আমি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বন্দী: ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্মকর্তাদের হাতে গ্রেপ্তার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিল নিজেকে একজন রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে দাবি করেছেন। অভিবাসীদের এভাবে আটকে রাখার প্রক্রিয়াকে ইসরায়েলের বিচারবহির্ভূত আটকব্যবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন এই ফিলিস্তিনি যুবক।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানার আটককেন্দ্র থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথাগুলো বলেন মাহমুদ খলিল। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর প্রকাশ্যে দেওয়া এটিই প্রথম কোনো বিবৃতি।

গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবন থেকে খলিলকে গ্রেপ্তার করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তারা।

বিবৃতিতে খলিল বলেন, ‘আমি একজন রাজনৈতিক বন্দী। লুইজিয়ানার শীতের সকালে ঘুম ভাঙার পর এখানে আটক মানুষদের দেখে আমার দিন কাটে, যাঁরা আইনের সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত।’

মাহমুদ খলিল বর্তমানে লুইজিয়ানার জেনা শহরে একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রে রয়েছেন। সেখানেই তিনি বিচারের মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তাঁকে এভাবে আটকে রাখার ঘটনাকে তিনি ইসরায়েলের কারাগারে বিনা বিচারের বছরের পর বছর ফিলিস্তিনিদের আটকে রেখে নির্যাতনের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ফিলিস্তিনের ভূমি থেকে দূরে থাকলেও ভাগ্য সেই সীমানা অতিক্রম করে ফেলেছে। নিজেদের অধিকারের জন্য তাঁদের লড়াই চালিয়ে যেতে হয়।’

বিনা অপরাধে ও বিচারে তাঁদের (ফিলিস্তিনিদের) আটক থাকতে হয়, তিনিও (খলিল) এর বাইরে নন বলে মন্তব্য করেন বিবৃতিতে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিবাসনকেন্দ্রে কেউই নিজের অধিকার পেতে পারেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় দফায় হোয়াইট হাউসে ফিরেই অঙ্গীকার করেছিলেন, গত বছর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থী আন্দোলনে জড়িত কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেবেন। এ আন্দোলনকে তিনি ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে অভিহিত করেন।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাম্পের তথাকথিত ইহুদিবিদ্বেষী বিক্ষোভ বন্ধের অভিযানের প্রথম শিকার ৩০ বছর বয়সী এই ফিলিস্তিনি যুবক। মাহমুদ খলিল বিশ্ববিদ্যালয়টির স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের শিক্ষার্থী। যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের গ্রিনকার্ড রয়েছে তাঁর। কিন্তু তাঁর গ্রিনকার্ড বাতিলের প্রক্রিয়া চলমান বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। আপাতত তাঁকে নিবার্সিত করার প্রক্রিয়া স্থগিত করেছেন একজন ফেডারেল জজ।

নিজের বন্ধু ও পরিবারের মাধ্যমে পাঠানো ওই বিবৃতিতে আটককেন্দ্রে অভিবাসীদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের অমানবিক আচরণের প্রতিবাদ করেছেন মাহমুদ খলিল। গাজায় আবার ইসরায়েলের হামলা শুরু করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। পাশাপাশি প্রশাসনের কাছে নতজানু হয়ে নিজেদের শিক্ষার্থীকে শাস্তির মুখে ঠেলে দেওয়ায় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনাও করেছেন তিনি।

ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, খলিলকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ইহুদি শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করায় অভিযুক্ত বিদেশি শিক্ষার্থীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়ার অভিযানের শুরু হয়েছে।

তবে ওয়াশিংটনের এ পদক্ষেপকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় আঘাত ও ফিলিস্তিনপন্থী মতামত দমনের চেষ্টা বলে অভিহিত করেছেন অনেক মানবাধিকারকর্মী ও খলিলের আইনজীবীরা।

বিবৃতিতে খলিলও বলেছেন, তাঁকে গ্রেপ্তারের ঘটনা সরাসরি বাক্‌স্বাধীনতা লঙ্ঘন। তিনি কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন না। ‘আমি শুধু চেয়েছিলাম ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধ হোক। সে জন্য আমাকে গ্রেপ্তার করা হলো’ বলেন তিনি।

খলিল জানান, তাঁর আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নূর আবদাল্লার সামনে থেকে তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছে। এমনকি কোনো পরোয়ানাও দেখানো হয়নি, নাম-প্রতীকহীন একটি গাড়িতে তাঁকে নিয়ে আসা হয়েছে। তাঁর গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত ছিলেন।

ফিলিস্তিনি এই যুবক বলেন, গত বসন্তে তাঁরা গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধে যে আন্দোলন করেছেন, তা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন নসাৎ করে দিয়েছে। এখন নতুন করে বর্বরতা শুরু করেছে ইসরায়েল।

ফিলিস্তিনিদের আবারও সীমাহীন দুর্ভোগ ও স্বজন হারানোর বেদনা সইতে হবে বলে দুঃখ প্রকাশ করেন খলিল। এদিকে তাঁকে আটক সংবিধানের পুরোপুরি লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছেন তাঁর আইনজীবীরা। গত সপ্তাহে এ লক্ষ্যে একটি সংশোধিত পিটিশন করেছেন তাঁরা। খলিলকে কোনো অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়নি, তিনি কোনো আইন অমান্য করেননি বলে উল্লেখ করেন তাঁরা।

ট্রাম্প প্রশাসন অন্যায়ভাবে খলিলের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটসের সদস্য ও খলিলের আইনজীবী বলেন, ‘খলিলকে দিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের এ তথাকথিত ইহুদিবিদ্বেষী অভিযানের শুরু মাত্র। ভবিষ্যতে আরও অনেকে এ সমস্যায় পড়বেন। তবে শুরুতেই তাঁরা একজন নির্ভীক ও নীতিনিষ্ঠ সংগঠককে আটক করেছে, যিনি কিনা নিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে অত্যন্ত ভালোবাসা ও বিশ্বাসের পাত্র।’

মাহমুদ খলিলের মুক্তির দাবিতে নিউইয়র্কে বিক্ষোভ। ১২ মার্চ ২০২৫
মাহমুদ খলিলের মুক্তির দাবিতে নিউইয়র্কে বিক্ষোভ। ১২ মার্চ ২০২৫ ছবি: রয়টার্স

No comments

Powered by Blogger.