৃণা করবে না, অন্যের ক্ষতিসাধনের কোনো কৌশল অবলম্বন করবে না, আর তোমরা আল্লাহর প্রকৃত বান্দা ও পরস্পর ভাই ভাই হয়ে যাও।’ (বুখারি ও মুসলিম)
পরনিন্দা যেমন হারাম তদ্রূপ কারও অসাক্ষাতে দুর্নাম বা গিবত করাও হারাম। গিবত হচ্ছে কারও অনুপস্থিতিতে অন্যের কাছে তার এমন কোনো দোষের কথা বলা, যা সে শুনলে মনে কষ্ট পাবে। যারা ভালো মানুষ তারা অন্যের গুণ প্রকাশ করে, দোষ বলে না। আর যারা নিজেরা খারাপ তারা অন্যদের খারাপ মনে করে। তারা মানুষের গুণ দেখে না, দোষ খুঁজে বেড়ায়, কুত্সা রটনা করে। গিবত করা জঘন্য ও ঘৃণার কাজ। ত্রুটিমুক্ত রোজার মাধ্যমেই মুমিন তার আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতে সক্ষম হবে। যেমন—রোজা রেখে মিথ্যা ও পরদোষ চর্চা করবে না এবং যত প্রকার গুনাহ্র কাজ আছে তা বর্জন করবে।
মিথ্যাচার হচ্ছে অসত্য কথা বলা, অসত্য সংবাদ দেওয়া, অবাস্তব বর্ণনা ও অসত্য তথ্য প্রদান। এর বিপরীত হচ্ছে সদাচার। মিথ্যাচার একটি ঘৃণিত বদস্বভাব। মিথ্যাচার মানুষকে কলঙ্কিত করে। তার মর্যাদা ক্ষুণ্ন করে তার জন্য ক্ষতি বয়ে আনে। আর ইহকাল ও পরকালে তাকে ধ্বংস করে দেয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা মিথ্যাচার বর্জনের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা মিথ্যা কথা বর্জন করো।’ (সূরা আল-হজ, আয়াত-৩০)
সদাচার ও সত্যবাদিতা হচ্ছে ইহকাল ও পরকালে সফলতা ও মুক্তির উপায়। রমজান মাসে রোজাদারদের পরচর্চা, পরনিন্দা ও মিথ্যাচার বর্জনের মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ নিতে হয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘অবশ্যই তোমরা মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকবে, কেননা নিশ্চয়ই মিথ্যা কথা অপকর্মের দিকে পরিচালিত করে এবং অপকর্ম দোজখের দিকে পরিচালিত করে। আর যে ব্যক্তি সদা মিথ্যা কথা বলতে থাকে ও মিথ্যার অনুসন্ধান করতে থাকে সে অবশ্যই আল্লাহর কাছে পরম মিথ্যাবাদী বলে লিখিত হবে।’ (বুখারী ও মুসলিম)
জনগণ মিথ্যাচারীকে বিশ্বাস করে না, তাকে ভালোবাসে না, তার ওপর আস্থা স্থাপন বা নির্ভর করতে পারে না। অপরদিকে সদাচারীকে লোকেরা বিশ্বাস করে, তাকে ভালোবাসে ও তার ওপর নির্ভর করে। তাই মিথ্যাবাদী যখন কোনো বিপদ-আপদে বা সমস্যায় পতিত হয়, তখন তাকে রক্ষা করার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না।
সুতরাং মাহে রমজানে যাবতীয় অনৈতিক ও অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড, অসদাচরণ, কথাবার্তা ও অবৈধ লেনদেন থেকে বিরত থাকুন এবং পরচর্চা ও পরনিন্দা পরিহার করুন। রমজান মাসে রোজা রেখে কখনোই মিথ্যা কথা বলা, মিথ্যা ও বাতিল মজলিশে যোগ দেওয়া এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া যাবে না। যদি কেউ মিথ্যা ও বাতিল মজলিশের নিকটবর্তী হয়ে পড়ে, তবে গাম্ভীর্য ও ভদ্রতাসহকারে তা এড়িয়ে বা পরিহার করে চলে যাওয়া উচিত। যে মিথ্যা কথা বলা এবং সে অনুসারে কাজ করা বর্জন না করে তার পানাহার বর্জন আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা এবং তদনুযায়ী আমল পরিত্যাগ করতে বা খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারল না, এমন ব্যক্তির পানাহার পরিত্যাগ করার প্রয়োজন আল্লাহর নেই।’ (বুখারি) হাদিস শরিফে উল্লেখ আছে যে, ‘বহু রোজাদার রোজার মাধ্যমে ক্ষুধা আর পিপাসা ছাড়া্র আর কিছুই লাভ করতে পারে না এবং রাতের বহু নামাজি রাত জাগরণ ছাড়া অন্য কিছুই পায় না।’ (ইবনে মাজা)
পক্ষান্তরে নিখুঁত ও মর্যাদাপূর্ণ রোজা হলো এই যে, রোজাদার ব্যক্তি মিথ্যা বলবে না, ঘুষ খাবে না, জিনিস বাটে কোনো প্রকার দ্রব্য নেওয়ার সময় বেশি মেপে নেবে না এবং দেওয়ার সময় কম মেপে দেবে না। তৈরি খাদ্যে বা চাল, ডাল, তেল ও দুধ জাতীয় তরল খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল দেবে না ও প্রতারণা করবে না। অনাথ-এতিম বা যেকোনো লোকের সম্পদ অন্যায়ভাবে জোর করে আত্মসাত্ করবে না। হত্যাকাণ্ড, ব্যভিচার, ধর্ষণ ও ছিনতাই করবে না। গিবত বা পরদোষ চর্চা করবে না।
মাহে রমজানের একটি মাসে সিয়াম সাধনার কঠিন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিটি রোজাদার মুসলমান যদি পরনিন্দা ও মিথ্যাচার বর্জনের প্রাত্যহিক অভ্যাস গড়ে তোলেন তাহলে সমাজ থেকে যাবতীয় অনাচার, পাপাচার বিলুপ্ত হয়ে পৃথিবী শান্তির আবাসস্থলে পরিণত হতে বাধ্য। অতএব, মাহে রমজানের শিক্ষা অনুযায়ী আমাদের সবার পরচর্চা, পরনিন্দা ও মিথ্যাচার পরিহার করা, কোনো অবস্থায়ই মিথ্যার আশ্রয় না নেওয়া এবং সর্বাবস্থায় সততার সঙ্গে নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে সত্যাশ্রয়ী হওয়া উচিত। তাহলে আল্লাহ তাআলার মহাপুরস্কার ‘সত্যবাদী’ খেতাবপ্রাপ্ত হয়ে ইহকালীন কল্যাণ ও পারলৌকিক অনাবিল সুখ-শান্তি লাভ করা সম্ভব হবে।
ড. মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান, সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমী, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
dr.munimkhan@yahoo.com
No comments