বরিশালে তরুণকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা, ৫দিনেও হয়নি কোনো মামলা

শনিবার বরিশাল নগরীর এক যুবককে ধর্ষক আখ্যা দিয়ে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। যদিও জোর গুঞ্জন উঠেছে মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্বে পিটিয়ে হত্যা করা হয় যুবককে। লোমহর্ষক এ ঘটনার পাঁচদিন অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত থানায় এ ঘটনায় কোনো মামলা দায়ের হয়নি। বরং একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায়। তবে নিহতের বাবা মনির হাওলাদার বলেছেন, ঘটনার দিনই থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন তিনি। এদিকে, গাছে বেঁধে পিটিয়ে হত্যার পাঁচদিনেও পুলিশ মামলা না নেয়ার সুযোগে জড়িত ব্যক্তিরা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত শনিবার নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের জিয়ানগরে এ ঘটনা ঘটে। দিনদুপুরে পিটিয়ে হত্যার এ ঘটনার সময় যুবক সুজনকে ধর্ষক আখ্যা দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডের পর চার বছরের শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে থানায় একটি এজাহারও হয়। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ডকে পূর্বপরিকল্পিত দাবি করে বিভিন্ন পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে। দাবি করা হয় হত্যাকারীরা চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তারা সুজনকে দিয়ে মাদক বিক্রির চেষ্টা করে। সুজন রাজি না হওয়ায় চার বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার নাটক সাজানো হয়। এ ঘটনার সঙ্গে সাবেক এক কাউন্সিলর ও তার পুত্রের জড়িত থাকারও অভিযোগ ওঠে। অপরদিকে, পাঁচদিনের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে থানায় কোনো মামলা না হওয়াতে সন্দেহের বিষয়টি ক্রমশই দৃঢ় হচ্ছে। অভিযুক্তরা রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকায় খুনের ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার গুঞ্জন উঠেছে।

ভিডিওতে যে চার যুবককে লাঠি হাতে সুজনকে বেধড়ক পেটানোর ছবি ছিল, ঘটনার পরপরই তারা গা ঢাকা দিয়েছে। অপরদিকে, ধর্ষণের অভিযোগকারীর ঘরেও তালা। শিশুটির মেডিকেল টেস্ট সম্পন্ন করে ২২ ধারা গ্রহণ শেষে হাসপাতাল থেকে বিদায় দেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী আজাদ রহমান বলেন, ‘কাউকে পিটিয়ে হত্যার নিয়ম নেই, অপরাধ করলে আদালত বিচার করবেন। সুজনকে পিটিয়ে মারার ঘটনায় পুলিশ হত্যা মামলা করে আইনি ব্যবস্থা নেবে, এখানে অপমৃত্যুর মামলা হওয়ার সুযোগই নেই। কেননা, কারা হত্যা করলো তা তো সবাই দেখেছেন।’ পুলিশ দায়িত্ব এড়ানোর জন্য হত্যা মামলার পরিবর্তে অপমৃত্যুর মামলা নিয়ে আইন লঙ্ঘন করেছে বলে মনে করেন আইনজীবী আজাদ। নিহত সুজনের বাবা মনির হাওলাদার বলেন, ঘটনার রাতেই তিনি থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কিন্তু ওসি বলেছেন, দাফন শেষে আসার জন্য। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে কারা পিটিয়ে মেরেছে, তা তো আপনারা দেখেছেন। ওরা প্রভাবশালী হওয়ায় আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার না পাওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। আমি পুত্র হত্যার বিচার চাই।’

এ ব্যাপারে বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, সুজনের মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করা হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্তও সম্পন্ন হয়েছে। তবে নিহতের পরিবার এখনো মামলা দেয়নি। ওসি দাবি করেন, স্বজন মারা গেছে, এজন্য হয়তো বিলম্ব হচ্ছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.