সেই শিশুর শরীরে ধর্ষণের আলামত

ফরেনসিক পরীক্ষার পর রাজধানীর খিলক্ষেতের সেই ৬ বছরের শিশুর শরীরে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনির শিকার অভিযুক্ত কিশোর রবিউলের অবস্থাও সংকটাপন্ন। দু’জনই বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় পৃথক দুই মামলায় ধর্ষকসহ ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে শিশুটি তার নানির বাড়ি খিলক্ষেতের মধ্যপাড়া এলাকায় বেড়াতে যায়। তার নানি বাড়ির সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে থাকার সময় অভিযুক্ত ওই কিশোর রবিউল (১৬) শিশুটির হাত ধরে ঘরের মধ্যে টেনে নিয়ে ধর্ষণ করে। পরে বিষয়টি জানার পর শিশুটির পরিবার প্রথমে তাকে কয়েকটি হাসপাতালে নেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে তারা আবার বাসায় ফিরে আসেন। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে স্থানীয়রা রাতে ওই কিশোরকে মারধর শুরু করে। জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনের মাধ্যমে খবর পেয়ে খিলক্ষেত থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায় ও অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় নেয়ার জন্য গাড়িতে উঠায়। তবে খিলক্ষেত বাজার এলাকায় পৌঁছালে কয়েকশ’ লোক জড়ো হয়ে ওই ধর্ষককে বহন করা পুলিশের গাড়ির ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয় এবং অভিযুক্ত কিশোরসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে বেধড়ক মারধর করা হয়। ধর্ষকের পায়ে দড়ি বেঁধে উল্টো করে ঝুঁলিয়ে মারা হয়। পুলিশ সদস্যরা আইন নিজেদের হাতে তুলে নিতে নিষেধ করলে তারাও ছাড় পাইনি। অন্তত ৬জন পুলিশ সদস্য আহত হন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর গুরতর আহত অবস্থায় অভিযুক্ত কিশোর ও পুলিশ সদস্যদের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা বেগতিক হওয়ায় বুধবার সকালে ওই কিশোরকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়।

এদিকে ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী ৬ বছরের ওই শিশুও ঢামেকের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি রয়েছে। ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের চিকিৎসক ডা. সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ফরেনসিক পরীক্ষার পর শিশুর শরীরে প্রাথমিকভাবে নির্যাতনের আলামত পাওয়া গেছে। আর কিছু রিপোর্ট হাতে পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।

অপরদিকে শিশুটিকে ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনির শিকার হওয়া কিশোরের অবস্থাও শঙ্কামুক্ত না বলে জানিয়েছেন ঢামেকের চিকিৎসকেরা। তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। মাথায় গুরুতর আঘাত পাওয়ায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে বুধবার ভোরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। ব্যাপক মারধরের কারণে তার পুরো শরীর ফুলে গেছে। ঢামেকের চিকিৎসক শিশির কুমার ঘোষ বলেন, অভিযুক্ত কিশোরের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল থাকলেও শঙ্কামুক্ত নয়। তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম রয়েছে। মাথায় আঘাতের ফলে রক্তক্ষরণ হয়েছে।

তবে অভিযুক্ত রবিউলের মা বলেছেন, আমার ছেলে স্যানিটারি মালামাল বিক্রির দোকানে কাজ করতো। তাকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মারধর করা হয়েছে। আমার একটা মাত্র ছেলে। আমি এটার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার চাই।

খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, শিশু ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত রবিউলের বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়েছে। ধর্ষণ মামলায় আহত রবিউলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মোবারক হোসেন সজীব ও ইউসুফ আলী নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে হামলায় জড়িত বাকিদেরও শনাক্ত করা হচ্ছে।

গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ রিয়াজুল হক বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা হবে। কিন্তু তার আগে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া ঠিক নয়। খিলক্ষেতের ঘটনায় ধর্ষণের অভিযোগে আটক কিশোরকে ছিনিয়ে নিয়ে গণপিটুনির ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে গণপিটুনির ঘটনায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছে বলেও জানিয়েছে পুলিশ।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.